২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

যে ক থা হ য় নি ব লা

-

ছোটগল্প জীবনের প্রতিচ্ছবি : আফরোজা পারভীন
সৃজনশীল রচনা শিল্পসম্মত হওয়ার পূর্বশর্ত কী?
সৃজনশীল শুধু নয়, সব ধরনের রচনাই শিল্পসম্মত হওয়া উচিত। আর এর পূর্বশর্ত লেখার আগে লেখকের নিজেকে গড়ে তোলা। প্রচুর পঠন-পাঠন , মানুষ দেখা, মানুষের সাথে মেশা, জীবনের খুঁটিনাটি দেখার দৃষ্টি তীক্ষè করা, এসবই জরুরি। নিজেকে তৈরি করে নিবেদিত হয়ে লিখতে পারলে লেখা শিল্পসম্মত হয় বলে আমার বিশ^াস ।
লেখক না হলে কী হুুুুতেন?
লেখক আর অভিনেত্রী একসাথে হতে চেয়েছিলাম। বিটিভিতে অডিশন দিয়ে মনোনীতও হলাম। কিছু নাটক করলাম। গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলনে যুক্ত ছিলাম। আবৃত্তি আর নাচও করতাম। এর যে কোনোটাই হতে পারতাম। তবে লেখাটা বাদ দিয়ে বোধ হয় কিছুই হতে পারতাম না। তাই লেখাকেই বেছে নিয়েছি।
জীবনের ব্যর্থতার কথা বলুন?
ব্যর্থতা তেমন নেই। সন্তানরা আক্ষরিক অর্থে নয়, প্রকৃতই মানুষ হয়েছে। জীবনে খুব করে চেয়ে কিছু পাইনি এমন কখনোই হয়নি। প্রতিটি লেখকেরই যেমন মনে হয় লেখাটা আরো ভালো হতো তেমন আমারও হয়। এটা কিন্তু ব্যর্থতা নয়, অতৃপ্তি। জীবনে কোনো লেখা লিখতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছি এমনটা মনে পড়ে না।
কেন লিখতে এলেন?
আমার পরিবারের সবাই লিখত, পড়ত, আবৃত্তি করত। আমার মা-আব্বাও লিখতেন। বাড়িতে লাইব্রেরি ছিল, প্রচুর পত্র-পত্রিকা আসত। বাড়ির সবাইকে লিখতে, পড়তে দেখে পড়া আর লেখা শুরু করি শিশুবেলা থেকে। ক্লাস সিক্সে পড়ার সময় ‘দর্পণে আপন মুখ’ নামে ফোল্ডার পত্রিকা প্রকাশ। সেই থেকে চলছে।
নিজের সম্পর্কে যে অভিযোগ মিষ্টি মনে হয়?
প্রশ্নটা ভালো লাগল। আমি বন্ধুপ্রিয় মানুষ। বন্ধুদের সাথে খুনসুটি করতে খুব ভালোবাসি। মাঝে মাঝেই তাদের বলা কথা তাদের ফিরিয়ে দেই। আজ যা বলে কাল তারা তা মনে রাখে না। পুরনো আগের কথা মনে করিয়ে দেই। ওরা বোকা হয়ে যায়। তখন বন্ধুদের কেউ কেউ বলে, তুই একটা ফাজিল, কুচুটে, দুষ্ট। এসব খুব এনজয় করি। আর লেখার ক্ষেত্রে যখন পাঠক বলে, ‘লেখাটা আর একটু বড় করতে পারলেন না? গোগ্রাসে গিলছিলাম!’ সেই মিষ্টি অভিযোগ খুব ভালো লাগে।
এখনো অপূর্ণ যে স্বপ্ন
অনেক ভালো লেখা আজো লিখতে পারিনি। অনেক অনেক লেখা বাকি রয়ে গেছে। অথচ সময় কমে আসছে। স্বপ্ন দেখি, সমতার পৃথিবীর। স্বপ্ন দেখি, সুস্থ প্রতিযোগতাপূর্ণ কোটারিবিহীন সংস্কৃতিচর্চার।
যে প্রতিবন্ধকতা জয় করে লেখক হয়েছেন?
সাহিত্যচর্চায় আমার কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল না। অবাধ সাংস্কৃতিক পরিবেশ ছিল পিতৃগৃহ আর শ^শুরালয়ে। শাশুড়ি পুঁথি পড়তেন, শ^শুর হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান গাইতেন, কবিতা লিখতেন। স্বামী লেখক, বিজ্ঞানী ও নিবিড় পাঠক। তারা আমাকে এগিয়ে দিয়েছেন। সবার কাছে আমার অশেষ ঋণ ও কৃতজ্ঞতা।
ছোটগল্পে জীবনকে যেভাবে দেখেন?
ছোটগল্প জীবনের প্রতিচ্ছবি। হতে পারে সে জীবনের রূপ আলাদা। এক একজনের এক একরকম। কিন্তু সব লেখার মতোই ভরকেন্দ্রে থাকে মানুষ, মানুষ মানেই জীবন। জীবনঘনিষ্ঠ শব্দটা সৃষ্টি এভাবেই। যে গল্পে জীবনের ছায়াপাত নেই সে গল্প অলীক।
কোন বই পড়ার ইচ্ছে এখনো তাড়িত করে?
তারাশঙ্করের কবি, রিজিয়া রহমানের রক্তের অক্ষর, আল মাহমুদের সোনালী কাবিন, মাহমুদুল হকের যেখানে খঞ্জনা পাখী। আরো অনেক বই।
পাঠকের ভালোবাসা কেমন পান?
ওটা নিয়েই বেঁচে আছি, লিখছি। নইলে কবে লেখক জীবনের মৃত্যু হতো। পাঠকই আমাকে তুলে ধরে। ওরা যখন মাঝে মাঝে মেসেঞ্জারে আমার ২০ বছর আগে লেখা গল্পের কাহিনী বলে, আমার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়াতে থাকে। কিংবা শিলং বা বীরভূম থেকে যখন কোনো পাঠক বলে, এবার বইমেলায় গিয়ে আপনার বই কিনে এনেছি, যখন কেউ বলে আপনাকে চেনার আগে আপনার সাহিত্য চিনেছি, আমি বাকরুদ্ধ হই!
এখনো উজ্জীবিত রাখে যে বাণী?
‘লেখকের কাজ লেখা, লেখকের কাজ পড়া। লেখকের কাজ লেখা এবং পড়া। নিভৃতে নিরন্তর লিখে যাওয়া। প্রজেকশন নয়, দৌড়ঝাঁপ নয়।’ এটা বাণী কি না জানি না। এ বিশ^াসই আমার এগিয়ে চলার শক্তি।

ইচ্ছে করে কবি হওয়া যায় না : হাসান আলীম
যে প্রতিবন্ধকতা জয় করে লেখক হলেন?
লেখক হতে আমার কোনো বাধা ছিল না। এখনো নেই। সাহিত্যচর্চা করতে অনবরত যে সময় পাওয়া দরকার সে সময় কখনো পাইনি। চাকরির সাথে সাথে লেখকসত্তা টিকিয়ে রাখতে আমাকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। শুধু লিখে জীবন চালানো কঠিন!
লেখক না হলে কী হতেন?
আমি লিখছি আর ওষুধ শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ওষুধ তৈরি এবং বিশ্লেষণের কাজ করছি। শুরুতে অবশ্য রসায়নের অধ্যাপনা করেছি কলেজে। লেখক না হলে হয়তো শুধু এ চাকরি করতাম।
কবিতায় নিজেকে কেমন অনুভব করেন?
ইচ্ছে করে কবি হওয়া যায় না। যে কবি বড় তা তার পক্ষ থেকেই প্রথমে প্রমাণ করতে হয়। শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করতে হয়। কবিতায় আমি নিজেকে সফল বলে মনে করি। আমি নিজেই নিজেকে একজন আলাদা ঘরানার কবি বলে মনে করি। তবে আমি জানি না কবিতা লিখে পূর্ণ তৃপ্ত কখন হবো কি না।
জীবনের ব্যর্থতার কথা বলুন!
সংসার জীবনের সুখপাখিটা ধরতে পারিনি। নারীুুুুপ্রেমে আমি ব্যর্থ।
কেন লিখতে এলেন?
বালক বয়স থেকেই কবিতা ভালো লাগত। শিশুকালে নানার কণ্ঠে আরবি, ফারসি কবিতা, আব্বার মুখে বাংলা ও ইংরেজি কবিতা আবৃত্তি শুনে আনন্দ পেতাম। তখন থেকে চেষ্টা। ক্লাস ফাইভে কবিতা লিখতে শুরু করি। আমার কাছে লেখা মানেই হলো কবিতা। পরিবারে আব্বা, মেজো আপা সাহিত্যামোদি ছিলেন। সেই প্রেরণাই শুরু।
নিজের সম্পর্কে যে অভিযোগ মিষ্টি মনে হয়?
কবি তো দুনিয়াদারি কিছুই করতে পারেনি, আমার সম্পর্কে এই অভিযোগ আমার কাছে খুব মিষ্টি লাগে।
এখনো অপূর্ণ যে স্বপ্ন?
রাসূল সা:কে নিয়ে গল্প ও সনেট কাব্য লিখেছি, কিন্তু এখনো মহাকাব্য লিখতে পারিনি।
পাঠকের ভালোবাসা কেমন পান?
আমি বেশ ভাগ্যবান। পাঠক এবং সাহিত্যামোদি সুধীজন আমাকে খুব ভালোবাসেন। তাদের ভালোবাসার কারণে নজরুল একাডেমি আমার একটি গবেষণাগ্রন্থ ‘নজরুলের বিদ্রোহী কবিতার নন্দনতত্ত্ব’ প্রকাশ করেছে। এটি বেশ আনন্দের কথা।
কোন বই পড়ার ইচ্ছা বারবার তাড়িত করে?
মাওলানা রুমির মসনবি।
কবিতা সম্পর্কে আপনার নিজস্ব সংজ্ঞা কী?
নন্দিত শব্দের নন্দিত বিন্যাস যা মানবমনে শিল্পময়, সংহত ছন্দময় এবং তালযুক্ত ভাবোচ্ছ্বাসের মাধ্যমে রসাস্বাদনের আনন্দ দান করে।
এখনো উজ্জীবিত রাখে যে বাণী?
‘যে দুটো মনোরম আভরণে কোনো বিশ্বাসীকে আল্লøাহ সাজিয়ে থাকেন, কবিতা তার একটি’Ñমুহাম্মদ সা:।

সাক্ষাৎকার গ্রহণ : মেজবাহ মুকুল


আরো সংবাদ



premium cement