২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
বি দ্রো হী ক বি তা র এ ক শ ব ছ র

বিদ্রোহী সত্তা- শুরু ও শেষ

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম -

১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহের একটি রাত। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রজনী। কাজী নজরুল ইসলাম সে রাত নির্ঘুম কাটালেন। ব্যস্ত থাকলেন একটি কবিতা লেখায়। কিন্তু এ তো যে সে কবিতা নয়। এ কবিতার নাম ‘বিদ্রোহী’। এ এক যুগ সৃষ্টির কবিতা, যুগ পরিবর্তনের কবিতা। এর আগে বাংলা কবিতা কখনো এভাবে প্রকাশ পায়নি। হয়তো বা মার্কিন কবি ওয়াল্ট হুইটম্যান কিংবা বাঙালি বুদ্ধিজীবী মোহিত লাল মজুমদার তাকে একটু অনুপ্রাণিত করে থাকবেন। কিন্তু বিষয়টি অনেক ব্যাপক, ভাগধারা অনেক প্রলয়ঙ্কর। লক্ষ্য অনেক সুদূরপ্রসারী। এবং নজরুলকে শুরু করতে হবে এক জায়গা থেকে, সেটি সম্ভবত তিনি পেলেন আবাল্য কুরআন পাঠের স্মৃতিপত্র সূত্রে। তিনি যখন লেখেন,
বল বীর,
বল, চির উন্নত মমশির।
আমার ধারণা, ‘কুলহু আল্লাহু আহাদ’- বল, আল্লাহ এক- এই মহাবাণীয় পরোক্ষ প্রভাবে এটা বিন্যস্ত হয়েছে এখানে; কই, আমাদের কাব্য-ঐতিহ্যে এ রকম শুরু তো পাইনি পূর্বাহ্নে। বাংলায় তো আগে এ রকম নির্দেশবোধক পঙ্ক্তি দেখিনি আমরা। এটা এক অনন্য সূচনা।
শুরুটা যখন হয়েই গেল তখন পরবর্তী ঘোষণাসমূহ একের পর এক আসতে থাকল ধারাবাহিকভাবে। নানা উৎস, উপমা অনুসরণ করে বিদ্রোহী সত্তার বিবিধ পরিচিতি প্রকাশ পেল। নিজেকে নানাভাবে প্রতিষ্ঠা করেও কবি আত্মশ্লাঘা অনুভব করছেন না। কেননা-
মহা বিদ্রোহী রণক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন রোল
আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না
মানবতার মহান মুখপাত্ররূপে সেদিন নজরুল নিজেকে চিহ্নিত করলেন এবং তার কাছ থেকে দীক্ষা নিয়ে পরবর্তীকালের কবি-সাহিত্যিক থেকে শুরু করে সাধারণ শিক্ষিত-অশিক্ষিত মানবসন্তান সচেতন থাকলেন বিদ্রোহী সত্তার উন্মোচনে। নানা পর্বে বিদ্রোহ ও বিপ্লব সমাধা করে স্বাধীন সত্তায় সমর্পিত হলো নজরুলের উত্তরসূরিরা। সেই ‘বিদ্রোহী’র সৃষ্টি সার্থকতা অর্থবহ করে ফেলল সম্প্রতি, আরেকটি নতুন শতাব্দীতে।


আরো সংবাদ



premium cement