২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
যে ক থা হ য় নি ব লা

জ্ঞানের তৃষ্ণা থাকলে উন্নত মানুষ থেকে উন্নত কবি হতে পারে : আবু করিম

-

লেখক জীবন ও ব্যক্তি জীবনের পার্থক্য কোথায়?
লেখক একজন ব্যক্তি। সুতরাং তাকে রুটি রুজির জন্য কিছু করতে হয়। সামাজিক প্রাণী হিসেবে আরো নানা কাজ করতে হয়। পাশ্চাত্যে অনেকে মুধু লেখার আয় থেকে চলতে পারে। আমাদের দেশে সেটা সম্ভব নয়। মানিক বন্দ্যোপধ্যায় সাহিত্যকে শ্রমের সাথে তুলনা করেছেন। তার এ মতের সাথে আমি একমত পোষণ করি। আজ এই বয়সে এসে মনে হয় মানিক বাঁড়–জ্জে সত্যি কথা বলেননি। কেননা যার কাব্য সৃষ্টির ক্ষমতা নেই সে হাজার বছর চেষ্টা করলেও ‘বনলতা সেন’ বা ‘আট বছর আগের একদিন’-এর মতো কবিতা রচনা করতে পারবে না।
লেখক এবং জাগতিক জীবনের মাঝে কোনটি বেশি উপভোগ করেন?
লেখক জীবন বেশি উপভোগ করি। জাগতিক জীবন বলতে যদি লেখক জীবন অন্তর্ভুক্ত থাকে তাহলে সেটাও।
লেখক না হয়ে আর কী হতে চেয়েছেন?
লেখক হওয়ার জন্যই আমার জীবন। আর কিছু চাইনি। আমার চৌদ্দগোষ্ঠীর মাঝে কেউ কোনো দিন কবি ছিল না। থাকলেও আমি জানি না। শৈশবে আমার গ্রামের বাড়িতে অনেক বই ছিল। আমার নানার বাড়িতেও প্রচুর বই ছিল। পাঠ্যবইয়ের বাইরে এগুলোকে আমরা আউট বই বলতাম। তখন টমাস আলভা এডিসনের জীবনী পড়ে আমি বিজ্ঞানী হতে চেয়েছিলাম। দস্যু মোহনের বই পড়ে আমি দস্যু দানশীল রবিনহুড হতে চেয়েছিলাম। তাপস কাহিনী নামে একটি বই পড়ে আমার মনে হয়ছিল আমিই তাপস হবো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কবিতা লেখা ছাড়া আর কিছুই হতে পারিনি।
লেখালেখির শুরু কিভাবে?
আমি বাল্যকাল হতে লিখি। আমার পরিবার একটি নি¤œ মধ্যবিত্ত পরিবার। আমাদের বাসায় কোনো পত্রিকা রাখা হতো না। আমি সংবাদপত্র পাঠ করতাম চা দোকান ও রফিক ডাক্তারের মেডিক্যাল স্টোরে। প্রকৃতপক্ষে তিনি ডাক্তার ছিলেন না। ওষুধ বিক্রি ও কিছু চিকিৎসা করতেন। ১৯৬৫ সালে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের সময় দৈনিক আজাদের মুকুলের মাহফিলে পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের সপক্ষে এবং ভারতের বিরুদ্ধে কিছু ছড়া ছাপা হতো। এ ছাড়া অরাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আমি প্রচুর ছড়া লিখেছি। এর কিছু সংবাদের খেলাঘরেও ছাপা হতো। আমাদের স্কুল ম্যাগাজিন সম্পাদনা করতেন কবি অহিদুল আলম। তিনি আমাদের বাংলা পড়াতেন। অজ্ঞাত কারণে তিনি আমাকে খুব ¯েœহ করতেন এবং আমাদের স্কুল ম্যাগাজিনে তিনি আমার ছড়াও ছেপেছেন। এভাবেই লেখালেখি শুরু এবং ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আমার ‘কবিতা সমগ্র’ প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয়।
কবিতা সম্পর্কে আপনার অনুভূতি কী?
আমি মনে করি কেউ কবি হতে পারে না। প্রকৃতপক্ষে কাব্যপ্রতিভা আল্লাহর বিশেষ দান। আমার মনে পড়ে স্কুলে পড়াকালীন আমি অকারণেই কিছু ছড়া লেখা শুরু করি। তখন ছন্দ মাত্রা কিছুই জানতাম না। তবে ছন্দ বুঝতাম কান দিয়ে। কিন্তু প্রতি চরণ শেষে অন্ত্যমিল দিতে হবে এটাই ছিল আমার একমাত্র লক্ষ্য। এভাবে আমার সব জীবনকে কবিতার জন্য বিলিয়ে দিয়েছি।
