২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

দাগ রেখে যাই

হাসান আলীম
-

১৩.

ভাগ্নে ভাগ্নীকে নিয়ে আমরা অর্থাৎ আমার ছোট ভাই আসাদ ও ছোট বোন সারাদিনমান আনন্দে মেতে বেড়াতাম। সকালে নাশতা খাওয়ার পর আমরা সকলে মিলে দোতলা ঘরের ওপর তলায় সাপলুডু খেলতাম, খেলার ফাঁকে ফাঁকে মুড়ি, নারকেল, খেজুরের পাটালি গুড় খেতাম। আমাদের মিলনমেলা চলত প্রায় দুপুর পর্যন্ত। এর গোছলের আগে কোনো দিন ছলম বা জাম্বুরা, কোনো দিন তালের শ্বাস, নারকেলের ফোপা বা তালের আঁটির ভেতরের ফোঁপা, ডাবের পানি খেয়ে পাশের কুমার নদীতে অথবা বাড়ির পুকুরে ঘণ্টাখানেক ঝাঁপাঝাপি, জলকেলী, ভুব সাঁতার, বাটারফ্লাই করে হৈ রৈ শব্দে পুরো এলাকা মাতিয়ে তুলতাম। গোছল শেষে নিজেদের মসজিদে জোহর পড়ে দুপুরের খাবার খেতাম। খাবারের মেনুতে পুড়ানটে শাক, পুঁইশাক, ছোট ইচামাছ, নারকেলের মিশ্রণে বাইম মাছ, কোনো কোনো দিন মুরগির গোশত, ডাল, খিচুড়ি থাকত। ঝালতরকারির খাওয়া শেষে অবশ্যই দুধকলা মিশিয়ে ভাত খেতে হতো। দুধকলার পরিবর্তে কোনো কোনো দিন দুধ-আম, আবার দুধ আমের পরিবর্তে আমসত্ত্ব দুধে ভিজিয়ে ভাত দিয়ে মেখে খেতে হতো।
আমার ভাগ্নেরা সাথে থাকলে খাওয়ার বৈচিত্র্য বেড়ে যেত। বিকেলে ছিঃ বুড়ি, ফুটবল খেলে আবার সন্ধ্যাবেলায় একত্রিত হয়ে গল্প করতাম কখনো বা বানেছা পরীর কিচ্ছা শুনে রাত পার করতাম। এখন এসব কেবলই আনন্দ বেদনার স্মৃতি। আমেনা বুজি মারা গেছেন মধ্য সত্তর দশকে। ভাগ্নেরা ঢাকায় থাকে। মাঝে মধ্যে ওদের সাথে দেখা হয়, গেট টুকেদারও হয় কালেভদ্রে। এ জন্য আমরা মামুরা শত ক্রোশের তেপান্তরে। আমেনা বুজিকে আমি মনের ভেতরে লালন করি যার কোলে আমার কবিতার কৈতর পাখা মেলেছিল প্রথম।
তাকে নিয়ে আমার একটি কবিতা যা আমার কিশোর কলি কাব্যগ্রন্থে স্থান পেয়েছে :
আমেনা বু/তিনি আমার বোন ও/তিনি আমার মায়ের মত/তাহার কথা শোন।/বর্ষাকালে বৃষ্টি হলে/কোলা ব্যাঙের ডাক/মধ্য রাতের ঝি ঝি পোকা/মনে দিত তাক।/ভুলিয়ে দিত ঘুম/লক্ষ মায়ের চুম।/তাহার কোলের চাদর থেকে/সুখ সারিদের সুরে/যেতাম উড়ে মন-যমুনার তীরে।/কাব্য-কলা যাদুর কাঠি চান্দী সোনার মোম/আমার গায়ে জড়িয়ে আছে আমেনা বু’র ওম।
হাসাম দিয়া স্কুলের রাজহাস
