২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

দিগন্ত সাহিত্যিক কবিতা

-

শাহাজাদা বসুনিয়া
বন্ধুত্ব চিরকাল

এখন চেনামুখগুলো আকাশের ধ্রুবতারা
দূর থেকে দেখা যায়, ছোয়া যায় না
একদা চায়ের চুমুকে বাঁধাহীন কথামালা
সময় বড় নিষ্ঠুর-নির্মম কালের খেয়া
আড্ডায় মোস্তফা নেই, এনামুল ছাত্র পড়ায়
সেলিম এখন নিভৃতে চেনামুখ জীবন পাতায়
ডলার আরও কাছে থাকে, নিজে কাঁদে-আমাকে কাঁদায়
আকাশচুম্বী খ্যাতি-যশে কত চেনামুখ
আকাশে উড়ে, উড়ে উড়ে চলে নিজ গন্তব্যে
এখন অচেনা মুখগুলো সন্ধ্যাতারা
দেনা-পাওনা হিসাব করে দিন-রাত
শুধু প্রকাশ ভঙ্গিতে ভালোলাগা-ভালোবাসা
তারা প্রয়োজনে প্রিয়োজন হয়ে ওঠে।
চেনামুখগুলো প্রিয়জন চিরকাল
তারা হৃদয়ে নৃত্যের সূর তোলে অবিরত
তারা হৃদয়ের গভীর থেকে গভীরে উঁকি মারে
তারা গতিশীল-প্রাণবন্ত
সুপারসনিক ট্রেনের মতো জীবন গলিতে চলে
চেনামুখগুলো প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে প্রিয়জন
হয়ে থাকে চিরকাল।

 


সিদ্দিক আবু বকর
অনন্তের দিদার

সবুজ গালিচায় এক একটা সুপারি বন
সৈনিক সদৃশ প্যারেড ময়দান।
ডানে বামে কিংবা সুদূর সম্মুখে নয়
এ যেন অহমের শূন্যে উড়াল!

বাতাসের ধাক্কায় সবুজ ঝালর
শনশন আওয়াজে তার কেশর দোলায়
কিঞ্চিৎ কাঁপে, কুর্ণিশ করে না তবু পায়ের তলায়।
এই যে উড়ে যাওয়া। আচানক ঘুরে যাওয়া,
ফুঁড়ে যাওয়া ধূসর সফর!
এই যে একঠেঙে
লাজ ভেঙে লেজ মুড়ে মোহের উড়াল...
বাতাসের ধাক্কায় ঠিকঠাক দাঁড়িয়ে বটে
জলের ছোবলে সে উড়াল নিদারুণ অসহায়
পল্কা মাটির তলায় নির্বিকার খাবিখায় দাম্ভিক খেয়াল।
তাল সুপারি প্যারেডেরও তখন সুফিমন
উড়াল ছেড়ে-ছুঁড়ে অনন্তে সওয়ার
অহমের দেরাজে পেরেক ঠুকে, এ যেন
কুর্ণিশে খুঁজে ফেরা অনন্তের দিদার।

 


গোলাম সরোয়ার
হিসাব-নিকাশ

কে ডাকে পিছু
কে ফিরে চায়
কার চোখে জল
কি এসে যায়?
কার পথ কত
মেপেছে কে আর
যার ক্ষত যত
ব্যথাটুকু তার।
কি ছিল সঠিক
ভুল ছিল কার
হিসাব মেলানো
যাবে না তো আর।
নদে কত জল
গড়িয়েছে হায়
যে যাবার সে
ঠিক-ই চলে যায়।

 


দালান জাহান
মানুষ জন্ম

আমি কখনও তার অর্থ অনুসন্ধান করি না
যে কি না সমস্ত অর্থের মা হয়ে বসে আছে
তোমার আমার শিরায় শিরায়...

সঙ্গীত অথবা সুসম বাতাস
সুর বৃষ্টি ও ছন্দঘড়ি মূলত একই কক্ষপথে
রোপণ করে যায় আদেশের সৌরসুর।
আমি কখনও জানতে চাই না
আমি কখনও জানতে চাইব না
জলের নাচ
পাখির ডাক
মাটির বিবাহ উৎসব
কারণ আমি মানুষ হয়ে জন্মেছি।

 


শাহীন আরা আনওয়ারী
তোমাকেই খুঁজি

তাঁর প্রেম-ঢেউয়ে দোলে সমুদ্র।
দোলে দীপ্ত সূর্যের দিন
সকলেই সিজদারত অবনত জানি।
জীবনের সুখ লুকোনো সিজদায়।
চিরন্তন সত্যের কাছেই উন্নত জীবন
গোটা জীবনই তো অসহায়।
প্রভুপ্রেম থাকুক তাই হৃদয়ে।
দিন-রাত কাজে অবসরে
অতঃপর প্রেমধারা হোক আঁখি
আহা ফুলবনে প্রভুর নিবিড়
সৌন্দর্য মেখে জিকিররত
গাছপালা লতাপাতা পশুপাখি।
জমিন-আসমানে তাঁরই প্রেমের টান
অসীম কুদরত কতটা আর বুঝি।
তাঁর প্রেমপাগল আমি চেতন-অবচেতনে
দিন-রাত বিবেকের প্রবল তাড়নায়
সিজদার সুখ নিয়ে তোমাকেই খুঁজি।

 


সাজু কবীর
কান্নার ধারাপাত

বাতাসে ডুব দিলেই আমি আগুন জ্বলতে দেখি
চৈতালি মাটির কণ্ঠে ধুন্ধুমার স্লোগান শুনতে পাই
হাতের মুঠোয় উঠে আসে অনেক দুর্দান্ত নদী
মুখে বিধ্বংসী সঙ্গীত বুকে সবুজের নরম পলল
শিরিন স্বপ্নের বাঁকে বাঁকে যেখানে সমস্ত সূর্যোদয়
জমে থাকে...
নদীর স্রোতে গা ভাসালেই আমি গনগনে
আগ্নেয়গিরি হয়ে যাই, সমুদ্রের পেট চিরে
পদ্মবিলের লুণ্ঠিত জল আমি কেড়ে আনি,
যেখানে পানকৌড়ি-সকাল সন্ধ্যাবধি
আটপৌরে গৃহস্থালি নিয়ে ডুবে থাকে...
‘বনসাই’ মুক্ত করে ছেড়ে দিই আমি পাঁচিলহীন স্বাধীন
সুফলা ভূত্বকে-যেখানে শিকড় মাতৃস্নেহে সুগভীরে যায়
ফিরে পায় পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি...
আষাঢ় দেখলেই আমার প্রতিবাদী আষাঢ় অট্টহাসিতে
ফেটে পড়ে, পৃথিবীর তাবৎ চোখভাঙা জমানো
নোনাজলে ওকে চুবিয়ে চুবিয়ে মারি,
চোখে, বুকে জল গোলাজাত করে এত দূরপথ
হেঁটেছি কেবল একটি স্বপ্নসুখে;
কদম ফুটবে আষাঢ় নয় কান্নার ধারাপাতে...


আরো সংবাদ



premium cement