খ্যাতির তৃষ্ণার পেছনে একজন কবি কেন ছোটেন?
প্রকৃত কবি খ্যাতি নিয়ে মাথা ঘামায় না। খ্যাতি/অখ্যাতি কবি জীবনের স্রোতে ভেসে আসা বাড়তি পলি অথবা ময়লা আবর্জনা।
শিল্পসম্মত রচনা সৃজনের উপায় কী হতে পারে?
একজন কবিকে অনেক পড়তে হবে। অনেক লিখতে হবে। সেটাকে মেরে দেয়ার মতো কিছু কবিতায় চলে না। লেখা প্রকাশ না পেলে কবির পাঠক আসবে কোত্থেকে? সুতরাং লেখা প্রকাশিত হতে হবে এবং যে দেশে বা ভাষায় লিখছেন সেখানে সমালোচনা সাহিত্য বিকশিত হতে হবে।
সমাজের প্রতি কবির কোনো দায় আছে কি?
মানুষ সামাজিক জীব। সুতরাং সমাজের প্রতি দায় কেউ এড়াতে পারে না।
কবি তো ভিন্ন গ্রহের কোনো জীব নয়। আমার পিতামহ স্কুলশিক্ষক ছিলেন।
তিনি যা যা বলতেন সবই আমার মনে আছে। তার সৎ আদর্শ কোনো মানুষের সঙ্গে আমার দেখা হয়নি। তার নির্দেশিত পথেই আমি জীবনের দায়কে বুঝতে পেরেছি। প্রতিটি কবিরই দায় থেকে লেখা উচিত।
সমসাময়িক বাংলা কবিতাকে কিভাবে দেখছেন?
সারা পৃথিবীতে কবিতার পাঠক এখন কম। সমসাময়িক কবিতা অনেকে ভালো লিখছেন। এদের হাতেও বাংলা কবিতার বাঁক বদল হচ্ছে বলে মনে করি। এ ধারা চলতে থাকলে আমাদের কবিতা আরো উত্তরোত্তর সমৃদ্ধ হবে বলে মনে করি।
লেখালেখির পাশাপাশি ব্যক্তিজীবন কতখানি সফল মনে করেন?
আমলার চাকরি করেছি ব্যক্তিজীবনে। সেখানে সচিব পদে কাজ করেছি। আল্লাহর অপার কৃপায় আমি আমার দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করেছি। কাজে সফল হওয়ার চেষ্টা করেছি এবং হয়েছি।
কবিজীবনের শেষ ইচ্ছে কী?
যত দিন বাঁচি যেন সুস্থ থাকি আমৃত্যু লিখে যেতে পারি।
জীবনে অপূর্ণ যে স্বপ্ন?
স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম একটি গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখব বলে। গণতন্ত্র কখনোই দেখিনি। আমাদের নৈতিক শিক্ষার মান অবনত হচ্ছে।
কবরে দেহ শুইয়ে দেয়ার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত কাজ করে যেতে চাই। জীবদ্দশায় মানুষের প্রকৃত মূল্যায়ন হয় না। এসব ভাবনা আমাকে ব্যথিত করে এবং পুরো জাতিকেও ব্যথিত করে।
কবিতা যেমন উন্নত হতে হবে, কবিকেও হতে হবে উন্নত মানুষ, আমাদের কবিরা কি এ কথা ভাবেন?
উন্নত মানুষের মাপকাঠি কি জানি না। তবে কবিকে প্রচুর পড়তে হবে। এই পৃথিবীর সব জ্ঞান হয়তো সে আয়ত্ত করতে পারবে না। কিন্তু জ্ঞান অর্জনের তৃষ্ণা তার অন্তরে থাকলে সে উন্নত মানুষ থেকে উন্নত কবি হতে পারবে।
আপনার কবিতার দর্শন কী?
কবি ইকবাল লিখেছেন, পশ্চিমে গেলে ইসলাম দেখি মুসলমান দেখি না, দেশে ফিরলে মুসলমান দেখি ইসলাম দেখি না। আমারও একই অভিমত। ইসলাম ধর্ম এ দেশে আধুনিক ধর্মে পরিণত হয়েছে। কুরআন বুঝে পাঠ করা হয় না।
কোন বই বারবার পড়ার ইচ্ছে এখনো তাড়িত করে?
রবীন্দ্রনাথ, বিদ্যাসাগর, মধুসূদন, জীবনানন্দ, নজরুল ইসলাম এদের বই বারবার পড়ি।
পাঠকের ভালোবাসা কেমন পান?
জীবনে পাঠকের ভালোবাসা অনেক পেয়েছি। আজো পাই। পাঠকের ভালোবাসা বুকে নিয়েই আজো কবিতা লিখে পুলকিত হই।
এখনো উজ্জীবিত রাখে যে বাণী?
পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন (সূরা আলাক)।

সাক্ষাৎকার গ্রহণ : মেজবাহ মুকুল


আরো সংবাদ



premium cement