১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`
যে ক থা হ য় নি ব লা

সৃজনশীলতার জন্যে লেখককে জীবনঘনিষ্ঠ হতে হবে : ফরিদা হোসেন

-

কথাশিল্পী শিল্পী হয়েছেন আর কী হতে চেয়েছেন জীবনে?
ছাত্রীজীবনে একসময় ভাবতাম শিক্ষিকা হবো। আমার একটা লাইব্রেরি থাকবে। অনেক পড়াশোনা করে মহাবিদ্বান হবো এবং একসময় কিছু না ভেবেই প্রচুর লিখতে লিখতে হয়ে গেলাম কথাশিল্পী। ছাত্রীজীবনে গান গাইতাম। চমৎকার আবৃত্তি করতাম। সাহিত্য সংস্কৃতির সংগঠন করতাম অনেক। তারপর এলো সংসারজীবন। বিশাল পরিবারের বড় বউ। তিনটি মেয়ের জন্ম। ওদের লালন পালন। পরিবারের সদস্যদের প্রতি কর্তব্য, কর্মব্যস্ত স্বামীর প্রতিটি কাজে সহযোগিতা করা, এসব তো ছিলই এবং সেটাই স্বাভাবিক। এই সব দায়িত্ব পালন করতে করতে ১২টি বছর বাদ পড়ে গেল আমার লেখকজীবন থেকে। এই সময়টা আমি আমার সন্তান আর সংসারকে গুছিয়ে নিয়েছি মনের মতো করে। কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না এই জীবনের জন্য। মনের অজান্তে ভালোবেসে করেছি সব। তবে হ্যাঁ, ওই ব্যস্ত সময়ে লিখতে পারছিলাম না বলে একটা কষ্ট সবসময় আমাকে পীড়া দিত। বুকের ভেতরটায় একটা আশার আলো জ্বলত ধিকধিক করে। একসময় আমার সব কিছু গোছানো হয়ে গেল এবং আমি আবার কলম তুলে নিলাম হাতে।
কী প্রতিবন্ধকতা জয় করে লেখক হলেন?
প্রতিবন্ধকতা ছাড়া কোনো মানুষ জীবনের যেকোনো ক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে পারে না। সামাজিক, সাংসারিক, অর্থনৈতিক সব দিকেই প্রতিবন্ধকতা থাকে একজন লেখকের জীবনে। প্রবল ইচ্ছাশক্তি এবং সৎসাহস থাকলে সব বাধাকে অতিক্রম করা যায়। আমারও ছিল। আমাদের সমাজের প্রতি ক্ষেত্রে কেউ কারো ভালো চায় না। পরশ্রীকাতরতা এবং প্রতিহিংসাপরায়ণতা শেষ করে দিচ্ছে একেকটি প্রতিভাময় জীবন। তবুও মনে রাখতে হবে। হার মানার জন্য আমাদের জন্ম নয়। প্রতিবন্ধকতা আসবে এবং একে জয় করতে হবে।
শিল্পসম্মত রচনা সৃজনের উপায় কী হতে পারে?
শিল্পসম্মত এবং সৃজনশীলতার জন্য লেখককে জীবনঘনিষ্ঠ হতে হবে। প্রকৃতি এবং বৈচিত্র্যময় ক্ষেত্র একজন লেখককে জীবনঘনিষ্ঠ হতে শেখায়। আরেকটি জিনিস হচ্ছেÑ অফুরন্ত জ্ঞান আহরণ। যা একজন লেখককে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে সাহায্য করে।
আমাদের শিশুসাহিত্যকে কিভাবে দেখছেন?
আমাদের শিশুসাহিত্যের অবস্থা খুবই করুণ। শুধু ছন্দ মিলিয়ে ছড়া লিখলে আর রাজা-রানীর গল্প নিয়ে কখনোই শিশুসাহিত্য নয়। আমার মতে, শুধু কল্পকাহিনী নয়। বর্তমানের আধুনিক বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য, ধর্ম, আদর্শ, নীতিবোধসমৃদ্ধ কিছু বাণী দিয়ে শিশুসাহিত্য রচনা করা উচিত। যা শিশুদেরকে একজন সৎ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।
শিশুসাহিত্যের প্রতি একজন শিশুসাহিত্যিকের কী দায়?
অবশ্যই দায় আছে। একজন সমাজসচেতন শিশুসাহিত্যিক তার লেখনীর মাধ্যমে সুচারুরূপে বদলে দিতে পারে। বিশেষ করে অবহেলিত শিশুদের জীবন।
শিশুসাহিত্য লিখে আমাদের শিশুদের কী শেখাতে পেরেছি?
এখনকার শিশুরা অনেক বেশি প্রগতিশীল। বই পড়ে ওরা যা-না শিখছেÑ তার চেয়ে বেশি বর্তমানে যান্ত্রিকতা থেকে শিখছে। এর কারণ পড়ার অনভ্যাস। আমি বলব, এর দায় অবশ্যই বাবা-মায়ের। আমরা যা লিখি তাদের দায়িত্ব সেসব বই শিশুদের হাতে তুলে দেয়া এবং পাঠ্যাভ্যাস তৈরি করা। তাহলেই ওরা সঠিক জিনিসটি শিখতে পারবে।
লেখকের মতো একজন সম্পাদক কালের প্রতিনিধি হিসেবে কেমন ভূমিকা রাখা উচিত?
যেহেতু একজন সম্পাদক যেমন কালের প্রতিনিধিÑ তেমনি এ ক্ষেত্রে তার ভূমিকাও অনেক। প্রথমত, নিরপেক্ষ মনোভাব। তারপর দেশ-বিদেশের দুর্লভ সব সংবাদ সংগ্রহের সাথে সাথে অত্যন্ত বিচক্ষণতার পরিচয় দেয়া, সমস্যার সঠিক সমাধানের একটি প্রধান অঙ্গ। একজন সৎ এবং আদর্শবান সম্পাদক ইচ্ছে করলে দেশ ও সমাজের চেহারা পাল্টে দিতে পারেন।
লেখক এবং জাগতিক জীবনের মাঝে কোন জীবন বেশি উপভোগ করেন?
অবশ্যই লেখকজীবন। সাহিত্যকর্ম আমাকে যেন অন্য জগতে নিয়ে যায়।
খ্যাতির তৃষ্ণার পেছনে একজন কবি কেন ছোটেন?
আমার জানা নেই। আমার মতে খ্যাতি নয়Ñ একজন লেখক বা কবিকে শুধু সৃজনশীলতার তৃষ্ণায় ছোটা উচিত।
নিজেকে নিয়ে প্রিয়জনের কোন কথা মিষ্টি মনে হয়?
আমার প্রয়াত স্বামী মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন বলতেন, তোমার প্রতিটা গল্প বুকের ভেতরটাকে একেবারে ছুঁঁয়ে যায়।
জীবনের ব্যর্থতার কথা বলুন?
ব্যর্থতা সবার জীবনেই আছে এবং সর্বক্ষেত্রে। বহু ক্ষেত্রে প্রকাশকদের অনীহা, দলাদলির অপব্যবহার, নবীন-প্রবীণের পার্থক্য-অর্থনৈতিক সমস্যা। এটা শুধু আমার নয়, সবার ক্ষেত্রে।
লেখালেখির পাশাপাশি ব্যক্তিজীবন কতখানি সফল মনে করেন?
শোকর আল-হামদুলিল্লøাহ, শতভাগ সফল।
সাহিত্যিক জীবনের শেষ ইচ্ছে কী?
সৃষ্টিকর্তা আমাকে যতদিন সুস্থতা দেবেন ততদিন শুধু লিখে যেতে চাই। গত ১৩ বছর আন্তর্জাতিক সাহিত্য সংস্থা চঊঘ বাংলাদেশের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি অত্যন্ত সফলতার সাথে। ছোট-বড় সবার জন্য লিখেছি প্রচুর। আল্লাহর মেহেরবানিতে দেশ-বিদেশে বহু পুরস্কার পেয়েছি। ‘অবিনশ্বর’ নামে একটি আন্তর্জাতিক মানের সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করছি ২০ বছর ধরে। দেশ-বিদেশের বহু লেখকের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছি এবং প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ করেছি নিজেকে। যদি পারতাম সব দলাদলি, রেষারেষি ভুলে সব কবি লেখককে এক সুশীতল বৃক্ষছায়ায় নিয়ে আসতাম। কারণ, আমাদের একটিই জগৎ, আমরা কলম নিয়ে কাজ করি।
জীবনে অপূর্ণ যে স্বপ্ন?
শিশু-কিশোরদের জন্য একটি আদর্শ নির্মল আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা।
আপনার শিশুসাহিত্য দর্শন কী?
শিশুরা কাদামাটির মতো। আমরা যেমনটি চাইব তেমনই ওদের গড়ে তুলতে পারব। শিশুসাহিত্য হচ্ছে সৃজনশীল কাজে শিশুদের শেকড়টাকে মজবুত করে দেয়া। খুব সহজ ভাষায় আকর্ষণীয় গল্প এবং ভঙ্গিতে ওদের বুকে গেঁথে দেয়া। তারপর সেই শেকড় থেকে ডালপালা গজাবে ওদের মস্তিষ্কে। একসময় সে শেকড়সন্ধানী হয়ে যাবে সৃজনশীলতার পথে। অনেক সমাজ সংগঠনের সাথে জড়িত আছি বহু বছর থেকে। আমার নিজের সংগঠনের নাম ‘আঞ্জুম শিশুকল্যাণ সংস্থা’। এই সংগঠনের মাধ্যমে যে আমরা শিশুদের শিক্ষা, সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য, ধর্ম সব নিয়ে কাজ করি। শিশুদের নিয়ে ১৯৬৫ সাল থেকে কাজ করছি ছাত্রী থাকাকালীন অবস্থায়। যেহেতু সাহিত্য সংস্কৃতি দুটোই ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সেহেতু শিশু ও সাহিত্য নিয়ে লেখার পাশাপাশি গবেষণা করছি এখনো। বহু বইয়ের সাথে সাথে নির্মাণ করেছি বহু বাণীসমৃদ্ধ রূপকথার নাটক। বিটিভিতে যার প্রচার সাড়া জাগিয়েছিল পুরো বাংলাদেশে। শিশুদের মধ্যে ছোটবেলা থেকে বই পড়তে পড়তে ঢুকেছি লেখার জগতে। একসময় লিখতে লিখতে অনুভব করতাম-জীবন বদলে দিতে পারে আমার লেখার ধরন। বহুগুণ সমৃদ্ধ করতে পারে শিশু-কিশোরদের জীবন।
সাহিত্যে কতটুকু অবদান রেখেছেন?
আল্লাহ মেহেরবান, যতটুকু তৌফিক দিয়েছেন ততটাই। অনেক শিশুগ্রন্থ, কবিতা, গান, নাটক, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছি।
পাঠকের ভালোবাসা কেমন পান?
আশাতীত ভালোবাসা আপ্লুত করেছে আমার লেখক এবং পাঠক বন্ধুরা। বলে আনন্দ পাই যে, তা হলো প্রতি বছর ফেব্রুয়ারিতে বইমেলার উৎসবকে উপলক্ষ করে আমাদের বাড়িতে লেখক পাঠকের একটি মিলনমেলা হতো। সেখানে বাংলাদেশের কিংবদন্তি লেখক সৈয়দ আলী আহসান, অধ্যাপক শাহেদ আলী, কবি আবদুুল মান্নান সৈয়দ, কবি আল মাহমুদ, আবদুল হাই সিকদার, বেলাল চৌধুরী, জাকির আবু জাফর, তিতাশ চৌধুরী, রফিক আনোয়ার, ফাহমিদা আমিন, আহমদ মমতাজ। এ ছাড়া কলকাতা, কানাডা, শিকাগো থেকেও আসতেন অনেক প্রবাসী লেখক। গান, আবৃত্তি, আর ভুঁড়িভোজনের আনন্দে ভরে যেত চারদিক। এরই নাম ভালোবাসা।
কোন বই বারবার পড়ার ইচ্ছে এখনো তাড়িত করে?
কাজী নজরুল ইসলামের ‘সঞ্চিতা’। মনে হয় ওই একটা বই-ই মানুষের জীবনকে বদলে দিতে পারে।
এখনো উজ্জীবিত রাখে যে বাণী?
সাধনা করলে সাফল্য আসবেই ইনশাআল্লাহ।

সাক্ষাৎকার গ্রহণ : মেজবাহ মুকুল


আরো সংবাদ



premium cement
সিদ্ধিরগঞ্জে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, নগদ টাকাসহ ৮০ লাখ টাকার মালামাল লুট প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী পরীমণির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার আবেদন স্থায়ী যুদ্ধবিরতি না হওয়ায় গাজায় মানবিক প্রচেষ্টা সম্পূর্ণ ব্যর্থ : রাশিয়া পিকআপচালককে হত্যা করে রেললাইনে লাশ ফেল গেল দুর্বৃত্তরা এক মাস না যেতেই ভেঙে গেলো রাজকীয় বিয়ে! ইউক্রেনে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত ১৭ নোয়াখালীতে মেলায় সংর্ঘষ নিহত ১ কবরস্থান থেকে বৃদ্ধার বস্তাবন্দি লাশের রহস্য উন্মোচন : পুত্রবধূ ও নাতনি গ্রেফতার মিরসরাইয়ে বজ্রপাতে কৃষকের তিন গরুর মৃত্যু হবিগঞ্জে বাসচাপায় পিকআপের চালক ও হেলপার নিহত

সকল