২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সৌদি দূতাবাসের ১২ শর্তে বেকায়দায় রিক্রুটিং এজেন্সি

সৌদি দূতাবাসের ১২ শর্তে বেকায়দায় রিক্রুটিং এজেন্সি - ছবি : সংগৃহীত

সৌদি আরবে জনশক্তি প্রেরণের সাথে সম্পৃক্ত রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ও ম্যানেজারের স্নাতক ডিগ্রির সার্টিফিকেট, অফিস স্টাফদের পুলিশ ক্লিয়ারেন্সসহ সব কাগজপত্র আপডেট করে এক সপ্তাহের মধ্যে পাসপোর্ট বক্সে জমা দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকাস্থ সৌদি দূতাবাস। যারা এ নির্দেশ মানবে না তাদের বিরুদ্ধে দূতাবাস প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলেও জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

গত সোমবার সৌদি দূতাবাসের কনসুলার সেকশন থেকে অনুমোদিত সব রিক্রুটিং এজেন্সি অফিসে এমন নোটিশ পাঠানো হয়। দূতাবাসের নোটিশ পেয়ে অনেকটা বেকায়দায় পড়ে যান রিক্রুটিং এজেন্সি মালিক ও তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

সূত্র মোতাবেক, দূতাবাসের নোটিশে যে ১২টি শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে তার কয়েকটি এক সপ্তাহের মধ্যে পূরণ করা প্রায় অসম্ভব বলেই মনে করছেন তারা। এ ব্যাপারে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এজেন্সি মালিকরা।

সৌদি দূতাবাসের কনসুলার সেকশনের অফিস প্যাডে রিক্রুটিং এজেন্সি অফিসে আরবি ও বাংলায় লেখা চিঠিতে বলা হয়, ‘ঢাকাস্থ সৌদি দূতাবাসের কনসুলার সেকশন কর্তৃক অনুমোদিত সব রিক্রুটিং অফিসের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, অত্র নোটিশ প্রদানের তারিখ থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে সব রিক্রুটিং অফিসকে তাদের সব কাগজপত্র আপডেট করে পাসপোর্ট জমা দেয়ার বক্সে জমা দিতে হবে। কোনো অফিস অত্র নোটিশের ব্যত্যয় ঘটালে দূতাবাস প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

নোটিশে ১২টি শর্ত উল্লেখ করে বলা হয়, সৌদি দূতাবাস আশা করছে, অনুমোদিত সব অফিস তাদের তথ্য আপডেট করে নথিগুলো সরবরাহ করবে। শর্তের অন্যতম হচ্ছে- শ্রম মন্ত্রক এবং বিদেশ বিষয়ক মন্ত্রণালয় দ্বারা অনুমোদিত একটি বৈধ অফিস লাইসেন্স, বৈধ ট্রেড লাইসেন্স, শ্রম মন্ত্রক এবং বিদেশবিষয়ক মন্ত্রক কর্তৃক অনুমোদিত গৃহকর্মী নিয়োগের অনুমতিপত্র (ফোর গ্রুপ এ), শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিদেশবিষয়ক মিনিস্ট্রি দ্বারা মালিক এবং পরিচালকের স্নাতক ডিগ্রির প্রশংসাপত্র, অফিসের সব কর্মীর জন্য পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের প্রশংসাপত্র, শ্রম মন্ত্রক এবং বিদেশবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দ্বারা অনুমোদিত অফিসের সব কর্মীর জন্য প্রত্যায়িত হতে হবে।

প্রায় ৩ দশক ধরে সৌদি আরবে জনশক্তি প্রেরণের সম্পৃক্ত একাধিক রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক নাম না প্রকাশের শর্তে গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, ঢাকার সৌদি দূতাবাস হঠাৎ করে আমাদের এনলিস্টেড রিক্রুটিং এজেন্সি অফিসে চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠিতে নতুন করে শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট চাওয়া হয়েছে। তাও আবার ডিগ্রির সার্টিফিকেট। একই সাথে এক সপ্তাহের মধ্যে সব স্টাফের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটও অবশ্যই দিতে বলা হয়েছে। যারা দেবে না তাদের বিরুদ্ধে দূতাবাস কর্তৃক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি যখন ৩০ বছর আগে এই ব্যবসায় করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে লাইসেন্স নিয়েছিলাম তখন আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল এইচএসসি। এতদিন পর এখন আমি কোথা থেকে (বুড়া বয়সে) ডিগ্রির সার্টিফিকেট জোগাড় করে দেবো ? তাছাড়া এই সার্টিফিকেট আমাকে এখন কে দেবে? শুধু আমার না আমার ম্যানেজারের একই সার্টিফিকেট চাওয়া হয়েছে। অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে আমরা কিভাবে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সংগ্রহ করব। এটা তো কোনোভাবেই জোগাড় করা সম্ভব না।

তাই এসব বিষয় নিয়ে আমাদের এজেন্সি মালিকদের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধিদল সোমবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমদ মুনিরুছ সালেহিনের সাথে বৈঠক করেছে। বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে তিনি বৈঠক থেকেই পররাষ্ট্র সচিব ও সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সাথে কথা বলেন। প্রতিনিধিদলকে সচিব বলেছেন, তিনি লিখিতভাবে বিষয়টি পররাষ্ট্র সচিবকে অবহিত করবেন। মালিকরা বলছেন, এখন আমরা আশা করছি দূতাবাসের দেয়া নোটিশের বিষয়টি অতি সত্বর সমাধান হবে।


আরো সংবাদ



premium cement