শ্রীনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শেষ ক্লাস অর্থাৎ ক্লাস ফাইভে আমি ফার্স্ট হয়েছি। হেড স্যার অনাথ বন্ধু কর্মকারের হাত থেকে গোল্ড পেন পুরস্কার পেয়েছি। এ খবর আশপাশের স্কুলগুলোর মেধাবী ছাত্র ও শিক্ষকদের ভেতর কৌতূহল মিশ্রিত উচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয়েছিল। কেউ কেউ আবার ভেবেছিল হাসামদিয়া স্কুলের ফার্স্ট বয়ের সাথে প্রতিযোগিতা হলে আমি হেরে যাবো তার মেধার কাছে। এ বিষয়টি আমার কানে গেল। আমি ফরিদপুর শহরের কোনো স্কুলে ভর্তি না হয়ে কুমার নদীর ওপাড়ের হাসাম দিয়া স্কুলে ভর্তি হলাম। ফরিদপুর শহরে তখন আমাদের আরো একটি বসত বাড়ি ছিল। আমার জন্য শহরের ভালো স্কুলে পড়াশোনা করা কঠিন ছিল না।
শেষ পর্যন্ত হাসামদিয়া ইউনাইটেড উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম। স্কুলটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনীতিবিদ শাহ জাফরের বাবা আলহাজ আজিজ মুনশি সাহেব। ওই গ্রামের নকুল সাহা, তার বড় ভাই, ডা: ননীগোপাল সাহা, অমূল্য সাহাসহ আরো অনেকে এই স্কুলের প্রতিষ্ঠাকালীন কমিটির সদস্য ছিলেন।
আমাদের হেড স্যার ছিলেন বাবু সন্তোষ গুহ। অন্যান্য শিক্ষক ছিলেন মাজেদ স্যার, কালীপদ স্যার, মৌলবী শিক্ষক মজিবর রহমান স্যার। মজিবর রহমান আমাদের বাড়িতে লজিংমাস্টার ছিলেন। আমার সহপাঠী হারুন ছিল খুব চালাক চতুর। সে আমাকে ফোড়ন কেটে বলল, এই যে ফার্স্ট বয় আলীম সাহেব এইটা শ্রীনগর স্কুল না এখানের ফার্স্ট বয় সিরাজ। সে নাকি দারুণ ব্রেইনি। তার সাথে আপনার ফাইট দিতে হবে। এবার দেখবানে ক্লাস সিক্সে কে ফার্স্ট হয়। যুদ্ধে হেরে গিয়ে কিন্তু ভ্যাস্কায়ে যেও না। চেহারা মইজ্যার মার মত কইরো না আবার। আমি হেসে বললাম আমাকে হারানো এত সহজ নয়। উল্লেখ্য, মইজা হলো আমাদের পাড়ার কসিমুদ্দি মোড়লের প্রথম স্ত্রী, আজিজ মোড়লের সতালো মা। সে একটু পাগলাটে প্রকৃতির। সব সময় মুখ বিকৃত করে বিড় বিড় করে। কোনো ছেলেমেয়েকে মজিত মোড়ল ওরফে মইজার মার সাথে তুলনা করলে ক্ষেপে যাবে। কিন্তু আমি হারুনের কথায় সে দিন চোটে যাইনি। কারণ হারুনও আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সে এরকম মাঝে মধ্যে আমার সাথে দুষ্টুমি করে। আরো অনেক বালসুলভ আচরণ সে আমার সাথে করত। সমবয়সী, সহপাঠীরা যেমন করে থাকে, হারুন তার ব্যতিক্রম নয়। আমি বরং মজাই পেতাম।
এক দিন কালীপদ স্যার সিরাজ আর আমার মেধার পরীক্ষা নিলেন। আমাদের দু’জনকে তার সামনে বসিয়ে খুব কঠিন কয়েকটি অঙ্ক করতে দিলেন। আমি সিরাজকে হারিয়ে দিলাম। কালীপদ স্যার এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিলেন এ জন্য যে তাদের সরাসরি ছাত্র সিরাজ সেরা নাকি আমি যে অন্য স্কুলের ফার্স্ট বয়। সে দিন থেকে কালীপদ স্যার আমাকে সুনজরে দেখতেন। স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষায়ও আমি সিরাজকে টপকে শীর্ষে অবস্থান করলাম। সপ্তম শ্রেণীতে আমি ফরিদপুর হাইস্কুলে ভর্তি হলাম। কলেজ জীবনে রাজেন্দ্র কলেজে সিরাজ আবার আমার সহপাঠী হলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি রসায়নে বিএসসি অনার্সে ভর্তি হয়েছিলাম আর সিরাজ ভর্তি হয়েছিল গণিতে বিএসসি অনার্সে। পরের বছর সিরাজ বুয়েটে ভর্তি হলো। আমি পেছনে পড়ে গেলাম। আমি অবশ্য বুয়েটে ভর্তির চেষ্টা করিনি। কারণ ইঞ্জিনিয়ারিং আমার কাছে ইন্টারেস্টিং ছিল না। এর অনেক পরে আমার ছোট ভাই আবদুল্লাহ আমাকে সিরাজের কাছে পারমানেন্টভাবে পরাজিত করার ব্যবস্থা করে। সে সিরাজের ভাতিজিকে বউ বানিয়ে বোগলদাবা করে ঘরে তুল্ল। বন্ধু সিরাজ মুহূর্তে আমার তালই বাবাজি হয়ে চেয়ারে বসে ঠ্যাং নাচাতে লাগল। সিরাজ আমাকে ফোন করে বলল দোস্ত থুক্কু বাবাজি আমি তোমার তালই বলছি।
বন্ধু বর সিরাজ জনাব তালই সাহেবকে এখন দেখলেই আগে ভাগে সালাম দেই। বন্ধু যদি রেস্তায় বড় হয় তবে মজাই আলাদা, আদব কায়দা থাক দূরের কথা দুষ্টুমিতে এক নতুন মাত্রা যোগ হয়। ছোট ভাই আবদুল্লাহ তুমি মোনালিসাময় যে হীরাখণ্ড লভেছো, তাতে তুমি একাই লাভবান হওনি আমিও সিরাজাম মনিরার সৌহার্দ্যে সুশোভিত হয়েছি।
আমার আরেক ক্লাসমেট নীরে অর্থাৎ নীরেন্দ্রনাথ সাহা না কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী নয়। সে শুধু হাসামদিয়াতেই নয় ফরিদপুর হাইস্কুলেও সে আমার সহপাঠী ছিল। এখন সে ময়েনদিয়া বাজারে ওষুধের ফার্মেসি দিয়ে ব্যবসা কাম ডাক্তারি করে। তার সাথেও আমার এক কর্মযোগ রয়েছে। আমি রসায়নে এমএসসি করে বিভিন্ন ওষুধ শিল্প কারখানায় ওষুধ বিশ্লেষণ, গবেষণা ও উৎপাদনের সাথে জড়িত আছি। সেই সাথে সতীনের মতো জড়িয়ে আছে কাব্যচর্চা, না আমার ছই সতীনে ঠোকাঠুকি করে না-ওষুধ গবেষণা আর কবতে লেখা চুলোচুলি করে না তবে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা জানতে পরলে তাদের মেয়েকে অর্থাৎ চাকরিটাকে একপোশাকে নিজের অন্দরমহলে ঢুকিয়ে দেবে।
তাই ম্যানেজ করে চলছি, নিজের বউকেও ম্যানেজ করে চলতে হয় নইলে খাওন, শয়ন বন্ধ হয়ে যাবে। তবে আমার শয়নের চেয়ে খাওনের চিন্তা মশহুর। এ জন্য খোদাকে বলে রেখেছি তোমার দোস্ত পেয়ারে নবী হাবীবে জীগর হযরত মোহাম্মদ যেন দয়া করে আমার রেজেকে তার পবিত্র থুতু ছড়িয়ে দেন যাতে তুমি খুশি হয়ে আমার রেজেকের পুকুর সমুদ্র প্রমাণ করতে পারো।
