২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ‘সমন্বিত ভূমিকা’ চায় যুক্তরাষ্ট্র

- সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের সকল প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে ‘বিস্তৃত এবং ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠে’ সমন্বিত ভূমিকা চেয়েছে যাতে রোহিঙ্গারা আবারো নির্বাসিত হওয়ার কোনো ভয় ছাড়াই তাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার আত্মবিশ্বাস ফিরে পায়। নির্বাচিত কয়েকজন সাংবাদিকের সাথে এক গোলটেবিল আলোচনায় মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন ই বিগান বলেন, ‘আমাদের মিয়ানমারের প্রতিবেশী সবাইকেই প্রয়োজন (এটি করার জন্য)।’

মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমে বাংলাদেশ ও ভারত, উত্তর-পূর্বে চীন, লাওস এবং থাইল্যান্ড পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে এবং আন্দামান সাগর ও বঙ্গোপসাগর দেশটির দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত।

তিনি মিয়ানমারের সকল প্রতিবেশীকে রোহিঙ্গা সংকট এবং রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরতে সহায়তা করার জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরির বিষয়ে তাদের যে প্রত্যাশা রয়েছে সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ স্পষ্ট থাকতে উৎসাহিত করেছেন। বিগান স্পষ্ট জানিয়েছেন যে উদারতা দেখালেও, এটি বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব নয়।

সংকট সমাধানে প্রতিটি সম্ভাব্য উপায় খুঁজে বের করা দরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটি একটি বৈশ্বিক অগ্রাধিকার এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রতিটি বড় দেশ এই সংকট নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য মিয়ানমার সরকারকে সমান স্বচ্ছতার সাথে কথা বলা উচিত।’

বিগান যুক্তরাষ্ট্রের মতো স্পষ্টবাদী থাকার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সমন্বয়ের ওপর জোর দেন যাতে মিয়ানমার নিশ্চিত করে যে রোহিঙ্গাদের আর দুর্ব্যবহার করা হবে না এবং তারা রাখাইন রাজ্যে ফিরে যাওয়ার আত্মবিশ্বাস পায়। 

মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধান এবং তাদের অধিকার পুনরুদ্ধারে মিয়ানমারের অভ্যন্তরের সিদ্ধান্তগুলোকে যতটা সম্ভব প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ‘বেশ স্পষ্টবাদী’ এবং তার ‘রাজনৈতিক প্রভাব’ ব্যবহার করেছে। এর জন্য আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক সহায়তা প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সব দেশের উচিত কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করা।’

বিগান বলেন, তারা বাংলাদেশ সরকারের সাথে অনেকটাই একমত যে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়া এবং তাদের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য সমাধান খুঁজে বের করা দরকার, যারা বর্তমানে কক্সবাজারের শিবিরে রয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের তাৎক্ষণিক মানবিক চাহিদা পূরণ করতে চাই, তবে দীর্ঘমেয়াদী সমাধানে পৌঁছাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রচেষ্টাও দ্বিগুণ করতে হবে।’

তার সাম্প্রতিক সফরে মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গা সংকটের চ্যালেঞ্জ এবং এর স্থায়ী সমাধান পাওয়ার উপায়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন যাতে বাংলাদেশ সরকার এবং জনগণকে এই ভার নিজের কাঁধে বহন করতে না হয়।

তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র অবশ্যই সহায়ক অংশীদার হয়েছে। এই সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি আমরা  অতিরিক্ত মানবিক সহায়তার পরিমাণও বৃদ্ধির চেষ্টা করব।’

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয় নিয়ে বেইজিংয়ে একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করার জন্য চীনের প্রস্তাবের পর সেখানে মিয়ানমারের নেতা অং সান সু চির উপস্থিতি চেয়েছে বাংলাদেশ।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন চীনকে জানিয়েছেন, ‘তার উপস্থিতি ছাড়া এটি করা হবে না। বৈঠকে তার উপস্থিত থাকা উচিত।’ 

মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর সু চি নোবেল শান্তি পুরষ্কার পেলেও, রাখাইনে ধর্ষণ, হত্যা ও গণহত্যা বন্ধে কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের প্রধান লক্ষ্য হলো রোহিঙ্গাদেরকে তাদের নিজ বাসভূমি রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবাসন করা।

