২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কে পাচ্ছেন বুকার পুরস্কার

-

নোবেল পুরস্কারের সময় ঘনিয়ে এসেছে। এ দিকে ঘোষণা করা হয়েছে এ বছরের বুকার প্রাইজের শর্টলিস্ট। তাই জল্পনা-কল্পনা, কে পাচ্ছেন এবারের প্রাইজ। এবারের বিচারক প্যানেলের চেয়ারপারসন মার্গারেট বাসবি গত ১৫ সেপ্টেম্বর ছয়টি বইয়ের শর্টলিস্ট প্রকাশ করেন। করোনার কারণে এ বছর সূচি পাল্টেছে। আগে নোবেলের পরই ঘোষিত হতো এ পুরস্কার জয়ীর নাম। মার্গারেট বলেন, ‘১৬২টি বই থেকে লংলিস্ট ও পরে শর্টলিস্ট হয়েছে। বেশ কিছুু বই খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। উপন্যাসগুলো আমাদের চিন্তার খোরাক জোগায়। ছয়টি বই বেছে নেয়া ছিল তাই কঠিন।’
দেখা যাচ্ছে এবারের তালিকায়ও আমেরিকান লেখকদের প্রাধ্যান্য। তিনটি বই-ই তাদের। আছেন জিম্বাবুয়ে, ইথিওপিয়া ও স্কটল্যান্ডের একজন করে। নারীদের প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে এবারো, চারজন। এবারে বইগুলোর কিছু বিবরণ।
আমেরিকার ডায়ান কুক ব্রুকলিনের বাসিন্দা। উপন্যাস ও ছোটগল্প লেখিকা, বড় কোনো পুরস্কার এখনো পাননি। তবে তার লেখায় আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে। শর্টলিস্টে আছে তার উপন্যাস ‘দ্য নিউ ওয়াইল্ডারনেস’। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত পৃথিবীতে মেয়েকে বাঁচানোর জন্য এক সাহসী মায়ের সংগ্রাম নিয়ে লেখা এই বই। গল্পটিতে প্রকৃতি এবং মানুষের জীবনকে ভিন্ন দৃষ্টিতে গভীরভাবে দেখানো হয়েছে।
আভনি দোশির জন্ম আমেরিকার নিউজার্সিতে ১৯৮২ সালে। বর্তমানে দুবাইয়ে বসবাসরত। ২০১৩ সালে টিবর জোনস সাউথ এশিয়া প্রাইজ জিতেছেন। তার শিকড় ভারতে, সেখান থেকেই প্রকাশিত তার প্রথম উপন্যাস ‘গার্ল ইন হোয়াইট কটন’। তার ‘বার্ন্ট সুগার’ শর্টলিস্টভুক্ত বই। এই উপন্যাসে দেখা যায় তারা নামের এক মেয়ে নিজের প্রেমহীন সংসার ছেড়ে তার ছোট মেয়েকে নিয়ে আশ্রমে যোগ দেয়। এটি একই সাথে একটি ভালোবাসা এবং প্রতারণার গল্প। মা ও মেয়ের মধ্যকার একটি স্নেহ ও মমতার আদান-প্রদানের ভালোবাসার গল্পে গড়ে ওঠা একটি কাহিনী।
ব্র্যান্ডন টেইলর যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিনÑ ম্যাডিসন ও আইওয়া উভয় ভার্সিটির গ্র্যাজুয়েট। বয়স বেশি নয়, কিছু ফেলোশিপ পেয়েছেন। শর্টলিস্টভুক্ত তার ‘রিয়েল লাইফ’ ভিন্ন মাত্রার কাহিনী। কাহিনীর প্রধান চরিত্র ওয়ালেস পুরো গ্রীষ্মটাই ল্যাবে কাজ করে কাটিয়ে দিয়েছে। একটি ভার্সিটি থেকে সে বায়োকেমিস্ট্রির ওপর পড়াশোনা করছে। তার বাড়ি ভার্সিটি থেকে অনেক দূরে। এর মধ্যে তার বাবা মারা যায় কিন্তু সে তার শেষকৃত্যে যায়নি। আলবেয়ার কামুর আউটসাইডারের মতো অনেকটা। একদিন হঠাৎ করে তার জীবনের সব কিছুই ওলটপালট হয়ে যায়। ‘রিয়েল লাইফ’ উপন্যাসে মানুষের আকাক্সক্ষা এবং দুঃখকে জয় করার কথা বলা হয়েছে।
সিসি ডাঙ্গারেম্পা শর্টলিস্টে থাকা ‘দিস মউর্নঅ্যাবল বডি’ ছাড়াও আরো দু’টি বইয়ের লেখিকা। জিম্বাবুয়ের রাজধানী হারারেতে থাকেন। তিনি আগে কমনওয়েলথ রাইটার্স প্রাইজ পেয়েছেন। ‘দিস মউর্নঅ্যাবল বডি’ উপন্যাসে দেখানো হয়, তামুদজাই নামের এক মেয়ে হারারের একটি হোস্টেলে থাকত। চাকরি ছাড়ার পর সে তার জীবন নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে, যতবারই তার জীবনে নতুন কিছু করতে চায়, ততবারই সে কোনো না কোনোভাবে অপমানিত হয়। এই উপন্যাসে আশাহত মানুষের বেঁচে থাকার কাহিনী বলা হয়েছে।
মাজা মেঙ্গিস্তের জন্ম ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবায়। তিনি কলেজের অধ্যাপিকা ও ফুলব্রাইট স্কলার। বর্তমানে নিউ ইয়র্কে বসবাসরত। শর্টলিস্টে থাকা ‘দ্য শ্যাডো কিং’ ছাড়াও আর একটি বই আছে তার। তার একটি বই গার্ডিয়ান পত্রিকার করা ১০ সেরা আফ্রিকান বইয়ের তালিকায় আছে। ‘দ্য শ্যাডো কিং’ উপন্যাসে ইথিওপিয়ার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, আছে রাজা হাইলে সেলাসির কাহিনী। সদ্য অনাথ হওয়া হিরুট, রাজার সেনা অফিসার কিডানের গৃহে গৃহপরিচারিকা হিসেবে নতুন জীবন শুরু করেছিল। এ সময় ইতালীয়ান সেনারা ইথিওপিয়া আক্রমণ করলে বহু মানুষ নিহত হয়। হিরুট মানুষদের সেবা থেকে নিহতদের কবর দেয়া পর্যন্ত সবই করেছে। সে নারীদের কাছে আদর্শ হয়ে দাঁড়াল। এটাই উপন্যাসের কাহিনী।
ডগলাস স্টুয়ার্টের জন্ম স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে। লন্ডনে পড়াশোনা করে নিউ ইয়র্কে পাড়ি জমান। ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু। শর্টলিস্টে থাকা ‘শোগি বেইন’ তার প্রথম বই। এতে আছে স্কটল্যান্ডের কঠিন সময়ের কথা। কাহিনীর মূল চরিত্র এগনেস বেইনও চাচ্ছিল এই কঠিন সময় যেন চলে যায়। কিন্তু তার স্বামী তিন সন্তান রেখে তাকে ছেড়ে চলে যায়। এগনেস এবং তার তিন সন্তান থাচারিজমের কারণে ধ্বংস হওয়া একটি মাইনিং শহরে আটকে পড়ে যায়। এগনেস মনের দুঃখে অ্যালকোহলের আসক্ত হয়ে পড়লে সন্তানরা তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করে। একপর্যায়ে তার ছেলে শোগি ছাড়া সবাই মাকে ফেলে চলে যায়। কিন্তু শোগির নিজেরও অনেক সমস্যা। এই উপন্যাসে দরিদ্রতার করাল গ্রাসে ভেঙে পড়া বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানদের ভালোবাসার কথা বর্ণিত হয়েছে।
আমেরিকানদের কয়েকবার বুকার পুরস্কার দেয়ায় সমালোচনা হয়েছে, আবারো কি তারা পাবে, না ছোট দেশগুলোর কেউ উঠে আসবে বিজয়ী হিসেবে? ৫০ হাজার পাউন্ড প্রাইজমানির এ পুরস্কারের মর্যাদা তো কম নয়। নোবেলের পরই এর স্থান, এ কারণেই চলছে জল্পনা-কল্পনা। তবে তা জানার জন্য আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। আগামী ১৭ নভেম্বর বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement