২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সৌন্দর্যে মলাটবদ্ধ ‘মায়াবী জোছনা রাত’

-

রবিউল মাশরাফী এ সময়ের ছন্দবোদ্ধা একজন কবি। বাংলাদেশ বেতারের ‘কণ্ঠজীবী’ রবিউল মাশরাফী লিখে যাচ্ছেন গত শতকের আশির দশক থেকেই; অথচ বইয়ে মলাটবদ্ধ করেছেন এই তো এ বছর-২০২১ এর ফেব্রুয়ারিতে। বই প্রকাশে নয়; কবিতা লেখাতেই মনের আকুতি বেশি বলেই বই প্রকাশের এ ধীরগতি- আমার সাথে আলোচনায় এমনটিই মনে হয়েছে।
গদ্যধারা আর অন্ত্যমিলের কবিতা মিলে মোট ৫০টি কবিতা স্থান পেয়েছে এ বইতে। গদ্যধারার কবিতায়ও পর্ব বিন্যাসিত হয়ে অক্ষরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্তের চমৎকার প্রয়োগ দেখা যায় এ বইয়ের কবিতায়। বইয়ের শিরোনাম কবিতা ‘মায়াবী জোছনা রাত’ গদ্যধারায় অক্ষরবৃত্তে ১৪ মাত্রার পঙক্তিতে লেখা। পর্ব বিন্যাস ৮+৬। লেখায় আবেগও প্রকাশ পেয়েছে বেশ। ‘এমন গভীর রাতে ভয় ধরে মনে/মেয়েরা রমণী হলে ভয় ভেঙে যায়/আমিও সেই ভয়ভাঙা রমণীর মতো/ভয়ের কপাট খুলে মেঘ ওড়া দেখি/আকাশের নীলে দেখি মেঘের মানচিত্র/জলের আয়নায় ভাসা পূর্ণিমার চাঁদ।/চাঁদের উনুনে-জ্বলা হেমন্ত-আকাশ!/এমন আলোর সৃষ্টি কে করেছে ভেবে/দুই চোখে জমে ওঠে সুখের তরল।’
রূপক কবিতা ‘মায়ের আঁচলে সাপ’। মা-রূপি এই আমার দেশ। মাত্রাবৃত্ত ছন্দে প্রতি পঙক্তিতে ৬ মাত্রার ৩টি পূর্ণ পর্ব। শেষ দুই মাত্রার আবার একটি অপূর্ণ পর্ব। মা আর দেশ- কবিতাটির রূপকতার এপিঠ আর ওপিঠ। ‘নীলপুঁজে ভরে গেছে/স্বদেশের বুকে রক্ত মাখানো/পলিটিকসের ক্ষত/সর্বভুকের রোষানলে পড়ে/হারিয়ে ফেলেছি সব সুখ।’
লেখকের মনের চিত্র তার লেখায় প্রকাশ পায়। কবি রবিউলও তার লেখায় প্রকাশ করেছেন স্রষ্টার প্রতি তার অপরিসীম শ্রদ্ধা-আনুগত্য। কুরআনের ভেতরও যে সাহিত্যউপাদান আছে; সেটাই তিনি ‘অবিশ্বসাসী’, ‘মুমিন মানব’ প্রভৃতি কবিতায় তুলে এনেছেন। সূরা আর রহমানের একটি সুপরিচিত আয়াত দিয়ে শুরু করা ‘মুমিন মানব’ কবিতায় মায়ের প্রতি যে সম্মান দেখানো হয়েছে; তা সত্যি প্রশংসাযোগ্য। অক্ষরবৃত্তে ১৮ মাত্রার এ কবিতাটি পড়তে পড়তে মাতৃভালোবাসায় মনকে বিগলিত করে। সমাজ বাস্তবতা নিয়ে লেখা কবিতা ‘দিনের শেষে’, ‘একান্নবর্তী’, ‘আত্মহনন’ প্রভৃতি। দেশ-ভাষা নিয়ে লেখা কবিতা ‘একুশের বিলাপ’, ‘বিপন্ন স্বাধীনতা’, ‘মিছিলে যাব না’ প্রভৃতি।
‘অন্ত্যমিল হোক আর গদ্যছন্দ হোক; তাতে ছন্দ অনিবার্য উপাদান’- এটা কবির বোধ। সাহিত্যেরও বোধ এটি। এর বাইরে গিয়ে শুধু শব্দের সংযোজনে বিমূর্ত অর্থবোধে গদ্য কবিতা লেখা- হয়তো কেউ কেউ লিখে থাকে; কিন্তু সাহিত্য তাকে কতটুকু আশ্রয় দেবে, তা সময় বলে দেবে। সে বিবেচনায় রবিউল মাশরাফীর গদ্য কবিতা নিখুঁত ছন্দের যথাযথ উপস্থাপনায় রচিত।
রবিউল মাশরাফীর ‘মায়াবী জোছনা রাত’ সাধারণ পাঠককে দেবে কাব্যরসের পূর্ণ স্বাদ। সাহিত্যমোদিদের দেবে কাব্যসুরের ঝঙ্কার। সাহিত্য সমালোচকদের দেবে খুঁটিয়ে খঁটিয়ে দেখার আনন্দ। সাহিত্য শুধু নিজ আবেগের প্রকাশই নয়; পাঠক আগেবকে ধারণ করাও সাহিত্যসফলতার একটি দিক। সেদিক থেকে রবিউল মাশরাফীর ‘মায়াবী জোছনা রাত’ সার্থক একটি কাব্যগ্রন্থ।
রবিউল মাশরাফী নিজেই প্রকাশ করেছেন ‘মায়াবী জোছনা রাত’ কাব্যগ্রন্থটি। মুদ্রণ পরিপাটে আকর্ষণীয়। বহুরঙে প্রতিটি পাতা সাজানো। ৬৪ পৃষ্ঠার এ বইটি পাঠকপ্রিয়তা পাবে- এতটুকু বিশ্বাসে আমার কোনো দ্বিধা নেই। হ


আরো সংবাদ



premium cement