রোহিঙ্গাদের জন্য বিশ্বব্যাংকের শরণার্থী নীতি নয় : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৩ আগস্ট ২০২১, ২১:১৩, আপডেট: ০৪ আগস্ট ২০২১, ০০:৩৩
বাংলাদেশে অবস্থানরত ‘বাস্তুচ্যুত’ রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের শরণার্থী নীতি সংস্কার প্রস্তাব প্রযোজ্য না হওয়ায় সরকার তা প্রত্যাখ্যান করেছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই বিষয়ে ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশের বিবেচনায় রোহিঙ্গারা ‘শরণার্থী’ না হওয়ায় তাদের ক্ষেত্রে প্রতিবেদনের বিষয়গুলো প্রযোজ্য নয়। আমরা যে রোহিঙ্গাদের রেখেছি তারা নির্যাতিত ও বাস্তুচ্যুত জনগণ, আমরা কিছুদিনের জন্য তাদেরকে এখানে আশ্রয় দিয়েছি। আমাদের অগ্রাধিকার ইস্যু হচ্ছে তারা ফিরে যাবে।’
‘মিয়ানমারও বলেছে, তাদেরকে নিয়ে যাবে। সুতরাং, এরা সাময়িকভাবে আশ্রয় নেয়া লোক, তারা শরণার্থী না,’ যোগ করেন তিনি।
শরণার্থীদের আশ্রয়দাতা দেশে অন্তর্ভুক্ত করাসহ একগুচ্ছ সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে ‘রিফিউজি পলিসি রিফর্ম ফ্রেমওয়ার্ক' নামে ১৬টি দেশের শরণার্থী ব্যবস্থাপনা কাঠামো একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে বিশ্বব্যাংক। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানটির ঢাকা কার্যালয় থেকে এই বিষয়ে মতামত চেয়ে অর্থমন্ত্রীকে গত ৩০ জুন একটি চিঠি দেয়া হয়েছিল।
প্রতিবেদনে শরণার্থীদের জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, কাজ, চলাফেরা, জমি কেনা, শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে সম্পৃক্ত হওয়াসহ সব ধরনের আইনি অধিকার দেয়ার কথা বলা হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গারা যেহেতু শরণার্থী না তাই আমরা এই রিপোর্টটা পুরোপুরি রিজেক্ট করেছি।’
প্রসঙ্গত, গত কয়েক দশকে মিয়ানমারে দমন-নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন অনেক রোহিঙ্গা। ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইনের গ্রামে গ্রামে ব্যাপক হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ শুরু করলে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশ আসেন।
মিয়ানমারের সাথে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আলোকে ২০১৯ সালে দু'দফায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেয়া হলেও কিছু শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা ফিরে যেতে আগ্রহী না হওয়ায় তা শেষ পর্যন্ত ভেস্তে যায়। এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হলে বিশ্বব্যাংকের তৈরি দুই হাজার কোটি টাকার তহবিল থেকে এদের জন্য কিছু টাকা দেয়া হবে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের সাথে বাংলাদেশের ‘চিন্তাভাবনার মোটেও মিল নেই’ মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক বলেছে, রোহিঙ্গাদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য রিইন্টিগ্রেট করতে হবে সমাজের সাথে। আমরা বলেছি, সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য তাদেরকে তাদের দেশে ফেরত যেতে হবে। আপনারা সে ব্যাপারে কাজ করেন।’
রোহিঙ্গাদের নিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিদেশী সরকারগুলো দীর্ঘমেয়াদী যেসব কর্মসূচি হাতে নিচ্ছে তাতে বাংলাদেশের সমর্থন নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, এটা ক্ষণস্থায়ী বিষয়, ক্ষণস্থায়ী কর্মসূচি হাতে নিতে হবে।’
‘সেখানে কিছু অ্যাডজাস্টমেন্ট হবে। কিন্তু এটা নিশ্চিত যে তারা আমাদের একটা চাপে রাখবে,’ বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
চাপ কেমন হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের নামে যে টাকাটা আসে, আমরা তার চেহারা দেখি না। আন্তর্জাতিক সংস্থা, ইউএনএইচসিআর সবাই এবং বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নামে টাকা পাঠায়, কিন্তু এগুলো বরাদ্দ করে রোহিঙ্গাদের এজেন্সিগুলোকে।’
বাংলাদেশ সরকারের এই প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের কাছে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটি এক বিবৃতিতে লিখেছে, ‘এটি বৈশ্বিক প্রতিবেদন, সুনির্দিষ্ট কোনো দেশের জন্য নয়।’
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন বলেন, ‘বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী নিরাপদে ও স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত তাদের চাহিদা পূরণ এবং আশ্রয়দাতা জনগোষ্ঠীর ওপর এর প্রভাব মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংক ৫৯ কোটি ডলারের অনুদান সহায়তা দিয়ে বাংলাদেশকে সাহায্য করছে।
‘প্রস্তাবিত রিফিউজি পলিসি রিফর্ম ফ্রেমওয়ার্কের লক্ষ্য, পরিস্থিতির সর্বোত্তম ব্যবস্থাপনার জন্য সংশ্লিষ্ট নীতিমালা ও প্রতিষ্ঠানসমূহকে জোরদারে বিশ্বজুড়ে শরণার্থীদের আশ্রয়দাতা দেশগুলো যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, তাতে বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তার কাযকারিতার মূল্যায়ন করা।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা