২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

হজ নিয়ে বাংলাদেশকে এখনো কিছু জানায়নি সৌদি

হজ নিয়ে বাংলাদেশকে এখনো কিছু জানায়নি সৌদি - ছবি- সংগৃহীত

সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবার হজের প্রটোকল ঘোষণা করলেও বাংলাদেশ থেকে হজ করতে যাওয়া যাবে কি না, আর গেলেও কতজন যাবে তা এখনো জানা যায়নি। তবে বাংলাদেশের প্রস্তুতি আছে বলে জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হজ) এম হামিদ জমাদ্দার জানান, ‘সৌদি আববের পক্ষ থেকে হজের ব্যাপারে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। আমরা যোগাযোগ রাখছি। এ ব্যাপারে আমাদের দিক থেকে প্রস্তুত আছি।’

সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবার করোনার মধ্যে ৬০ হাজার মুসলিমের জন্য হজের সুপারিশ করেছে। তার মধ্যে ৪৫ হাজার হজযাত্রী সৌদি আরবের বাইরের দেশ থেকে যেতে পারবেন। গত বছর করোনার শুরুতে সৌদি আরবের বাইরের কোনো দেশ থেকে কোনো মুসলামানকে হজ করতে তারা যেতে দেয়নি। তবে এবার সেখানকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শর্ত সাপেক্ষে সুপারিশ করলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়।

শর্তের মধ্যে রয়েছে হজে যাওয়ার এক সপ্তাহ আগে করোনার টিকার দু’ডোজ পূর্ণ হতে হবে। যাওয়ার ৭২ ঘণ্টা আগে পিসিআর টেস্টে নেগেটিভ হতে হবে। সৌদি আরব গিয়ে ৭২ ঘণ্টা কোয়ারন্টিনে থাকতে হবে। সেখানেও টেস্টে নেগেটিভ হতে হবে। বয়স হতে হবে ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে।

তবে মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ওইসব দেশে করোনার অবস্থা, সংক্রমণ ও মুত্যুর হার বিবেচনা করছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। ভারতে করোনা পরিস্থিতি ও ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বাংলাদেশের জন্য হজের অনুমতিতে আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়।

হজে যেতে হলে টিকা লাগবে, এটা আগেই জানানো হয় বলে জানান হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভপতি শাহাদাত হেসেন তসলিম। তিনি বলেন, ‘তখন বলা হয়েছিল, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত টিকা নিতে হবে। আর চীন ও রাশিয়ার টিকায় হবে না বলে উল্লেখ ছিল। তবে যারা যেতে ইচ্ছুক তাদের আগেই অক্সফোর্ডের টিকা দেয়া হয়েছে। আর এবার নতুন কোনো তালিকা হয়নি। ২০২০ সালে যারা তালিকাভুক্ত হয়েছেন তারাই অনুমতি পেলে হজে যেতে পারবেন।’

স্বাভাবিক অবস্থায় বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজে যেতে পারেন। এর মধ্যে ৯৭ ভাগই যান বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়। বাকিরা সরকারি ব্যবস্থাপনায়। কিন্তু গত বছর করোনার মধ্যে ৬৫ হাজার ব্যক্তি হজে যাওয়ার জন্য টাকা জমা দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে চার হাজার জন তাদের টাকা তুলে নিয়েছেন। বাকি ৬১ হাজার এখনো তালিকাভুক্ত আছেন। এখন সৌদি আরব কতজনকে অনুমোদন দেয় তার ওপর নির্ভর করছে কতজন যেতে পারবেন। তবে এ সংখ্যা এক হাজারের বেশি হবে বলে মনে করেন না হাব সভাপতি।

বাংলাদেশ থেকে হজে যেতে মোট খরচ হয় তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা। যারা এ টাকা আগেই জমা দিয়ে রেখেছেন তাদের আরো টাকা দেয়া লাগতে পারে। হাব সভাপতি বলেন, এবার কোয়ারান্টিন, বিমান ভাড়া ও হোটেল খরচ অনেক বেড়ে যাবে করোনার কারণে। ফলে খরচ দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা এখনো সৌদি আরব থেকে হজের ব্যাপারে কোনো অফিসিয়াল চিঠি বা তথ্য পাইনি। পাওয়ার পর আমরা বলতে পারব খরচ বাড়বে কি না। কিন্তু আমাদের প্রস্তুতি আছে। আমরা শর্ট নোটিশেই পাঠাতে পারব। কারণ এ বছর তো আমরা নতুন করে কাউকে তালিকাভুক্ত করিনি। ২০১৯ সালে সর্বশেষ বাংলাদেশ থেকে সাধারণ ব্যক্তিরা হজে গিয়েছে। ২০২০ সালে করোনার মধ্যে যারা হজের টাকা জমা দিয়েছেন তাদের মধ্য থেকেই এবার যাওয়ার সুযোগ পাবেন। তাদের সব কিছু অটোমেশন করা আছে। অনেকের টিকাও দেয়া আছে। এবার নতুন করে কারোর হজ নিবন্ধন করা হয়নি।’

সৌদি আরবে বাংলাদেশের হজ কাউন্সিলর আছেন। তার সাথে বৃহস্পতিবারও যোগাযোগ করে কোনো তথ্য পায়নি ধর্ম মন্ত্রণালয়।

এ দিকে বাংলাদেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এখনো শেষ হয়নি। ব্ল্যাক ফাঙ্গাসেও আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। আবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে হজযাত্রীরা সৌদি আরবে যাবেন। এ পরিস্থিতি বাংলাদেশ থেকে হজে যাওয়ার কোনো ঝুঁকি বা মৃত্যু ঝুঁকি আছে কি না জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমইউ) সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা: কামরুল ইসলাম বলেন, ‘সৌদি আরব তো প্রটোকল ঘোষণা করেছে। সেটা মেনে হজ হলে আশঙ্কা অনেক কম। কিন্তু মাহামারীতে তো ঝুঁকি কিছুটা থাকেই।

স্বাভাবিক সময় সৌদি আরবে প্রতিবছর ১৮ লাখ মুসলমান হজ করেন। হজে যাওয়ার সংখ্যার দিক থেকে বাংলদেশের অবস্থান চতুর্থ। প্রথম ইন্দোনেশিয়া, দ্বিতীয় পাকিস্তান ও তৃতীয় ভারত৷

এবার যদি শেষ পর্যন্ত অনুমতি পাওয়া যায় তাহলে যারা হজের টাকা জমা দিয়েছেন তাদের অনেকেই বয়সসহ নানা নিয়ম নীতির কারণে যেতে পারবেন না। স্বাভাবিক সময় প্রস্তুতির জন্য পাঁচ মাস সময় লাগলেও এবার ১৫ দিন আগেও অনুমতি পেলে বাংলাদেশ থেকে হজে পাঠানো যাবে বলে মন্ত্রণালয় জানায়। জুলাই মাসে হজ অনুষ্ঠিত হবে।

হাব সভাপতি জানান, করোনা শুরুর পর থেকে ওমরাহও বন্ধ আছে। স্বাভাবিক অবস্থায় বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর দু’লাখ ৫০ হাজার মুসলিম ওমরাহ করতে সৌদি আরব যান।

সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement