২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সেই ভয়াল রাতের স্মৃতি জাগানিয়া আতঙ্কের দিন আজ

- ছবি: সংগৃহীত

আজ ১২ নভেম্বর। সেই ভয়াল রাতের স্মৃতি জাগানিয়া দিন। ১৯৭০ সালের এই দিনে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় উপকূলে গড়ে ওঠা হাজার বছরের সভ্যতা ধুয়ে মুছে বিলীন করে দেয়ার নির্মম দিন। এই দিনে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে ধ্বংসলীলা চালিয়ে বিরান করে দিয়েছিল জনপদ। কেড়ে নিয়েছিল প্রায় ১০ লক্ষাধিক মানুষের প্রাণ। আজ সেই শোকাবহ দিন। যারা বেঁচে আছেন তারা এখনো সেই দিনের স্মৃতি হাতড়িয়ে বেড়ান, হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের জন্য আহাজারি করেন। সে দিনের তাণ্ডবে গৃহহারা হয়েছিলেন কয়েক লাখ লোক। পানিতে ভেসে গিয়েছিল লাখ লাখ গবাদিপশু, ঘরবাড়ি ও সহায়-সম্পদ। নভেম্বর এলে এখনো সেই স্মৃতিতে আঁতকে ওঠে উপকূলীয় জনপদের মানুষ। বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছিল চট্টগ্রাম, বরিশাল, পটুয়াখালী, খুলনা, বরগুনা, ভোলা, কক্সবাজার, নোয়াখালী, হাতিয়াসহ বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকা।

প্রাকৃতিক দুর্যোগে এত প্রাণহানির ঘটনা এ দেশে আর কখনো ঘটেনি। সেই দিনের ভয়াবহ দুর্যোগের কথা মনে পড়লে আজো উপকূলীয় এলাকার মানুষের মন ও পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। প্রায় পাঁচ দশক আগের স্মৃতি এখনো যেন তাদের চোখের সামনে ভাসছে। এলাকা ভারী হয়ে ওঠে স্বজনহারানো মানুষের বেদনায়। প্রতি বছরের এই দিনে উপকূলীয় এলাকার মানুষ সেই হারিয়ে যাওয়া লোকজন আর ভয়াল স্মৃতি স্মরণ করে থাকেন।

কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) সংবাদদাতা জানান, প্রলয়ঙ্করী এ ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত রামগতি উপজেলার প্রবীণ ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সেই ভয়ানক দিনের শুরু থেকে আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন, সাথে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছিল। সন্ধ্যার দিকে প্রবল বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দে জনজীবন আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। রেডিওতে ৮ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেতের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল বারবার। কিন্তু উপকূলীয় অঞ্চলে রেডিও না থাকায় সাধারণ মানুষ জানতে পারেননি ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের আগামবার্তা। গভীর রাতে ঘণ্টায় ২২২ কিলোমিটার (১৩৮ মাইল) বেগে ঝড়োহাওয়ার সাথে পাহাড় সমান পানির স্রোতে পুরো উপকূলীয় জনপদ ভেসে যায়। সকালে চার দিকে লাশ আর লাশ; লাশের গন্ধে মানুষ লাশের কাছে পর্যন্ত যেতে পারেননি।

পটুয়াখালী ও কলাপাড়া সংবাদদাতা জানান, উপকূলবাসীর জীবনমান উন্নয়নসহ উপকূল সুরক্ষার লক্ষ্য সামনে রেখে এবার দেশে এবার তৃতীয়বারের মতো ‘উপকূল দিবস’ পালিত হচ্ছে। ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বরের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের দিনটিকে উপকূল দিবস হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে। এদিন উপকূলের ৬০ স্থানে একযোগে উপকূল দিবস পালিত হবে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে র্যালি, আলোচনা সভা, ঘূর্ণিঝড়ে নিহতদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন এবং স্মারকলিপি পেশ।

উপকূল দিবস উপলক্ষে ১২ নভেম্বর বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানকবন্ধন অনুষ্ঠিত হবে। একই সময়ে উপকূলের ৬০ স্থানে মানববন্ধন, র্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

দিবসটি উপলক্ষে গত শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ১২ নভেম্বরকে ‘উপকূল দিবস’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। ‘কোস্টাল জার্নালিজম নেটওয়ার্ক’-এর উদ্যোগে এ অনুষ্ঠানে সার্বিক সহযোগিতা দেয় ‘চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ’।

কলাপাড়া উপজেলার বর্তমানে জনসংখ্যা অনুযায়ী কমপক্ষে ২০০ সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণের প্রয়োজন বলে মনে করে স্থানীয় বাসিন্দারা। উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভার মানুষের জন্য দুর্যোগকালে প্রতিটি ইউনিয়নে কমপক্ষে ২০টি করে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ প্রয়োজন।

মানুষের জানমাল রক্ষার জন্য মাটির কেল্লা সংস্কার করা দরকার এবং আরো নতুন মাটির কেল্লা নির্মাণ করা গেলে দুর্যোগকালে জীবনের ঝুঁকি কমে আসবে। জলবায়ু পরির্বতনের ফলে জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানার আতঙ্ক বেড়ে গেছে কলাপাড়া উপজেলার সাড়ে ৪ লাখ মানুষের মধ্যে। এ অবস্থায় উপকূলীয়বাসীদের নিরাপদে রাখতে সরকারের প্রতি সব রকম প্রস্তুতির ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন উপকূলবাসী।


আরো সংবাদ



premium cement