২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দিগন্ত সাহিত্য কবিতা

-

নিয়মে বাঁধতে গেলে
মাহমুদ কামাল

নিয়মে বাঁধতে গেলে
অনিয়ম মাথাচাড়া দেয়
চিৎকারে বলে ওঠে
অনেক হয়েছে
রাস্তা পেরোতে দিন
হেঁটে কিংবা দৌড়ে
সড়কের মাঝে বসে রবো
প্রয়োজনে পাশ দিয়ে চলে যাবে গাড়ি
ছন্দ নয় অলংকার নয়, অর্থও নয়
শব্দের চাতুর্যে হবে কবিতা আমার।

 


ইতিহাসও মিথ্যে হয়
পুলক রঞ্জন

পৃথিবী বদলিয়েছে তার ঋতুর গতিপথ
ঝরেপড়া শুকনো পাতায় ধরেছে আগুন
পুড়ছে সবুজ; কাঠ কয়লার রঙে
হাতের রেখা ক্ষয় হয়েছে; অমোঘ অত্যাচারে
বিরুদ্ধবাদীদের চিন্তায় আজ রক্তের দাগ
ইতিহাসও মিথ্যে হয় মিথ্যের উপাখ্যানে
এ যেমন তোমার আমার ইতিহাস মিথ্যে
ভূগোলের বিচারে। কবিতা মিথ্যে হয় অশব্দ চয়নে।
সুন্দর মরে যায় জলের অভাবে;
নুনের অভাবে হৃদয়। আমাদেরও মরে যেতে হয়
অভ্যুত্থান হীন ভালোবাসায়, স্মৃতির টর্চার সেলে
ভালোবাসা বলে কিছু নাই; শুধু প্রয়োজনে বিভোর।
চাহিদায় চলছে বিক্রির ওঠানামা দর
ম্যালথাস তাই বলে; রঙিন প্রজাপতি মরে গেলে
থাকে কি বিমুগ্ধতা? শুধু বেঁচে থাকে আমাদের
চাহিদার ফসল; প্রিয়জনে নয় প্রয়োজনে।

 

সেহেরি বেলার গান
সাকিব জামাল

বছর ঘুরে, এলো ফিরে- পবিত্র রমজান,
জাগো মুমিন, শক্ত করো- তোমারই ঈমান।।
সময় হলো সেহেরি বেলার,
গান গাই তাই ঘুম ভাঙাবার।
জাগো, জাগো...
ওঠো, ওঠো...
রাখো রোজা সবাই মিলে, ওহে মুসলমান।
শোনো আমাদেরই আহ্বান।।
বছর ঘুরে, এলো ফিরে- পবিত্র রমজান,
জাগো মুমিন, শক্ত করো- তোমারই ঈমান।।
একটি রোজা, হলে কাযা-
ভীষণ বেদনার।
হেলায় হেলায়, নফসের ধোঁকায়-
ঘুমে থেকো না আর।
জাগো, জাগো...
ওঠো, ওঠো...
রাখো রোজা, মিলবে তবে তাকওয়া, সম্মান।
শোনো আমাদেরই আহ্বান।।
বছর ঘুরে, এলো ফিরে-পবিত্র রমজান,
জাগো মুমিন, শক্ত করো-তোমারই ঈমান।।

 

 


আজকের কবিতা
খুরশীদ আলম বাবু

আজকে কবিতা খুবই পরিপাটি
তাইতো এখানে দেখি বারোমাস
কবিতা ছুটেছে ভুলের কিনারে
সেখানে ওড়ে না চেতনার হাঁস
ক্লেদ ক্ষুব্ধ বিলাসী মিনারে
কবি খুঁটে খাই হতাশার খুদ
যে দিকে তাকায় নেই কিছু নেই
জমাট বেঁধেছে পিংগল মীন
সোনালি ফুলের নেই হাতছানি
এসব কবিতা চোখ বুলিয়েই
মুচকি হাসেন আল মাহমুদ।
আজকে কবিতা খোঁজে খুটিনাটি
উধাও হয়েছে স্মরণীয় বাণী-
পরতে পরতে গদ্যের ক্ষুর
নির্লিপ্ততার কঠিন ভারেই
হচ্ছে তারই পঙ্কিল চাষ
ছন্দ চ্যুত সংহত সুর-
আঁচড়ে কামড়ে তোলে সঙ্গীন
এসব কবিতা চোখ বুলিয়েই
আঁতকে উঠেন জসিম উদ্দিন।

 

নিজের কাছেই ফিরি
ইসমত আরা

চলে গেছে হীরক সময়
জলের খামে ভরিয়ে রোদের বোধ
পরগাছা সুখ নিয়ে আঁকড়ে ধরেছি
স্যাঁতসেঁতে প্রেম
আজ আর কি চাই বলো?
সাক্ষী শুধু পথের পটভূমি
ধুলো আর মাটিতে মিশে যেতে যেতে যতদূর--
অনিশ্চয়তার পথে নিত্য বাড়াই দু’পা
আমার আর আমি ছাড়া কে বা আছে...
এই তো সেদিন কথা হলো গতির সাথে
কবিতা এলো, গান এলো গন্তব্যের শব্দে-
প্রেম তো আমার সর্বজনীন অনুভূতির নাম
তবু মানুষের ব্যাকরণ রপ্ত করিনি আমি
কোনো অঙ্কই বুঝিনি আমি জীবনেরও
যতটুকু পেয়েছি, দিয়েছি নিঃস্বার্থ
নির্বোধের মতোই---
যদিও অভিযোগেরা অজান্তেই আসে
নির্মমতায় এখনো
অকারণ উল্টে দেয় মমতার বাটি
দাঁড়িয়ে দরজায় করাঘাত করে লজ্জা
তবু বোধের প্রতিষ্ঠানে আমিই বিচারক
ফিরে আসি নিজের কাছে,
আত্মভ্রমে দণ্ডিত হই বারংবার তবু
আমার প্রতিযোগিতায় কেবলই আমি,
জয় করতে চাই শেষ পর্যন্ত
আমার আমাকেই...

 

 


শ্রেষ্ঠ তুমি
মুন্সি আব্দুল কাদির

সবার থেকে শ্রেষ্ঠ তুমি মানুষ
কেন বলো উড়াও সুখের ফানুস
কেন তোমার জীবন পশুর মতো
কান্দ কেন বছর ধরে
বিলাপ শত শত।
তোমার আছে বোধের বিরাট টাল
হিসাব মিলাও যাচ্ছে জীবন কাল
জ্ঞানের ভাণ্ড কিসের জমায় ভরা
পচা বাসি ময়লা নিয়ে
জীবন আনে খরা।
তুমি তোমার খালিক মালিক নও
কার কাছে আজ এমন কথা কও
চারদিকে কেন লহুর নহর বয়
মানুষগুলো মেরে মেরে
মানুষ কথা কয়।

 

 

নিঃসঙ্গচারী
মাসুদ চয়ন

প্রেরণাহীন সে পথ,
কণ্টক নিবিষ্ট বিষণœ শপথ,
ছিল ভাঙা গুঁড়ো গ্লাস হাড়গোড় তুমুল নির্বিবাদে-
ছিল না পাশে কেউ-
ছিল হাতেগোনা কতেক ক্রিকেটীয় আশ্চর্য মুকুল,পত্র পল্লব,
গুনে দেখিনি আদৌ
নির্জনে পাড়ি দিয়ে একা সে পথ,
ভেবেছি আঁধারের ঢল নিভাবো কোনো এক বঙ্গ ফাল্গুনী রাতে-

 

কেবল তো শুরু

আমার সুহৃদ, এক সম্ভাব্য কবি,
মধ্যবিত্ত বুদ্ধিজীবীর হা-হুতাশকে
এভাবে করলেন চিত্রায়িত:
‘আমি তো বুর্জোয়ার কয়েদবন্দী,
তা ছাড়া আমি আর কীই বা হতে পেরেছি।’
এদিকে মহান বের্টোল্ট ব্রেখট,
কম্যুনিস্ট, জর্মন নাট্যকার ও কবি
(পদবিক্রমটা ঠিক এমনি) লিখেছিলেন :
‘ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অপরাধের তুলনায়
ব্যাংক ডাকাতি তেমন কি আর মন্দ কাজ?’
এ থেকে আমি যে উপসংহার টানি, তা দাঁড়ায় :
নিজেকে অতিক্রম করতে গিয়ে
যদি মধ্যবিত্ত বুদ্ধিজীবী
ব্যাংক ডাকাতি করেই ফেলে
তবে বলতে হবে সে তেমন কিছুই করেনি
কেবল নিজেকে একশ’ বছরের ক্ষমা
পাইয়ে দেওয়া ছাড়া।

 


লাল বিপ্লব

পাখিরা উড়ে যায়, রাঙা বিপ্লব ছড়িয়ে যায় চারপাশে-
রক্ত সবসময়ই লাল, লাল ডুবে যাওয়া সূর্য
বারুদের আগুনও লাল, ঈগলের ঠোঁটের আঘাতে
যে রক্ত বেরিয়ে আসে জংলি মেসের পিঠ থেকে-
লাল, শুধু লাল।
ডুবে যাওয়া সূর্যের দোহাই, জ্বলে ওঠা বারুদের দোহাই
আমাকে তোমরা ঈগলের মতো হিংস্র হতে বলো না-
মেষের চামড়া উৎপাটনের মতো তোমাদের
বিপর্যয় ডেকে আনতে যেও না।

 


আরো সংবাদ



premium cement