১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

একজন লেখকের দায়বদ্ধতা

-

আসলে একজন লেখকের কাজ সত্য নির্মাণ। এখানে কোনো ধরনের আপস কিংবা সমঝোতা চলে না। কারণ, আমরা জানি, সত্যই সুন্দর। লেখককে সত্য প্রকাশের সাহস অর্জন করতে হয়। সাহিত্য স্রেফ মনোরঞ্জনের বিষয় হতে পারে না। একটা দায়বদ্ধতা থেকেই লেখককে কলম হাতে নিতে হয়। লেখকরাই যুগে যুগে তাদের লেখনীর মাধ্যমে সভ্যতার ঘানি টেনে এগিয়ে নিয়ে যায়। সমাজ, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ইতিহাস, রাজনৈতিক সামাজিক ধ্যান-ধারণার যাবতীয় কিছু লেখনীর মাধ্যমে তুলে ধরে মানুষকে জাগিয়ে তোলেন, সচেতন করেন, নতুন বোধ সৃষ্টি করেন লেখক। লেখক যদি এ কাজগুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে না পারেন তাহলে তাঁর লেখনী ব্যর্থ হয়ে যায় ,সৃষ্ট সাহিত্যকর্ম সমাজ-সভ্যতা ও মানুষের কোনো কাজে আসে না। স্রেফ অর্থহীন হয়ে পড়ে।
লেখক তো সমাজ বিছিন্ন কোনো মানুষ নন। জনাকীর্ণ মনুষ্য সমাজেই তাঁর বসবাস। সমাজের অন্য দশজন মানুষের মতো লেখকও একই সূর্যালোকে সঞ্জীবিত, একই চন্দ্রালোকে আলোকিত, একই মাটি প্রাণ সঞ্চার করছে লেখকের দেহে। প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে এক ধরনের অনুভূতি নাড়া দেয়, আন্দোলিত করে। মানুষের আচার-আচরণ, সৌজন্যতা-শিষ্টতা, বোধ-বুদ্ধি ও বৈচিত্র অনেকটা পরিবেশ ও সময় চৈতন্যের ওপর নির্ভরশীল হলেও সব কিছুই অনুভূতি দ্বারা পরিচালিত হয়। এ অনুভূতিকে কেন্দ্র করেই মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা আবর্তিত হয়। এ অনুভূতি শক্তি যার যত প্রখর, তিনি তত সংবেদনশীল। লেখক সমাজের জীবন প্রবাহের সব উপকরণের মধ্যে সত্য, সুন্দর, সততা, নির্মলতা, পরিচ্ছন্নতাকে আকাক্সক্ষা করেন তাঁর অস্তিত্ব দিয়ে। মানুষের কল্যাণ চিন্তায় লেখক থাকেন সবচেয়ে অগ্রগামী। জীবনের গভীর রহস্য ও বাস্তবতা থেকে নতুন দর্শন আবিষ্কারে লেখক সবসময় অবিরাম সচেষ্ট থাকেন। সৌন্দর্যের যথার্থ উপলব্ধি থেকেই লেখকের চেতনাবোধ জাগ্রত হয়। একজন কথাশিল্পী জীবনকে তাঁর সমগ্রতা দিয়ে মানুষ ও সমাজের মধ্যে উপলব্ধি করেন। কথাশিল্পী একজন চিত্রকরও বটে, তাঁর বিশাল ক্যানভাসে ফুটে ওঠে মানুষের ও সমাজের বিচিত্র ছবি। তাঁর বলিষ্ঠ জীবনদর্শন ও জীবন জিজ্ঞাসাই কথাসাহিত্যের ভিত্তিভূমি। একজন কবি, কথাসাহিত্যিক ,প্রাবন্ধিক, নাট্যকারÑ তিনি যেটাই হোন না কেন, তিনি সমাজের এক একটি চোখ। যে চোখের দৃষ্টি শুধু অন্তর্ভেদী নয়, অনেক ক্ষেত্রে অন্তরগ্রাসীও।
একজন লেখকের মনকে সব সময় সুন্দরের শাশ্বত রূপ খুঁজতে ব্যাকুল থাকতে হয়। মানুষ সমাজ, সভ্যতা, দেশ ও জাতির প্রতি তাঁর স্বতঃসিদ্ধ অঙ্গীকার ও দায়বদ্ধতা থাকা প্রয়োজন। এগুলোকে অগ্রাহ্য করে, অবহেলা করে কিংবা এড়িয়ে সাহিত্যকর্ম সৃষ্টি সম্ভব নয়। একজন লেখককে শুধু সুন্দরের সৃষ্টিতে পারঙ্গমতা দেখালেই তাকে সফল বলা যায় না। তাঁকে জীবন ধারণের, জীবন সংরক্ষণের জন্য সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে হয় লেখনীর মাধ্যমে। লেখকের নিরুত্তাপ, নির্লিপ্ত মানসিকতার কারণে সমাজের অশুভ, অসৎ, দুর্বৃত্ত, দানবীয় শক্তিগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। ফলে সমাজ সভ্যতা, সুন্দরের চর্চা বিপন্ন হতে পারে।
আমি নিজে একজন খুবই সাধারণ নগণ্য লেখক হিসেবে চেষ্টা করি সবসময় আমার চারপাশে দেখা পৃথিবীটাকে লেখার মাধ্যমে তুলে ধরতে। সমাজের বাস্তবতার নিরিখে অসঙ্গতি, অন্যায়, অনিয়ম, বিচ্যুত আচরণগুলোকে আমার লেখায় যথাসম্ভব তুলে ধরতে চাই। আমার লেখার মাধ্যমে যদি সমাজের একজন মানুষও সচেতন হোন, অনিয়ম অন্যায়গুলোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হন কিংবা নিজের দোষ ত্রুটিগুলো সংশোধনে তৎপর হন তাহলে আমার লেখা সার্থক হয়েছে বলে মনে করি। আমার লেখা গল্প- উপন্যাসগুলোতে আমি সব সময়েই বাস্তবজীবনের চিত্রটাই তুলে ধরতে চেষ্টা করে যাই সচেতনভাবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
মোরেলগঞ্জে সৎভাইকে কুপিয়ে হত্যা দুবাই পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণ কি কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরানো? এ দেশের ঘরে ঘরে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে : ডাঃ শফিকুর রহমান পিছিয়েছে ডি মারিয়ার বাংলাদেশে আসার সময় ইরানে হামলা : ইস্ফাহান কেন টার্গেট? মাত্র ২ বলে শেষ পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড প্রথম টি-টোয়েন্টি জেলে কেজরিওয়ালকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ দলের ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা তোকে যদি এরপর হলে দেখি তাহলে খবর আছে, হুমকি ছাত্রলীগ নেতার বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা করা হয়নি : প্রধানমন্ত্রী দাওয়াতী ময়দানে সকল নেতাদের ভূমিকা রাখতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান

সকল