১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মানুষের পৃথিবীর জ্বর

-

করোনাভাইরাস পৃথিবীর প্রাণচাঞ্চল্য স্তব্ধ করে দিয়েছে। প্রাণবায়ু খেয়ে ফেলছে। গোটা দুনিয়াকে দিশাহীন করে দিয়েছে। পৃথিবীর কোনো শক্তিই এই ভাইরাসকে নিশ্চিহ্ন করতে পারছে না। এই অতিমারীর থাবা বিশ্ববাসীর স্বাস্থ্যেই ফাটল ধরাচ্ছে না, তা আমাদের সমাজ ও অর্থনীতির মৌলিক গঠনটিও ধ্বংস করে দিচ্ছে। সমাজের সমস্ত স্তরের স্থিতি টলে গেছে। আজ মানুষ এসে দাঁড়িয়েছে বিলুপ্তির দোরগোড়ায়। এই বিলুপ্তি পর্ব মানুষেরই কর্মফল। মানুষ নিজেই এক গভীর অসুখ ঘনিয়ে তুলছে পৃথিবীর বুকে। কিছু মানুষের গগনচুম্বী লোভ আজ পৃথিবীকে ধ্বংসের কিনারায় এনে ফেলেছে।
পৃথিবীর জ্বর বাড়ছে। পৃথিবী উত্তপ্ত হচ্ছে। জলবায়ু বদলে যাচ্ছে। কুমেরু ও অন্যত্র চির হিমায়িত অঞ্চল গলে যাচ্ছে। সমন্ত হিমবাহ গলছে। এখন প্রকৃতির যে দিকে তাকাই কেবল ধ্বংসলীলা। জীবপ্রকৃতি বিলুপ্তির পথে।
আমরা ধর্ম, ইতিহাস ও শিক্ষা থেকে আমাদের মুখ ফিরিয়ে নিয়েছি। অপর দিকে মুনাফাসৃষ্টিকারী বাজারব্যবস্থার মধ্য দিয়ে এক আগ্রাসী ভোগবাদে ধনী মানুষকে নিমজ্জিত করে ফেলছে। এটি আধুনিকতার সঙ্কট।
সম্প্রতি বিশ্বখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ড. টনি ফিলিপস্্ বলেছেন, বিশ্ববাসীর সামনে এমন গভীরতম এক সময়ের ভিতরে প্রবেশ করতে যাচ্ছে, যে সময়ে সূর্যের আলো কার্যত অদৃশ্য হয়ে যাবে। সূর্যের সোলার মিনিমাম চলছে। এটি অত্যন্ত গভীর, অর্থাৎ পৃথিবীর প্রতি সূর্যের কার্যকলাপ নাটকীয়ভাবে হ্রাস পাচ্ছে।
বলাবাহুল্য, আমাদের শৈশব-কৈশোরে প্রকৃতি দরাজ হাতে উন্মুক্ত করে দিতো তার সম্পদ। নিঃসর্গ ছিল কত বাক্সময়। বড় বড় গাছে ঢাকা বনপথ, মাঝে মাঝে পাখির ডাক। আকাশজুড়ে বিছিয়ে থাকতো ঘননীল সন্ধ্যা। ফুটে থাকতো কত নামী অনামী লাল নীল গোলাপি হলুদ ফুল। পরম মমতায় ফুলের গায়ে বৃষ্টির ফোঁটা। অসীম অনন্ত প্রকৃতির বুকে অনুচ্চারিত অব্যক্ত অনুভূতির সে এক নীরব প্রকাশ। সেই সব দৃশ্য প্রাণ-মন ভরে রাখতো। সেই ‘টিয়া গ্রাম ফিঙে নদী’ আজ আর নেই। এখন সে সব এক মৃত সময়ের ‘এলিজি’।
বস্তুত পরিবেশ প্রকৃতির প্রথম সন্তান। প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের একত্রে চলা। আমরা সচরাচর বলে থাকি সামনে ভয়ানক দিন আসছে। জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে আজ আর আসছে বলবার নেই। এখন গ্রিনহাউজ ফলাফলে গলে যাচ্ছে মেরুপ্রদেশের অক্ষয় ‘গ্লেসিয়ার’। শেষ হয়ে যাচ্ছে অজাতশত্রু পেঙ্গুইন। পোড়া পেট্রোল মেখে মরে যাচ্ছে চিল।
