২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেয়ার প্রশ্নে অনিশ্চয়তা কাটছে না

রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেয়ার প্রশ্নে অনিশ্চয়তা কাটছে না - ছবি : সংগৃহীত

তিন হাজারের মতো রোহিঙ্গা ভাসানচরে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে সরকার এখনো তাদের স্থানান্তর করার তারিখ ঠিক করতে পারেনি। বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলেছেন, জাতিসঙ্ঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করছে।

আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মতে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেয়ার আগে জায়গাটি যে বসবাসের জন্য নিরাপদ তা নিশ্চিত করতে হবে।

সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মো. এনামুর রহমান বলেন, এবিষয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের ভাসানচর পরিদর্শন করানোর পরিকল্পনাও নিয়েছে সরকার।

দু’বছর আগে সরকার ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কিন্তু রোহিঙ্গাদের অনিচ্ছার কারণে ক্যাম্প থেকে এখনো পর্যন্ত সেখানে একজনকেও পাঠানো সম্ভব হয়নি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের এক বক্তব্য সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে যেখানে বলা হয়, ডিসেম্বরেই আগ্রহী রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সাথে জড়িত কর্মকর্তারাও বলেছেন, স্থানান্তরের প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করার ব্যাপারে সরকারেরও তাগিদ রয়েছে।

তারা উল্লেখ করেছেন, এখন রোহিঙ্গাদের অনেকে ভাসানচরে যেতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তারা আগ্রহী প্রায় তিন হাজার জনের তালিকাও করেছেন। কিন্তু স্থানান্তর শুরু করার তারিখ তারা ঠিক করতে পারছেন না। সেজন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর আপত্তির কথা তুলে ধরা হচ্ছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী ডা: মো: এনামুর রহমান বলেছেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদেরও ভাসানচর পরিদর্শনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে। ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় এবং ইউএনসিআরসহ সংশ্লিষ্ট সকলে মিলে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে যেতে আগ্রহী করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। যারা স্বেচ্ছায় যাবে, শুধু তাদেরকেই নেয়া হবে। এবং জাতিসঙ্ঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ওই প্রকল্প পরিদর্শন করবেন। সেরকম একটা আয়োজনও আমরা করছি।’

কর্মকর্তারা বলেছেন, স্থানান্তর শুরু করার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা এখনো কাটছে না।

সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকেই বিভিন্ন সময় অভিযোগ করা হয় যে, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরে আপত্তি করছে।

তবে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলেছে, তারা বিষয়টাতে আপত্তি করেনি। তাদের পক্ষ থেকে গত বছর ভাসানচরে মিশন পাঠিয়ে সুরক্ষা এবং কারিগরী মূল্যায়ন করার জন্য সরকারকে চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো জবাব এখনো মেলেনি।

জাতিসঙ্ঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার বা ইউএনএইচসিআর-এর একজন মুখপাত্র লুইস ডনোভান বলছিলেন, ‘জাতিসঙ্ঘ, সরকারকে এরই মধ্যে জানিয়েছে যে তারা ভাসানচরে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের সাথে দেখা করার জন্য একটি সুরক্ষা মিশন (প্রটেকশন মিশন) পাঠাতে আগ্রহী। আমরা এরই মধ্যে আমাদের শর্তাবলী (টার্মস অফ রেফারেন্স) তাদেরকে জানিয়েছি এবং তাদের উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছি।

লুইস ডনোভান বলেছেন, কোনো স্থানান্তর শুরু হবার আগেই জাতিসঙ্ঘ ওই দ্বীপে আরো বৃহৎ একটি সুরক্ষা এবং কারিগরী পর্যালোচনা করতে আগ্রহী। তবে এই মিশনটি হবে সেটি থেকে আলাদা। সরকার যা বলেছে, অবশ্যই যেকোনো স্থানান্তরই হতে হবে স্বেচ্ছায়। আমরা আশা করছি ওই দ্বীপে আমরা এই সুরক্ষা ও কারিগরী মূল্যায়নটি করতে পারবো।

যদিও সরকার এখন বলছে, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের ভাসানচর পরিদর্শনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো যে কারিগরী মূল্যায়ন করতে চাইছে ওই ব্যাপারে সরকার এখনো কিছু বলছে না।

কক্সবাজারের কুতুপালং শরণার্থী শিবির থেকে রোহিঙ্গা নেতা মো: আমিন বলেছেন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ ভাসানচরে যেতে রাজি আছে। আবার অনেকে যেতে চায় না।

ভাসানচরে অবকাঠামো নির্মাণের পর গত মে মাসে ৩০৬ জন রোহিঙ্গাকে সেখানে নেয়া হয়েছে। তারা অবশ্য নৌকায় করে মালেয়েশিয়া যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে ধরা পড়েছিল। কিছুদিন আগে তারা সেখান থেকে তাদের ফেরত পাঠানোর দাবিতে বিক্ষোভ করেছিল। তখন তাদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল।

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করা শিউলী শর্মা বলেছেন, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের খাদ্যের নিরাপত্তাসহ সার্বিকভাবে সুরক্ষা নিশ্চিত না করে স্থানান্তর করা ঠিক হবে না।

কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সাথে সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের তারিখ সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা করে ঠিক করবে। তবে তারা মাঠ পর্যায়ে প্রস্তুতি এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement