২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

তিস্তা নদীতে আরো দুটি খাল খনন নিয়ে যা জানা যাচ্ছে

-

চলতি মাসের শুরুর দিকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তিস্তা প্রকল্পের অধীনে আরো দুটি সেচ খাল খননের কথা জানা যায়। জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক হাজার একর জমির মালিকানা পশ্চিমবঙ্গের সেচ বিভাগকে হস্তান্তর করা হয় বলে স্থানীয় গণমাধ্যমে জানানো হয়।

প্রকাশিত খবরে বলা হয়, এই দুটি খাল খনন করা হলে ভারতের জলপাইগুড়ি ও কুচবিহার জেলার কৃষকরা উপকৃত হবে। কিন্তু তা বাংলাদেশের জন্য মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। কারণ, এই প্রকল্পের ফলে তিস্তার বাংলাদেশ অংশে পানির প্রবাহ আরো কমে যাবে।

তিস্তায় খাল খনন বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা এখনো কিছু জানি না।’

গত রোববার পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হবে।

তবে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান বলেন, ‘এ বিষয়টা আমাদের কাছে এখনো ওরকম কোনো তথ্য আসেনি। সেরকম তথ্য যদি আমরা আমাদের কুটনৈতিক চ্যানেলে পাই, তাহলে অবশ্যই সে বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিব।’

যৌথ নদী কমিশন
বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের সদস্য ড. মোহাম্মদ আবুল হোসেন অবশ্য জানিয়েছেন, তিস্তা প্রকল্পের অধীনে খাল খনন বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়ে গত ১৬ মার্চ ভারতের যৌথ নদী কমিশনের সদস্যের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি। তবে এখনো চিঠির কোনো উত্তর পাননি।

তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমাদের পক্ষ থেকে আমরা উদ্বেগ জানিয়েছি এবং তাদের বিস্তারিত পরিকল্পনা জানতে চেয়েছি। এমনিতে খাল সম্প্রসারণ করলে অসুবিধা নেই। কারণ গজলডোবায় বাঁধ আগে থেকেই আছে এবং খালও আগে থেকেই আছে।

ড. মোহাম্মদ আবুল হোসেন বলেন, ‘গজলডোবা ব্যারেজের ইমিডিয়েট আপস্ট্রিমে দুই দিকে দুটি ডাইভারশন ক্যানাল আছে। পশ্চিম দিকে একটা, পূর্ব দিকে একটা। পত্র-পত্রিকায় জানলাম, পূর্ব দিকের ক্যানালকেই ওরা এক্সটেন্ড করবে।’

যৌথ নদী কমিশনের এই সদস্য বলেন, বর্ষাকালে কৃষিকাজের জন্য পানি সরালে খুব একটা সমস্যা হবে না। কিন্তু যদি শুষ্ক মৌসুমে পানি সরিয়ে নেয়া হয়, তাহলে তা বাংলাদেশের জন্য সঙ্কট সৃষ্টি করবে।

পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির আপত্তির কারণে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারতের সাথে বাংলাদেশের তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি আটকে আছে। বরাবরই পানি না পাওয়ার বিষয়ে অভিযোগ তোলা হয় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে।

পানি বণ্টনের খাল
পশ্চিমবঙ্গের নর্থবেঙ্গল ইউনিভার্সিটির ভূগোল বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক সুবির সরকার বলেন, তিস্তা প্রকল্পের অধীনে যে খাল খনন করার কথা বলা হচ্ছে তা আসলে নতুন কিছু নয়। বরং তিস্তা বাঁধ নির্মাণ মূল প্রকল্পেরই অংশ।

তার মতে, প্রায় ২০ বছর আগে বাঁধ ও মূল খাল নির্মাণ শেষ হলেও পানি বণ্টন করায় খালগুলো এখনো তৈরি হয়নি। খালগুলো তৈরি না হওয়ায় পানি সেচের জন্য ব্যবহার করা যাচ্ছে না এবং অপচয় হচ্ছে।

যে জায়গা দিয়ে খালগুলো নির্মাণ করা হবে সেগুলো এত দিন অধিগ্রহণ করা যায়নি বলে খালের নির্মাণকাজ আটকে ছিল। চলতি মাসের শুরুর দিকে ভূমির মালিকানা পাওয়ার কারণে এখন খাল খননের কাজ শুরু হচ্ছে।

বিফল প্রকল্প?
পশ্চিমবঙ্গের সেচবিষয়ক মন্ত্রী ভৌমিকের উদ্ধৃতি দিয়ে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ জানায়, ‘২০০৯ সালে কেন্দ্রীয় সরকার এটাকে জাতীয় প্রকল্প ঘোষণা করলেও কোনো তহবিল দেয়নি। এখন যদি আমরা তহবিল নাও পাই, আমরা কাজ (খাল খনন) শেষ করার চেষ্টা করবো।’

তিস্তাবিষয়ক বিশেষজ্ঞ সুবির সরকার বলেন, তিস্তা নদীর বাম তীরে খাল খননের কথা বলা হচ্ছে। ওই তীরে এখনো কোনো স্থাপনা তৈরি করা হয়নি এবং সেটাই এখন করা হচ্ছে।

সত্তর দশকের শেষের দিকে ওই প্রকল্প পশ্চিমবঙ্গ সরকার হাতে নেয়ার পর থেকে কারিগরি ও আর্থিক সক্ষমতার অভাব এবং নির্মাণপর্যায়ে অনেক ত্রুটির কারণে এখন পর্যন্ত প্রকল্পের ৫০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান তিনি।

প্রকল্পটি শেষ হতে আরো ১০-১৫ বছর লাগবে উল্লেখ করে সুবির সরকার বলেন, পুরো প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর বাঁধটি তার মূল ধারণ ক্ষমতার এক চতুর্থাংশের বেশি পরিমাণ পানি ধারণ করতে পারবে না।

ফলে প্রকল্পটি কখনোই সফল হবে না বলে মনে করেন তিনি।

যা আছে প্রকল্পে
তিস্তা প্রকল্পটি পশ্চিমবঙ্গের কেন্দ্রীয় সরকার হাতে নিয়েছিল ১৯৭৫ সালে। তখন নয় লাখ ২২ হাজার কৃষক প্রকল্পের মাধ্যমে সেচ সুবিধার আওতায় আসবে বলে জানানো হয়েছিল। তিস্তার পানি খালের মাধ্যমে নদীটির দুই তীরেই সেচের জন্য সরবরাহ করার পরিকল্পনা ছিল প্রকল্পে। খালগুলোর সাথে ওই অঞ্চলে প্রবাহিত অন্য নদীগুলোর সংযোগ থাকারও কথা ছিল।

ভারতের গণমাধ্যম বলছে, তিস্তা প্রকল্পের আওতায় আরো দুটি খাল খনন করতে এক হাজার একর জমির মালিকানা নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের সেচ বিভাগ। গত ৩ মার্চ জমির মালিকানা সেচ বিভাগের কাছে হস্তান্তর করে জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন।

প্রতিবেদনগুলোতে বলা হচ্ছে, জমির মালিকানা পাওয়ার ফলে তিস্তার বাম তীরে দুটি খাল খনন করা হবে। খালের সাথে যুক্ত থাকবে জলপাইগুড়ি দিয়ে প্রবাহিত আরেকটি নদী জলঢাকা।

দুটি খালের মধ্যে একটি খালের দৈর্ঘ্য হবে ৩২ কিলোমিটার যেটি তিস্তা ও জলঢাকা- এই দুই নদীর পানিই বহন করে কুচবিহার জেলার চেংড়াবান্ধা পর্যন্ত যাবে। আর আরেকটি খালের দৈর্ঘ্য হবে ১৫ কিলোমিটার। দুটি খালই জলপাইগুড়ির গজলডোবায় খনন করা হবে।

এছাড়া জলপাইগুড়ি জেলার ধুপগুড়িতে থাকা আরেকটি খাল সংস্কার করা হবে বলেও প্রতিবেদনগুলোতে জানানো হয়।

খাল দুটি খনন করা হয়ে গেলে পশ্চিমবঙ্গের প্রায় এক লাখ কৃষক সেচের সুবিধার আওতায় আসবে। তবে এর ফলে তিস্তার বাংলাদেশ অংশে তিস্তার পানি প্রবাহ আরো কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষের মৃত্যু : বিশ্বব্যাংক নোয়াখালীতে ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত ‘আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ল’ ইয়ার্স কাউন্সিল কাজ করে যাচ্ছে’ পুকুরে পাওয়া গেল ১০০ ইলিশ অবন্তিকার আত্মহত্যা : জবির সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের জামিন আবারো নামঞ্জুর পাথরঘাটায় বদর দিবস পালনে দেড় হাজার মানুষের ইফতারি আদমদীঘিতে ৭২ হাজার টাকার জাল নোটসহ যুবক গ্রেফতার সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান মির্জা ফখরুলের জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : মন্ত্রী গাজীপুরে গাঁজার বড় চালানসহ আটক ২ দুই ঘণ্টায় বিক্রি হয়ে গেল ২৫০০ তরমুজ

সকল