২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

অনিশ্চয়তায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার আবারো সক্রিয় সেই ‘বেস্টিনেট’

অনিশ্চয়তায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার আবারো সক্রিয় সেই ‘বেস্টিনেট’ - ছবি : সংগৃহীত

দীর্ঘ দিন বন্ধ মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার আবারো কূটনৈতিক উদ্যোগে যখন খোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তখনই আবার পুরনো সিন্ডিকেটের হোতা দাতো শ্রী আমিন নুর গংদের অপতৎপরতা শুরু হওয়ার অভিযোগ উঠছে। এবারো চক্রটি নানা কৌশলে ২৫ সদস্যের সিন্ডিকেট করে এ দেশ থেকে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার নানা ফন্দি আঁটছে বলে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে ব্যাপক গুঞ্জন শুরু হয়েছে।

সাধারণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, এমনটি যদি হয়ে-ই যায়, তাহলে সম্ভাবনাময় শ্রমবাজারটি খোলার পরিবর্তে আবারো বড় ধরনের অনিশ্চতার মধ্যে পড়তে পারে। জনশক্তি প্রেরণের সাথে সম্পৃক্ত সহস্রাধিক রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকসহ অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্টরা এমন আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। অভিযোগ উঠেছে, এবার শ্রমবাজারে ‘সিন্ডিকেট’ করার জন্য নেপথ্যে নাকি ‘মধ্যম’ সারির প্রভাবশালী কিছু কয়েক ব্যক্তি মদদ দিচ্ছেন যারা নাকি এই ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত নন।

এ দিকে গত সপ্তাহে ধানমন্ডিতে সৌদি আরবের জনপ্রিয় ফাস্ট ফুড হারফি’র পঞ্চম আউটলেট উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ নয়া দিগন্তের প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের উত্তরে শুধু বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার বিষয়ে নতুন করে যৌথ মিটিং আবার কবে হবে সে ব্যাপারে কিছু বলা যাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত সেখান থেকে কিছুই (খবর) আসেনি।’

গতকাল শনিবার একাধিক জনশক্তি ব্যবসায়ী নয়া দিগন্তকে নাম না প্রকাশের শর্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শুধু সিন্ডিকেট করে কর্মী পাঠানোর অভিযোগেই মালয়েশিয়ার বাজার বন্ধ হয়ে গিয়েছে, যা এখনো বন্ধ আছে। আমরা চাই এবার যেন কোনোভাবেই ২৫-৩৫ সদস্যের সিন্ডিকেট করে চক্র তৈরি না হয়। কারণ সিন্ডিকেট হলে সাধারণ ব্যবসায়ীরা বেকায়দায় পড়বেন। আবারো বেড়ে যাবে অভিবাসন ব্যয়। হবে নানা ধরনের অনিয়ম আর দুর্নীতি। বায়রার সাবেক একজন নেতার দাবি, নেপাল থেকে মালয়েশিয়ায় স্বচ্ছ ও স্বল্প ব্যয়ে প্রায় ১৬ শ’ রিক্রুটিং এজেন্সি সম্মিলিতভাবে কর্মী পাঠাচ্ছে। এতে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। কম টাকায় কর্মী যেতে পারছে, যা সেখানে এখন মডেল হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশ থেকেও নেপালের ফর্মুলায় লোক পাঠানো হোক। তার মতে, লাইসেন্স যত বেশি হবে শ্রমিক যাওয়ার হার তত বাড়বে। আর লাইসেন্স সংখ্যা কম হলে শ্রমিকও কম যাবে। এতে বাড়বে উচ্চ অভিবাসন ব্যয়।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে সিন্ডিকেটবিরোধী লাইসেন্স মালিকরা রাজপথে আন্দোলন শুরু করেছেন। তারাা যেকোনো মূল্যে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে সিন্ডিকেটের রূকার দাতো শ্রী আমিন নুর গংদের ঠেকাবেন বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এর পাশাপাশি তারা আদালতে আইনি লড়াই চালিয়েও যাওয়ারও চিন্তাভাবনা করছেন। এতে করে আবারো অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়তে পারে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার।

অপর এক প্রশ্নের উত্তরে ওই ব্যবসায়ীরা নয়া দিগন্তকে বলেছেন, সিন্ডিকেটের অপতৎপরতার কারণে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়েছিল। তখন কর্মী প্রেরণে বেস্টিনেট যে পদ্ধতি অবলম্বন করেছিল, তাতে করে কর্মীদের কাছ থেকে ধাপে ধাপে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার পথ তৈরি হয়েছিল। নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে একপর্যায়ে মালয়েশিয়ার সরকার বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। এই অবস্থায় বাংলাদেশ সরকার আবারো শ্রমবাজার চালুর লক্ষ্যে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করে। এর ফলে সম্প্রতি দু’দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এক দিনের সেই বৈঠক দু’দিনে গড়ায়। তারপরও কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়ে যায়।

তারা বলেন, শুনেছি, কুয়ালালামপুরের পক্ষ থেকে ২৫ রিক্রুটিং এজেন্সি ও বিতর্কিত বেস্টিনেট কোম্পানির মালিকানাধীন এফডব্লিউসিএমএস প্রযুক্তির মাধ্যমে আবারো কর্মী নেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু শ্রমিক ও খাত-সংশ্লিষ্টদের কথা তথা দেশের কথা বিবেচনা করে ঢাকা এর বিরোধিতা করে সব বৈধ এজেন্সিকে সমানভাবে শ্রমিক পাঠানোর সুযোগ দেয়ার কথা বলেছেন।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব ড. আহমেদ মনিরুছ সালেহিনের সাথে গতকাল সন্ধ্যার পর যোগাযোগ করা হলে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি ২৫ অথবা ৩৫ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে এবার সিন্ডিকেট করে শ্রমিক পাঠানোর যে কর্মকাণ্ড গোপনে চলছে সেগুলো এখনই নজরদারির মধ্যে এনে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। নতুবা আবারো সিন্ডিকেট করে বাজার খুলে গেলে চক্রটি অসহায় মানুষের হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে যেতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের শ্রমবাজারটি সিন্ডিকেট মুক্ত করতে জি টু জি প্লাস সিস্টেমটি বাতিল করে দেয় মাহাথির মোহাম্মদ সরকার। শ্রমিক প্রেরণে ব্যাপক দুর্নীতি আর অনিয়মের অভিযোগ ওঠার কারণে ২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে মালয়েশিয়ান কোম্পানি বেস্টিনেট ও সিনারফাক্সের সব ধরনের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। দাতো শ্রী আমিন নুর এই দু’টি কোম্পানির মালিক।


আরো সংবাদ



premium cement