১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

টিকা দিয়ে পাঠালে খরচ বাঁচবে প্রবাসীদের

টিকা দিয়ে পাঠালে খরচ বাঁচবে প্রবাসীদের - ছবি : সংগৃহীত

বিদেশগামীদের করোনার টিকায় অগ্রাধিকার দেয়ার দাবি জানিয়েছেন জনশক্তি ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, টিকা না নিয়ে সৌদি আরবে যাওয়ার পর সাত দিনের হোটেল কোয়ারেন্টিনে থাকতে হচ্ছে প্রবাসীদের। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় শুধুমাত্র দেশে ছুটিতে এসে আটকে পড়া প্রবাসীদের ফের কর্মস্থলে ফেরার পর কোয়ারেন্টিন বাবদ হোটেল ভাড়ার অর্ধেক বা ২৫ হাজার টাকা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু বিপুল বিদেশগামী (নতুন) এই সুযোগ পাচ্ছেন না কিংবা জুন মাসের পর আটকেপড়া প্রবাসীরাও এই ভর্তুকি পাবেন না। তাই যারা বিদেশে যাচ্ছেন তাদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দুই ডোজ করোনার টিকা দিয়ে পাঠানো হলে বিদেশগামীদের কোয়ারেন্টিনে থাকার অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হবে না। সরকারকেও ভর্তুকি গুণতে হবে না।

বায়রার সাবেক অর্থ সচিব ফখরুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে বলেন, গত বৃহস্পতিবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদের আমন্ত্রণে বায়রার সাবেক কিছু নেতা বৈঠক করেছি। যেখানে তিনিসহ বায়রার সদ্য সাবেক সভাপতি বেনজীর আহমদ এমপি, সাবেক মহাসচিব রিয়াজ উল ইসলাম, আলী হায়দার চৌধুরী, শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান, সাবেক সহসভাপতি আব্দুল হাইসহ আরো কয়েকজন জনশক্তি ব্যবসায়ী উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে প্রবাসী কল্যাণ সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন, বিএমইটির ডিজি শামসুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

ফখরুল ইসলাম বলেন, বৈঠকে সৌদি আরবে যাওয়া প্রবাসীদের বাধ্যতামূলকভাবে হোটেলে ৭ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হচ্ছে। এ বাবদ তাদের ৬০-৭০ হাজার টাকা লাগছে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীর সাথে বৈঠকে হোটেল ভাড়ার অর্ধেক বা ২৫ হাজার টাকা ভর্তুকি দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড এই টাকা দেবে। টিকা দেয়া হলে আর কোয়ারেন্টিন ইসুটা থাকবে না। অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হবে না বিদেশগামীদের। বৈঠক শেষে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী একই কথা জানান গণমাধ্যম কর্মীদের। তিনি বলেন, যারা ছুটিতে এসে আটকে পড়েছিলেন, আবার যাচ্ছেন এবং ভিসার মেয়াদ ৩০ জুনের মধ্যে শেষ হবে শুধু তারাই এই ভর্তুকি পাবেন।

রিক্রুটিং এজেন্সি ঐক্য পরিষদের সভাপতি এম টিপু সুলতান এই প্রতিবেদককে বলেন, (নতুন ও পুরনো) বিদেশগামীদের করোনা টেস্টের জন্য টোকেন দিয়ে থাকি আমরা। কিন্তু যদি ভিসাপ্রাপ্ত বিদেশগামীদের মেডিক্যাল করতে আসার দিন প্রথম ডোজ টিকা এবং পরবর্তীতে বিদেশে যাওয়ার আগেই দ্বিতীয় ডোজ টিকা দিয়ে পাঠাতে পারি তাহলে আর কোয়ারেন্টিনের বিষয়টি থাকে না। অর্থাৎ কোয়ারেন্টিন বাবদ যে ৬০-৭০ হাজার টাকা খরচ হয় এবং পুরাতন কর্মীদের জন্য সরকার যে অর্ধেক খরচ বা ২৫ হাজার টাকা ভর্তুকির ঘোষণা দিয়েছে তা আর দিতে হবে না। তিনি বলেন, একজন কর্মীকে ভিসা পাওয়ার পর থেকে অন্যান্য প্রসেসিং করতে যে সময় যায় এর মধ্যেই দুই ডোজ টিকা দেয়া সম্ভব। সে ক্ষেত্রে যদি টিকা কিনেও দিতে হয় তাতেও যেন অগ্রাধিকার দেয়া হয়, এই দাবি সরকারের কাছে। তার যুক্তি কোয়ারেন্টিনে থাকতে ৬০-৭০ হাজার টাকা খরচ হয়। পুরাতন কর্মীদের যদি অর্ধেক খরচ সরকার বহনও করে তাও তো ৩০-৪০ হাজার টাকা লাগবে। এত টাকা খরচ করার চেয়ে ১০ ডলারের টিকা কিনে হলেও যেন বিদেশগামীদের এটা নিশ্চিত করা হয়। এতে করে রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের কষ্টার্জিত কোটি কোটি টাকা বেঁচে যাবে।

