ফরিদা হোসেনের গল্প
- ড. সালাহউদ্দীন আইয়ুব
- ২৭ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০৫
বিচিত্র মানুষজন নিয়ে গল্প লিখলেও ফরিদা হোসেনের গল্পের পটভূমি প্রধানত উচ্চবিত্ত মানুষের জীবন-যাপন, দুঃখ-কষ্ট, সঙ্কট, প্রেম, আনন্দ-বেদনা। তার তিনটি গল্পসংগ্রহে (আরাধনা, ২০০২; শ্রেষ্ঠগল্প সম্ভার,২০০৩; সহযাত্রী, ২০০৬) উঁচুশ্রেণীর মানুষজন নিয়ে লেখা গল্পগুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। প্রায় একদশক ধরে ঢাকা শহরে বাস করলেও এই স্তরের মানুষজনের সাথে আমার পরিচয় হয়নি। এ কথা বলা অসঙ্গত হবে না যে, ফরিদা হোসেনের গল্প পড়ে এ শ্রেণীর লোকজনের সাথে আমার প্রথমবারের মতো পরিচয় হলো। বাংলাদেশের উচ্চবিত্ত শ্রেণীর মানুষজনের দুঃখ-কষ্ট, সমস্যা, অন্তরঙ্গ বেদনা, এমনকি ব্যর্থতার সাথে আমাদের অনেকেরই হয়তো পরিচয় নেই, কিন্তু ফরিদা হোসেনের গল্প পড়লে বোঝা যায় জাগতিক সাফল্য ও বিত্তের জোরে হৃদয়সংশ্লিষ্ট সঙ্কট, সঙ্ঘাত, ঘানি ও পরতের অতিক্রম করা মানবিক সাধ্যের অতীত।
ফরিদা হোসেনের গল্প-বুননের কেন্দ্রে পাই আকস্মিকতা ও নাটকীয়তা। ছোটগল্পের বৈশিষ্ট্যের সাথে সঙ্গতি রেখে আকস্মিকতা ও নাটকীয়তা তার আখ্যানগুলোতে একটা গতির সঞ্চার করে। এই দুটো কৌশলের প্রয়োগের ফলে বস্তুটা যেমন পাই তেমনি বর্ণনাও, যা তার গল্পে কখনোই বস্তুর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে না। এ কারণে তার গল্প খুব দ্রুত পড়ে ওঠা সম্ভব। অন্য দিকে আকাস্মিক ঘটনার সন্নিবেশ ও তার নাটকীয় সমাপ্তি প্রায়ই স্বাভাবিক মনে হয়।
ফরিদা হোসেনের গল্পের পটভূমি কখনো স্বদেশ, কখনো বিদেশ কিন্তু তার গল্পের বিষয় স্বদেশও নয়, বিদেশও নয়; এর বিষয় মানবিক। সুখ-দুঃখ, প্রেম, পরাভব যা যুগপৎ নতুন ও পুরনো এবং যার কোনো দেশ-বিদেশ নেই। মানুষের হৃদয়ের যে স্বদেশ-বিদেশ নেই। তার গল্পগুলো এই পরিণত বোধের উচ্চারণ লিপিবদ্ধ করতে চায়।
ফরিদা হোসেনের নারী চারিত্রগুলো বিশেষভাবে উজ্জ্বল। বিত্তেরব্যবধান সত্ত্বেও একটি পুরুষ শাসিত ও নানা নিগড়ে সঙ্কুচিত সমাজে বাঙালি মেয়েরা এখনো যথেষ্ট নিরাপদ নয়। ‘অনুভূতি’র মতো গল্প লিখে তিনি আমাদের মনে করিয়ে দেন যে, বাংলাদেশের সমাজে উপযুক্ত পাত্রের সাথে পরিণয়সম্বন্ধ স্থাপন একটা নারীর জীবনে কত বড় ঘটনা, আর স্মরণীয় বৃত্তান্ত মেলে ‘ঘূর্ণিঝড়’ গল্পে। ‘সহযাত্রী’ বইটির কেন্দ্রীয় আখ্যানটির বিষয়ও তাই।
‘স্বপ্নভঙ্গ’ গল্পটির বিষয়দান্ত পরিণতি মানুষের জীবনের সাফল্য ও ব্যর্থতার নিরিখে নিয়ে যেসব জিজ্ঞাসার সূত্রপাত ঘটায়, তা তাৎপর্যপূর্ণ। আমরা না ভেবে পারি না যে একটি ছোটগল্পের মতো মানুষের জীবনও অসম্পূর্ণ। এক আকস্মিক ঘূর্ণিঝড়ে ওয়েলেসের তরুণ অধ্যাপক জাহেদ চৌধুরী ও রেবার দেখা হয়, মেলামেশা দু’জনের মধ্যে বিয়ের কথাও পাকাপাকি হয়ে যায়। কিন্তু জীবনের আরেক ঘূর্ণিঝড়ে রেবা জানতে পারে মৃত্যুপথযাত্রী মায়ের ইচ্ছাপূরণের জন্য জাহেদ চৌধুরীর পক্ষে তাকে বিয়ে করা সম্ভব নয়।
ঘটনাপ্রবাহের আকস্মিক পরিবর্তন ও বিষয়দান্ত পরিণতির আলেখ্য রচনা করে ফরিদা হোসেন আমাদের মনে করিয়ে দেন যে, ছোটগল্পের মতো মানুষের জীবনও অসম্পূর্ণ। সেই অসম্পূর্ণ ও সীমাবদ্ধ জীবনে সম্পূর্ণতার স্বপ্নদেখা হলেও তা শেষাবধি একটা ইউটোপিয়া মাত্র। রূপকথায় যেসব অসাধারণ মানুষের সাথে আমাদের দেখা হয়, ফরিদা হোসেনের গল্পের জগৎ তা থেকে অনেক দূরবর্তী।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা