২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
মাহফুজুর রহমান আখন্দের কবিতায়

জীবন ও স্বপ্ন

জীবন ও স্বপ্ন -

মাহফুজুর রহমান আখন্দ সময়-সমাজ সচেতন এক আত্মমগ্ন কবি। সমাজ ও রাষ্ট্রে দুষ্টু, ক্ষত-অনাচার কবিকে ব্যথিত করেছে। ব্যক্তি-মানুষের সে বেদনা প্রকাশের সক্ষমতায় সঞ্চারিত হয়েছে কাব্যামোদীদের কাছে। স্বকালবিদ্ধ একজন কবির দায়বোধ কাঁধে নিয়ে সত্য-সুন্দরের সদর্থকচর্চায় কতটা যে নৈয়ায়িক প্রতীতির অনুবর্তী থাকা যায় আখন্দের কবিতা পড়লে সেটা সহজে অনুধাবন করা যায়। ইতিহাস ও ঐতিহ্য সচেতনতার পাশাপাশি তার কাব্যের বিচিত্র ক্যানভাসে উঠে এসেছে এ দেশের মাটি ও মানুষের কথা। আবহমান বাংলার গ্রামীণ জীবন চেতনা- তাদের ভাব-ভাবনা, আশা-আকাক্সক্ষা, প্রেম-ভালোবাসা, বিপন্ন-বিষণœ বেদনার কথকতা তিনি চমৎকারভাবে কবিতায় স্থান দিয়েছেন।
পদ্মা বিধৌত বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে যে সবুজ শস্য ও শ্যামলিমা গ্রাম আর সমৃদ্ধ বন্দর ছিল, নদীভরা জল ছিল, রুপালি ইলিশে ভরতো জেলেদের জাল- আজ তা কোথায়? কবি কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে এ মর্মন্তুদ পরিণতির ছবি-
ইলিশের ছবি ভাসে মার্কেটের জাদুঘরে ঘরে
ইতিহাস খুঁজে ফেরে নতুন পুরুষ
ফারাক্কা খুলে দেয় মরুর আকাশ
জলে ভরা টলোমলো গোল গোল চাঁদ
নেমে আসে মাছদের চোখের তারায়
[চিত্রকল্প]
নদীর দেশ, মাছের দেশ, ধানের দেশ বলে খ্যাতি লাভ করেছিল যে বাংলা-বিশেষত বাংলার উত্তর-পূর্ব অঞ্চল, সেখানে ভরা মৌসুমেও পানি-মাছের আকাল। ফলে আবহমান বাংলার গ্রামীণ জীবনে ধরেছে চিড়- জনপদের একটি বিরাট অংশের জীবন-জীবিকার সঙ্কট দানা বেঁধে উঠছে দিনদিন-
খালে বিলে পানি নেই বিষ মাখা জল
মাছদের ঘরে ঘরে বেহালার সুর বাজে
হৃদয়ের কান্নায় আঁখি ছলছল
[সুখ হাসি]
কবিরা আশাবাদী হন। কবিতায় তারা আশার বাণী শোনান। আশা-ভাষা-ভালোবাসা দিয়ে মানসী প্রতিমা তো কবিদেরই গড়ে তুলতে হয়। না হলে জীবন জঞ্জাল পৃথিবী মরু, মানুষ ভীরু-অন্তঃসারশূন্য হয়ে যায়। এ জন্য ‘ভালোলাগা মানে’ কবিতায় এসে মাহফুজ আখন্দ কবির স্বকীয়তায় ফিরে গেছেন। নানা স্বপ্ন-সুবচন ললিত তর্পণ কবির তৃষিত হৃদয়কে শান্ত-সমর্পিত করেছে।
ভালোলাগা মানে
লাল সবুজের পতপত দোলা বাতাসে উড়ানো গান
মায়ের কথায় নেচে নেচে ওঠা হাজারো দামাল প্রাণ
.... .... .... ....
দিল দরিয়ায় মনের নৌকা ভিড়লো কিনারে এসে
চোখ খুলে দেখি মায়ের মমতা আমার বাংলাদেশে।
[ভালোলাগা মানে, পৃ. ৩১]
এভাবে মমতাময়ী মা, প্রেয়সীর হৃদয় কাড়া হাসি, শিশুর আধবোল, দেশের শান্তস্নিগ্ধ প্রকৃতি কবিকে ব্যাকুল করে তুলেছে। কাছে থেকে যাদের দেখেছেন- সেই সুজন স্বজন প্রীতিভাজনদের প্রতি প্রার্থিত হয়েছে শত শুভ কামনা। সত্য-সুন্দরের প্রতিষ্ঠায় যারা ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিয়েছেন, তাদের প্রতিও কবি বিনম্র্রশ্রদ্ধা জানাতে ভোলেননি। কাব্যচর্চায় কবি নতুন পুরনো উভয়রীতির আশ্রয় নিয়েছেন। সচেতনভাবে ফররুখ আহমদের প্রভাব কোনো কোনো কবিতায় মেনে নিয়েছেন। আধুনিক গদ্য ছন্দের প্যাটার্নও কবি আত্মস্থ করেছেন বিশ্বস্ততার সাথে। লোকজ জীবনের অনালোকিত অনেক প্রসঙ্গ-উপমা কবি সযতেœ লালন করেছেন। যেমন-
সকাল এসেছে ভোরে
পোয়াতি মেঘেরা হলো উন্মুখ প্রসব বেদনা নিয়ে
[সকাল এসেছে]
ভাঙতে হবে যে ঘুম
রাতের কপালে সোনালী সুরুজ এঁকে যায় শাদা চুম
[সকাল এসেছে]
কাপ্তাই হ্রদের উষ্ণতা শিরা উপশিরায়
তবু শুভলংয়ের মতো মরে যাচ্ছে হৃদয়ঝর্ণা
হাজার ডাহুকের কান্না ঝিলের ওপারে
কৃত্রিম মাধবকুণ্ড নয়, চাই সাবলিল কুয়াকাটা।
[প্রেমের হাতটা বাড়িয়ে দাও বন্ধু]
ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সমকালীন জীবন চেতনার জন্য যে ভাব-ভাষা তথা কবিতায় নন্দনচর্চা প্রয়োজন, কবি সেখানে সতর্কতার সাথে অগ্রসর হয়েছেন। সবকিছু মিলে আখন্দের কবিতা আগামী দিনের কাব্যামোদীদের সুখদ আনন্দ দেবে- তার কবিতা পাঠ করলে এ প্রতীতি জন্মানোটা খুবই স্বাভাবিক।

 


আরো সংবাদ



premium cement
শেখ হাসিনা সব প্রতিবন্ধকতা উপড়ে ফেলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা বন্ধে বিশ্ববাসীকে সোচ্চার সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির মৃত্যু নীলফামারীতে তিন হাজার ১৭০ চাষির মাঝে বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ বিতরণ কারাগারে কয়েদির মৃত্যু উজ্জ্বল হত্যার বিচার দাবিতে সরিষাবাড়ীতে মানববন্ধন পাবনায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ১ আহত ২১ খাবারের সন্ধানে বসতবাড়িতে হরিণ, মহামায়ায় অবমুক্ত সিঙ্গাপুর প্রবাসী ফিরোজ মাহমুদের লাশ দেশে ফিরেছে ফরিদপুরে ট্রেনে কাটা পড়ে মানসিক ভারসাম্যহীন যুবকের মৃত্যু গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সব ধর্মের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে: ড. সুকোমল বড়ুয়া

সকল