১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শ্রমবাজার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করতে বাংলাদেশে আসছেন মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী

- ছবি : সংগৃহীত

জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের কাছে তাদের ব্যবসার কর্মকৌশল জানতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে গত সপ্তাহে জরুরি ভিত্তিতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আজ শনিবারের মধ্যে প্রত্যেক রিক্রুটিং এজেন্সির মালিককে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো নির্দিষ্ট ফরমটি পূরণ করে পাঠানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের ছক করা ফরমে একজন রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক তার লাইসেন্সের বিপরীতে গত তিন বছরে কতজন শ্রমিককে বিদেশে পাঠিয়েছেন এবং এই সময়ের মধ্যে এজেন্সির বিরুদ্ধে প্রতারিত শ্রমিকদের কোনো ধরনের অভিযোগ রয়েছে কি না সেটিসহ আরো বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে চাওয়া হয়েছে।

এ দিকে মালয়েশিয়ার বহুল কাঙ্খিত শ্রমবাজার খোলার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করতে অবশেষে আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি দেশটির মানবসম্পদমন্ত্রী এম কুলসেগারানের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল ছয় দিনের সফরে ঢাকায় আসার দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

গতকাল বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

তবে একই সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি মো: আব্দুল হাই গতকাল শুক্রবার রাতে নয়া দিগন্তকে বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার কবে খুলবে, কিংবা আদৌ খুলবে কি না তা জানি না।

তবে শুনেছি মালয়েশিয়া থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি দেশটির মানবসম্পদমন্ত্রীর নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল ঢাকা আসছে মিটিং করতে। এবার আমরা চাই, ‘লাইসেন্স যার ব্যবসা তার’ এই ফর্মুলায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুলুক। এত দিন ধরে আমাদের কিছু লোকের খায়েশ পূরণের কারণে এই সম্ভাবনাময় বাজারটি এখনো খুলছে না। এখন দেখা যাক তারা আসার পর এমওইউ চুক্তি হয় কি না।

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে শ্রমিক পাঠানোর লক্ষ্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে কোনো জরুরি চিঠি সব রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকের কাছে দেয়া হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে গ্রিনল্যান্ড ওভারসিসের স্বত্বাধিকারী মো: আব্দুল হাই নয়া দিগন্তকে বলেন, আমার কাছে মন্ত্রণালয় থেকে যে ফরম দেয়া হয়েছিল সেটি আমি পূরণ করে পাঠিয়ে দিয়েছি। সেখানে জানতে চাওয়া হয়েছে, আমার প্রতিষ্ঠান থেকে গত তিন বছরে বৈধভাবে কতজন শ্রমিক পাঠিয়েছি।

অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ অদ্যাবধি কেউ করতে পারেনি। ব্যবসা করলে টুকটাক ভুল হয়। যদি কখনো ছোটখাটো সমস্যা হয়েছে সেটি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করে ফেলেছি। আমার প্রতিষ্ঠান সুনামের সাথেই এখন পর্যন্ত বিদেশে শ্রমিক পাঠাচ্ছে।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী শ্রমিক যাওয়া বন্ধ রয়েছে। এর পর থেকে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার ও তার অধীনের কর্মকর্তারা দেশটির দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করে শ্রমবাজার খোলার বিষয়ে কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। এরই ফলে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালুর বিষয়ে বৈঠকসহ কয়েকটি কর্মসূচিতে অংশ নিতে আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি ছয় দিনের সরকারি সফরে ঢাকায় আসছেন দেশটির মানবসম্পদমন্ত্রী এম কুলাসেগারান। তার এই সফরেই ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে শ্রমবাজার ইস্যুতে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে ৬ ফেব্রুয়ারি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ২৪ তারিখ দু’দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

এ দিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে খুলবে, না ‘ওপেন ফর অল’ পদ্ধতিতে খুলতে যাচ্ছে তা নিয়ে রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের মধ্যে এখনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করছে। কেউ বলছেন, এবারো আগের ফর্মুলায় শ্রমবাজার খুলছে। আবার কেউ বলছেন, সিন্ডিকেট নয়, ব্যবসা সবাই করবে। তবে সব কিছু দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিষ্কার হয়ে যাবে বলে অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

গতকাল একজন অভিবাসন বিশেষজ্ঞ নয়া দিগন্তকে বলেন, রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের মধ্যে দূরত্ব কমে গেলেই শ্রমবাজার খুলে যাবে। কারণ এবার প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদ এবং সচিব সেলিম রেজা নীতির দিক থেকে কোনো ধরনের আপস করবেন না বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন সহস্রাধিক রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ও তাদের হাজার হাজার কর্মচারী। স্বচ্ছভাবে শ্রমিক যাওয়ার প্রক্রিয়া হাতে নিতেই তারা এবার সব রিক্রুটিং এজেন্সির কর্মকৌশল জানতে চিঠি দিয়েছেন। এটা অবশ্যই ভালো দিক। এখন ভবিষ্যৎ বলে দেবে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের ভবিষ্যত কী?

প্রকাশ, জনশক্তি ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত মোট এক হাজার ৩৫১টি লাইসেন্স এখন সচল রয়েছে। তারা সবাই বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির সদস্য।


আরো সংবাদ



premium cement