২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আল মাহমুদ উৎসব ২০২২

আল মাহমুদ উৎসব ২০২২ -

আল মাহমুদ আমার কবিতার আত্মা। তাঁর নামাঙ্কিত পদক স্পর্শ করে আমি যেন তাঁকেই স্পর্শ করলাম। ভারতের এ সময় সবচেয়ে জনপ্রিয় ও কাক্সিক্ষত কবিতাপুরুষ আল মাহমুদ উৎসবের প্রাণবীণা, সৌমিত বসুর এ উচ্চারণ যেন কালের কলস ভেঙে বের করে আনা আল মাহমুদের প্রতি একালের শ্রেষ্ঠ নৈবেদ্য, শ্রেষ্ঠ নিবেদন। আল মাহমুদ উষ্ণতায় সিক্ত সৌমিত যখন বলেন, কোনো বিভাজনই আল মাহমুদকে বিভাজিত করতে পারবে না। তার কবিত্ব শক্তির কাছে পরাজিত হবে সব চক্রান্ত, সব বাদানুবাদ, তখন আবিদ আজমের দুই চোখে জলের বন্যা। অশ্রুসিক্ত নয়নে মঞ্চের দিকে তাকিয়ে আছেন শতাধিক কবিতাভক্ত মানুষ। এই আবেগ এই কান্না সে তো একজন কবির জন্য। কবিতার রাখাল রাজা আল মাহমুদ কাব্যবাঁশী নিয়ে যে রাজত্ব শাসন করেছেন সে তো কবিতারই। তাঁর নামাঙ্কিত পদক পেয়ে আবেগাকুল সৌমিত কাঁপা গলায় যখন বলেন, এ আমার কবিতাজীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন, তখন আবেগনদী যেন কুল-হারা। হলঘর জুড়ে পিনপতন নিস্তব্ধতায় কবিতার যাওয়া-আসা।
বলছিলাম, আল মাহমুদ উৎসবের কথা। যে উৎসবকে আলোকিত করেছিলেন কলকাতা থেকে উড়ে আসা ২২ কাব্যপ্রদীপ। ‘কবি এবং কবিতা’র এ আয়োজনটিকে ঘিরে নানারকম ষড়যন্ত্র ছিল প্রথম থেকেই। একটি মহল উৎসবটি বানচাল করার জন্য আমন্ত্রিত কবিদের নানারকম কানভাঙানি থেকে শুরু করে কাউকে কাউকে দেখিয়েছিলেন ভয়ভীতি পর্যন্ত। তাদের ষড়যন্ত্রে বেশক’জন স্পন্সর গুটিয়ে নিয়েছিলেন নিজেদের। সে এক বিরুদ্ধ সময়। তবু কবিতার শক্তিতে বলীয়ান হয়ে এ উৎসব সফল করে তুলেছিলেন কিছু কবিতা এবং আল মাহমুদভক্ত সাহসী মানুষ। যে আল মাহমুদকে আটকাতে পারেনি কাঁটাতার, রহস্যময় অগ্নিদেয়াল, তাকে আটকাবে কয়েকজন ক্ষুদ্র ষড়যন্ত্রী, তা কি হয়? হয় না। বাংলা একাডেমি পদকের লোভ, সরকারি কৃপা থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা অনেককে দূরে সরিয়ে রাখলেও শেষ পর্যন্ত সেই কবিতারই জয়। একদিনে ২৩৪ কবির কবিতাপাঠ এই দেশে একটি বিরল ঘটনা। সে ঘটনাই ঘটল সেদিন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে, আল মাহমুদ উৎসবে। যারা নানান জুজুর ভয়ে কাতর ছিলেন, তারা দেখলেন, সরকার ও তার প্রশাসন কবিতা এবং আল মাহমুদের প্রতি কতটা সদয়, কতটা আন্তরিক। বাধা দেয়া তো দূরে থাক অনুষ্ঠানটি সফল করে তুলতে তাদের মৌন সমর্থন ইতিহাস হয়ে রইল।


