২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে বিদেশী শিক্ষার্থীদের ভাবনা

বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে বিদেশী শিক্ষার্থীদের ভাবনা - ছবি : সংগৃহীত

২০১০ সালে ‘নলেজ উইদাউট বর্ডার’ স্লোগান নিয়ে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে যাত্রা শুরু করে সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটি। যা সার্কের প্রথম শিক্ষা বিষয়ক প্রজেক্ট। এটি সার্ক বিশ্ববিদ্যালয় নামেও পরিচিত। এতে সার্কের সদস্য ৮ টি দেশের শিক্ষার্থীরা পড়াশুনার সুযোগ পেয়ে থাকেন। এখানে কেবল গবেষণা নির্ভর মাস্টার্স ও পিএইচডি কোর্স অফার করা হয়ে থাকে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশী পড়াশুনার কারণে সার্কের অন্য দেশের শিক্ষার্থীরা তাদের সাথে মিশে বাংলাদেশের রাজনীতি, সংস্কৃতি ও উন্নয়ন বিষয়ে জানার সুযোগ পান। সার্কের সদস্য দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের মাঝে বাংলাদেশের রাজনীতি, সংস্কৃতি ও উন্নয়ন নিয়ে কি ধারণা সে বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মতামত গ্রহণ করেন রিয়াজ উদ্দিন

সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে মাস্টার্স করছেন ভারতের শাশী কুমার। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মিডিয়ার মাধ্যমে গত জাতীয় নির্বাচন সম্পর্ক জেনেছি বাংলাদেশের নির্বাচনে প্রচুর কারচুপি হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতি দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশের মতো পরিবারতান্ত্রিক। তবে গত সেমিস্টারে বাংলাদেশের শিক্ষা নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে একটি আশার দিক দেখেছি যে বাংলাদেশে শিক্ষার হার উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। শিক্ষিতদের হার যত বাড়বে আমি আশা করি রাজনীতিতে ততো মৌলিক পরিবর্তন আসবে। আর বাংলা সংস্কৃতি বিশ্ব দরবারে ভিন্ন এক যায়গা দখল করেছে। আমার বাড়ি বিহার হওয়ার বাংলা কালচারের সাথে অনেকটা সময় পার করার অভিজ্ঞতা আছে। বাংলা ভাষার আলাদা একটা মর্যাদা সাহিত্য অঙ্গনে রবীন্দ্রনাথের কারণে হয়েছে। আর বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে কথা বলতে গেলে আমি প্রথমে বলবো পোষাক খাতের কথা। এই খাতটাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ তাদের অর্থনীতিকে দাঁড় করাতে পারে উন্নত বিশ্বের কাতারে।

সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটির এলএলএম বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন নেপালের অ্যাডভোকেট রাজেশ বাশতলা। তিনি বলেন,
গণতান্ত্রিক দেশ হিসাবে বাংলাদেশ পরিচয় দিলেও আমার মনে হয় তা কেবল কাগজে কলমে। বাংলাদেশের এই যায়গা থেকে বের হওয়া উচিত। বিরোধী দলকে কাজের সুযোগ না দিলে সেটা কখনো গণতান্ত্রিক দেশ হতে পারে না। মিডিয়ায় প্রায় দেখি বিরোধী দলকে মামলা দিয়ে সরকার কোণঠাসা করে রেখেছে। বাংলা সংস্কৃতি আমাকে অনেক টানে। বিশেষ করে বাংলা বিরিয়ানী আর তাদের জামদানি শাড়ি নেপালীদের কাছে প্রিয়। ভাষার জন্য প্রাণ দেয়া জাতির সংস্কৃতি কতোটা উন্নত হতে পারে তা কেবল কল্পনা করা যায়। আর বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে যতটুকু জেনেছে তা দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোকে অনুপ্রাণীত করে। অপেন মার্কেটের এই যুগে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হবে বলে মনে করি।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে মাস্টার্স করছেন আফগানিস্তানের আলী মানছুর তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে বাংলাদেশ একটি অন্যতম শক্তি। বিশেষ করে বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর নেতৃত্ব গুণে বিশ্ব দরবারে একটি যায়গা দখল করেছেন৷ তবে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক যে সংস্কৃতি পরিবার নির্ভর রাজনীতি এর বাহিরে বাংলাদেশ ও নয়। বাংলা সংস্কৃতি সম্পর্কে কিছুটা জেনেছি বাংলাদেশি বন্ধুদের কাছ থেকে। বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখের ইতিহাস আফগান ইতিহাসের মতো বহু পুরানো আর সমৃদ্ধ। তবে বাংলা সংস্কৃতি নিয়ে আন্তর্জাতিক জার্নালে তেমন গবেষণা নেই। এতো সমৃদ্ধ সংস্কৃতির এরকম বেখেয়ালি মনোভাব একটি চিন্তার বিষয়। আর বাংলাদেশের উন্নয়ন চোখে পড়ার মতো গত কয়েক বছরে। এবছর জিডিপিতে বাংলাদেশ অন্য দেশগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে। তবে সামগ্রিক উন্নয়নটা খুব দরকার।