এর আগে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করার প্রস্তাব দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি বলেন, ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা জনগণকে অপ্রত্যাশিত অবস্থায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে এবং তাদেরকে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সুযোগ না দেয়া হলে রোহিঙ্গারা ‘আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সুরক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলবে।’

দাতা সম্মেলন

রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং আশ্রয়দাতা দেশগুলোর সহায়তার জন্য আগামী ২২ অক্টোবর এক দাতা সম্মেলনের আয়োজন করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাজ্য ও জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর)।

বিগান বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং অন্যান্য বাস্তুচ্যুত মানুষদের সহায়তার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংকটের প্রতিক্রিয়া বজায় রাখতে ক্ষতিগ্রস্থ আয়োজক সম্প্রদায়ের জন্য বিনিয়োগ জোরদার করার এই আহ্বানের নেতৃত্বদানকারীদের অংশীদার হিসেবে যুক্তরাজ্য, ইইউ এবং ইউএনএইচসিআর- এর সাথে একসাথে থাকতে পেরে যুক্তরাষ্ট্র গর্বিত।

তিনি বলেন, ‘বিশ্বের সর্বাধিক উদার দাতা হিসেবে, আমরা আন্তর্জাতিক মানবিক প্রতিক্রিয়ার জন্য অনুঘটক এবং দীর্ঘস্থায়ী অংশীদারদের পাশাপাশি নতুন এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী দাতা উভয়ইকেই আমরা এই লক্ষ্যে অবদান রাখার আহ্বান জানাই।’

বৃহস্পতিবার মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর থেকে এক যৌথ সংবাদ বিবৃতিতে জানানো হয়, দাতা সম্মেলনটি যৌথ আয়োজকদের পক্ষে এটি পুনরাবৃত্তি করার একটি সুযোগ যে, এ সংকটের যেকোনো স্থায়ী সমাধানে অবশ্যই রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং অন্যান্য বাস্তুচ্যুত মানুষদের তাদের নিজ দেশ বা তাদের পছন্দসই জায়গায় স্বেচ্ছায়, নিরাপদে, মর্যাদাপূর্ণ এবং টেকসই প্রত্যাবর্তন অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে।

ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ভার্চুয়াল সম্মেলনের যৌথ আয়োজকরা রোহিঙ্গা শরণার্থী, আশ্রয়দাতা স্থানীয় সম্প্রদায় এবং মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষদের সহায়তা করার জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল সরবরাহ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাবে।

জাতিসঙ্ঘ চলতি বছর বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের মানবিক চাহিদা মেটাতে এক বিলিয়ন ডলারেরও বেশি সাহায্যের আবেদন করলেও, এখন পর্যন্ত এর অর্ধেকেরও কম অর্জিত হয়েছে।

এর আগে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডমিনিক রাব বলেন, রোহিঙ্গা জনগণ ভয়াবহ বর্বরতার মুখোমুখি হয়েছে এবং কল্পনাতীত কলুষিত এক পরিস্থিতির মুখে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিল।

২০১৭ সাল থেকে রোহিঙ্গাদের মানবিক দুর্দশা নিরসনের জন্য যুক্তরাজ্যও শীর্ষস্থানীয় দাতা হিসাবে ভূমিকা রাখছে। ২০১৮ সালের নভেম্বরে এবং ২০১৯ সালের আগস্টে, দুই দফায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। এর আগে ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর প্রত্যাবাসন চুক্তিতে স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি ‘বাস্তবিক ব্যবস্থা’ সম্পর্কিত এক নথিতে স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার, যার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়া হবে বলে মনে করা হয়েছিল। সূত্র : ইউএনবি


আরো সংবাদ



premium cement
অবন্তিকার আত্মহত্যা : জবির সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের জামিন আবারো নামঞ্জুর পাথরঘাটায় বদর দিবস পালনে দেড় হাজার মানুষের ইফতারি আদমদীঘিতে ৭২ হাজার টাকার জাল নোটসহ যুবক গ্রেফতার সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান মির্জা ফখরুলের জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : মন্ত্রী গাজীপুরে গাঁজার বড় চালানসহ আটক ২ দুই ঘণ্টায় বিক্রি হয়ে গেল ২৫০০ তরমুজ ড. ইউনূসের ইউনেস্কো পুরস্কার নিয়ে যা বললেন তার আইনজীবী একনেকে ৮৪২৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন সান্তাহারে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে যুবক নিহত জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : আব্দুর রহমান

সকল