২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ব ই আ লো চ না

মোশাররফ হোসেন খানের কুহক ও কুহকী

-

অনুভূতির তীব্রতা সর্বনি¤œ কী পরিমাণ হলে তাকে ভালোবাসা বলা যাবে কিংবা এর সর্বোচ্চ পরিমাণটা কত তীব্র হলে তাকে পরিপূর্ণ ভালোবাসার আরম্ভ বলা যাবে, এমন কোনো ধারণার অবতারণা এখনও করা যায়নি। ফলে ভালোবাসা স্বমহিমায় মানুষকে ভাসিয়েছে নিরন্তর। ভালোবাসার মহিমা এমন যে, জনে জনে ভালোবাসলেও ভালোবাসা ফুরায় না। তবে বিতর্কও রয়েছে; ভালোবাসা নাকি জনে জনে বাসা যায় না, একজনকেই বাসতে হয়। মোশাররফ হোসেন খান জনে জনেই ভালোবাসতে চেয়েছেন। তার ‘কুহক ও কুহকী’ কাব্যগ্রন্থের শুরুতে সে কথাই তিনি বলেছেন এভাবে-
‘জানে প্রকৃতি ও বিশ্ব / ভালোবেসে কবি কখনো / হয় না নিঃশ্ব’
ভালোবাসা যে একপ্রকার ব্যাকুলতা, চিত্তের চঞ্চলতা, ভালোবাসাতেই নিত্য অবগাহন, প্রতিনিয়ত আসা যাওয়া। প্রেমের টানে মানব মনের এই যে অস্থিরতা সে অস্থিরতাকে কবি প্রকাশ করলেন এভাবে-
‘তুমি বৃক্ষের শরীর থেকে আলগা হলে
বৃক্ষের বাকলে কালশিটে ক্ষত চিহ্নের অজ¯্র দাগ পড়ে থাকবে,
এটা নিয়ে কেউ হয়তো ভাববে!
তুমি যে আমার ভেতর থেকে গজিয়ে ওঠা
ধানের গুচ্ছ প্রশাখার মতো অবিচ্ছেদ্য দেহাংশ,
হয়তো বা সর্বাংশ’
দেখো দেখো
বিলের বালিহাঁসগুলো
কেমন করে তাকিয়ে আছে
আমাদের দিকে
তাদের চোখমুখ দারুণ ফিকে! (কুহক ও কুহকী-৩১)।
কবি মোশাররফ হোসেন খান রচিত ‘কুহক ও কুহকী’ কাব্যগ্রন্থটি ভালোবাসার ব্যতিক্রম প্রকাশ। ব্যতিক্রম এই জন্য যে, এ গ্রন্থের কাব্যসুধা অশরীরি। মনই মানুষ। মনের সাথে মনের সংযোগ ঘটলেই ভালোবাসা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। মন ভেঙে গেলে দেহও অস্পর্শ হয়ে ওঠে। কাজেই দেহকে কাছে টানে মন। সে জন্য দেহতত্ত্বের খোলশ ভেঙে দিয়ে মোশাররফ হোসেন খান মনকে করেছেন ভালোবাসার আধার। এই চেতনা কবিকে আচ্ছন্ন করেছে কবিতার পরশে। এসব কারণেই ‘মনই মানুষ’ এই তত্ত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে তার কাব্যগ্রন্থে বিশেষ করে ‘কুহক ও কুহকীতে’।
মোশাররফ হোসেন খানের কবিজীবন পরিসর। তিনি পরিণত বয়সে এসে রচনা করলেন ‘কুহক ও কুহকী’(আগস্ট ২০২১)। দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় তিনি ভালোবাসাকে শুধু প্রেয়সীর ফ্রেমে আবদ্ধ করে না রেখে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন মানবের তরে। সেজন্য তার কাব্যগ্রন্থটি কিছুটা রহস্যাবৃত। এ গ্রন্থের কবিতাগুলো পাঠ করলে মনে হতে পারে তিনি লক্ষ্য রেখেছেন প্রেয়সীর দিকে। আবার কখনো মনে হতে পারে গণমানুষকে। সন্দেহাতীত তিনি ভালোবাসাকে সীমারেখার মধ্যে রাখতে চাননি বলেই এমন রহস্যের দাগ টেনেছেন। তিনি চেয়েছেন ভালোবাসা হোক গণমানুষের। কবি লিখলেনÑ
‘জন্ম থেকে জ¦লছি শুধু / জ্বলতে জ্বলতে এতদূর /
কোথায় যাবো কোথায় যাবো / এই তো আছি আগুনপুর। /
ভালোবাসায় সিক্ত কেউ / আমি কেবল তিক্ত /
যাই দেবার দিলাম তবু / আমার জীবন রিক্ত। /
বুকের ভেতর লেখা যে নাম / সেই যখন চাবুক মারে /
এ পৃথিবী অবাক হলেও / দোষটা তখন দেবো কারে?
(কুহক ও কুহকী-৪৭)
ভালোবাসার কাঙাল কবি শুধু ভালোবেসেই গেলেন। বিনিময়ে ভালোবাসা রিক্ত হলেন। কুহক ও কুহকী গ্রন্থের শেষের কবিতাগুলোতে কবির এ আক্ষেপ বেড়েছে প্রবলভাবে। তিনি লিখেছেন-
‘কোথায় পাবো আপন মানুষ
কোথায় পাবো ঘর?
আপন ভাবি যাকেই দেখি
সেও হয়ে যায় পর।
গভীর ভালোবাসাও যে সহজ করে প্রকাশ করা যায় কবি মোশাররফ হোসেন খান রচিত ‘কুহক ও কুহকী’ গ্রন্থ তার দৃষ্টান্ত হতে পারে। ভাবগাম্ভীর্য ভরা সহজ সরল বাক্যের অনন্য সৃষ্টি এ কাব্যধারার কবির পাণ্ডিত্য সুপতিষ্ঠিত বলা যেতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement