জি-২০ আলোচনায় বাংলাদেশের অবদানের জন্য ব্রাজিলের কৃতজ্ঞতা
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ২২:১৪
ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরা বলেছেন, ‘বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ সংযোগ রয়েছে এবং কেবল পুনরুজ্জীবিত বহুপাক্ষিকতা, সংস্কার ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমেই তা মোকাবিলা করা সম্ভব।’
সোমবার ব্রাজিলের জি-২০ সভাপতিত্বের অগ্রাধিকার বিষয়গুলো নিয়ে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক বক্তৃতায় তিনি বলেন, ব্রাজিল বিশ্বাস করে গ্রুপটির এমন একটি জাতিগত সংস্থা তৈরির লক্ষ্যে কাজ করা উচিত যা সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় মূল বৈষম্যগুলো মোকাবিলা করেই নিজের উদ্দেশ্যগুলোতে সফল হবে।’
এ সময় জি-২০ আলোচনায় বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এরই মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈশ্বিক শাসন কাঠামো অভিযোজন ও বিকশিত করার সক্ষমতা প্রমাণ করেছে।
তিনি বলেন, ‘জি-২০ জোটটি নিজেই বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকটের ঠিক পরপরই তৈরি হয়েছিল। তবে এরই মধ্যে অনেক ক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য একটি মূল্যবান কাঠামো হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। বর্তমান বৈশ্বিক শাসন কাঠামো নিয়ে গুরুতর আলোচনার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে জি-২০ এর নিজস্ব অবদান রাখার সময় এসেছে।’
ভিয়েরা আরো বলেন, বিশ্বে বর্তমানে যেসব সমস্যার সমাধান সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, সেগুলো নিয়ে কাজ করতে উৎসাহিত করার জন্য জি-২০ বিশ্বের অন্যতম সেরা প্ল্যাটফর্ম বলা যায়। জি-২০ বহুপাক্ষিক শাসনের প্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত সংস্কারের জন্য যে সমর্থন দরকার, তা অর্জনে একটি অমূল্য হাতিয়ার হতে পারে।
দুই দেশের মধ্যে ৫২ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্কের ইতিহাসে এই প্রথম ব্রাজিলের কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করছেন।
ব্রাজিলের মন্ত্রী বলেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ যে অসাধারণ অর্থনৈতিক অগ্রগতি দেখিয়েছে তার সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের যে দীর্ঘ সময়ের সম্পর্ক তা আরো ঘনিষ্ঠ হয়েছে। বিষয়টিকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছি, ঢাকায় আমার উপস্থিতি তারই সাক্ষ্য দেয়।’
২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর ভারতের কাছ থেকে জি-২০-র সভাপতির দায়িত্ব পায় ব্রাজিল।
প্রেসিডেন্ট লুলার নেতৃত্বে ব্রাজিল ২০২২ সাল থেকে ৪টি উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে তৃতীয় দেশ (ইন্দোনেশিয়া, ভারত, ব্রাজিল এবং আগামী বছর দক্ষিণ আফ্রিকা) হিসেবে এই জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছে।
বৈষম্য বিষয়টিকে অগ্রাধিকারের দিক থেকে সবক্ষেত্রে জি-২০ এর এজেন্ডার কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছে ব্রাজিল।
জি-২০ জোটের সভাপতি হিসেবে ‘একটি ন্যায়সঙ্গত বিশ্ব এবং টেকসই গ্রহ নির্মাণ’ নীতির অধীনে রাষ্ট্রপতি লুলা তিনটি বিষয়ে সাধারণ অগ্রাধিকার দিয়েছেন- (১) সামাজিক অন্তর্ভুক্তি এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই; (২) শক্তি রূপান্তর এবং অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পরিবেশের ক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়নের প্রচার এবং (৩) বৈশ্বিক শাসন প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার।
সাম্প্রতিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনাগুলো দীর্ঘদিনের চ্যালেঞ্জকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে বলে মন্তব্য করেন ভিয়েরা।
তিনি বলেন, ‘ক্রমাগত ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও বৈষম্য; বিপর্যয়কর মানবিক পরিণতিসহ সশস্ত্র সঙ্ঘাত; জীবনযাত্রার মানে ব্যাপক বিপর্যয়; বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি ও ঋণের দুর্বলতা; খাদ্য ও জ্বালানির দামে উচ্চ অস্থিরতা এবং জলবায়ু সংকট তাদের মধ্যে অন্যতম।’
ভিয়েরা আরো বলেন, ‘যদিও এই সংকটগুলো আমাদের সবাইকে প্রভাবিত করে তবে সমানভাবে প্রভাবিত করে না। উন্নয়নশীল দেশগুলোই তাদের ফল ভোগ করে। এমনকি দেশের অভ্যন্তরেও, দরিদ্রতম ব্যক্তিরাই সবসময় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।’
ব্রাজিল বিশ্বাস করে যে জি-২০ হলো এমন একটি ফোরাম যা বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জগুলোর জন্য সম্মিলিত সমাধানকে উৎসাহিত করতে বিশেষভাবে প্রস্তুত।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের জনসংখ্যা এবং জিডিপিতে সম্মিলিত অংশ রাখার পাশাপাশি এর বৈচিত্র্যময় সদস্যপদের কারণে এবং ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই ভবিষ্যতের জন্য বিশ্বব্যাপী এজেন্ডা গঠনে গ্রুপটির অনন্য এবং প্রভাবশালী ভূমিকা রয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, এই প্রত্যাশা পূরণের জন্য, ব্রাজিল বিশ্বাস করে, জি-২০কে অবশ্যই উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে এবং বহুপাক্ষিক সহযোগিতার পূর্ণ সম্ভাবনা উন্মোচন করতে হবে।
ব্রাজিল বিশ্বাস করে, জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট (ইউএনএফসিসিসি) এবং এর প্যারিস চুক্তির অধীনে সাধারণ লক্ষ্য অর্জনে জি-২০ এর অর্থনীতি-বিস্তৃত প্ল্যাটফর্মগুলোর ভূমিকা এবং আর্থিক খাতের নতুন করে জড়িত হওয়া উচিত।
জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত আন্তঃসরকারি প্যানেল (আইপিসিসি) নিশ্চিত করেছে যে বিশ্ব একটি জরুরি জলবায়ু পরিস্থিতির মুখোমুখি।
ভিয়েরা বলেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প স্তরের চেয়ে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাওয়া রোধ করতে মানবজাতির হাতে কেবল এই দশকের শেষ পর্যন্ত সময় রয়েছে। এটি এমন একটি পরিণাম যা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, বাস্তুতন্ত্র ও অবকাঠামোর জন্য অত্যন্ত ঝুঁকির।
তিনি বলেন, যেভাবে অর্থনীতির কাঠামো এবং আর্থিক ক্ষেত্রগুলো একত্রিত ও পরিচালিত সেক্ষেত্রে গভীর ও ব্যাপক রূপান্তর ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের বিপজ্জনক হুমকির পর্যাপ্ত প্রতিক্রিয়া জানাতে লড়াই করতে হবে মানব সমাজকে।
ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, বিশ্বব্যাপী তিন-চতুর্থাংশ গ্রিনহাউস গ্যাসের (জিএইচজি) নির্গমনের জন্য দায়ী এমন বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিগুলোকে একত্রিত করার মাধ্যমে অংশীদারিত্ব, উচ্চ স্তরের সমন্বয় এবং নতুন নীতি ঐকমত্যের জন্য অনুঘটক হতে পারে জি-২০ জোট।
এর আগে আজ তিনি গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করেন।
ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ব্রাজিল ও প্রেসিডেন্ট লুলার প্রতি তার শ্রদ্ধা রয়েছে জেনে আমি আনন্দিত হয়েছি।
তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট লুলা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি, নীতি ও অগ্রাধিকার, বিশেষ করে উন্নয়ন ও সামাজিক ন্যায়বিচারের আকাঙ্ক্ষার মধ্যে সাদৃশ্যই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সূত্র : ইউএনবি