২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বুকার জয়ী ডগলাস স্টুয়ার্ট

-

করোনার কারণে বুকার পুরস্কার-২০২০ এর সূচিতে পরিবর্তনের ফলে এ বছর পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণার দিন পিছিয়ে যায়। অবশেষে সেই ঘোষণা এলো আর পুরস্কার জিতে নিয়েছেন স্কটিশ লেখক ডগলাস স্টুয়ার্ট। পাঁচজন ফাইনালিস্টকে পেছনে ফেলে ডেব্যু উপন্যাসের জন্য তিনি এ পুরস্কার লাভ করেন, যা অনেককেই অবাক করে দেয়। অবাক অবশ্য তিনি নিজেও কম হননি। ৪৪ বছর বয়স্ক এই আমেরিকান-স্কটিশ বলেছেন, ‘এই পুরস্কার জয়ের খবরে আমি খুবই অবাক হয়েছি। কেননা, এটা প্রকাশের পর করোনা প্যানডেমিক নেমে আশে বিশ^ব্যাপী, ফলে এর কাটতিতে বাধা পড়ে। আর সেই বই কি না জিতে নিলো বুকার পুরস্কার।’ বুকার পুরস্কারের বিচারক প্যানেলের চেয়ারপারসন মার্গারেট বাসবি বলেছেন, ‘সর্বসম্মতভাবে বিচারকমণ্ডলী এক ঘণ্টার আলোচনা শেষে স্টুয়ার্টের উপন্যাস ‘শাগি বেইন’কে এই পুরস্কারের জন্য বেছে নেন।’ তার কথা থেকে বুঝা যায়, ডগলাসের এই উপন্যাস নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণের পরই তারা সিদ্ধান্তে এসেছেন। বইটি সম্পর্কে মার্গারেট আরো বলেন, এটি একটি চ্যালেঞ্জিং ও ইন্টিমেট বই, যে এটি পড়বে সে আপ্লুত না হয়ে পারবে না। যে পাঁচজন ফাইনালিস্টকে পেছনে ফেলে ডগলাস এই পুরস্কার জিতে নিয়েছেন তারা হলেনÑ সিটসি ডাংগারেম্বগা, আভনি দোশি, মাজা মেনজিসটে, ব্রানডন টেইলর ও ডায়ানে কুক।

২.
ডগলাস স্টুয়ার্টের জন্ম ১৯৭৬ সালে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে। সেখানেই বেড়ে উঠেছেন। স্কটিশ কলেজ থেকে টেক্সটাইল বিষয়ে ডিগ্রি ও পরে লন্ডনের বয়েল কলেজ থেকে এমএ করেন। তার ব্রিটিশ-আমেরিকান নাগরিকত্ব রয়েছে। তিনি এখন আমেরিকার নিউ ইয়র্কে বসবাসরত। তিনি ফ্যাশন ডিজাইনিংকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। আর সেটা নিউ ইয়র্কে।
কিন্তু পরে লেখালেখিতে মনোনিবেশ করেন। এক দশক ধরে তিনি লেখক ক্যারিয়ার নিয়েই আছেন। তিনি বুকার পুরস্কার জয়ী দ্বিতীয় স্কটিশ। তার আগে ১৯৯৪ সালে আরেক স্কটিশ লেখক জেমস কেলম্যান এ পুরস্কার জিতেছিলেন। নিজের উপন্যাস সম্পর্কে ডগলাস বলেন, এটি একটি ব্যতিক্রমী প্রেমের উপন্যাস। এতে আন্তরিকতা ও ভালোবাসা আছে, এতে আনন্দের খোরাকও পাবেন পাঠক।
তিনি বলেন, বুকার লংলিস্টে স্থান পাওয়াই ছিল তার জীবনে বড় ঘটনাÑ কেননা, এটা যখন প্রকাশিত হয় তখন করোনা প্যানডেমিক নেমে আসেÑ বই বিক্রিতে বাধা পড়ে। শেষ পর্যন্ত বুকার জয়ে তিনি খুশি, তার আশা এর ফলে তিনি লেখালেখির জগতে পরিচিতি পাবেন। এটা তার উপকারে আসবে। তার স্ত্রী মার্কিনি, এই সূত্রে তিনি নিউ ইয়র্কবাসী। তবে তার ভাষায়Ñ ‘আমার মন পড়ে থাকে স্কটল্যান্ডে, কেননাÑ আমার পরিবারের বাকি সবাই এখনো সেখানে আছেন।’
তিনি বলেন, তিনি যে বাড়িতে বড় হয়েছেন সেখানে কোনো বই ছিল না। এখন সেই তিনিই বিরাট পুরস্কার পেয়ে বসে আছেন। বিষয়টা তার ভাবতে বেশ ভালো লাগে।
৩. শাগি বেইন ডগলাস স্টুয়ার্টের প্রথম উপন্যাস এ কথা আগেই বলেছি। বিষয় ও ভাষা বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি হয়ে উঠেছে অভিনব। এটি একটি বালকের কাহিনী, যে বালক তার মাকে এলকোহলিজম ও দারিদ্র্য থেকে উদ্ধার পেতে সহায়তা করেছিল। ডগলাসের জীবনেও মায়ের একটা প্রধান ভূমিকা আছে। তাই তিনি এই পুরস্কার তার মাকে উৎসর্গ করেছেন, যিনি স্টুয়ার্টে ১৬ বছর বষসের সময় এলকোহলিজমের কারণে মারা যান। শাগি বেইন উপন্যাসের মধ্যেও একজন মায়ের কথা আছে, এলকোহলিজমের ও দারিদ্র্যের কথা আছে। নিজের জীবনের ছায়াপাত এখানে ঘটে থাকতে পারে। এ কারণেই আধুনিক উপন্যাস তথা কথাসাহিত্যকে সমালোচকরা কোনো না কোনোভাবে আত্মজৈবনিক বলে উল্লেøখ করে থাকেন।
উপন্যাসের মায়ের চরিত্রটির নাম অ্যাগনেস বেইন। ডিভোর্স হয়ে যাওয়ার পর যিনি হতাশার সাগরে ডুবে গিয়ে আ্যালকোহলিক জীবনের অঙ্গ করে নিয়েছিলেন। মার্গারেট বাসবির মতে, বইটি আবেগে পূর্ণ, হাস্যরসাত্মক এবং পাঠককে কাঁদাতেও জানে। তিনি আরো বলেন, ‘কঠিন সাবজেক্ট ম্যাটার নিয়ে এই বই, চরিত্রগুলোও ব্যতিক্রমীÑ স্বাভাবিক কোনো চরিত্র নয়। আর লেখক নিজেও এটাকে ব্যতিক্রমী প্রেমের উপন্যাস বলে চিহ্নিত করেছেন। সবকিছু মিলিয়ে এসব নতুনত্ব অভিনবত্বই ডগলাসকে এই মর্যাদাবান পুরস্কার পেতে সাহায্য করেছে সেটা তো বলাই বাহুল্য।
৪. ডগলাসের স্বদেশপ্রীতি সবাইকে উদ্বুদ্ধ করার মতো। তিনি তার দ্বিতীয় উপন্যাসেও তার স্বাক্ষর রেখেছেন। এই উপন্যাসের নাম ‘লোচ অ্যাওয়ে’। এটার কাহিনীও গড়ে উঠেছে গ্লাসকোকে ঘিরে। ডগলাসের মন পড়ে থাকে স্কটল্যান্ডে এই কথা থেকেও স্বদেশের প্রতি তার আকুতি প্রকাশ পেয়েছে। তিনি বুকার পুরস্কার জেতার আগেই তার প্রথম উপন্যাসের জন্য পাঠকের দৃষ্টি কেড়েছিলেন। সেটা বোঝা যায় এটি বুকারের আগে ২০২০-এর ন্যাশনাল বুক অ্যাওয়ার্ডের জন্য শর্টলিস্টভুক্ত হয়েছিল এই ঘটনা থেকে। ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ আর ‘দ্য অবজার্ভার’-এর সমালোচকরা এটিকে গুরুত্বপূর্ণ রচনা বলে উল্লেখ করেন। এর ফলে বইটির প্রতি পাঠকের দৃষ্টি পড়ে। তার দ্বিতীয় উপন্যাসের ভাগে কী ঘটে সেটা এখন দেখার পালা। হ


আরো সংবাদ



premium cement