২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

মা

মা -

কোমরে ব্যথায় ছটফট করছেন অন্তুর মা। শেষ অবস্থা তার। ডাক্তার বলেছেন, আর মাত্র দিন কয়েক বাঁচবেন উনি। অন্তু ছোটবেলা থেকেই বাকপ্রতিবন্ধী। অন্তুরা চার ভাই। অনীল, অমিত, অর্জুন আর অন্তু। সবার ছোট অন্তু। অন্তুর বড় তিন ভাই। সবাই বিয়ে করে বউ নিয়ে রাজধানীতে স্যাটেলড। মায়ের খোঁজখবর নেয়া তারা তেমন প্রয়োজন বলে মনে করে না। কালেভদ্রে দু’মাসে একবার গ্রামের বাড়িতে ফোন দেয় ছেলেরা। অন্তুর মা তার এবং অন্তুর ভরণপোষণের জন্য সামান্য টাকা চাইলেও দেবো দেবো বলে কল কেটে দেয় অন্তুর বড় তিন ভাই।
অন্তুর মা আম্বিয়া খানম আশায় বুক বেঁধে রাখেন। তার মনে বদ্ধমূল ধারণা জন্মে, একদিন অনেক টাকা পাঠাবে তার সোনার টুকরো ছেলেরা। আর সেই টাকায় অন্তুকে নিয়ে হাটে যাবেন তিনি। তারপর নিজেদের পছন্দের হরেক পদের খাবার বাজার থেকে নিয়ে আসবেন। হৈ হৈ রবে অন্তুকে পাশে বসিয়ে দুটো ভাত খাবেন একটু ভালো-মন্দ দিয়ে। ভাবতে ভাবতে চোখের কোনায় জল দেখা দেয় আম্বিয়া খানমের। আকাশ পানে তাকিয়ে তিনি মহান রবের কাছে আরজি জানান, তার চার ছেলেকেই যেন আল্লাহ ভালো রাখেন। দিন গড়িয়ে যায় তার নিজস্ব গতিতে। ছেলেরা মা’য়ের খোঁজ নেয় না। আম্বিয়া খানমের আশা নিরাশায় পরিণত হতে বেশি দিন সময় লাগে না। দু’মাস আগের কথা। কোমরে ব্যথার কারণে চলতে ফিরতে পারতেন না আম্বিয়া খানম। ভেবেছিলেন, হয়তো এমনি ব্যথা। কিছুদিন পর সেরে যাবে। কিন্তু দিন যত ঘনায় তার কোমরের ব্যথা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে। একটা সময় গ্রামের এক যুবকের সহায়তা নিয়ে তিনি ডাক্তারের কাছে যান। কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ডাক্তার রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর বলেন, আম্বিয়া খানমের দু’টো কিডনিই প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন কিডনি লাগানো ছাড়া বাঁচার কোনো উপায় নেই।
চোখে ধু ধু অন্ধকার দেখেন আম্বিয়া খানম। আর তার মুখে ছিল এক তাচ্ছিল্যের হাসি।

 


আরো সংবাদ



premium cement