ক্যালেন্ডারের পাতা খসাচ্ছে সময়। ভয়ার্ত পৃথিবী ঘুরে চলেছে আহ্নিকে বার্ষিকে। শিল্প, যন্ত্র, কারখানা, কার্বন মনোক্সাইড, সাইবার সন্ত্রাস, ফোরজি টাওয়ার, শপিংমল, কোলাহল, টেনশন, আর মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোকে নিয়ে ঘুরছে নিরীহ উত্তর আধুনিক পৃথিবী, টুকরো টুকরো ভিতরে ভিতরে।
বর্তমান জলবায়ু সঙ্কটের কারণে পৃথিবী একটি জটিল অবস্থার দিকে ধাবিত হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর কারণে গ্রিনহাউজ গ্যাস বায়ুমণ্ডলে আটকা পড়ে বিশ্বে উষ্ণতা বাড়ছে। এর ফলে খরা, দাবদাহ, দাবানল, হিমবাহ গলে যাওয়া, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ছে। এখনই পদক্ষেপ না নিলে এই পরিস্থিতি থেকে ফেরার সুযোগ পাওয়া যাবে না।
সম্প্রতি আমাদের রাজধানী ঢাকা থেকে ঘুরে গিয়ে এক বিদেশী নাকি মন্তব্য করেছেন, ঢাকা শহর ইটের তৈরি এক বস্তিশহর। মনে পড়ে, বিশ্বকবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের কবিতার চরণ, ‘ইটের পর ইট, মাঝখানে মানুষ কীট’। অস্বীকার করার উপায় নেই আজকাল এটাই আমাদের শহুরে জীবনে এক নিদারুণ বাস্তবতা।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে এবং ইদানীং গ্রামগঞ্জে ইটের পর ইট এমনভাবে গাঁথা হচ্ছে, এমনভাবে যত্রতত্র আকাশচুম্বী ভবন নির্মিত হচ্ছে, মাঝখানে মানুষের অবস্থা দাঁড়িয়েছে কীটেরই মতন। উইপোকা যখন ডিবি তৈরি করে তখন তাদের একটা পরিকল্পনা থাকে, যাতে বসবাসের স্বাচ্ছন্দ্য এবং নিরাপত্তা সমস্যা না হয়। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম তাদের সেই পরিকল্পনা প্রায় অপরিবর্তিত আকারে সঞ্চারিত হয়ে আসছে।
আমরা সামাজিক মানুষ। সামাজিক মানুষ যখন বসতি নির্মাণ করে তখন তাদেরও মনে থাকে সচেতন কিছু ইচ্ছা। ইচ্ছাগুলো হচ্ছে সম্পদ আর স্বাচ্ছন্দ্যের। কিন্তু একসময় দেখা যায় ওই সম্পদ আর স্বাচ্ছন্দ্য জমা হতে হতে বিশাল এক বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর সেই বোঝার নিচে চাপা পড়তে থাকে মানুষ। মানুষের জীবনে এটা এক ধরনের নির্বাসন। এই নির্বাসনের সমস্যাটা যদি মানুষ বুঝতো তবে বৃহত্তর সমাজের পক্ষে অনেকটা কল্যাণকর হতো।
আসলে রাশি রাশি সম্পদ ও স্বাচ্ছন্দ্য জড়ো করতে গিয়ে বর্তমান যুগের মানুষ তার পশ্চাৎপট খুইয়েছে। সেই পশ্চাৎপট হচ্ছে প্রকৃতি। প্রকৃতিকে মানবসমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন ভাবা যায় না, প্রতিপক্ষও ভাবা যায় না। কেননা মানুষ প্রকৃতির সন্ততি। সন্ততি শব্দটার মূলগত অর্থ নিরবচ্ছিন্নতা বা ধারাবাহিকতা। অর্থাৎ প্রকৃতির সাথে মানুষ অচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত। কিন্তু ইদানীং মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে সৃষ্ট এক বিরোধী সম্পর্ক পৃথিবীর পরিবেশকে বিপজ্জনক পরিণতির দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। আধুনিক শিল্প-সভ্যতা নিঃশেষ করে দিচ্ছে পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদ বনভূমি এবং বন্যপ্রাণী। দূষিত করছে বাতাস ও পানি।
