২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আটকে-পড়া বাংলাদেশীদের ভারতেই থাকার পরামর্শ

আটকে-পড়া বাংলাদেশীদের ভারতেই থাকার পরামর্শ - ছবি : সংগৃহীত

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে ভারতে সম্পূর্ণ লকডাউন জারি হওয়ার কারণে যে বাংলাদেশী নাগরিকরা সে দেশে আটকা পড়েছেন, বাংলাদেশ সরকার তাদের এখন যে যেখানে আছেন, সেখানেই থাকার পরামর্শ দিচ্ছে। দিল্লিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে প্রচারিত এক বিবৃতিতে ভারতে লকডাউন শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের ধৈর্য ধরারও অনুরোধ জানানো হয়েছে।

তবে সেই সাথে বলেছে, যদি কোনো একটি শহরে একসাথে অনেক বাংলাদেশী আটকা পড়ে থাকেন এবং তারা নিজের খরচে ও কোয়ারেন্টিনের শর্ত মেনে দেশে ফিরতে রাজি থাকেন, তাহলে তাদের ফেরানোর রাস্তা খোঁজা যেতে পারে, যদিও তাতে বেশ কিছুটা সময় লাগবে।

তবে চিকিৎসার প্রয়োজনে বা বেড়াতে এসে ভারতে আটকে পড়া বহু বাংলাদেশীই বিবিসিকে জানিয়েছেন, তারা যে কোনোভাবে দ্রুত দেশে ফিরতে ইচ্ছুক, কারণ ভারতে তাদের জন্য এখন প্রতিটা দিন কাটানোই খুব মুশকিল হয়ে পড়ছে।

বস্তুত ভারত তাদের সীমান্ত সিল করে দেশে আন্তর্জাতিক বিমানের ওঠানামা বন্ধ ঘোষণা করার পর প্রায় দুসপ্তাহ কেটে গেছে।

এর মধ্যে ব্রিটেন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র বা কাতারের মতো বেশ কয়েকটি দেশ বিশেষ ফ্লাইটে করে তাদের আটকে পড়া নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে গেলেও বাংলাদেশ এখনই সে রাস্তায় যাওয়ার কথা ভাবছে না।

বরং দিল্লিতে বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, ভারত সরকার যেহেতু এই লকডাউনের সময় অত্যাবশ্যকীয় চলাচল ছাড়া সব ধরনের মুভমেন্ট বা সফর নিরুৎসাহিত করছে, তাই ভারতে থাকা বাংলাদেশী নাগরিকদেরও উচিত হবে ‘যে যেখানে আছেন’ আপাতত সেখানেই অপেক্ষা করা।

কিন্তু দক্ষিণ ভারতে ভেলোরের সিএমসি-তে নিকটাত্মীয়র চিকিৎসা করাতে নিয়ে আসা রাজু আহমেদ বলছিলেন, তাদের পক্ষে প্রতিটা দিন কাটানোই এখন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

ভেলোর থেকে টেলিফোনে তিনি বলছিলেন, ‘আমার ছোটকাকার অপারেশন করাতে এসেছিলাম, কিন্তু সে সব মিটে যাওয়ার পর এখন মহা বিপদে পড়েছি।’

‘পেশেন্টের ঠিকমতো যত্ন করতে পারছি না, লকডাউনে দোকানপাট প্রায়ই বন্ধ থাকায় জিনিসিপত্রও ঠিকমতো পাচ্ছি না। রান্না জানি না, এর মধ্যেই কোনওক্রমে রান্না করে কাকাকে খাওয়াচ্ছি।’

‘ভেলোরে এরকম বাঙালির সংখ্যা অনেক, তাদের সঙ্গে আমার কথাও হয়েছে – আমরা সবাই খরচ দিতেও রাজি আছি। কিন্তু সরকার আমাদের দ্রুত ফিরিয়ে নেওয়ার একটা ব্যবস্থা করুক!’

‘পেশেন্ট তো রোজ কান্নাকাটি করে, কবে দেশে যামু! চলাফেরা নাই, নার্সিং নাই-এই কষ্ট আর দেখা যায় না’, রীতিমতো কাঁদো কাঁদো শোনায় রাজু আহমেদের গলা।

ভেলোর ও নিকটবর্তী মেট্রো শহর চেন্নাইতে এভাবে চিকিৎসা করাতে এসে আটকে পড়া বাংলাদেশীর সংখ্যাই কম করে শ’পাঁচেক হবে বলে তারা জানাচ্ছেন।

এদের মধ্যে চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতালে স্বামীর ও নিজের চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন ঢাকার রোজিনা আখতার, তিনিও নিজের দেশের সরকারকে আর্জি জানাচ্ছেন যে কোনোভাবে তাদের দেশে ফিরিয়ে নেয়া হোক, এবং তারা সবাই মিলে এর খরচ দিতেও প্রস্তুত।

রোজিনা আখতার এদিন বলছিলেন, ‘অবশ্যই আমরা দেশে যেতে চাচ্ছিলাম। আমাদের যেদিন ফেরার কথা, তার ঠিক আগের দিন সব ফ্লাইট ক্যানসেল হওয়াও আমরা এখানে আটকা পড়ে গেছি। এখন সরকারের উচিত একটা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের ফেরানোর ব্যবস্থা করা।’

‘অবশ্যই আমরা এর খরচ দিতেও তৈরি আছি, তাতে কোনও সমস্যা নাই। কিন্তু সরকার তো কোনও সিদ্ধান্তই নিতেছে না!’

‘তাদেরকে একটা জিনিস বুঝতে হবে, আমরা কেউ এখানে স্থায়ীভাবে থাকি না-চিকিৎসার জন্য এসেছি। আর বিরাট টাকাপয়সা নিয়েও তো আসি নাই। এখন বাড়িভাড়া, থাকা-খাওয়ার খরচ কে সামাল দেবে বলুন? তারা তো যেখানে আছেন, সেখানে থাকেন বলেই খালাস!’

‘আর যদি জানতাম আট-দশদিন পরে নিশ্চিত দেশে ফেরা যাবে, তাও বুঝতাম। ভারতে কবে যে লকডাউন উঠবে, ১৪ তারিখের পর আরও বাড়াবে কি না তাও তো কিছু জানি না!’, প্রবল অনিশ্চয়তা মেশানো সুরে বলেন রোজিনা আখতার।

চেন্নাইয়ের মতো যে সব শহরে একসাথে অনেক বাংলাদেশী আটকা পড়েছেন, তাদের ফেরানোর জন্য বিশেষ ব্যবস্থার কথা ভাবা যেতে পারে বলেও বাংলাদেশ দূতাবাস ইঙ্গিত দিয়েছে।

তবে পদ্ধতিগত জটিলতার কারণে সে প্রক্রিয়া যে সময়সাপেক্ষ হবে সেটাও তারা জানিয়ে রেখেছেন।

এদিকে ভারতে বেড়াতে এসে হায়দ্রাবাদে আটকা পড়েছেন বাংলাদেশের আনোয়ার হুসেন সুমন, তার জন্য সে সুযোগও বন্ধ। কারণ হায়দ্রাবাদে আটকা পড়েছেন, এমন বাংলাদেশীর সংখ্যা হাতেগানা, প্রায় নেই বললেই চলে।

আধপেটা খেয়েও আনোয়ার হোসেন এখন চেষ্টা করছেন যদি কোনওভাবে কলকাতা চলে যাওয়া যেত, সেখান থেকে সড়কপথে সীমান্ত পেরোনোর চেষ্টা করতেন।

বিবিসিকে তিনি মোবাইল টেলিফোনে বলছিলেন, ‘যাওয়ার কোনও উপায় থাকলে আমি কবে বেরিয়ে পড়তাম। কিন্তু সব কিছুই যে এখন ব্লকড! ওদিকে ঢাকায় আমার ফ্যামিলিও খুব ক্রাইসিসে আছে, কিন্তু আমি এখানে আটকা পড়ে!’

‘সব মিলিয়ে খুব কঠিন সময় যাচ্ছে। একপ্রকার বলতে পারেন না খেয়েই দিন কাটাচ্ছি। হতাশ না-হওয়ার কারণই নাই!’

‘হায়দ্রাবাদ থেকে কলকাতা যাওয়া কি না, তার অনেক চেষ্টা করলাম – কিন্তু কোনও প্রাইভেট ট্রান্সপোর্ট পর্যন্ত পেলাম না। আর এটা তো ঢাকা টু চিটাগং না, যে ভেঙে ভেঙে চলে যাব – কলকাতা অবধি প্রায় দুহাজার কিলোমিটার রাস্তা! খুব অসহায় বোধ করছি’, বলছিলেন তিনি।

এরকম যে অজস্র বাংলাদেশী নাগরিকের সাথে এদিন আমার কথা হয়েছে, তারা প্রায় প্রত্যেকেই যে কোনওভাবে অবিলম্বে দেশে ফিরতে মরিয়া।

ভারতে আটকে পড়া নাগরিকদের দ্রুত ফিরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারও এযাবত বিশেষ তৎপরতা দেখায়নি বলে তাদের অভিমত আর সেই হতাশা তারা গোপনও করছেন না।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
দোয়ারাবাজারে শিশু হত্যা মামলার আসামিসহ গ্রেফতার ২ কাউখালীতে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু চুয়েট শিক্ষার্থীদের সড়কে অবস্থান অব্যাহত, ঘাতক বাসচালক গ্রেফতার তামাক পণ্যে সুনির্দিষ্ট করারোপের দাবিতে এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে ২৫ সংসদ সদস্যের চিঠি প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনীতে মহিষের আক্রমণে বাবা-ছেলেসহ আহত ৪ গফরগাঁওয়ে গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার তীব্র মাত্রায় হিংস্র হয়ে উঠেছে সরকার : মির্জা ফখরুল মিরসরাইয়ে মৃত্যুর ১৫ দিন পর ব্যাংক কর্মকর্তার কবর থেকে লাশ উত্তোলন দেশে দেড় হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং, দুর্ভোগে মানুষ রংপুরে মহানবী সা:-কে নিয়ে কটূক্তি করায় ছাত্রলীগ কর্মী গ্রেফতার বাড়ছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি, অনলাইনে ক্লাস চালুর চিন্তা

সকল