আল মাহমুদ একটি নাম, একটি প্রত্যয়, একটি ইশতেহার। যা রুখে দিতে পারে সব ক্লেদ, অন্যায়, ষড়যন্ত্র। রচিত করতে পারে একটি ভালোবাসাময় কবিতাভুবন, পারস্পরিক সহাবস্থানের এক অমোঘ অঝোর দৃষ্টান্ত।
৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ শনিবার বাংলা কবিতার ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। এই দিন দুই বাংলার কবিদের মিলিত কোরাসে আল মাহমুদ আরো দৃপ্ত হলেন, হয়ে উঠলেন গভীর ও আত্মিক। এই অনুষ্ঠানে দুই দেশের তিন কবিকে দেয়া হলো ‘আল মাহমুদ পদক’। ২০২২ সালের জন্য এ পদকে ভূষিত হলেন কবি মাহমুদ কামাল, ভারতের কবি সৌমিত বসু ও কবি জাকির আবু জাফর।
ঋদ্ধ কবি ও সংগঠক মাহমুদ কামাল, পদক লাভের প্রতিক্রিয়ায় বললেন, এটি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন। একজন কবিতাকর্মীর জন্য এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কিছু হতে পারে না। তিনি বললেন, কোনো বিতর্কই কবি আল মাহমুদকে ন্যূনতম ম্লান করতে পারবে না। বাংলা কবিতার সাথে বেঁচে থাকবেন সোনালী কাবিনের আল মাহমুদও। তারুণ্যের কবি জাকির আবু জাফর বললেন, কবিতায় আমার যেটুকু অর্জন এই প্রাপ্তি তার মুকুটে যেন শ্রেষ্ঠ পালক। আমি এই অর্জনকে বুকে নিয়ে সামনে এগোতে চাই। আল মাহমুদ বাংলা কবিতায় প্রাতঃস্মরণীয়। তিনি আমাদের মহাকাল। আমরা সেই কালের যাত্রী মাত্র।


আল মাহমুদ ও সম্প্রীতিকে ঘিরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে বসা কবিতার হাটটি দুপুর গড়ানোর সাথে সাথে পরিণত হয়ে ওঠে মেলায়। হলরুম ছাড়িয়ে সামনের স্পেস ভরে তার শাখা ছড়িয়ে পড়ে ছাদ, ক্যাফেটেরিয়া ও বাতিঘরেও। তিন শতাধিক কবির মধ্যে কবিতা পড়েন ২৩৪ জন। এক দিনের এই ঋদ্ধ আয়োজনের উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন ষাটের দশকের প্রবল অথচ নিভৃতচারী কবি জাহিদুল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন কবি মাহবুব হাসান, কবি মাহমুদ কামাল ও কবি সৌমিত বসু (ভারত)। প্রধান আলোচক কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন। সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন আয়োজনের কেন্দ্রবিন্দু, মূলত বলতে গেলে যার একক প্রচেষ্টায় এই উৎসব, সেই কবি ও কবিতা সম্পাদক কবি শাহীন রেজা।
আল মাহমুদ বলতেন, কবিতা কষ্টের কলা। সেই উচ্চারণের প্রতিধ্বনি যেন ফুটে ওঠে কবিতাপাঠ পর্বের অধিবেশনগুলোতে দায়িত্ব নেয়া সভাপতি ও প্রধান অতিথি এবং সম্মানিত অতিথিদের কণ্ঠেও। বিভিন্ন অধিবেশনে যারা সভাপতি, প্রধান অতিথি ও সম্মানিত অতিথি ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম কবি হাসান হাফিজ, কবি সরকার মাহবুব, কবি নৃপেন চক্রবর্তী (ভারত), কবি কামার ফরিদ, কবি সুনীল মাজি (ভারত), কবি শান্তিময় মুখোপাধ্যায় (ভারত), কবি কামরুল হাসান, কবি ভবেশ বসু (ভারত), কবি মুজতবা আহমেদ মুরশেদ, কবি ইন্দ্রজীৎ ভট্টাচার্য (ভারত), কবি দিলদার হোসেন, কবি কানাইলাল জানা (ভারত), কবি জুয়েল মাজহার, কবি মানসী কীর্তনীয়া (ভারত), কবি মিলু শামস, কবি রোকেয়া ইসলাম, কবি দারা মাহমুদ, কবি মাহমুদ হাফিজ, কবি সরকার মাসুদ, কবি পুলক হাসান, কবি ফেরদৌস সালাম, কবি জাকির আবু জাফর, কবি স ম শামসুল আলম, কবি ক্যামেলিয়া আহমেদ, কবি সায়েজ বদরুল, কবি সৈয়দ নুরুল হুদা রনো, কবি মুস্তফা হাবীব, কবি জামসেদ ওয়াজেদ, কবি শান্তা মারিয়া, কবি হুমায়ন কবীর ঢালী ও কবি হাসিদা মুন প্রমুখ।


