২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

বাংলাদেশ-ভারতকে যুক্ত করছে যে নদীসেতু

ফেনী নদীর ওপর এই সেতুটি প্রায় দুই কিলোমিটার লম্বা - ছবি : বিবিসি

বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তে দুই দেশের মধ্যে সংযোগকারী প্রথম কোনো নদীসেতুর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে আগামীকাল মঙ্গলবার।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রোববার রাতে ঘোষণা করেছে, ফেনী নদীর ওপর নির্মিত এই সেতুটির নামকরণ করা হয়েছে ‘মৈত্রী সেতু’ এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মঙ্গলবার ভার্চুয়ালি এই সেতুটির উদ্বোধন করবেন।

প্রায় দুই কিলোমিটার লম্বা এই সেতুটি নির্মাণ করেছে ভারতের একটি সরকারি সংস্থা ন্যাশনাল হাইওয়েজ অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন লিমিটেড এনএইচআইডিসিএল।

সেতুর একপ্রান্তে দক্ষিণ ত্রিপুরার সাবরুম শহর, অন্যপ্রান্তে বাংলাদেশের রামগড় - আর চট্টগ্রাম বন্দরে সহজ অ্যাকসেসের মাধ্যমে এটি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের ছবিটাই আমূল বদলে দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্থল সীমান্ত চার হাজার কিলোমিটারেরও বেশি লম্বা - আর এই সুদীর্ঘ সীমান্তের অনেক জায়গাতেই ব্রহ্মপুত্র, পদ্মা, ইছামতী বা ফেনীর মতো বহু নদীই দুদেশকে আলাদা করেছে।

আন্তর্জাতিক সীমারেখা এই নদীগুলোর বুক চিরে গেলেও সীমান্তে দুই দেশকে সংযুক্ত করেছে - এমন কোনো সেতু কিন্তু এতদিন ছিল না।

সাবরুম আর রামগড়ের মাঝে ফেনী নদীর ওপর নির্মিত 'মৈত্রী সেতু' সেই অভাবই শুধু মেটাবে না, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরের একেবারে হাতের নাগালে এনে দেবে।

ত্রিপুরার উপ-মুখ্যমন্ত্রী তথা অর্থমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মা বিবিসিকে বলছিলেন, এই একটা সেতুই তার রাজ্যকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের গেটওয়ে বা প্রবেশপথে পরিণত করবে।

তার কথায়, ‘এর মাধ্যমে ত্রিপুরা হয়ে উঠবে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের লজিস্টিকাল গেটওয়ে। সুতরাং এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।’

‘দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের সাথে আমাদের তো সাংস্কৃতিক সম্পর্ক আছেই, ভাষাগত বন্ধনও আছে। এই সেতুটা খুলে গেলে আমাদের মধ্যে ব্যবসায়িক বন্ধনও আরো ভালোভাবে গড়ে উঠবে।’

‘এতে আমাদের নেইবারহুডের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করার খুব সুবিধে হবে। আমাদের ব্যবসায়ীরা পুরো ভারতে মালপত্র পাঠাতে পারবেন, পূর্ব এশিয়াতেও নতুন একটা দিগন্ত খুলে যাবে আমাদের জন্য।’

‘আজকের যুগে একটা লজিস্টিক হাব হয়ে উঠতে পারাটা খুব জরুরি। সেখানে ত্রিপুরার মতো ছোট্ট একটা স্থলবেষ্টিত রাজ্য, সেরকম একটা হাব হয়ে উঠতে পারে শুধু এই ব্রিজটার সু্বাদে,’ বলছিলেন ত্রিপুরার এই প্রবীণ রাজনীতিবিদ।

জিষ্ণু দেববর্মা আরো জানাচ্ছেন, এই রুটে ট্রানজিট বা ট্রানশিপমেন্ট দেয়ার জন্য বাংলাদেশ কোনো শুল্ক নেবে কি না, বা নিলেও কী হারে নেবে - সেটা এখনো স্থির হয়নি।

তার কথায়, ‘এটা আমার আসলে জানা নেই। তবে মনে হয় না এটা এখনো ওয়ার্ক আউট করা হয়েছে বলে - এখনো সেটা করাই হয়নি।’

এই মৈত্রী সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ১.৯ কিলোমিটার - আর ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এনএইচআইডিসিএল প্রায় ১৩৩ কোটি রুপি খরচ করে এই ব্রিজটি বানিয়েছে। সময় লেগেছে প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর।

ভারত সরকার আরো জানিয়েছে, মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী মোদি সেতুর সাবরুমের দিকে একটি ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্টেরও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।

সাবরুমে এই চেকপোস্টের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে মালামাল ও মানুষজনের চলাচলও অনেক সহজ হবে বলে বলা হচ্ছে।

দিল্লির থিঙ্কট্যাঙ্ক রিসার্চ অ্যান্ড ইনফর্মেশন সিস্টেমের অধ্যাপক ও আঞ্চলিক কানেক্টিভিটির বিশেষজ্ঞ প্রবীর দে-ও বলছেন, এই সেতুর মাধ্যমে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও বাংলাদেশ - উপকৃত হবে দুপক্ষই।

প্রবীর দে বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, ‘আমার মতে, এই ব্রিজটা একটা গেমচেঞ্জার। কারণ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে পণ্য চলাচল যেমন এতে সহজ হবে, তেমনি চট্টগ্রাম বন্দরেরও অ্যাকসেস মিলবে অনায়াসে।’

‘তার কারণ, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সীমান্তের রামগড়ের দূরত্ব মাত্র ৮০ কিলোমিটার - তারপরেই ব্রিজ পেরিয়ে ভারতে ঢুকে পড়া যাবে।’

‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যেই ভারতকে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন, সে দেশের পার্লামেন্টও সে প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে। তবে এই ট্রানজিট বা ট্রান্সশিপমেন্ট-টা শুধু ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্যই।’

‘এখন যেটা হয়, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কার্গো এই পথে আসতেই পারে না। কিন্তু ব্রিজটা খুলে গেলে তাদের মালপত্র চট্টগ্রাম দিয়ে সারা ভারতে আনা-নেয়া করাটা অনেক অনেক সহজ হবে।’

‘ফলে পরিবহনের খরচ অনেক কমবে, সময়ও কম লাগবে - যে দুটো ফ্যাক্টর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এতদিন প্রধান অসুবিধা ছিল,’ বলছিলেন ড. প্রবীর দে।

এর পাশাপাশি মৈত্রী সেতু যাতায়াতের জন্য খুলে গেলে আসাম, ত্রিপুরা বা মিজোরাম থেকেও বহু পর্যটক বাংলাদেশের কক্সবাজার কিংবা পার্বত্য চট্টগ্রামের মতো জায়গাগুলোয় অনেক সহজেই যেতে পারবেন।

প্রবীর দে বলছেন, ‘বাংলাদেশের কুমিল্লা-চট্টগ্রাম অঞ্চলের নাগরিকরাও পর্যটন বা হেল্থ ট্যুরিজমে অনেক সহজে ত্রিপুরায় আসতে পারবেন, আগরতলা থেকে ফ্লাইট ধরে ভারতের নানা প্রান্তেও যেতে পারবেন।’

২০১৫ সালের জুন মাসে যখন এই সেতু প্রকল্পের সূচনা করা হয়, তখন ঢাকাতে দুদেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও শেখ হাসিনা মিলে যৌথভাবেই সেটির উদ্বোধন করেছিলেন।

তবে এখন যখন ফেনী নদীর সেতুটি যাতায়াতের জন্য খুলে দেয়া হচ্ছে, তখন ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি কিন্তু বলছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিই সেটির উদ্বোধন করবেন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব থাকবে কি না সে ব্যাপারে ওই বিবৃতিতে কিছু বলা হয়নি।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
ড. ইউনূসের ইউনেস্কো পুরস্কার নিয়ে যা বললেন তার আইনজীবী একনেকে ৮৪২৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন সান্তাহারে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে যুবক নিহত জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : আব্দুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রের সেতু ভাঙ্গার প্রভাব পড়বে বিশ্বজুড়ে! নাশকতার মামলায় চুয়াডাঙ্গা বিএনপি-জামায়াতের ৪৭ নেতাকর্মী কারাগারে হারল্যানের পণ্য কিনে লাখপতি হলেন ফাহিম-উর্বানা দম্পতি যাদের ফিতরা দেয়া যায় না ১৭ দিনের ছুটি পাচ্ছে জবি শিক্ষার্থীরা বেলাবতে অটোরিকশা উল্টে কাঠমিস্ত্রি নিহত রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদন

সকল