ষষ্ঠ শ্রেণীর বাংলা খাতা দেখতেন মুজিবর রহমান স্যার। তিনি আমাদের বাড়িতে লজিং মাস্টার হিসেবে থাকতেন। রাত্রে আমার ছোট ভাই আসাদ ও ছোট বোন হামিদাকে পড়াতেন। আসাদ ছোট বেলা থেকে মিনমিনে চালাক একটু চঞ্চল প্রকৃতির ছেলে। সে কিভাবে যেন আমার বাংলা খাতার মান বন্টন দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছিল দাদা বাংলায় লেটার মার্ক পেয়েছে। রচনা লেখায় বিশের মধ্যে বাইশ পেয়েছে। এটা কিভাবে হল তা বিভিন্নভাবে বিনয় মিশ্রিত উচ্ছ্বাসে মজিবর স্যারের কাছে জানতে চেয়েছে। উনি বলেছিলেন অয় বাংলা গণিতে আশির ওপরে পায়, তর কী? অয়তো ফার্স্ট বয়। অয় সব স্যারের কাছে বাংলায় লেটার পায়। আমি ওরে রচনায় বিশে বাইশ দিমু তর কী।
আসাদও মেধাবী ছাত্র। ও ক্লাসে প্রথম দ্বিতীয় হোত। বাড়িতে ওকে আমি অংক করাতাম। সমাধান করতে দেরি হলে ওর নরম তুলতুলে কপোল দুই আঙুল দিয়ে টেনে যতটুকু লাল করে দিতাম তার চেয়ে আমার আঙুলে লেগে থাকা ফাউন্টেন কলমে কালি বেশি কলঙ্কিত করত। আমি মাঝে মধ্যে আমার এই অদ্ভুত শাস্তি প্রদানের কৌশলে জন্য অস্বস্তি প্রকাশ করতাম।
মায়াময় কপলের আমাদের স্থানীয় কথন টাউয়া। আমার আদরের ছোট ভাই আসাদকে গণিতে পণ্ডিত বানানোর প্রবল ইচ্ছায় ওর অঙ্কের প্র্যাকটিস করাতাম বারাবার। কিন্তু একটু ভুল হলে ওর টাউয়া প্রবল বেগে দুই আঙুলের চিপ্পা দিয়ে টান মারতাম যাতে ব্যথা পায় আর ভয়ে অঙ্ক কষতে ভুল না করে। ও এতই নিবেদিত যে বারবার চিপ্পা খাওয়ার কষ্ট থেকে পরিত্রাণের জন্য তুলতুলে টাউয়া মানে কপোলে সরিষার তেল মেখে পিচ্ছিল করে রাখত না। কারণ সেখপুরার ফকো ভাই অতুল খাঁ স্যারের ওই অদ্ভুত ভয়ঙ্কর টাউয়া চিপ্পার শাস্তি থেকে রক্ষা পেতে প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার আগে, টাউয়া মোবরকে পাকা সরিষার তেল মেখে যেতেন। তিনি অঙ্কে কাচাঁ থাকলেও আত্মরক্ষার উপায়ে মোটেও উদাসীন ছিলেন না।
অতুল স্যার ক্ষেপে গিয়ে শুধু বলতেন রাঙামুলোটা দিয়ে কিছু হবে না। ও হল ঞযব ফড়হশবু, একটা গাধা। আসাদ বোধহয় অমন করে ওই প্রজাতির প্রাণী হতে চায়নি। আমাকে রাগাতে চায়নি। আসাদও শ্রীনগর স্কুলের ফার্স্ট বয় ছিল। ও পরে হাসামদিয়া স্কুলের ছাত্র হয়েছিল। ওর সহপাঠী ছিল নজরুল। বারিক মুনশি চেয়ারম্যান সাহেবের পুত্র আমাদের শাহ জাফর ভাইয়ের ভাতিজা। তাকে স্কুলের সবাই ভাইজান ডাকতো। ছোট-বড় সবাই। এটি তার নামে পরিণত হয়েছিল। সে স্কুলের ছাত্রবিষয়ক নেতা ছিল। জনদরদি আবেগী হৃদয় সে ধারণ করত। তাকে সবাই ভালোবাসত। সেই সোনার টুকরো ছেলে মরণব্যাধি ক্যান্সারে মারা যায়।
আমার ক্লাসমেট মেয়ারা ছিল। তবে তাদের নাম এ মুহূর্তে মনে পড়ছে না। আমি ওই প্রজাতির সৃষ্টি থেকে একটু দূরে দূরেই থাকতাম। তবে শ্রীনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েক জন মেয়ে সহপাঠী আমার প্রতি কৌতূহলী ছিল। আমার ক্লাস মেট করুনা, যমুনা, প্রমীলা। নিচের ক্লাসের রচনা, সবিতা, অর্চনা, উপরের ক্লাসের চায়না দিদিমণিরা আমাকে কেমন যেন কার্তিকী কোয়াশার মতো ঈষদুষ্ণ মায়া মরীচিকায় পরিবৃত্ত করত। আমি অনেক পরে স্কুল ত্যাগ করার পরে বিষয়গুলো অনুভব করেছি।
হাসামদিয়া হাই স্কুল আমাদের বাড়ি থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরের স্কুল আর আমদের গ্রামের হাটখোলার হাইস্কুল তিন কিলোমিটার দূরের। তাই নিজ গ্রামের স্কুলে ভর্তি হই নি তা ছাড়া লেখা পড়ার মান হাসামদিয়া স্কুলের চেয়ে উন্নত ছিল না। হাসামদিয়া স্কুলে আমার অন্যান্য ভাই বোন লেখাপড়া করেছে। আসাদ, ফরিদা, চন্দনা, সাইফ ও আবদুল্লাহ লেখাপড়া করেছে এই স্কুলে।
ফরিদা চন্দনাকে একা স্কুলে যেতে দেয়া হতো না। সাইফ আবদুল্লাহ ওদের অনেক ছোট হওয়ায় ওদের স্কুলের সাথী হতে পারেনি। আমার এই দুই বোনের সাথে তাদের সহকারী, সাহায্যকারী হিসেবে ছিল, খবিরুন্নেছা, জবেদা, সফেদা’সহ আরো অনেকে। তারা আমার বোনদের, বইয়ের ব্যাগ, টিফিনের নাশতা বহন করত। মিয়া বাড়ির মেয়েরা যত কিশোরী বা বড় হোক না কেন তাদের সহকারী ছাড়া বাইরে যেতে দেয়া হত না। ওদের সহপাঠীরা স্কুলে একাকী যেত। এতে ওদের সাথে কেউ কখনো বিরূপ আচরণ করেনি।
মাজেদ স্যার আপাদমস্তক ভদ্রলোক ভদ্র ব্যবহারের শিক্ষক ছিলেন। তিনি ক্লাসে স্মিত হাসির মিষ্টি চাঁদ ফুটিয়ে আমাদের ইংলিশ পড়াতেন। অনেক যতœ করে ইংলিশ গ্রামার বোঝাতেন। সন্তোষ গুহ স্যার প্রমিত বাংলা উচ্চারণে চমৎকার করে বাংলা সাহিত্য পড়াতেন।
এক জন উষ্কু খুস্ক চুলের বৃদ্ধ হিন্দু গণিতের শিক্ষক ছিলেন তখন। তিনি শীতের দিনে মাঝে মধ্যে আমাদের নির্বাচিত দু-চারজন ছাত্রকে স্কুলের মাঠে বসিয়ে গণিতের জ্যামিতি অংশ চমৎকার করে পড়াতেন। তিনি জ্যামিতির জটিল প্রমাণ মাঝে মাঝে তার চুলের মধ্যে হাত চালিয়ে কি এক উদাস আচরণের মাধ্যমে সহজ করে বুঝিয়ে দিতেন। আমি তাকে মনে মনে আইস্টাইন ভেবে সুখ পেতাম। সেই শিক্ষকের নাম আজ মনে পড়ছে না।
[চলবে]


আরো সংবাদ



premium cement