কবিতা দিয়ে আল মাহমুদ উৎসব ও সম্প্রীতির কবিতাপাঠকে যারা উদ্দীপ্ত করে তোলেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভারতের কবি সৌগত প্রধান, দেবাশীষ মল্লিক, ইন্দ্রানী দত্ত পান্না, সুরঙ্গমা ভট্টাচার্য, রাখহরি পাল, অংশুমান চক্রবর্তী, সন্দীপ সাহু, বিমল মণ্ডল, বিপ্লব চক্রবর্তী, শুভঙ্কর দাশ, গার্গী সেনগুপ্ত, নূপুর মুখার্জি, সর্বানী ঘড়াই, পারুল কর্মকার, স্মিতা চক্রবর্তী, কৃষ্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। আর বাংলাদেশী কবিদের মধ্যে আবদুল বাতেন, হাসান মাহমুদ, শামীমা চৌধুরী, নাহিদা আশরাফী, তাহমিনা কোরাইশী, তৌফিক জহুর, নূর কামরুন্নাহার, ফাতিমা তামান্না, জায়েদ হোসাইন লাকী, ফরিদ ভূঁইয়া, ফারুক আফিনদী, রফিক হাসান, শাহীন চৌধুরী, গাজী গিয়াসউদ্দিন, পারভীন শাহনাজ, জাহানারা বুলা, মুহম্মদ আশরাফুল ইসলাম, মুশতাক মুকুল, জামিল জাহাঙ্গীর, রমজান বিন মোজাম্মেল, শিমুল আজাদ,
মোজাফ্ফর বাবু, চন্দন কৃষ্ণ পাল, কবিতা কস্তা, তাহমিনা শিল্পী, সৌমিত্র দেব, জোহরা আকতার, শামীম আরা, তিথি আফরোজ, জেবুন নেসা হেলেন, শেলী সেলিনা, অসীম কুমার ঘোষ, রনি অধিকারী, মাহবুব শওকত, জান্নাত তায়েবা, মাশরুরা লাকী, আবদুর রাজ্জাক, শিউলী সিরাজ, মিজান ফারাবী, বাবলী খান, অনন্ত রিয়াজ, গোলাম রব্বানী টুপুল, রাজিয়া সুলতানা, এজাজ সানোয়ার, জিয়া হক, শাহিদা ইসলাম, কুসুম তাহেরা, নিলুফা জামান, শ্যামলী খান, রফিক লিটন, কামরুজ্জামান কায়েম, আলম শামস, আশরাফ মির্জা, তারেক মাহমুদ, মনিরুজ্জামান পলাশ, মাহফুজ রিপন, ক্যাথরিনা হীরা, স্নিগ্ধা নীলিমা, সালামুজ্জামান ও হাবিবা খানম প্রমুখ। তরুণ কবি আবিদ আজমের কণ্ঠ ছুঁয়ে আল মাহমুদ প্রবেশ করেন মিলনায়তনে আবার তারই কণ্ঠ ছুঁয়ে তিনি হারিয়ে যান মহাশূন্যতায়। পুরো আয়োজনটি গীতিময় হয়ে ওঠে একঝাঁক তারুণ্যের নিবিড় প্রচেষ্টায়। সঞ্চালনায় কবি কামরুজ্জামানের সরব উপস্থিতি, পরিকল্পনা ও বিন্যাসে আমার পাশে তরুণ কবি পথিক সবুজ, নুরুল আবছার ও সাঈদ তপুর দৃঢ় উপস্থিতি, একে করে তোলে অর্থবহ ও সার্থক।
আল মাহমুদ আমাদের আত্মার আত্মীয়। বাংলা কবিতার এ বটবৃক্ষ ঘিরে আয়োজিত উৎসব তো কবিতারই উৎসব। এই উৎসব এক দিন কাঁটাতার পেরিয়ে সব সীমান্তকে ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়বে বিশ্বময়- এটিই প্রত্যাশা।

 


আরো সংবাদ



premium cement
কুলাউড়ায় জঙ্গল থেকে তরুণীর লাশ উদ্ধার ঈদগাঁওতে মাদককারবারি গ্রেফতার শিক্ষায় ব্যাঘাত : ফেসবুক-টিকটক-ইনস্টাগ্রাম-স্ন্যাপচ্যাটের বিরুদ্ধে ২৯০ কোটি ডলারের মামলা আমতলীতে কিশোরীকে অপহরণ শেষে গণধর্ষণ, গ্রেফতার ৩ মহানবীকে কটূক্তির প্রতিবাদে লালমোহনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ক্রিমিয়া সাগরে বিধ্বস্ত হলো রুশ সামরিক বিমান জর্ডান আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশী বিচারক এবারের আইপিএলে কমলা ও বেগুনি টুপির লড়াইয়ে কারা সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে সন্ত্রাসনির্ভর হয়ে গেছে : রিজভী রাশিয়ার ৯৯টি ক্ষেপণাস্ত্রের ৮৪টি ভূপাতিত করেছে ইউক্রেন আওয়ামী লীগকে ‘ভারতীয় পণ্য’ বললেন গয়েশ্বর

সকল