বলা বাহুল্য মানুষ প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। সম্পর্কটা মোটেও মানুষ বনাম প্রকৃতি নয়। জৈব-তত্ত্ব অনুযায়ী পৃথিবীতে জীবের সৃষ্টি বা অবলুপ্তি নির্ভর করে ‘যোগ্যতমের উদবর্তনের’র ধারায়। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, মানুষ হবে কোন জীবের বিলুপ্তির কারণ। শুধু পরিবেশের লাবণ্যের জন্য নয়, আত্মরক্ষার তাগিদেও মানুষকে হতে হয় প্রকৃতিপ্রেমী তথা প্রাণিপ্রেমী।
প্রকৃতির সাথে মানুষের, প্রাণের সাথে অপ্রাণের, এই যে ধারাবাহিকতা আধুনিক পরিবেশ বিজ্ঞানে তা স্বীকৃত। আকাশ আর মাটি, সমুদ্র আর বাতাস, উদ্ভিদ আর প্রাণিজগৎ, সবকিছু মিলেমিশে পৃথিবী নামক আমাদের এই গ্রহটি আপন কক্ষপথে আবর্তিত। প্রাণ আর অপ্রাণ মিলেই এ পৃথিবী। এর প্রতিটি খণ্ড অংশ অন্য সমস্ত অংশেরও সাথে খুবই সক্রিয়ভাবে যুক্ত। কোনো কারণে এক অংশে যদি কোনো বদল আসে কিংবা আলোড়নের সৃষ্টি হয়, তার প্রভাব অচিরেই অন্য অংশে গিয়ে পড়বে। এক অংশে যদি কোনো আঘাত আসে তবে সমস্ত গ্রহটাই সাড়া দেবে তাতে। যেমন কম্পিউটারের কোনো একটি সূক্ষ্মাংশ বিগড়ে গেলে গোটা যন্ত্রই বিকল হয়ে যায়, তেমনি মানুষ, মাটি, জলবায়ু সব কিছু নিয়ে পৃথিবী পরস্পরের উপর নির্ভরশীল, পরস্পর ভারসাম্যময় এক পরিবেশ বিরাজমান। কোথাও এতটুকু আঘাত লাগলে ছিন্ন হয়ে যাবে ইকোলজির বন্ধন। জলবায়ু তাপমাত্রা আর্দ্রতা ও অম্লতার পরিমাণের সামান্যতম হেরফের পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব বিপন্ন এমনকি লুপ্ত হয়ে যেতে পারে।
সুতরাং আজ এটা স্পষ্ট যে, মানবজাতির অস্তিত্বের প্রশ্নে প্রকৃতির সাথে সঙ্ঘাত নয়, বরং পৃথিবীর অন্যান্য প্রাণী ও কীটপতঙ্গের সাথে পারস্পরিক শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রেখে আমাদের চলতে হবে।
বলা বাহুল্য পরিবেশের সাথে উন্নয়নের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। কিন্তু পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখতে হবে। না হলে সমস্যা হবে মানুষেরই। যদিও বায়ুপ্রবাহে মাটি থেকে প্রচুর ধূলিকণা উঠে আসে এবং নানা প্রকার রোগজীবাণু, ভাইরাস ইত্যাদি বাতাসে ভেসে বেড়ায়, সাথে প্রচুর উল্কাভস্ম এবং সমুদ্র থেকে ভেসে আসা অজস্র লবণকণা। প্রকৃতিতে অবশ্য স্বাভাবিকভাবে এ রকম বায়ুদূষণ সবার অলক্ষ্যে সতত ঘটে চলছে।
কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দ্রুত প্রসারের ফলে আজকাল বায়ুদূষণের মাত্রা বহুগুণ বেড়ে গেছে। কল-কারখানা, যানবাহন ইত্যাদিতে পেট্রোল কয়লা মোবিল পোড়ানো থেকে নির্গত ধোঁয়া, সারফার ডাই-অক্সাইড, হাইড্রো কার্বন বাষ্প, সিসা, নাইট্রোজেন অক্সাইড ইত্যাদি মুক্ত বাতাসকে প্রতিনিয়ত বিষিয়ে তুলছে। ধোঁয়া আর কুয়াশার মিশ্রণে যে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হচ্ছে তার দাপটাও কম নয়। এটা শ্বাস-প্রশ্বাসে বিঘœ ঘটায়।
ধোঁয়াশার মধ্যে কিছু ওজোনগ্যাসও থাকে যা উদ্ভিদের পক্ষে ভীষণ ক্ষতিকারক। বায়ুদূষণ আধুনিক মানুষের দোরগোড়ায় নেকড়ে বাঘ হয়ে এসে দাঁড়িয়েছে। বায়ুদূষণের এই দুরবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া একান্তভাবে কাম্য তা যেকোনো মূল্যেই হোক।
বায়ুদূষণ প্রতিরোধে বনানী বা গাছপালার ভূমিকা অনস্বীকার্য। গাছপালা হচ্ছে প্রাণের প্রতিনিধি।
উল্লেখ্য, জাপানিরা বাগান তৈরি বা উদ্যান রচনাকে উঁচুদূরের শিল্পকলা মনে করে। মাটির পৃথিবীকে ঘিরে তারা মস্তবড় একটা ত্রিমাত্রিক পট তৈরি করে যাতে বাসিন্দাদের মনে বস্তুগত এবং চিত্তগত অবকাশের বোধ জাগে। ইট-কাঠ তো মানুষের রাষ্ট্রিক তথা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঘনীভূত চেহারা। কিন্তু জাপানিদের হাতে আকাশ মাটি গাছপালা একযোগে কথা কয়ে উঠে। আকাশ তো সর্বত্রই আছে। আকাশকে কেন আড়াল রাখা হবে। প্রান্তর যেখানে ক্রমশ সঙ্কুচিত হয়ে আসছে, সেখানে আকাশকে যথাসম্ভব অক্ষত রাখা দরকার। আকাশ তো শুধু স্কাই নয়, তার অন্য একটা প্রতিশব্দ স্পেস। আকাশকে অনুভবের প্রয়োজন মানুষ তথা প্রাণী মাত্রেরই রয়েছে। সেটা তার সর্বাঙ্গীণ স্বাস্থ্যের পক্ষে অপরিহার্য।
নতুন যুগের বিভিন্ন নির্মিত প্রতিবেশের মধ্যে বৈচিত্র্য যতই থাকুক, এক জায়গায় কিন্তু মিল থাকতে হবে। সেটা হলো ত্যাগ আর ভোগের সামঞ্জস্য বিধানের তাগিদ।
যাই হোক পরিবেশ ও প্রতিবেশ শুধু ইট-কাঠের তৈরি হলে হবে না। তার পেছনে থাকতে হবে একটা গোটা সমাজের আশা-আকাক্সক্ষা, ভালোমন্দ বোধ, রুচি আর আদর্শ। কিন্তু সমাজের কল্যাণকর চিন্তার মধ্যে যদি গোড়াতেই গলদ থাকে, সব কিছুকে ছাপিয়ে যদি সেখানে কেবল ভোগ আর সুখ প্রাধান্য পায়, তা হলে সেই ভোগের উচ্ছিষ্ট স্বরূপ আবর্জনা জমতে থাকবে। আর সেই আবর্জনায় ইটের পরে ইট স্তূপীকৃত হয়ে তার মধ্যে চাপা পড়ে যাবে মানুষরূপী কীট।
বিশ্বপ্রকৃতি কঠিন ঋজু নিয়মে চলে। আমাদের গ্রহের নাম পৃথিবী। মানুষের জন্য উন্মুক্ত উদার আকাশের অনাবিল নীলিমা যেন উদাসীন জীবনের পাঠ। প্রকৃতি কৃত্রিমতা বোঝে না। শহুরে ভদ্রতা-সভ্যতা জানে না। নিজেকে সাজানোর জন্য তার প্রয়োজন হয় না কোনো প্রসাধনের।
আজকের পৃথিবীর আসল বিপদ শুধু প্রাকৃতিক বিপর্যয় নয়, বরং মানুষের নিজের হাতে তৈরি করা বিশ্বজোড়া পণ্যসর্বস্বতার জাল, যা তাকেই একদিন ধ্বংস করে দেবে। আধুনিক বিজ্ঞান-প্রযুক্তি যেমন ক্রমাগত উৎপাদনক্ষম করে তুলেছে সমাজকে, তেমনই মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে তার আত্মসত্তা থেকে, প্রকৃতি ও পরিপার্শ্ব থেকে।
বর্তমানে পৃথিবীর কণ্টকাকীর্ণ বাস্তবতায় ক্লান্ত ও বিদীর্ণ মানুষের জীবন। বিশ্বায়নের সংস্কৃতি, নগরায়ণের সভ্যতা ও আত্মকেন্দ্রিকতা এ সময়ের এক জ্বলন্ত সমস্যা। ক্রমাগত বিপর্যস্ত হতে হতে সেই আদিম ও পরিচ্ছন্ন নিস্তব্ধ প্রকৃতি এখন বিপন্ন।
পরিবেশদূষণ, জলবায়ুর পরিবর্তন তথা প্রকৃতির সর্বনাশ ও পৃথিবীর সম্ভাব্য ধ্বংসের আশঙ্কা নিয়ে অধুনা বিশ্বব্যাপী তোলপাড় চলছে। পরিবেশ সংরক্ষণ নিয়ে দেশ-বিদেশে চলছে ব্যাপক আলোচনা ।
সেই বহুকাল আগে জলবায়ুর পরিবর্তন কিংবা পরিবেশদূষণ সম্পর্কে যখন মানুষের মনে কোনো দুশচিন্তা ছিল না, তখন ‘জুল সুপুরভই’ নামে একজন কবি জলবায়ুর পরিবর্তন সম্পর্কে আগাম একটি বেদনাময় গাথা রচনা করে গেছেন। জন্ম তাঁর সুদূর উরুগুয়ে, ১৯০৫ সালে। কবিতাটির বাংলা অনুবাদ-
একদিন এই পৃথিবীতে আর কিছুই থাকবে না
শুধু এক অন্ধ অবস্থান যেখানে শুধু
বিভ্রান্তিকর দিন আর রাত্রি ঘোরে
বিশাল আকাশের নিচে যেখানে ছিল সুউচ্চ পর্বতমালা
সেখানে একটি পাহাড়ও নেই, এমনকি একটি গিরিখাতও না।

পৃথিবীর সমস্ত প্রাসাদ ও বাড়িগুলির মধ্যে
শুধু টিকে থাকবে একটি মাত্র বারান্দা
এবং এই বিশ্বের মানব জাতির মানচিত্রে
শুধু একটি বিষাদ যার মাথায় আচ্ছাদন নেই।
ভূতপূর্ব বঙ্গোপসাগরের চিহ্ন থাকবে না
বাতাসের সামান্য লবণাক্ত স্বাদে
একটা মায়াময় উড়ন্ত মাছ জানবে না
সমুদ্র কেমন দেখতে ছিল।

একদা যেখানে অরণ্য ছিল সেখানে ভেসে উঠবে
একটা পাখির গান, কেউ তাকে
দেখতে পাবে না, বুঝতে পারবে না, শুনতেও পাবে না
শুধু স্রষ্টা শুনবেন মন দিয়ে এবং বলবেন-
আরে এ যে একটা ‘পিউ কাঁহা’ পাখি।

কবিতাটি পড়লে মনে হয়, সেই সময় কবির মনে সন্দেহ জেগেছিল, এমন একদিন আসবে যখন তাঁর সন্তানেরা পৃথিবীতে নিঃশ্বাস নিতে পারবে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement
তীব্র তাপপ্রবাহে বাড়ছে ডায়রিয়া হিটস্ট্রোক মাছ-ডাল-ভাতের অভাব নেই, মানুষের চাহিদা এখন মাংস : প্রধানমন্ত্রী মৌসুমের শুরুতেই আলু নিয়ে হুলস্থূল মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এত শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি বুঝতে পারেনি ইসরাইল রাখাইনে তুমুল যুদ্ধ : মর্টার শেলে প্রকম্পিত সীমান্ত বিএনপির কৌশল বুঝতে চায় ব্রিটেন ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট আজ নিষেধাজ্ঞার কারণে মিয়ানমারের সাথে সম্পৃক্ততায় ঝুঁকি রয়েছে : সেনাপ্রধান নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে বিএনপি : কাদের রৌমারীতে বড়াইবাড়ী সীমান্তযুদ্ধ দিবস পালিত

সকল