২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মানব সভ্যতায় গ্রন্থাগার

-

মহান গ্রন্থাগারকে মানবজাতির ইতিহাস ঐতিহ্য ও জ্ঞান সাধনার সূতিকাগার গণ্য করা হয়। জ্ঞানসম্ভারের সংরক্ষণ ও বিকাশের প্রয়োজনীয়তাকে সামনে রেখে প্রাচীনকাল থেকে গ্রন্থাগারের যাত্রা শুরু হয় এবং কালপরিক্রমায় তার বিকাশ ঘটে। এরই ধারাবাহিকতায় স্বর্ণযুগে ইসলামী সভ্যতায় বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে অনেক সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হয় এবং মানবসমাজে বিপুলভাবে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেয়। সভ্যতার বিকাশ সাধনে এসব গ্রন্থাগার মূল নিয়ামক হিসেবে ভূমিকা পালন করেছিল।
গ্রন্থাগারকে বলা হয় সভ্যতার বাহন। মানবজাতির ইতিহাস ঐতিহ্য ও জ্ঞান সাধনাকে যুগ থেকে যুগান্তরে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে এ গ্রন্থাগার। সভ্যতার ইতিহাসে জ্ঞান সাধনার সূতিকাগার হিসেবে গ্রন্থাগারের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। জ্ঞানসম্ভারের সংরক্ষণ ও চর্চার প্রয়োজনীয়তা থেকে যুগে যুগে গুণী মনীষীরা গ্রন্থাগার বা লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেছেন। ইতিহাসখ্যাত প্রাচীন আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরি থেকে শুরু করে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরিসহ প্রতিটি লাইব্রেরিই সভ্যতার বিকাশ সাধনে অপরিসীম ভূমিকা রেখেছে। স্বর্ণযুগের ইসলামী সভ্যতায় গ্রন্থাগার ছিল জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার এক উর্বর চারণভূমি। মুসলিম শাসকগণ জ্ঞান চর্চা ও বিকাশের জন্য বিভিন্ন শহর নগর ও জনপদে অনেক সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা: ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে মদিনায় হিজরতপূর্বক সেখানে মসজিদে নববীতে শিক্ষালয় প্রতিষ্ঠা করার মধ্য দিয়ে ইসলামী সভ্যতায় বিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। খোলাফায়ে রাশেদিনের আমলে মহানবী সা:-এর নির্দেশিত পন্থায় জ্ঞান চর্চার কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এরপর আস্তে আস্তে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বিস্তার লাভ করে এবং সেই সাথে গ্রন্থাগারের কার্যক্রমও পরিচালিত হয়। উমাইয়া শাসনামলে (৬৬১ থেকে ৭৫০ খ্রি:) দামেস্কে রাজকীয় গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা, আব্বাসীয় শাসনামলে (৭৫০ থেকে ১০৫০ খ্রি:) বাগদাদে বায়তুল হিকমাহসহ আরো অনেক গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তীকালেও অন্যান্য মুসলিম শাসকরা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করে জ্ঞানের সেবায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। সেলজুক শাসক নিজামুলমূলক (১০১৭-১০১৯ খ্রি:)-এর পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিষ্ঠিত নিজামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার সমসাময়িককালের অন্যতম সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিল। দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে কায়রোতে ফাতেমীয় খলিফারা অসংখ্য গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করেন। খলিফা আলআজিজ (৯৭৫-৯৯৬ খ্রি:) এবং তার পূত্র হাকাম কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত গ্রন্থাগার তার উজ্জ্বল নিদর্শন। অপর দিকে ৭১১ খ্রিষ্টাব্দে মুসলিম সেনাপতি মুসা বিন নুসাইর এবং তারিক বিন জিয়াদের নেতৃত্বে স্পেন বিজয়ের পর সেখানেও মুসলিম নৃপতিরা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করেন। এসব গ্রন্থাগার সমৃদ্ধ মুসলিম স্পেনের বাতিঘর হিসেবে কাজ করে। সামগ্রিকভাবে মধ্যযুগের ইসলামী সভ্যতায় গ্রন্থাগারের অপরিসীম দানে সোনালি যুগের ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছিল। সে সময়ে শিক্ষা-দীক্ষায়, জ্ঞান-বিজ্ঞানে মুসলমানরা উন্নত জাতিতে পরিণত হয়েছিল। মধ্যযুগের সেই সমুন্নত ইসলামী সভ্যতার অবদান ইতিহাসের পাতায় বিধৃত হয়েছে। দুঃখজনকভাবে ইসলামী সভ্যতার পতনের যুগে মুসলিম বিশ্বে গড়ে ওঠা এ বিপুলসংখ্যক লাইব্রেরি নজিরবিহীন ধ্বংসযজ্ঞের কবলে পড়ে। শত্রুরা বর্বরোচিতভাবে এবং পাশবিকতার সাথে এসব জ্ঞান ভাণ্ডারকে ধ্বংস করে দেয়। এ ধ্বংসযজ্ঞের ফলে বিশ্বমানবতা বঞ্চিত হয়েছে লাইব্রেরিগুলোতে রক্ষিত হাজার বছরের প্রাচীন জ্ঞানসম্ভার হতে। এই মূল্যবান সম্পদ ধ্বংসের কারণে জ্ঞান-বিজ্ঞানের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা কখনো পূরণ হওয়ার নয়।
জ্ঞানসম্ভারের সংরক্ষণ, চর্চা ও বিকাশের প্রয়োজনীয়তা থেকে প্রাচীনকাল থেকে গ্রন্থাগারের যাত্রা শুরু হয়। মানবজাতির কৃতিত্বপূর্ণ অর্জনগুলোর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হচ্ছে এ গ্রন্থাগার। গ্রন্থাগারের ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে ‘খরনৎধৎু’। আর এ খরনৎধৎু-এর উৎপত্তি হচ্ছে ল্যাটিন শব্দ খরনবৎ থেকে, যার অর্থ ‘পুস্তক’। আবার খরনবৎ শব্দটি এসেছে শব্দ খরনৎরঁস শব্দ থেকে। যার অর্থ পুস্তক রাখার স্থান। এ্যাংলো-ফ্রেঞ্চ শব্দ খরনৎধৎরব অর্থ হলো পুস্তকের সংগ্রহ। জ্ঞানের সৃষ্টি, সংরক্ষণ ও যুগ পরম্পরায় জ্ঞান সম্ভার পৌঁছে দেয়ার উদ্দেশ্যে গ্রন্থাগারের উদ্ভব। প্রকৃতপক্ষে গ্রন্থাগার হচ্ছে এমন একটি সেবা দানকারী গুণী প্রতিষ্ঠান, যেখানে ছাত্র-শিক্ষক, অন্যান্য পাঠক ও গবেষকদের জন্য বই, পত্র-পত্রিকা, সাময়িকী, জার্নাল, থিসিস পেপারসহ অন্যান্য জ্ঞানসামগ্রী কাঠামোগত পদ্ধতিতে সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও সরবরাহ করা হয়। গ্রন্থাগারের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য আলোকিত মানুষ ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে সহযোগিতা করা। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ‘লাইব্রেরী’ প্রবন্ধে গ্রন্থাগারের এক অসাধারণ ছবি এঁকেছেন। তিনি বলেছেন, ‘মহাসমুদ্রের শত বৎসরের কল্লোল কেহ যদি এমন করিয়া বাঁধিয়া রাখিতে পারিত যে, সে ঘুমাইয়া পড়া শিশুদের মতো চুপ করিয় থাকিব, তবে সে নীরব মহাশব্দের সহিত এই লাইব্রেরীর তুলনা হইত। এখানে ভাষা চুপ করিয়া আছে, প্রবাহ স্থির হয়ে আছে মানবাত্মার অমর আলোক কালো অক্ষরের শৃঙ্খলে কাগজের কারাগারে বাঁধা পড়িয়া আছে। ইহারা সহসা যদি বিদ্রোহী হইয়া ওঠে, নিস্তব্ধতা ভাঙিয়া ফেলে অক্ষরের বেড়া দগ্ধ করিয়া একেবারে বাহির হইয়া আসে! হিমালয়ের বরফের মধ্যে যেমন কত কত বন্যা বাঁধা আছে, তেমনি এ লাইব্রেরীর মধ্যে মানব হৃদয়ের বন্যাকে বাঁধিয়া রাখিয়াছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘শব্দের মধ্যে যেমন সমুদ্রের শব্দ শোনা যায়, তেমনি এ লাইব্রেরীর মধ্যে কি হৃদয়ের উত্থান পতনের শব্দ শুনিতেছ। এখানে জীবিত ও মৃত ব্যক্তির হৃদয় পাশাপাশি এক পাড়ায় বাস করিতেছে। বাদ ও প্রতিবাদ এখানে দুই ভাইয়ের মতো একসাথে থাকে; সংশয় ও বিশ্বাস, সন্ধান ও আবিষ্কার এখানে দেহে দেহে লগ্ন হইয়া বাস করে। এখানে দীর্ঘপ্রাণ স্বল্পপ্রাণ পরম ধৈর্য ও শান্তির সহিত জীবন নির্বাহ করিতেছে, কেহ কাহাকেও উপেক্ষা করিতেছে না।’
গ্রন্থাগারের ইতিহাস বেশ পুরনো। আদিকাল থেকেই মানুষ কোনো না কোনোরূপে লিপিবদ্ধ জ্ঞানকে সংরক্ষণ করে আসছে। প্রাচীনকালে মানুষ লেখার উপকরণ হিসেবে যেসব বস্তু ব্যবহার করত তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: মাটিরফলক, পাথর, প্যাপিরাস, কডেক্স, তালপাতা, হাতির দাঁত ইত্যাদি। লিখিত জ্ঞানসম্ভারকে সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা থেকে গ্রন্থাগারের উদ্ভব। ইতিহাসের একেবারে প্রাথমিক পর্বে গ্রন্থাগারগুলো আধুনিক গ্রন্থাগারের চেয়ে একেবারেই ভিন্ন রকম ছিল। প্রথম দিকে মানুষ নিজের ঘরের কোণে, উপাসনালয়ে ও রাজকীয় ভবনে গ্রন্থ সংরক্ষণ করতে শুরু করে। গ্রন্থাগার ইতিহাসবিদরা এগুলোকে ‘প্রোটো লাইব্রেরি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। এগুলো ছিল ধর্মীয়, রাজনৈতিক, ব্যক্তিগত বা বাণিজ্যিক প্রয়োজনে গড়ে তোলা সংগ্রহশালাগুলো সময়ের বিবর্তনে গ্রন্থাগারে পরিণত হয়। গ্রন্থাগার বিকাশের প্রাথমিক পর্যায়ে ধর্মীয় উদ্দেশ্যে বিভিন্ন মন্দিরে গড়ে ওঠা সংগ্রহশালাগুলোই গুরুত্বের বিচারে এগিয়ে ছিল। মিসর, প্যালেস্টাইন, ব্যাবিলন, গ্রিস ও রোমে গ্রন্থাগারের প্রাচীনতম এবং গুরুত্বের দিক থেকে মন্দির গ্রন্থাগার ইতিহাসে একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। গুরুত্বের দিক দিয়ে এরপরই উল্লেখ করতে হয়, সরকারি দলিল-দস্তাবেজের সংগ্রহ বা আর্কাইভসের কথা। গ্রন্থাগারের আদিমতম নিদর্শনগুলোর মধ্যে সরকারি নথির সংগ্রহাগার একটি তাৎপর্যপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। এসব দলিলপত্র লিপিবদ্ধ হতো পোড়ামাটির ফলক, প্যাপিরাস বা পার্চমেন্ট রোল এবং কখনো তাম্র বা ব্রোঞ্জপাত্রে। তবে যে আকারেই সংরক্ষিত হোক না কেন, সরকারি কর্মকাণ্ডের বিশদ বিবরণ লিপিবদ্ধকরণের মাধ্যমে ইতিহাস রচনার একটি অন্যতম সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে এসব সংগ্রহ। সরকারি দলিল ও মন্দির সংগ্রহের মতোই ব্যবসায়িক ও বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের ফলস্বরূপ সৃষ্ট দলিলপত্র ও গ্রন্থাগার উদ্ভবের আদি পর্বের একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন। মিসর, ফিনিশিয়া, ব্যাবিলন এবং পরবর্তীকালে আলেকজান্দ্রিয়া, এথেন্স ও রোমের গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা কেন্দ্রগুলোতে এ ধরনের সংগ্রহ অনেক দেখা যেত। গ্রন্থাগারের ইতিহাসের প্রাথমিক পর্বে পারিবারিক বা ব্যক্তিগত সংগ্রহও একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। লিখিত দলিলপত্রের সবচেয়ে প্রাচীন উদাহরণগুলোর মধ্যে বেশ কিছু দলিল আছে, যেগুলো ব্যক্তিগত বিষয়াদি নিয়ে লেখা। ব্যাবিলনের অধিবাসীদের মধ্যে ভবিষ্যৎ ঘটনাবলির পূর্বাভাস বা পূর্বলক্ষণের বিবরণ পারিবারিক সংগ্রহে যোগ করার প্রবণতা ছিল। ধর্মীয় কাহিনী ও ভাষ্য, পুরাণ ও লোককাহিনী এবং অন্যান্য ঐতিহাসিক ও সাহিত্যিক নথিপত্র পারিবারিক সংগ্রহে যুক্ত হয়ে এগুলোকে আদর্শ ব্যক্তিগত গ্রন্থাগারের পূর্বসূরী হিসেবে কাজ করেছিল এবং গ্রিক ও রোমান সভ্যতায় সমৃদ্ধ ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার একটি অতি স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত হয়। ইতিহাসখ্যাত প্রাচীন গ্রন্থাগারগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো: আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরি, ব্যাবিলন লাইব্রেরি, আসুরবানিপাল লাইব্রেরি, নালন্দা লাইব্রেরি, পারগামাম লাইব্রেরি, কর্ডোবা লাইব্রেরি ইত্যাদি।
প্রাগৈতিহাসিককাল থেকে জ্ঞান সৃষ্টি, বিকাশ ও সংরক্ষণ এবং বিতরণের ক্ষেত্রে গ্রন্থাগার অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করে আসছে। সভ্যতার বিকাশ সাধনে গ্রন্থাগারের অবদান অপরিসীম। প্রথম দিকে মানুষ নিজের ঘরের কোণে, মন্দিরে মসজিদে উপাসনালয়ে এবং রাজকীয় ভবনে গ্রন্থ সংরক্ষণ করার মাধ্যমে গ্রন্থাগারের কার্যক্রম শুরু করলেও পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে সেটা প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি লাভ করে। প্রাচীন সভ্যতায় জ্ঞান চর্চা ও বিতরণের অন্যতম কেন্দ্র ছিল এ গ্রন্থাগার। নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গ্রন্থাগার তার ক্রমবিকাশ অব্যাহত রাখে। বিশেষ করে মসজিদ গ্রন্থাগারের ভূমিকা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। মুসলিম সভ্যতায় সোনালি যুগ সৃষ্টির পেছনে এসব গ্রন্থাগার মূল নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। তৎকালীন সময়ে গ্রন্থাগারগুলো একাধারে গ্রন্থ সংগ্রহশালা, বিদ্যাঙ্গন, গবেষণা কেন্দ্র, সামাজিক প্রতিষ্ঠানসহ বহুমুখী ভূমিকা পালন করে। আব্বাসী শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত বাগদাদের ‘বায়তুল হিকমাহ’ জ্ঞান বিজ্ঞান সৃষ্টি, চর্চা ও বিকাশের ক্ষেত্রে যে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিল তা নজিরবিহীন ও বিস্ময়কর। জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চার নবজাগরণ ও মুসলিম সভ্যতার বিকাশে এ গ্রন্থাগারের অবদান অপরিসীম। আব্বাসী আমলে প্রতিষ্ঠিত বাগদাদের বায়তুল হিকমাহর পাশাপাশি মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য গ্রন্থাগারগুলোর অবদানও অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এসব গ্রন্থাগারের অবদান শুধু মুসলিম সভ্যতায় নয়, বরং আজকের আধুনিক সভ্যতায়ও নানাভাবে বিস্তৃত হয়ে আছে। আধুনিক সভ্যতার নানা আবিষ্কার, সৃষ্টি ও উদ্ভাবনের পেছনে এ গ্রন্থাগারগুলোর মূল্যবান ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু মুসলিম সভ্যতার পতনের সাথে সাথে গ্রন্থাগারগুলোকে যে নির্মমভাবে ধ্বংস করা হয়েছে তা অতীব মর্মন্তুদ, দুঃখজনক ও অনাকাক্সিক্ষত। এ ধ্বংসযজ্ঞের মাধ্যমে শুধু মুসলিম সভ্যতা নয়, পুরো মানবজাতির অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হয়েছে। মানবসমাজ যতদিন পৃথিবীতে বর্তমান থাকবে গ্রন্থাগারের প্রয়োজনও ততদিন সমভাবে অবশিষ্ট থাকবে। আধুনিক বিশ্বের বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে গ্রন্থাগারের প্রয়োজন আরো বহুগুণে বাড়ছে। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম খ্যাতিমান সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরী যেমন বলেছিলেন, ‘আমরা যত বেশি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করব, দেশের তত বেশি উপকার হবে। আমার মনে হয়, এ দেশে লাইব্রেরির সার্থকতা হাসপাতালের চাইতে কিছু কম নয় এবং স্কুল-কলেজের চাইতে একটু বেশি।’ তার এ মন্তব্যটি বর্তমানে আমাদের দেশ ও সমগ্র বিশ্বের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। জাগতিক সমৃদ্ধি ও আত্মিক প্রশান্তির জন্য আমাদের সমাজে সর্বস্তরে গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করা অতীব জরুরি। সুন্দর সমাজ ও আলোকিত মানুষ গড়ার লক্ষ্যে অফিস, আদালত, ব্যাংক, বীমা, হাসপাতাল, বন্দর, মসজিদ, মন্দির, মার্কেট, খেলাঘরসহ প্রত্যেক জনবসতিতে গ্রন্থাগার প্রয়োজন। মসজিদকেন্দ্রিক গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠায় আমাদের মনোযোগী হতে হবে। সমাজের সর্বত্রে অসংখ্য মসজিদ রয়েছে, সেগুলোর সাথে গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হলে সমাজের সর্বস্তরে জ্ঞান চর্চা ও বিতরণের সুযোগ সৃষ্টি হবে। আমাদের বিদ্যমান গ্রন্থাগারগুলোকে কার্যকর করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সৃষ্টি গ্রহণ করাও খুবই জরুরি। আমাদের বিদ্যমান গ্রন্থাগারগুলোকে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে উন্নয়ন করার পাশাপাশি এর কর্মপরিধি বৃদ্ধি করা সময়ের দাবি। গ্রন্থাগারগুলো হবে একাধারে পাঠকেন্দ্র, গ্রন্থ সংগ্রহশালা, অনুবাদকেন্দ্র, গবেষণাকেন্দ্র, বিজ্ঞান গবেষণাগার ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান, যেখানে জ্ঞানভিত্তিক নানা কর্মকাণ্ড সম্পাদিত হবে। গ্রন্থাগারে আগত পাঠক, গবেষক ও অন্যান্য ব্যবহারকারীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করাও একটি মৌলিক দাবি। বিশেষ করে পাঠক-গবেষকরা অধ্যয়নের জন্য গ্রন্থাগারে রাতযাপন করতে চাইলে যেন করতে পারেন, সে ব্যবস্থা থাকাও প্রয়োজন। সেই সাথে গ্রন্থাগারে গবেষণার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা এবং পাঠকদের বৃত্তি, পুরস্কার কার্যকারিতা ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে। মানবতার জাগতিক উন্নতি ও আত্মিক চিকিৎসাকেন্দ্র হিসেবে গ্রন্থাগার চিরভাস্বর হয়ে থাকুক, এটাই প্রত্যাশা। হ


আরো সংবাদ



premium cement
শেখ হাসিনা সব প্রতিবন্ধকতা উপড়ে ফেলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা বন্ধে বিশ্ববাসীকে সোচ্চার সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির মৃত্যু নীলফামারীতে তিন হাজার ১৭০ চাষির মাঝে বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ বিতরণ কারাগারে কয়েদির মৃত্যু উজ্জ্বল হত্যার বিচার দাবিতে সরিষাবাড়ীতে মানববন্ধন পাবনায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ১ আহত ২১ খাবারের সন্ধানে বসতবাড়িতে হরিণ, মহামায়ায় অবমুক্ত সিঙ্গাপুর প্রবাসী ফিরোজ মাহমুদের লাশ দেশে ফিরেছে ফরিদপুরে ট্রেনে কাটা পড়ে মানসিক ভারসাম্যহীন যুবকের মৃত্যু গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সব ধর্মের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে: ড. সুকোমল বড়ুয়া

সকল