বায়রার সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ও সম্মিলিত গণতান্ত্রিক জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা আলহাজ আবুল বাশার বলেন, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় বিদেশগামীদের যে প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে, তাদের কোয়ারেন্টিনে যে ভর্তুকি দিয়েছে এতে বিদেশগামীরা যেমন উপকৃত হবে, দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধিতেও তা ভূমিকা রাখবে। অতিরিক্ত খরচ থেকে তারা বেঁচে যাবেন, কিছুটা হলেও তাদের কষ্ট লাঘব হবে। তিনি বলেন, তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ও সচিবকে অনুরোধ করব যদি বিদেশগামীদের করোনার দুই ডোজ টিকা নিশ্চিত করা হয় অর্থাৎ দুই ডোজ টিকা দিয়ে বিদেশ পাঠানো হয় তাহলে কোয়ারেন্টিনের এই অতিরিক্ত খরচ/ঝামেলা থেকে তারা মুক্তি পাবেন। এতে করে সরকারকেও ভর্তুকি গুনতে হবে না।

এ দিকে পুরাতন কর্মীদের ক্ষেত্রে সৌদি আরবে যাওয়ার পর কোয়ারেন্টিনে থাকতে হোটেল ভাড়াবাবদ যে খরচ হচ্ছে তার অর্ধেক বা ২৫ হাজার টাকা দেয়ার ব্যাপারে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় যে ঘোষণা দিয়েছে তার বাস্তবায়ন ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। সৌদি আরবের জেদ্দার বাংলাদেশ কনসুলেট জেনারেল অফিসের শ্রম উইংয়ের কাউন্সিলর মো: আমিনুল ইসলাম গতকাল শনিবার প্রবাসীকল্যাণ সচিব বরাবর বাংলাদেশী কর্মীদের সৌদি আরবে যাওয়ার পর বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিন নিয়ে চিঠি দিয়েছেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘...গত ১৯ মের পর সৌদি আরবে আগামনকারী ‘নন ইমিউন’ বাংলাদেশী কর্মীদের জন্য সৌদি আরবে আগমনের পর সাত দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

শ্রম কল্যাণ উইংয়ের একটি প্রতিনিধিদল গতকাল সৌদিয়া এয়ার লাইন্স কর্তৃপক্ষের কাছ হতে এ দিন আগমনকারী ২০০ বাংলাদেশী কর্মীর তালিকা সংগ্রহ করেছে। তারা জেদ্দাস্থ ১১টি হোটেলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন পালন করছেন। কোভিড-১৯ প্রটোকল অনুসরণে তাদের সাথে সাক্ষাতের সুযোগ হয়নি। তাদের সাথে প্রতিনিধিদল ইন্টারকমে/মোবাইলে কথা বলে কুশলাদি বিনিময় করে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীর ঘোষিত আর্থিক সহায়তার (২৫ হাজার টাকা) বিষয়টি অবহিত করেছেন।

আরেক চিঠিতে মো: আমিনুল ইসলাম জানান, কর্মীরা বিমানবন্দরে অবতরণের পর স্বাভাবিক চেক আউটের মাধ্যমে ইতোমধ্যে বুকিং করা হোটেল কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট হোটেলে প্রেরিত হন। কোনো বাংলাদেশী কর্মী এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার ভোগান্তির শিকার হননি মর্মে নিশ্চিত হওয়া গেছে।


আরো সংবাদ



premium cement