২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইলিশের চালান যাওয়ার পরেই পেঁয়াজ বন্ধ

ইলিশের চালান যাওয়ার পরেই পেঁয়াজ বন্ধ! - ছবি : সংগৃহীত

হঠাৎ করেই ভারত থেকে বাংলাদেশে পেঁয়াজ আসা বন্ধ হয়ে গেছে। ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়ার অজুহাতে সে দেশের ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের ট্রাক আটকে রেখেছে। এমনকি বন্দরে এসেও অনেক ট্রাক এদেশে প্রবেশ করতে পারেনি। এ দিকে পেঁয়াজ আসা বন্ধ হয়ে গেছে এই খবর ছড়িয়ে পড়লে এদেশের অসাধু ব্যবসায়ীরা গতরাতেই পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেয়। পাইকারি বাজারেই ৮ থেকে ১০ টাকা দাম বেড়েছে একদিনে। এদেশের আমদানিকারকরা বলেছেন, গত বছর বাংলাদেশ থেকে যেদিন ইলিশের চালান ভারতে গেল ঠিক তার দু’দিন পর পেঁয়াজ আটকে দিলো ভারত। আর এবার যেদিন ইলিশের চালান ভারতে ঢুকল ঠিক সেদিনই বন্ধ করে দিলো পেঁয়াজ রফতানি।

গতকাল বিকেলে বাংলাদেশে পেঁয়াজ আসা বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। তবে এদেশের ব্যবসায়ীরা বলেছেন, রোববার রাতের পর আর কোনো পেঁয়াজের গাড়ি বাংলাদেশে আসতে দেয়া হয়নি। ওপারে ভারতীয় বন্দরে ওই ট্রাকগুলো পেঁয়াজ নিয়ে এলেও সেগুলোকে সীমান্ত পার হতে দেয়া হয়নি। ফলে বেনাপোলের ওপারের পেট্রাপোলে আটকা পড়ে পেঁয়াজ ভর্তি দেড় শতাধিক ট্রাক। একই অবস্থা অন্যান্য বন্দরগুলোতেও। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, সকাল থেকে ভোমরা বন্দর দিয়ে কোনো পেঁঁয়াজের গাড়ি বাংলাদেশে প্রবেশ করেনি। যদিও আগে থেকেই এদেশীয় আমদানিকারকরা পেঁয়াজের জন্য টাকা পরিশোধ করেছেন। 

দিনাজপুর থেকে সাদাকাত আলী খান জানিয়েছেন, হঠাৎ করেই বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। গতকাল সোমবার দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট শংকর দাস বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, কয়েকদিন ধরে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টি ও বন্যা দেখা দিয়েছে। এ কারণে ভারতের সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদিত হওয়া অঞ্চলগুলো তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া সেখানকার বাজারে পেঁয়াজের দামও বেড়েছে। নিজ দেশে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি ঠেকাতে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। 

শংকর দাস আরো বলেন, সম্প্রতি ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে অতিবৃষ্টি ও বন্যা হওয়ায় ভারতের যেসব অঞ্চলে পেঁয়াজ উৎপাদন হতো সেখানে পেঁয়াজের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। যার কারণে পেঁয়াজের সরবরাহ কমায় ভারতের বাজারেই পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। এ অবস্থায় পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি রুখতে ভারত সরকার হিলি কাস্টমসকে এ তথ্য জানিয়েছেন। সে মোতাবেক কাস্টমস কর্তৃপক্ষ তাদের জানিয়েছে, সোমবার থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সব ধরনের পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ থাকবে। এ সংক্রান্ত সরকারি প্রজ্ঞাপন এখনো জারি হয়নি, তবে অচিরেই জারি হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। একই সাথে পেঁয়াজ আমদানির জন্য যেসব এলসি খোলা রয়েছে এবং টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে সেগুলোর বিপরীতেও কোনো পেঁয়াজ রফতানি হবে না। হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক সাইফুল ইসলাম বলেন, ভারতীয় রফতানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট আমাদের জানিয়েছেন যে, ভারত কোনো পেঁয়াজ রফতানি করবে না।

ভারত সরকার নাকি কাস্টমসকে নিষেধ করেছেন পেঁয়াজ রফতানি না করতে এবং পেঁয়াজ রফতানি করবে না বলেও বলেছে আমাদের। তাদের এই সিদ্ধান্তের কারণে আমাদের অনেক আমদানিকারকের বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি খোলা রয়েছে। আমরা তো এখন বিপাকের মধ্যে পড়ে গেছি। আমরা তাদের বলছি আমাদের যেসব এলসি খোলা রয়েছে সেগুলোর পেঁয়াজ দেয়ার জন্য। আমাদের অনেক এলসির বিপরীতে অনেক ট্রাক মাল নিয়ে সড়কে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এখন যদি তারা পেঁয়াজ না দেয় তাহলে আমাদের এই পেঁয়াজের কী অবস্থা হবে সেই চিন্তায় পড়েছি। এই যে আমাদের ক্ষতি, কার কাছে ক্ষতিপূরণ চাইব? তাই বিষয়টি নিয়ে অতিদ্রুত সংশ্লিষ্ট সরকারি পর্যায়ে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন। না হলে আমাদের মতো অনেক আমদানিকারক পথে বসবে।

আমাদের শার্শা (যশোর) সংবাদদাতা আব্দুল মান্নান জানান, বেনাপোলের পেঁয়াজ আমদানিকারক রাহা ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক রফিকুল ইসলাম রয়েল বলেছেন, ভারতেই নাকি হঠাৎ করে পেঁয়াজের কেজি ৪৫ রুপি হয়ে গেছে। যে কারণে তারা গাড়ি আটকে দিয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের একটি ট্রাক সকালে পেঁয়াজ নিয়ে ঢুকেছিল। বাকিগুলো আর ঢুকতে পারেনি। এই বন্দর দিয়ে আরো দু’টি প্রতিষ্ঠান হামিদ এন্টারপ্রাইজ এবং আল্লাহর দান এন্টারপ্রাইজ পেঁয়াজ আমদানি করে থাকে। আমদানিকারকদের একটি সূত্র জানিয়েছেন, গত বছর ইলিশ রফতানির ঠিক দু’দিন পরেই ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়। আর এবারো যেদিন ইলিশের প্রথম চালান ভারতে ঢুকেছে ঠিক সেইদিন পেঁয়াজের গাড়ি আটকে দিলো ভারত।

যারা ইতঃপূর্বে পেঁয়াজের জন্য এলসি করেছেন, টাকা শোধ করেছেন, সেই চুক্তি পূর্ণ হওয়ার আগেই পেঁয়াজ বন্ধ করে দিয়েছে ভারত।

বেনাপোল কাস্টমসের সুপারিনটেন্ডেন্ট আলমগীর হোসেন বলেছেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে গিয়েছে কি না- তা জানি না। কাস্টমসের লোকজন অপেক্ষা করছিল পেঁয়াজ আসবে বলে। পেঁয়াজ আসলে তা যাচাই-বাছাই করে ছাড় দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল তারা কিন্তু পরে জানা গেছে পেঁয়াজ আসছে না।

এ দিকে পেঁয়াজের গাড়ি সীমান্ত দিয়ে ঢুকছে না, এমন সংবাদে পুরো দেশেই হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। কেজিতে পাইকারি বাজারেই বেড়েছে ৮-১০ টাকা। একইভাবে খুচরা বাজারেও হঠাৎ করে গতকাল পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। গত শুক্রবার পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল ৫৮-৫৯ টাকা। দু’দিনে তা নেমেছিল ৫০ টাকায়। রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকায়। রাতেই পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম উঠে যায় ৬০ টাকা। আর খুরচা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকায়। পেঁয়াজের পাইকারি বিক্রেতা জাহাঙ্গীর হোসেন গতরাতে নয়া দিগন্তকে বলেন, কাঁচামালের বাজার আমদানির ওপরই বাজার ওঠানামা করে। পেঁয়াজের গাড়ি আসছে না এই খবরেই দেশে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। এ দিকে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে এই খবরে ক্রেতাদের মধ্যেও অস্থিরতা শুরু হয়েছে। গতরাতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে খবর পাওয়া গেছে ক্রেতারা বাড়তি পেঁয়াজ কিনে রাখছেন। গতবারের অভিজ্ঞতা থেকেই পেঁয়াজ কিনছেন বলে জানালেন আর কে মিশন রোডের তোফাজ্জল হোসেন। তিনি বলেন, গতবার হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত সেই পেঁয়াজ ২৫০ টাকায় কিনে খেতে হয়েছে। এবার সেই ভীতিটা কাজ করছে খুব বেশি।


আরো সংবাদ



premium cement
বিএনপি ক্ষমতায় আসতে মরিয়া হয়ে উঠেছে : ওবায়দুল কাদের মাটির নিচে পাওয়া গ্রেনেড মাইন মর্টার শেল নিষ্ক্রিয় করল সেনাবাহিনী অনির্দিষ্টকালের জন্য অনলাইন ক্লাসে যাচ্ছে জবি, বন্ধ থাকবে পরীক্ষা কুড়িগ্রামে রেলের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদ ক্রিকেট খেলতে অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছে দেওয়ানগঞ্জের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী শিহাব কিশোরগঞ্জে বৃষ্টির জন্য বিশেষ নামাজ সাতক্ষীরা বৈদ্যুতিক খুটিতে ধাক্কা লেগে মোটরসাইকেলআরোহী নিহত বার্সেলোনাতেই থাকছেন জাভি চতুর্থ দফা ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি : এবারের তাপদাহ শেষেই বৃষ্টিপাতের আশা ফরিদপুরে বৃষ্টির জন্য নামাজে হাজারো মুসুল্লির কান্না পোরশার নোচনাহারে আগুনে ৩টি দোকান পুড়ে গেছে

সকল