১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সাতাশি বছরে কথাসাহিত্যিক হাসনাত আবদুল হাই

-

হাসনাত আবদুল হাই একজন প্রখ্যাত বাংলা কথাসাহিত্যিক, শিল্পসমালোচক, প্রাবন্ধিক, ভ্রমণকাহিনীকার, কবি ও অনুবাদক। বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হন।
তিনি ১৯৩৭ সালের ১৭ মে তারিখে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আবুল ফতেহ এবং মাতা আয়েশা সিদ্দিকা। তার পৈতৃক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার অন্তর্ভুক্ত সৈয়দাবাদ গ্রামে।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়াশিংটন, লন্ডন ও ক্যামব্রিজে লেখাপড়া করেন।
অধ্যাপনা দিয়ে তিনি চাকরিজীবন আরম্ভ করেন। তারপর ১৯৬৫ সালে সিভিল সার্ভিস থেকে সরকারি বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন ও ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকারের সচিব পদ থেকে অবসর লাভ করেন।
হাসনাত আবদুল হাই এক জায়গায় বলেন, “ক্লাস থ্রিতে থাকতেই ‘বিষাদ সিন্ধু’ পড়ে শেষ করে ফেলি। পরে এটা একটা ব্যতিক্রমী ব্যাপার বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। রীতিমতো অকালপক্বতা যাকে বলে আর কি। এ ছাড়া অন্যদের মতন শিশু এবং কিশোর বয়সে রূপকথাই বেশি পড়েছি। এরপর ক্লাস ফোরে পড়ার সময় পর্যটক রমানাথ বিশ্বাসের ‘লাল চীন’ বইটা পড়ি। এটা ভ্রমণকাহিনী। তখনই আমার মধ্যে ভ্রমণকাহিনী এবং ভ্রমণের ব্যাপারে একটা বেশ আগ্রহ জন্মে। আমার আব্বা তখন সরকারি চাকরি করতেন, বদলির চাকরি। সেই সুবাদে উভয় বাংলার নানা জেলায় ভ্রমণের অভিজ্ঞতা হয়ে যায়। ভেতরে একটা যাযাবর ভাব আসে। দেশ বিভাগের পরে আমরা ঢাকায় আসি। তারপর যশোরে যাই। ক্লাস ফাইভে ভর্তি হই। যশোর তখন হিন্দুপ্রধান ছিল। সেই কারণে আমার প্রায় বন্ধুই হিন্দু ছিল। সেখানে গিয়ে দেখলাম পাড়ায় পাড়ায় বইয়ের লাইব্রেরি আছে এবং বই পড়ার ব্যাপারে ছেলেমেয়েদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা আছে। এভাবে আমিও প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ফেললাম। তখন প্রহেলিকা সিরিজ কাঞ্চনজঙ্ঘা সিরিজের রহস্য রোমাঞ্চ বই বিশেষ করে হেমেন্দ্র কুমার রায়, পাঁচকড়ি দে, সৌরিন্দ্র মোহন, নীহার রঞ্জন এদের বই আমি প্রায় কয়েক মাসেই পড়ে শেষ করে ফেললাম। এরপরে একটু প্রাপ্ত-বয়স্কদের জন্য লেখা মোহন সিরিজের বই পড়া শুরু হয়ে গেল, শশধর দত্তের লেখা। সেটা ঠিক কিশোরদের জন্য লেখা না। একটু প্রাপ্ত-বয়স্কদের জন্য। কিন্তু আমরা বন্ধুরা মিলে সেগুলো পড়েও শেষ করে ফেললাম। তার পরে আমরা, একেবারেই প্রাপ্ত-বয়স্কদের জন্য লেখা, যেমন, মনোজ বসু, তারাশংকর, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, অচিন্ত্য কুমার সেনগুপ্ত, সুশীল জানা, বনফুল এদের বই-পত্র পড়া শুরু করে দিলাম। এইভাবে পড়ার ব্যাপারে আমার মধ্যে একটা অকালপক্বতা এসে যায়। এর কারণ হিসেবে বুঝতে পারি, ওই যে, যশোরে আমার যে বন্ধুরা, তাদের সাথে প্রতিযোগিতা আর পাড়ায় পাড়ায় যে বইয়ের লাইব্রেরি ছিল- ওসবই সহায়ক হয়েছে।”
এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন-
‘আমি তখন ফরিদপুর জেলা স্কুলে দশম শ্রেণীতে পড়ি। একদিন প্রধান শিক্ষক বললেন, আমাদের একটা বার্ষিক পত্রিকা বের করতে হবে, তুমি এর সম্পাদক হও। যেহেতু আমি ক্লাসের প্রথম ছাত্র ছিলাম সে জন্য তিনি দায়িত্বটা আমাকে দিলেন।
ওই পত্রিকায় আমার লেখা একটা ভ্রমণকাহিনী প্রকাশিত হয়। এর আগের বছর বয়েজ স্কাউট হিসেবে পুরো ভারতবর্ষ এবং পশ্চিম পাকিস্তান ঘুরে এসেছিলাম। সেই স্মৃতি মনে করে শুধু দিল্লি শহরের বিভিন্ন স্থান, বিভিন্ন স্মৃতির ওপর ভিত্তি করে লেখাটি লিখেছিলাম। সেটিই ছিল ছাপার অক্ষরে প্রকাশিত আমার প্রথম সাহিত্যকর্ম।’
তিনি আরো বলেন- ‘ছোটবেলা থেকেই বই পড়ুয়া ছিলাম আমি। হাতের কাছে যা পেতাম তা-ই পড়তাম। গল্প, উপন্যাস, ইতিহাস, দর্শন, বিজ্ঞান, কবিতা, সমালোচনা, তত্ত্ব বলা চলে নির্বিচারে সবই পড়তাম। সেই অভ্যাস এখনো রয়ে গেছে। মনে হয়, এভাবেই নানা বিষয়ে আমার আগ্রহ তৈরি হয়েছে। বই কেনা এবং বই পড়া- এই দুইয়ের সমন্বয়ে নানা বিষয়ে লেখার আগ্রহ তৈরি হয়েছে আমার ভেতরে।’
তিনি বলেন- “আমি পাবলিক সার্ভিসে এসেছিলাম মূলত বাবা-মায়ের আগ্রহের জন্য। ওই সময়ে আমার বড় দুই ভাই-ই ছিলেন শিক্ষকতার সাথে যুক্ত- একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের, আরেকজন কলেজশিক্ষক। তো, আমিও যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় যোগ দিলাম, বাবা মাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলতেন, ‘আমাদের সব ছেলেই মাস্টার হয়ে গেল!’ তখন বুঝলাম যে তাদের খুব ইচ্ছা, আমি যেন সরকারি চাকরিতে যোগ দিই। সরকারি চাকরি পাওয়া ছিল সে সময় বিরাট মর্যাদার ব্যাপার। ফলে বাবা-মায়ের আগ্রহের কারণে সিএসপি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে পাবলিক সার্ভিসে যোগ দিই।”
তার প্রকাশিত গল্পগ্রন্থের সংখ্যা চার, উপন্যাস তেইশ, ভ্রমণ কাহিনী ছয় এবং প্রবন্ধ দুই। তিনি মূলত ঔপন্যাসিক ও ভ্রমণকাহিনীকার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। তার লেখা উপন্যাস সুলতান ডাবলিন আন্তর্জাতিক সাহিত্য পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়।
গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনীতে নিজেকে প্রকাশ করে চলেছেন হাসনাত আবদুল হাই। দৈনিক ইত্তেহাদ পত্রিকায় তার প্রথম গল্প প্রকাশ হয় ১৯৫৮ সালে।
আমাদের বঙ্গীয় ব-দ্বীপের কীর্তিমান বহুমাত্রিক লেখক হাসনাত আবদুল হাইয়ের ২০২৩ সালের ১৭ মে সাতাশিতে পা রেখেছেন।
ব্যক্তি-মানুষের জীবন নিয়ে উপন্যাস রচনা করা যেতে পারে, এই বাংলাদেশে, প্রতিষ্ঠিত করলেন তিনি। লিখলেন অমর চিত্রশিল্পী সুলতানকে নিয়ে ‘সুলতান’। লিখলেন আর এক চির অভিমানী শিল্পী নভেরাকে কেন্দ্র করে, ‘নভেরা’। বরিশাল শহরের ছয় কিলোমিটার দূরের এক গ্রামের দরিদ্র কিন্তু লড়াকু মানুষ, যার বিদ্যার দৌড় আদর্শলিপি পাঠ পর্যন্ত, সেই স্বনির্মিত মানুষ আরজ আলী মাতুব্বরকে নিয়ে লিখলেন, ‘একজন আরজ আলী’। আমাদের থমকে যাওয়া উপন্যাসের জগতে আনলেন নতুন জোয়ার, বুনলেন সোনালি ফসল- জীবনী উপন্যাসের আলোয়। হাসনাত আবদুল হাইয়ের বয়স এখন সাতাশি বছর চলছে। এই সাতাশি বছরেও তিনি নিরলস লিখে যাচ্ছেন দুর্বার।
অন্য এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন- ‘আমি আমার শ্রেষ্ঠ লেখাটি এখনো লিখতে পারিনি। এই অতৃপ্তি মনে হয় সব শিল্পী-সাহিত্যিকেরই থাকে। আর তৃপ্তির জায়গা যদি বলি, আমার এক শ’র মতো বই বেরিয়েছে। যদি আমার পাঠক না থাকত, তবে এত বই প্রকাশক ছাপত না। এটি আমাকে সত্যিই তৃপ্তি দেয়।’
প্রাপ্ত পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে : বাংলা একাডেমি, অলক্ত সাহিত্য, আচার্য্য জগদীশ চন্দ্র, মাওলানা আকরাম খাঁ, শিল্পাচার্য্য জয়নুল আবেদীন, এস এম সুলতান, ড. ইব্রাহিম স্মৃতি এবং শেরেবাংলা পুরস্কার। সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৬ সালে ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। তার লেখা উপন্যাস সুলতান ডাবলিন আন্তর্জাতিক সাহিত্য পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়।


আরো সংবাদ



premium cement
পিছিয়েছে ডি মারিয়ার বাংলাদেশে আসার সময় ইরানে হামলা : ইস্ফাহান কেন টার্গেট? মাত্র ২ বলে শেষ পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড প্রথম টি-টোয়েন্টি জেলে কেজরিওয়ালকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ দলের ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা তোকে যদি এরপর হলে দেখি তাহলে খবর আছে, হুমকি ছাত্রলীগ নেতার বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা করা হয়নি : প্রধানমন্ত্রী দাওয়াতী ময়দানে সকল নেতাদের ভূমিকা রাখতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেল শ্রমিকদের মাঝে ইসলামের আদর্শের আহ্বান পৌঁছাতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে

সকল