২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

কবিতার রকমফের

-

কবিতা সাহিত্যের এক অনন্য শাখা। কবিতায় আনন্দ বেদনা কল্পনার অনুভূতির উচ্ছ্বাস চিত্রায়িত হয়। কবিতা তার ছন্দ অলঙ্কারে সজ্জিত হয়। কবির নিজস্ব কল্পনাকে ফুটিয়ে তোলার মাধ্যমে কবিতা প্রকাশ পায়। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, ‘নিজের প্রাণের মধ্যে, পরের প্রাণের মধ্যে ও প্রকৃতির মধ্যে প্রবেশ করিবার ক্ষমতাকেই বলি কবিত্ব।’
পৃথিবীতে নানান দেশের ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির কবিতা রয়েছে। নানান ভাষার নানান শিল্পের কবিতা। সংস্কৃতি ভেদে কবিতার ভিন্নতা দেখা যায়। কবিতা নিজস্ব দু’টি প্রকারে বিভক্ত। মন্ময় কবিতা এবং তন্ময় কবিতা। মন্ময় কবিতা যেমন ব্যক্তিনিষ্ঠ অন্য দিকে তন্ময় কবিতার রসদ বস্তুসত্তা।
ছন্দ অনুযায়ী কবিতা অক্ষরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত, স্বরবৃত্ত ছন্দে হয়ে থাকে। বিষয় অনুযায়ী কবিতা হরেকরকমের হয়। প্রকৃতির কবিতা, অনুপ্রেরণামূলক কবিতা, বিরহের কবিতা, রম্য কবিতা, দেশাত্মবোধক কবিতাসহ আরো অনেক রকমের হয়ে থাকে।
কবিতা বিভিন্ন দেশ সংস্কৃতি ও ভাবধারায় ভিন্ন ভিন্ন ধরনের হয়। যেমন- জাপানি হাইকু, কোরিয়ান শিজো, ফারসি রুবাই, ফরাসি ট্রায়োলেট, সনেট প্রভৃতি।
চলুন পরিচিত হই কয়েকটি ছোট ছোট কাব্যিক রূপের সাথে।
হাইকু : হাইকু জাপানি তিন চরণের কবিতা। হাইকু পাঁচ/সাত/পাঁচ মাত্রায় গঠিত হয়। অর্থাৎ প্রথম চরণে পাঁচ সিলেবল তারপর যথাক্রমে সাত এবং পাঁচ। হাইকুর তিন পঙ্কতিতে সংক্ষিপ্ত পরিসরে একটি মুহূর্তের ভাব প্রকাশিত হয়।
যেমন-
জলে লহরী
এই বুঝি ভাঙন
ক্লান্ত প্রহরী।
(টি এইচ মাহির)

ট্রায়োলেট : ট্রায়োলেট আট পঙ্ক্তির ফরাসি কাব্যরূপ। ট্রায়োলেট পুনরোক্তিমূলক কাব্য। ট্রায়োলেট কবিতার বিন্যাস ‘কখকককখকখ’। এর প্রথম চতুর্থ সপ্তম চরণ অভিন্ন হয় এবং দ্বিতীয় অষ্টম চরণ ও অভিন্ন হয়। বাকি দুই চরণে ট্রায়োলেট রচিত হয়।
যেমন -
চলো মুসাফির ঘুরি পৃথিবীর,পথে বালুচরে,
পাখির কুঞ্জনে সভ্যতার ব্যঞ্জনে কতো রূপ।
পাহাড় নদী বনে মায়া মমতা মনে, বৃষ্টি ঝরে।
চলো মুসাফির ঘুরি পৃথিবীর, পথে বালুচরে,
কতো জাতি দেশ বর্ণের বেশ, একই সরোবরে
সাগরে ভেজা গিরি ঝর্ণায় ঝিরি, জলের কূপ।
চলো মুসাফির ঘুরি পৃথিবীর, পথে বালুচরে,
পাখির কুঞ্জনে সভ্যতার ব্যঞ্জনে কতো রূপ।
(চলো মুসাফির-টি এইচ মাহির)

সিনকয়েন : সিনকয়েন পাঁচ চরণের কাব্যিক রূপ। এই কাব্যিক রূপটি জাপানি হাইকু এবং টঙ্কার কাব্যিক রূপ থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছে। এর প্রথম চরণে একটি শব্দ দ্বিতীয় চরণে দু’টি তৃতীয় চরণে তিনটি চতুর্থ চরণে পাঁচটি শব্দ এবং শেষ চরণে একটি শব্দ থাকে।
যেমন-
বালুচর
নিস্তব্ধ প্রান্তর
সাদা মেঘের ভেলা
শিশু কিশোররের দুরন্ত উচ্ছ্বাস,
খেলাঘর।
(টি এইচ মাহির)

শিজো : শিজো কোরিয়ান কাব্যিক রূপ। এতে তিন চরণের প্রত্যেকটিতে ১৪ থেকে ১০টি সিলেবল বা দল থাকে।
যেমন-
দশটা বছর ব্যয় করে এই পর্ণকুটির তৈরি করা
আধখানা তার বাতাস থাকে, আধখানা তার চাঁদের বাড়ি
কোথায় তোমায় বসতে দেব? বরং তুমি বাইরে এসো।
(কবি সং সুন)

রুবাইয়াত বা রুবাই : ফারসি সাহিত্যের রুবাই বা রুবাইয়াত খুবই পরিচিত একটি কাব্যিক রূপ। কবি ওমর খৈয়ামের হাত ধরে এর সৃষ্টি। এর বিন্যাস : ককখক। রুবাইয়াতের প্রথম দুই চরণে ভাব এবং পরের দুই চরণে তার পরিণতি থাকবে।
যেমন-
ধৈর্য কভু নেইকো ধরায় সহনশীলের অমর জ্যোতি,
হারিয়ে হেছে ভালোবাসার সুহৃদজনের মিলন দ্যুতি।
হাজার খণ্ডে চলছে ধরা নেই সমতার চিহ্নরেখা,
বিবেক হতে ঝরছে লহু সহিষ্ণুতার নেইকো স্মৃতি।

এ রকম পৃথিবীতে আরো অনেক ছোট ছোট কাব্যিক রূপ আছে। ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির ভিন্ন ভিন্ন ধরনের কবিতা। এভাবে কবিতা মানুষের মনের ভাব প্রকাশ করে।


আরো সংবাদ



premium cement