সমাজবিজ্ঞান বিজ্ঞান নিয়ে মাস্টার্স করছেন শ্রীলঙ্কার থাবারাসা আনুকবি তার মতে, বাংলাদেশের রাজনীতি ২ দল নির্ভর। এটা রাজনীতির জন্য একটি খারাপ দিক। কারণ এই ২ দল যতই খারাপ করুক এর বাহিরে মানুষের পছন্দের আর সুযোগ নেই। তবে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতি অনেক শান্ত। এতে সরকার দল দেশের এই শান্ত পরিবেশ উন্নয়নের কাজে লাগাতে পারে। পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির বাহিরে যেতে না পারলে যতই রাজনীতির উন্নয়ন হোক সেখানে সুশাসন যেমন অনুপস্থিত থাকবে তেমন করে দুর্নীতি মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। বাংলাদেশীরা তাদের সংস্কৃতি নিয়ে খুব সচেতন। তারা জাতিগতভাবে শান্ত আর ধর্মপরায়ন। তারা খুব সহজে মানুষকে আপন করে নিতে পারে। আর বাংলাদেশের বর্তমান উন্নয়ন নিয়ে একটা বিষয় চিন্তার বিষয় যে এই উন্নয়নের মাধ্যমে গোটা জাতির উন্নয়ন প্রতিফলিত হচ্ছে না গুটিকয়েক মানুষের উন্নয়নকে জাতীয় উন্নয়ন বলে প্রচার করা হচ্ছে সিস্টেমে। কিছু বিষয় অবাক করার মতো যেমন আমার বড় ভাই সৌদি আরব থাকেন তিনি বললেন বাংলাদেশের শ্রমীকরা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে সৌদীতে কোনো ইন্সুরেন্স ছাড়া। এটা অন্য কোনো দেশের শ্রমীকের পক্ষে সম্ভব না।

ভূটানের শিক্ষার্থী রিনচেন কেইনজাঙ্গ পড়ছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে। তিনি বলেন, রাজনীতি কখনো ধনীদের জন্য না। তা হওয়া উচিত গরীবের উন্নয়নের জন্য। বাংলাদেশ বিষয়ে কিছু কোর্সে আর্টিকেল পড়তে গিয়ে জানলাম, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের একটি বড় প্রভাব। ব্যবসায়ীরা রাজনীতিতে আসে তাদের সুযোগ বাড়ানোর জন্য। তারা সাধারণ মানুষের কথা কম চিন্তা করে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই আধুনিক যুগে হরতাল আছে শুনে অবাক লাগে। এতে বুঝা যায় রাজনৈতিক বিকাশ খুব একটা হয় নি বাংলাদেশে। বাংলাদেশের সংস্কৃতি একটি উন্নত সংস্কৃতি যতটুকু পড়াশুনা করে জানলাম। ইউনেস্কো কর্তৃক বাংলা ভাষার স্বীকৃতি একটা মাইলফলক তাদের সংস্কৃতির জন্য। পোশাক শিল্প দিয়ে বাংলাদেশ গোটা পৃথিবীর নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে। সামগ্রীক উন্নয়নে ব্যালেন্স রাখতে পারলে আমার মনে হয় সামনের দিকে বাংলাদেশ গোটা পৃথিবীর ব্যবসায়ীদের নজর কাড়তে সক্ষম হবে। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে বলে মনে করি।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল