২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

‘রুমীর সংলাপ’ : জালালুদ্দীন রুমীর অসাধারণ সৃষ্টি

-

“তোমরা যেই হও, এসো, এসো
পথচারী, প্রার্থনাকারী, চলে যেতে আগ্রহী
যেই হও, তোমরা এসো।
আমাদের আশ্রয় হতাশার সরাইখানা নয়
এসো, যদিও তুমি শতবার ভঙ্গ করেছো
নিজের প্রতিজ্ঞা
তবুও এসো, আবার চলে এসো।”
‘রুমীর সংলাপ’ গ্রন্থটি সম্পাদনা ও পুনঃলিখনের কাজ করেছেন প্রফেসর এ জে আরবেরী এবং এই বইটি ইংরেজিতে প্রকাশিত হয় ১৯৬১ সালে। আর এই গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ করেছেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। প্রকাশ করেছে ঢাকা থেকে ‘লেখালেখি’ ২০১০ সালে। রুমীর ছবি দিয়ে চমৎকার প্রচ্ছদ। ২৪৬ পৃষ্ঠায় লিখিত ‘রুমীর সংলাপ’ গ্রন্থটি সুফি সমাজে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
আলোচ্য গ্রন্থে রুমী বলেন, “এই সমগ্র পৃথিবী একটি বাড়ি ছাড়া আর কিছু নয়। আমরা যদি এক কক্ষ থেকে আরেক কক্ষে যাই অথবা এক কোণা থেকে আরেক কোণায় যাই, তাহলে কি আমরা একই বাড়িতে বাস করি না? কিন্তু দরবেশেরা আল্লাহর রতœ ধারণ করেছেন, তারা এই বাড়ি ছেড়ে আরও দূরে চলে গেছেন। মহানবী মুহাম্মদ সা: বলেন, ইসলামের সূচনা আগন্তুক হিসাবে এবং যেভাবে শুরু হয়েছিল অনুরূপ আগন্তুকের মতোই ফিরে যাবে।”
এভাবেই রুমীর কথাগুলোও সময়োত্তীর্ণ হয়ে আসে এবং আমাদেরকে বলে, “তুমি কি এটা গ্রহণ করতে পার যে আল্লাহর সত্যিকার একজন প্রেমিক আল্লাহর কর্তৃত্বের অধিকারী? তুমি দেখতে পার, তারা যারা বহন করে সে কারণেই তারা সব সময় এই পৃথিবীতে আগন্তুক হিসাবে থাকে?” তাহলে কে সময়োত্তীর্ণ? অবশ্যই এমন যে কেউ যিনি তাদের সময়ের সংস্কৃতি দ্বারা আবদ্ধ। এমন যে কেউ বড় কিছু দ্বারা আলোড়িত।
‘রুমীর সংলাপ’ গ্রন্থে অনুবাদক ভূমিকায় অতি সুন্দরভাবে মূল গ্রন্থের বিষয় সম্পর্কে পাঠকের জন্য অতি চমৎকারভাবে বলেছেন, “রুমী শুধুমাত্র শিক্ষণীয় কাহিনী বর্ণনা করেননি অথবা তার দার্শনিক ও ধর্মীয় উপলব্ধিকে তুলে ধরেননি, বরং তার ব্যবহৃত শব্দাবলী যে মর্ম বুঝাতে চেয়েছে তাই তুলে ধরেছেন। সুফিরা যেমন প্রায়ই বলে থাকেন, বাইরে থেকে এই বিষয়গুলো উপলব্ধি করা যায় না, বরং ভেতর থেকে আবিষ্কার করতে হয়। সন্দেহ নেই যে এ ধরনের বক্তব্য মতানৈক্য সৃষ্টি করতে পারে, কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমাদেরকে রুমীর নিজস্ব সংলাপের প্রতি লক্ষ্য করতে হবে এ ব্যাপারে তার মতামত জানার জন্য। রুমী তাদেরকে বারবার সমালোচনা করেছেন, যারা বাইরে থেকে কোন কিছুকে দেখে এবং অন্তর্নিহিত সত্য উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়।
এটাই সম্ভাব্য যে রুমীর সংলাপ শুধুমাত্র তাদের ক্ষেত্রেই আবেদন রাখবে, যারা তার শব্দ যথার্থভাবে বুঝতে চেষ্টা করবে। কিন্তু পাঠক যদি অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে তার কবিতা পাঠ করতে চান তাহলে তারা নিজেদের জীবনের সাথে রুমীর সম্পর্ক খুঁজে পাবেন এবং প্রেমের পথের সাথে তার মাদকতাময় ঘনিষ্ঠতার সন্ধান লাভ করবেন।”
‘রুমীর সংলাপ’ গ্রন্থের প্রতিটি পাতায় পাতায় রুমীর জ্ঞানের গভীরতার পরিপূর্ণ বর্ণনা বিরাজমান। সকল মানুষ সহজ মনে, সহজ অর্থে রুমীর সংলাপের বিষয় উপলব্ধি করা কঠিন। তাই পাঠককে রুমীর চিন্তার গভীরতায় প্রবেশ করতে হবে। বুঝতে হবে। পড়ে পড়ে চিন্তা করতে হবে।
রুমী বলেন, “এ পৃথিবীতে গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে লব্ধ প্রতিটি বিজ্ঞানই দেহ বিষয়ক বিজ্ঞান। মৃত্যুর দ্বারা অতিক্রম করে অর্জিত যে বিজ্ঞান সেটি হচ্ছে আত্মার বিজ্ঞান। প্রদীপের আলো ও আগুন দেখা দেহের বিজ্ঞান, আর সেই প্রদীপের শিখার প্রজ্বলিত হওয়া আত্মার বিজ্ঞান। যা কিছু অভিজ্ঞতা দ্বারা অর্জিত হয় তা আত্মার বিজ্ঞান, আর যা কিছু জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে অর্জিত তা দেহের বিজ্ঞান।”
অপরূপ ভাষা শৈলী সমৃদ্ধ ‘রুমীর সংলাপ’ গ্রন্থটি বাংলা ভাষাবাসীদের জন্য একটি অসাধারণ অনুবাদ গ্রন্থ। যা সব সময় হৃদয়কে আন্দোলিত করে, মোহিত করে। যেমন রুমী তার সংলাপ একাত্তরে বলেন, “ডানাসহ পাখি এবং আল্লাহর প্রেমিকদের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে, পাখি সব সময় একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে উড়ে যায়। আর আল্লাহর প্রেমিকেরা তাদের আকাক্সক্ষা বা ইচ্ছার ডানায় ভর করে উড়ে যায় সকল দিকে।” হ

 

 


আরো সংবাদ



premium cement