সৌন্দর্যে মুগ্ধ মন
- সুনান খান
- ১৭ মে ২০২৪, ০০:০৫
এই সমস্ত নিবু নিবু কমলা রঙের রাতের সাথে আমার অদম্যকাল ধরে পরিচয়। রাত হলেই হাঁটতে বেরুতাম। সেকালে ঢাকেশ্বরী থেকে ইস্কাটন যেতাম আর একালে ফাতিহ থেকে ইশতিকলাল। ইস্তাম্বুলের ল্যাম্পপোস্ট আমার পথের সাথী।
আজকের রাতটা ভীষণ অদ্ভুত। কেমন যেনো মখমলে আকাশ। মনে হচ্ছে,আকাশের চোখে পানি জমে আছে। যেকোনো মুহূর্তে সহ্যের বাঁধ ভেঙে কেঁদে ফেলবে। ইস্তাম্বুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে আমার মাঝে মধ্যে সহ্যের বাঁধ ভেঙে যায়। ইচ্ছে হয় জড়িয়ে ধরি ইস্তাম্বুলকে; আজো তাই হচ্ছে। দিনভর এ শহরকে মাতিয়ে বেড়ায় গ্লোবাল পর্যটক। ট্রেন, বাস ট্রাম। সারাটা দিনভর বাজতে থাকে হুইসেল আর নয়া নয়া পর্যটকের গান।
সমস্ত দিনভর পাখির মতো কিচিরমিচির করে মানুষ। এশিয়া থেকে ইউরোপে চরকির মতো ঘুরতে থাকে ইস্তাম্বুল। কত-শত মানুষ আসে আবার চলেও যায়। তবে থেকে যায় ঠিক কতজন? যে ক’জনই হোক এর মধ্যে আমি একজন।
এখন হাঁটছি ইস্তাম্বুল ফাতিহের বাঁয় রোড ধরে, উদ্দেশ্য প্রাচীন দার্জিলিং শহরের উল্টো দিকে। অতদূর থেকেও আমার কানে ভেসে আসছে সমুদ্রের চিৎকার। সমস্ত ইস্তাম্বুলকে জড়িয়ে ধরেই হাঁটছি আজ। মনোরথ এখন সমুদ্রের দিকে। যতই কাছাকাছি আসছি ততই সমুদ্রের একটানা কান্নার শব্দ বেঁকে আসছে আমার দিকে। কৃষ্ণসাগর আর মারমারা আমায় বেশ করে ডাকছে। অন্য দিকে বসফরাশের ডুকরে ওঠা কান্না আর গুমরে ওঠা জলের শব্দ আমার হৃদয়ে ধীরে ধীরে ক্ষত আঁকছে। শিশিরভেজা ফুলের মতো ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠা প্রাচীন সব সুলতানের মুখচ্ছবি পরক্ষণেই ভেসে উঠছে চোখে। স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে প্রাচীন বাইজেন্টাইন। আমার দেহ জড়িয়ে আছে সুলতান ফাতিহের ‘ইসলামবুল’ আর আমি দাঁড়িয়ে আছি কামাল পাশার প্রবীণ ‘ইস্তাম্বুল’।
প্রাচীন এই শহরের মানুষের এত কিসের দুঃখ আমার বুঝে আসে না! এরা রাত হলেই বসফরাসের তীরে বসে পড়ে। রাত্রিময় দুঃখ যাপন করে। আজ আমি তাদের দুঃখ যাপনের সাথী বনেছি। রাত পোহালেই ছুটি শেষ। ডর্মের রেস্ট্রিকশনের আজই শেষ রাত। আজকের রাতটা সমুদ্রের পাড়ে বসেই কাটিয়ে দেয়ার ইচ্ছে। মনে হচ্ছে সম্ভব হবে না! দুঃখদের তাড়া আছে যেতে হবে! কত কিছুই তো অনিচ্ছা সত্ত্বেও করছি নিতান্তই। এই যেমন ডরমের তুর্কি খাবার। অনিচ্ছা সত্ত্বেও গিলছি প্রতিদিন। মাঝে মধ্যে মনে পড়ে জীবনানন্দের কবিতার এ লাইনটি- ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর’। আমার কেন যেন মনে হয়, জীবনানন্দ রূপ বলতে সামগ্রিক রূপ-স্বাদ বোঝাতে চেয়েছেন। যেমন বাঙালি বধূ-রমণী অথবা বাঙালি খাবার ভাত-মাছ।
যাক গে, ইস্তাম্বুলের আকাশের সহ্য ক্ষমতা লোপ পেয়েছে আজ। শুরু হয়েছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। বৃষ্টির ছোট ছোট ফোঁটা বসফরাসের উপর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে- রিনিঝিনি খেলছে প্রাচীন এই জলের সাথে। আমি এক নজরে তাকিয়ে আছি আকাশের দিকে। আকাশ যেন উবু হয়ে সমুদ্রকে চুমু খাচ্ছে। আমার সমস্ত দেহ শান্ত। বৃষ্টির চুম্বনে তরঙ্গ সঞ্চার করে শান্ত দেহ ফুলে ফেঁপে উঠছে। বসফরাসের অন্তরাত্মা আমায় নিয়ে মেতে উঠতে চাচ্ছে। আর আকাশের সমস্ত বৃষ্টির ফোঁটা কেন্দ্রীভূত সুবিস্তীর্ণ হচ্ছে আমার সমস্ত সত্তাজুড়ে। আনন্দে দেহের ইন্দ্র-বিন্দু হতে বিচ্ছুরিত হচ্ছে দুঃখ। আমার চোখ থেকে ক’ফোঁটা উষ্ণ জল বসফরাস হয়ে মারামারার দিকে ছুটে যাচ্ছে। আমি তবু-ও আমি চোখ খুলিনি। ততক্ষণে ধীরে ধীরে বৃষ্টির ছাইপাশ কমে আসে। আমার শরীরে বাসা বেঁধে থাকা প্রাচীনতম পুরনো দুঃখগুলো শুষে নিয়েছে প্রবীণ ‘ইস্তাম্বুল’।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা