১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভারত থেকে আরো ৪ কোটি টিকা কিনতে চাইছে বাংলাদেশ

ভারত থেকে আরো ৪ কোটি টিকা কিনতে চাইছে বাংলাদেশ - ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ সরকার নতুন করে আরো চার কোটি ডোজ টিকা কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্বাস্থ্য সচিব বিবিসিকে জানিয়েছেন, ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকেই অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার অতিরিক্ত এই চার কোটি ডোজ কেনার চেষ্টা করা হচ্ছে।

এর আগে বাংলাদেশ ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সাথে তিন কোটি ডোজ কেনার যে চুক্তি করেছে, তার ভিত্তিতে গত দুই মাসে ৭০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত ৪৫ লাখের বেশি মানুষ টিকা নেয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মানুষের মাঝে এখন আগ্রহ যে হারে বাড়ছে, তাতে টিকার যোগানে ঘাটতি হলে চাহিদা সামলানো কঠিন হতে পারে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুল মান্নান বলেছেন, ‘যোগানটার ব্যাপারে আমরা একটু চিন্তিত তো আছিই। তবে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ আমরা রাখছি। এখন পর্যন্ত হতাশ হওয়ার মতো কোন কিছু আমরা পাই নি। তার মানে আমরা টিকা পাব।’

এই বয়সসীমার মধ্যেই প্রায় চার কোটি মানুষকে টিকা দিতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই হিসাব দিচ্ছে। এছাড়া অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেশের শিক্ষক এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবাসিক হলে থাকা শিক্ষকদের টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

কিন্তু এখন বাংলাদেশ সরকার বেসরকারি ওষুধ কোম্পানি বেক্সিমকোর মাধ্যমে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির ভিত্তিতে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার তিন কোটি ডোজ আনছে। তাতে একজনের দুই ডোজ করে দেড় কোটি মানুষকে টিকা দেয়া যাবে।

এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভ্যাক্সের এক কোটি নয় লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশ পাবে - যা চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট নয় বলে বলা হচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে বুধবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকে আরও চার ডোজ টিকা কেনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: আব্দুল মান্নান বলেছেন, ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকেই আগের চুক্তির মাধ্যমেই এই টিকা আনার চেষ্টা আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।

‘আমরা বেক্সিমকোর মাধ্যমে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সাথে যোগাযোগ রাখছি। তারা আমাদেরকে এখন যে ২০ লক্ষ ডোজ টিকা দিয়েছে। আর ৩০ লক্ষ ডোজ এ মাসেই দেবে। এ মাসেই আরো ৫০ লক্ষ ডোজ দেয়ার কথা আছে।’

‘আমরা আরো চার কোটি ডোজ টিকা একইভাবে চুক্তির মাধ্যমে ক্রয় করে নিয়ে আসবো। নতুন চার কোটি ডোজ কেনার জন্য আমরা সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছি’ তিনি বলেন।

সচিব মান্নান আরো বলেছেন, ‘আমরা এখন তিন কোটি ডোজ সিরাম থেকে পাচ্ছি। আরো অতিরিক্ত সাড়ে তিন কোটি বা চার কোটি ডোজ সিরাম থেকেই অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আমরা কিনে আনবো। এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন।’

ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার আরও চার কোটি ডোজ টিকা কেনার ক্ষেত্রে কি নতুন করে চুক্তি করতে হবে, নাকি আগের চুক্তির ভিত্তিতেই আনা যাবে?

এই প্রশ্নে স্বাস্থ্য সচিব বলেছেন, ‘আমরাতো আশা করছি, আগের চুক্তিটাই কন্টিনিউ করা যেতে পারে। এবং এটা আলোচনা সাপেক্ষে হবে।’

তিনি উল্লেখ করেছেন, সরকার টিকা দেয়ার কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে। এই কার্যক্রম যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেজন্য তারা আগাম এসব ব্যবস্থা নিচ্ছেন।

আগের চুক্তি অনুযায়ী সিরাম ইনস্টিটিউট তিন কোটি ডোজের মধ্যে প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে সরবারাহ করার কথা বলেছিল। কিন্তু গত জানুয়ারি মাসে প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ দিলেও পরের মাসে তারা ২০ লাখ ডোজ টিকা দিয়েছে।

চুক্তি অনুযায়ী সরবরাহ ঠিকমত পাওয়া যাবে কিনা এ ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে ঢাকায় বেক্সিমকোর কর্মকর্তা রাব্বুর রেজা কোন মন্তব্য করেননি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক নাসরিন সুলতানা বলেছেন, শুধু সিরাম ইনস্টিটিউটের ওপর নির্ভর না করে টিকার যোগানের বিকল্প উপায় খোঁজা প্রয়োজন।

টিকার সংগ্রহ বাড়ানো সম্ভব না হলে সমস্যা হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

‘শুরুতে ভ্যাকসিন দেয়া না দেয়ার ব্যাপারে মানুষের মধ্যে আতংক যেটা ছিল, কিন্তু ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হওয়ার পর মানুষের মাঝে আগ্রহটা বেড়েছে। এখন মানুষের আগ্রহ যে হারে বাড়ছে, তাতে যারা প্রথম ডোজ দিয়েছে, তারাই দ্বিতীয় ডোজ পাবে কিনা - সে সন্দেহ আছে। কারণ আমাদের সরবরাহ সেভাবে নাই।’

তবে স্বাস্থ্য সচিব মো. আব্দুল মান্নান বলেছেন, টিকা সংগ্রহে কোন সমস্যা হবে না বলে তাদের বিশ্বাস। তিনি উল্লেখ করেন যে, টিকা সংগ্রহের বিকল্প জায়গা অনেক কম।

তিনি বলেছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন আছে এবং পরীক্ষিত-এই দু’টি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ টিকা সংগ্রহ করছে। সেকারণে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ওপর বেশি নির্ভর করতে হচ্ছে।

‘জনসন অ্যাণ্ড জনসন তাদের দেশের (যুক্তরাষ্ট্র) বাইরে অন্য কোথা্ও তারা সরবরাহ করার বা বিক্রি করার সিদ্ধান্ত এখনও নেয়নি। আমরা চেষ্টাও করছি। আমরা যে অন্যান্য দেশের সাথে চেষ্টা করিনি, তা নয়। কিন্তু আমাদের তাপমাত্রার সাথে মিলতে হবে। আমরাতো তাপমাত্রার কারণে ফাইজারের টিকা আনতে পারছি না’- তিনি বলেন।

তিনি তাদের বিকল্প উপায় খোঁজার চেষ্টা সম্পর্কে আরও বলেন, ‘স্পূটনিক (রাশিয়ার) তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন নেয়নি। ভারত-বায়োটেক এখানে করতে চায়, তারা ট্রায়ালে যেতে চায়। কিন্তু আমরা আমাদের মানুষের ওপর ট্রায়াল করতে দিতে চাচ্ছি না।’

‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সবসময় একটা কথা বলছেন যে, ভ্যাকসিন নিয়ে বাংলাদেশে নতুন করে ট্রায়াল দিয়ে মানুষের জীবন নিয়ে কোন ঝুঁকি নেয়া যাবে না। যেগুলোর ট্রায়াল হয়ে আছে বা পরীক্ষিত, সেগুলোই আমরা নেবো’ বলেন স্বাস্থ্য সচিব।

কর্মকর্তারা আরো জানিয়েছেন, বাংলাদেশে আগামীতে টিকা কেনার জন্য বিদেশি দাতা সংস্থাগুলো প্রায় সাড়ে তিনশ’ কোটি ডলার অর্থ সহায়তা দেয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement