২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পীড়ন

-


বেকার থাকার ভয় নিয়ে চাকরিটা তবু করে যাচ্ছে যেন বাধ্য হয়েই সাজিদ হাসান! একটা স্বনামধন্য কোম্পানিতে সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ পদে কাজ করছে সে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পূর্ণ করে জয়েন করেছে এখানে; বছরতিনেক হলো কোনো ইনক্রিমেন্ট নেই! এন্ট্রি-লেভেলে বেতন যেটি ধরেছিল সেটিই পাচ্ছে। গেল তিন বছরে ইনক্রিমেন্টের কথা বলে অরণ্যে রোদন ছাড়া বৈকি! কোনো পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে ইমেইলে সিভি পাঠিয়েছিল সে। কিছুসংখ্যক চাকরিপ্রার্থীর লিখিত পরীক্ষার দু’দিন পর বেছে বেছে কয়েকজনের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার পায় সাজিদও। চাকরি পেতে মরিয়া সাজিদ মাসিক বেতন নিয়ে দরকষাকষিতে না গিয়ে জয়েন্ট করেছিল। অনেকটা সময় ধরেই তাকে ইনক্রিমেন্টের প্রলোভন দেয়া হচ্ছিল। দুই বছরেরটা একসাথে পাবে; ডাবল ইনক্রিমেন্ট হবে। কাগজপত্রও রেডি হয়ে আছে। কোম্পানির এমডি স্বাক্ষর করলেই বেসিকের সাথে ইনক্রিমেন্ট যোগ হয়ে যাবে। এসব নিয়ে চিন্তার কিছু নেই! এমন আশাব্যঞ্জক কথায় অফিসে কত সময়-শ্রম দেয় সাজিদ; যা দিতে বাধ্যও সে। বেতন তো নেয় সে। কিন্তু অলৌকিক কী কারণে ইনক্রিমেন্ট হচ্ছে না সেটি তো বোঝা যাচ্ছে না। তা ছাড়া অফিসে এটা-ওটা নিয়ে ঝামেলা লেগেই থাকছে; আর হচ্ছে-হবে শুনতে শুনতেই তিনটি বছর কেটেছে ইনক্রিমেন্ট ছাড়াই। এর মধ্যেই শুরু হয় করোনা-দুর্যোগও।
যদিও বলা হয়েছিল সাজিদের চাকরিটা স্থায়ী হবে জয়েন করার ছয় মাস পর। বেতনও বেড়ে যাবে। কিন্তু সেটি হলো না। অফিসও করতে হয় আট-নয় ঘণ্টা। অফিস থেকে বাসায় ফিরে রান্না করে খাওয়া শেষে ঘুমের সময় হয়ে আসে। সকালেও ঠিক সময়ে অফিসে থাকতে হয়। রাত করে ঘুমানোর সুযোগও নেই। তবে ডে-অফে ঘর থেকে বেরোয় না সে; চাকরি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়। বইগুলো নিয়ে সারাটা দিন কেটে যায়। দু’টি বিসিএস আর তিনটি ব্যাংক জবের পরীক্ষাও দেয়। প্রিলি হলেও লিখিত হয় না। লিখিত হলেও ভাইভাতে আটকে যায়। চাকরিটা ছেড়ে ভালো করে প্রিপারেশন নেবে কখনো কখনো ভাবছিল সাজিদ হাসান; কিন্তু সেটিও হয়ে উঠে না।


মা গ্রামে ছেলের জন্য পছন্দমতো মেয়ে দেখে রেখেছেন। একটা ভালো বেতনের চাকরি হলো না সে বিয়ে করবে কী করে! ভালো চাকরি না হলে আজকাল কেউ তো মেয়েকে পাত্রস্থ করতেও আগ্রহী হয় না। প্রেমভাগ্যও ভালো নয় সাজিদের। ইউনিভার্সিটির সহপাঠী বান্ধবী কেয়ার সাথে দীর্ঘ দিন পর নতুন করে আলাপও হয়েছিল। সেটিও খুব বেশিদূর গড়াল না। তারিন নামের যে মেয়েটাকে সরল চোখে দেখে সে ভীষণ মুগ্ধ হয়েছিল তাতেও কাজের কাজ তো কিছু হলো না! সাজিদ আর মেয়েটা এই শহরে একই এলাকায় থাকে। একদিন সন্ধ্যায় কাছের একটা রেস্টুরেন্টে দীর্ঘ বাক্যালাপও হয় দু’জনের। তারিন কৌশলে মাসিক আয়রোজগার জানতে চেয়েছিল, তখন প্রসঙ্গ এড়িয়ে যায় সাজিদ। তারিনের চাওয়া-পাওয়া বুঝতে পেরে ভেতরে ভেতরে সঙ্কোচবোধ হচ্ছিল তার। এখন যে চাকরি করছে তাতে তারিন মেয়েটার চাহিদা পূরণ আকাশকুসুম কল্পনা ছাড়া কিছু নয়! এক বৃষ্টির দিনে রামপুরার একটি রেস্টুরেন্টে তাদের ফের আলাপ হয়। এ দিন কথা প্রসঙ্গে তারিন বলেছে, ‘বুঝছ, একটি সহজ কথা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বলা ভীষণ অপছন্দ লাগে। তোমাকে কিছুটা ভালো লেগেছে বলেই তো আজ ডেকেছি। আমি জব করছি সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু বিয়ের পর চাহিদামতো আর্থিক সাপোর্ট মেটাতে যে ছেলেটা ব্যর্থ হবে জেনেশুনে তাকে বিয়ে করতে যাবে কেন! এমনটি ভাবা নিশ্চয়ই অপরাধবোধ নয়...!’ এমন কথায় সাজিদের দুশ্চিন্তাও বাড়ে কিছুটা। কয়েকদিনে তারিনের প্রতি একটু-আধটু প্রেম জন্মালেও অভিমান নিয়ে সম্পর্ক থেকে সরে যায় সে। চাহিদা মতো আর্থিক সাপোর্ট কী করে মেটাবে সে!

দাম্পত্য জীবনে আর্থিক সাপোর্ট কম তো কিছু নয়! বিষয়টি নিয়ে সদ্য বিবাহিত কলিগ বিমলের সাথেও আলাপ হয় তার। অফিসের কাজে বেরিয়ে দুপুরের দিকে দু’জন একটি খাবার হোটেলে গিয়ে বসে; বিমল তাকে অভয় দেয়, বর্তমান চাকরির বেতনে দু’জনের সংসার চালানো যে একেবারে অসম্ভব হবে তা হয়তো নয়। তবে টেনেটুনে মাস যাবে। সাজিদকে সাহস দেয় বিমল- চিন্তার কিছু নেই! বিয়ে করলে ভাগ্য পরিবর্তন হয়। একসময় সব ঠিকও হয়ে যায়। বিমলের বেলায়ও সেটি হয়েছিল কি না তা অবশ্য জানতে চায়নি সাজিদ। একটি ভালো বেতনের চাকরি পেয়ে গেলেই তো হয়! নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখাটাও খুব জরুরি। জীবনে কখন কী ঘটবে তা তো আর বলা যায় না! কত কত সফল লোকের ভাষ্যে তো- পৃথিবীতে অসম্ভব বলেও কিছু নেই। চাইলে সবকিছুই সম্ভব! কথাটা তবু কেমন মানতে পারছিল না সাজিদ। চাইলে সব কিছুই কী করে সম্ভব হয়! হঠাৎ মনে পড়েছে তাকে সে দিন তারিন এটিও বলেছে যে, ইউনিভার্সিটি লাইফে ক্যাম্পাসের এক ছেলের সাথে দীর্ঘ দিনের রিলেশনশিপ ছিল তার। ছেলেটি তাকে বিয়েও করতে চেয়েছিল; কিন্তু স্বল্প বেতনের চাকরিতে ফ্যামিলি মোটেও রাজি হবে না ভেবে তাকে এড়িয়ে গেছে তারিন। সাজিদ একটু ভাবছে, যে মেয়েটি দীর্ঘ দিন প্রেম শেষে স্বল্প বেতনের চাকরির অজুহাতে বিয়েতে আগ্রহ পায় না তাকে নিয়ে প্রেম-চিন্তার কোনো মানে হয় না! কেউ তো আর সম্পর্ক করার সময় ফ্যামিলির অনুমতি নেয় না! যখন তখন রিলেশনশিপ করবে, আর কিছুদিন পর ব্রেকআপ হবে; জীবনে এসব সম্পর্কের কী মানে আছে! ভবিষ্যৎ দাম্পত্য জীবন নিয়ে বাস্তবমুখী ভাবনায় তারিনের প্রতি অভিমান কিছুটা বেড়ে যায়। এরপর যখন তারিন কল দেয় রিসিভ করে না সে। নম্বর ব্লক করে রাখে সাজিদ।
তারপর করোনাকালে দীর্ঘ সময় দেখা-সাক্ষৎও হয় না দু’জনের।


করোনাকালীন দুর্যোগ শেষে যখন ব্যবসাবাণিজ্য চাঙ্গা হয়ে ওঠে; বৈশ্বিক অর্থনীতিও অনেকটা সচল হয়! পুরোদমে চলে অফিস-আদালত। কর্মব্যস্ত মানুষজন করোনাকালীন দিনগুলোও হয়তো ভুলেছে! সাজিদের ইনক্রিমেন্টও হয়। ডাবল ইনক্রিমেন্ট! ডে-অফে তারিনকে একটি রেস্টুরেন্টে ডেকে ইনক্রিমেন্টের বিষয়টি বলবে ক’দিন ধরেই ভাবছিল সে। অফিস শেষে রুমে ফিরে এ দিন সন্ধ্যার পর পত্রিকাটা হাতে নেয় সাজিদ। একপাশে তারিনের ছবিটা দেখে বুকের ভেরতটা কেমন মুচড়ে ওঠে! কঠিন হাতে কে যেন তার হৃৎপিণ্ডটা চেপে ধরেছে! ছবির নিচে লেখা, ‘গতকাল সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফেরার পথে ট্রাকচাপায় প্রাণ...।’ অস্থিরতা বোধ নিয়ে তারিনের নম্বরে কল দেয় সে। কেউ একজন ধরে; মোবাইল রেখে নিরুদ্যম হয়ে যায় সাজিদ। তারপর কেমন এলোমেলো ঘোরগ্রস্ত দিনগুলো বিষাদে কেটে যাচ্ছিল তার!
ক’দিন আগে একরাতে কী মনে করে ইউনিভার্সিটির সেই সহপাঠী বান্ধবী ফোন করে আগ্রহভরা গলায় তাকে শোনাল, ‘শোনো! বাবা-মার পছন্দের ছেলেটাকে...। ঠিক করেছি না, কী বলো?’ সাজিদ নিশ্চুপ। কোনো জবাব দেয় না সে। পাশের বাড়ির কোনো একটি ফ্ল্যাট থেকে তখন সাগর সেনের দরদভরা কণ্ঠে কেমন অস্পষ্ট আওয়াজ ভেসে আসছে, ‘আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে।’
রাত-বিরাতে যখন তখন বিরহ বেদনায় ঘোরগ্রস্ত সাজিদের দু’চোখ অনায়াসে জলে ভরে যায়, সেটি কী করে সে...; একটি প্রশ্ন আজকাল তাকে পীড়া দিচ্ছে খুব- কারো কারো জীবনে কেন হঠাৎ হারিয়ে যায় কেউ একজন একেবারে, এমন ঘোরগ্রস্ত পীড়নে কাটবে তার পুরোটা জীবন? জীবন কেন এত রহস্যময়। পাওয়া না পাওয়ার হিসাব বোধহয় মেলে না কারো জীবনেই।

 


আরো সংবাদ



premium cement
চুয়াডাঙ্গায় বৃষ্টির জন্য ইস্তিস্কার নামাজে মুসুল্লিদের ঢল বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের চাবিটা মনে হয় পার্শ্ববর্তী দেশকে দিয়েছে সরকার : রিজভী চীনের দক্ষিণাঞ্চলীলের গুয়াংডংয়ে সর্বোচ্চ স্তরের বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি আজমিরীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মর্তুজা হাসান গ্রেফতার মুসলিম শ্রমিক হত্যায় হিন্দু নেতারা চুপ কেন : প্রশ্ন হেফাজত নেতা আজিজুল হকের সাভারে বুধবার ১২ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে গাজা ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ফরিদপুর-খুলনা মহাসড়কে জনতার অবরোধ ভাঙতে টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি বাংলাদেশ-কাতারের মধ্যে ১০টি সহযোগিতা নথি সই ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি’ মিলান ডার্বি জিতে শিরোপা পুনরুদ্ধার ইন্টারের

সকল