২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

চীনের মধ্যস্থতায় ত্রিদেশীয় বৈঠক কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত হবে সোমবার

চীনের মধ্যস্থতায় ত্রিদেশীয় বৈঠক কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত হবে সোমবার - ছবি : সংগৃহীত

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর লক্ষ্যকে সামনে রেখে চীনের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের ত্রিপক্ষীয় বৈঠক আগামী সোমবার কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকায় নিযুক্ত চীন ও মিয়ানমারের দুই রাষ্ট্রদূত এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক এতে নিজ নিজ দেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন।

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র উদ্যোগে গঠিত ত্রিপক্ষীয় কার্যকরী গ্রুপের এটি প্রথম বৈঠক। এর আগে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গ্রুপের প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এতে গ্রুপের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়।

কক্সবাজারে বৈঠকের আগে ত্রিপক্ষীয় কার্যকরী গ্রুপের সদস্যরা রোহিঙ্গাদের অবস্থা সরেজমিন পরিদর্শন ও উদ্বাস্তুদের সাথে মতবিনিময়ের জন্য ক্যাম্পে যেতে পারেন। গ্রুপের পরবর্তী বৈঠক মিয়ানামারে অনুষ্ঠিত হবে। এ সময় গ্রুপের সদস্যরা রাখাইনে সরেজমিনে গিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখবেন। সমঝোতার ভিত্তিতে কাজ করে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়া এই গ্রুপের লক্ষ্য।

বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে গত ২২ আগস্ট রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর দিন নির্ধারিত ছিল। কিন্তু রোহিঙ্গাদের আপত্তির কারণে প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি। তারা মিয়ানমারের নাগরিকত্বসহ পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরে স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসনে অস্বীকৃতি জানান। এ সময় কক্সবাজারে মাঠ পর্যায়ে চীন ও মিয়ানমার দূতাবাসের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তারা সার্বিক ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন। গত বছর ১৫ নভেম্বর একই কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ভেস্তে যায়।

এদিকে ঢাকায় মিয়ানমার দূতাবাস ফেইসবুক পোস্টের মাধ্যমে অব্যাহতভাবে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় রাখাইন ফিরে যাওয়া খবর দিয়ে যাচ্ছে। গতকালও ১৭ জন রোহিঙ্গা রাখাইনে ফিরে গেছে বলে খবর দিয়েছে দূতাবাস। তাদের হিসাবে এ পর্যন্ত ৪১৪ জন রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় রাখাইনে ফিরেছে। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ তাদের যথাযথভাবে অভ্যর্থনা জানিয়ে প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ করছে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, প্রত্যাবাসনের জন্য দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় একজন রোহিঙ্গাও মিয়ানমার ফিরে যায়নি। চুক্তির আওতায় প্রত্যাবাসন হলে দুই দেশের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতেই তা হবে। রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় ফিরে যাওয়ার মিয়ানমারের দাবি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

নিউ ইয়র্কে জাতিসঙ্ঘ সাধারন অধিবেশনের সাইডলাইনে গত ২৩ সেপ্টেম্বর চীনের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে মন্ত্রী পর্যায়ের ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এবং মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রী টিন্ট সোয়ে উপস্থিত ছিলেন। জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের রোহিঙ্গাবিষয়ক দূত ক্রিস্টিনা বার্গেনারও এতে যোগ দিয়েছিলেন।

বৈঠকে রোহিঙ্গারা যাতে তাড়াতাড়ি দেশে ফিরে যায়, সেজন্য চীন একটি ত্রিপক্ষীয় কার্যকরী গ্রুপ গঠনের প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাব অনুযায়ী এটি মাঠ পর্যায়ে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে সহায়তা দেবে। ত্রিপক্ষীয় কার্যকরী গ্রুপটি তাদের সুপারিশ মন্ত্রীদের দেবে।

চীনের এই প্রস্তাবে মিয়ানমার প্রথমে রাজী ছিল না। তাদের যুক্তি, প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় কার্যকরী গ্রুপ রয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত চীনের এই প্রস্তাবে মিয়ানমার তাদের সম্মতির কথা জানিয়েছে।

নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য মিয়ানমার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানিয়েছিল। তবে বাংলাদেশ বলেছে, প্রত্যাবাসনের জন্য রোহিঙ্গাদের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি করতে পারেনি মিয়ানমার। প্রত্যাবাসনের জন্য রাখাইনে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও অবাধ চলাচলের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।

মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী ও বৌদ্ধ উগ্রপস্থীদের দমন-পীড়ন ও নৃশংসতার শিকার হয়ে বাংলাদেশে ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের সই হওয়া প্রত্যাবাসন চুক্তির আওতায় গত দুই বছরে একজন রোহিঙ্গাও রাখাইনে ফিরে যেতে পারেনি। এ জন্য রোহিঙ্গাদের অনীহার পাশাপাশি মিয়ানমারের কূটকৌশলকে দায়ী করে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে, বিশেষ করে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের পক্ষাবলম্বন করে আসছে চীন। এর কারণে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে চীনের মধ্যস্থতার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছে বাংলাদেশ।


আরো সংবাদ



premium cement