২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আটকেপড়া শ্রমিকদের বাহরাইন ফেরাতে দূতাবাসের দৌড়ঝাঁপ

বাহরাইনপ্রবাসীদের ফাইল ছবি - ছবি : সংগৃহীত

৪ বছর আগে একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাহরাইন সরকার বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়াই বন্ধ করে দেয়। যা এখনো অব্যাহত আছে। এ অবস্থায় যেসব বাংলাদেশী শ্রমিক দেশে ছুটিতে এসে আটকা পড়েছেন, তাদের মধ্যে অনেকের ভিসার মেয়াদই শেষের পথে। উপায় না পেয়ে দেশটিতে ফিরে যেতে তারা বাহরাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।

এরপরই রাষ্ট্রদূত কর্মীদের ফেরাতে ঢাকা-বাহরাইন রুটে ফ্লাইট চালু করার জন্য দেশটির কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠক করেছেন বলে জানা গেছে। তবে দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে গ্রিন সিগনাল দেয়া হয়নি। কারণ দেশটিতে হঠাৎ করেই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব আশঙ্কাজনকহারে বেড়েছে। পাওয়া গেছে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট। এর মধ্যে গত মে মাসে ৩০ জন বাংলাদেশী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

গতকাল বুধবার বাহরাইনের হামাদ টাউন এলাকায় বসবাসকারী স্থানীয় সাংবাদিক নোমান সিদ্দিকী বাহরাইনের সার্বিক পরিস্থিতি জানাতে গিয়ে নয়া দিগন্তকে বলেন, বর্তমানে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। যার কারণে বাহরাইন সরকার দুই দফায় আবারো ২৫ জুন পর্যন্ত লকডাউন বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, গত বছর করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৯০ জনেরও বেশি বাংলাদেশী মারা গেছেন। তার মধ্যে গত মে মাসেই মারা গেছেন ৩০ জন।

তাদের সবার দাফন সরকারের পক্ষ থেকে সম্পন্ন করা হয়েছে। এই মুহূর্তে প্রবাসী বাংলাদেশীদের অবস্থা কি, জানতে চাইলে নোমান সিদ্দিকী বলেন, বাহরাইনে চার বছর আগে বাংলাদেশীদের হাতে একজন ইমাম নৃশংসভাবে খুন হয়েছিলেন। এর পর থেকেই বাংলাদেশীদের নামে ওয়ার্ক পারমিট ইসু বন্ধ রয়েছে।

ফলে নতুন করে আর কোনো শ্রমিক আসতে পারছে না। যার কারণে কনস্ট্রাকশন বিভিন্ন কোম্পানিতে দেখা দিয়েছে বিদেশী কর্মী সঙ্কট। এই সঙ্কটের মধ্যেই যারা দেশে ছুটিতে গেছেন তারা ফ্লাইট বন্ধ থাকার কারণে আসতে পারছেন না। অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। এমন আটকাপড়া শ্রমিকের সংখ্যা হবে ২৫০-৩০০ জন। মেয়াদ চলে গেলে তারা আর কেউ এ দেশে আসতে পারবে না। যার কারণে অনেক শ্রমিক ও তাদের কোম্পানি কর্তৃপক্ষ স্বজন, দূতাবাসে সমস্যার কথা জানাচ্ছেন। একই সাথে তারা দাবি জানাচ্ছেন দ্রুত একটা পদক্ষেপ নিতে। এ ক্ষেত্রে দূতাবাস থেকে কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ও শ্রম কাউন্সেলর শেখ মোহাম্মদ তাওহীদুল ইসলাম আমাদের বাংলাদেশ কমিউনিটির সাথে করণীয় নিয়ে জুম মিটিং করেছেন।

একই সাথে রাষ্ট্রদূত দেশটির সরকারের সংশ্লিষ্টদের সাথে বৈঠক করে ফ্লাইট চালু করা যায় কি না সে ব্যাপারে অনুরোধ করেছেন। তবে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার কারণে এখনো দূতাবাস কোনো গ্রিন সিগনাল পায়নি বলে শুনেছি। তবে বাংলাদেশ কমিউনিটির পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অন্তত দেশে আটকেপড়া বাংলাদেশীদের ফেরাতে যাতে একটা বিমানের বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা যায় সে ব্যাপারে দূতাবাসেরপ্রতি কর্মীদের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। গতকাল দুপুরের পর বাহরাইনে নিযুক্ত শ্রম কাউন্সেলর শেখ মোহাম্মদ তাওহীদুল ইসলামের হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এ দিকে রোববার গালফ নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা-১৯ ভাইরাস মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়তে সহায়তা করার জন্য লাল তালিকাভুক্ত বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার নাগরিকদের জন্য সাময়িকভাবে কাজের পারমিট দেয়া বন্ধ করবে। দেশটির শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। উল্লেখ্য, গত ৫ মাসে মাত্র ৯ জন কর্মী বাহরাইনে পাড়ি জমান। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে দু’জন আর এপ্রিল মাসে সাতজন।


আরো সংবাদ



premium cement