২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ফেলে আসা পথের দিকে দেখা

-

বহু দিন পর মনে পড়ে পল্লীর অম্লমধুর স্মৃতি, যা আমার মনের মণিকোঠায় সংরক্ষিত আছে। শৈশবে জ্বর হলে কি হতো তা দিয়ে শুরু করতে চাই। শৈশবে জ্বর হলে শরীর আড়ষ্ট হতো, খাদ্যে বিস্বাদ, অরুচি আর মাথাব্যথা লেগেই থাকত। অনেক ওষুধ পথ্য খাওয়ার পরও জ্বর যেত না। ভাঁড়ের ভেতর পানি ভরে ভাঁড়ের তলা ছিদ্র করে পাটের শিকিতে টানিয়ে রাখা হতো রগের কড়িতে। নিরি ধারা পানি পড়ত খাঁটি সরিষার তেল ফেনান বরমোতলীতে। কিছুতেই জ্বর যায় না। শক্ত খাবার ওই সময় নিষেধ ছিল। বাড়িতে হওয়া বাতাবি লেবুর সলন অথবা বাজার থেকে আব্বা প্রায়ই কিনে আনতেন দেশী মুরগি আর আনারস। পানির মতো সাবু আর বার্লি ছিল সাজের খাবার। শরীরে শক্তি নিস্তেজ হয়ে যেত। অবশেষে জ্বর শতকষ্টের পর যেত। সদ্য রোগ থেকে ওঠা রোগীকে খেতে দেয়া হতো জাও ভাত আর গাব দেয়া নাইলনের খৈওলা জাল দিয়ে ধরা জ্যান্ত মাছের ঝোল আর দোপিলি মুরগির গোশত। তার পর শরীরে শক্তি এসে সুস্থ হলে জীবন সংগ্রাম আবার শুরু হতো।
শীতকালে শীতে আড়ষ্ট সকাল লেপের ভেতর থেকে ওঠা কষ্টকর হতো। অবশেষে উঠে সূর্যের কিরণ পাওয়ার উৎসব পড়ে যেত। খড়কুটা, কাগজ দিয়ে আগুন তৈরি করা হতো। সেই আগুনে শরীর হাত-পা গরম করার উৎসব চলত। শীতের সকালে নতুন ক্লাসে ওঠা নতুন নতুন বইয়ের পাতার ঘ্রাণ মজাদার। মাদুর পেতে উঠানে রোদ পোয়ার রেওয়াজ চলত। আর বাঁকা স্টিলের গ্লাসের দুই গ্লাস জিরিন খেজুরের রস না খেলে সকালটা ভালো যেত না। বাইনে কড়াইতে জাল দেয়া হতো খেজুরের রস। অবশেষে পাটালি, গুড় খাওয়ার উৎসব চলত। উতলে যাওয়া জিরিন রসের ভেতর খোলামুচি পিঠা ভিজানো তার পর কাগজি লেবুর পাতা এবং এলাচ দিয়ে ভেজানো পিঠা সৌরভে ভরে যেত। খেতে যেমন স্বাদ তেমন মজা। দুপুরে খেজুরের রসের জন্য ভাড় পোড়া দেয়া হতো এবং গাছ কাটার দার বালি দেয়া হতো। আমরা এগুলো দেখতাম এবং রেডিওতে বিজ্ঞাপন তরঙ্গের অনুষ্ঠান শুনতাম। আম্মার প্রায় সকালে ছিটি রুটি, পাকান পিঠা এবং পাটিসাপটা পিঠা তৈরি করতেন; যা স্বাদে ভরপুর। রসের পায়েস আর আলো চালের ক্ষীর না খেলে বোঝা যাবে না কত স্বাদ আছে এই ক্ষীরে।
আমাদের গ্রামে আখের চাষ করা হতো। আখের গুড়ের বাণিজ্য ছিল ভালো। আখ কাটা হতো পাল্লা দিয়ে পরবর্তীতে ঝোড়া হতো। অবশেষে আখ মাড়াইয়ের কলের পাশে সাজিয়ে রাখা হতো। পাল পাল গরু আনা হতো দূর আত্মীয়দের কাছ থেকে আখ মাড়াইয়ের জন্য। বান কাটা হতো। আখ লোহার দুই গুটির ফাঁকে ভরা হতো। তার পর মাড়াই হয়ে রস পড়ত টিনের ওপর। আখের রস টিনের ভেতর ভরে কড়াইয়ের ভেতর ঢালা হতো। এবার জাল দেয়ার পালা। আখের পাতা ও আখের সিটি ছিল একমাত্র জ্বালানি। জেলু কাটা হতো এবং জ্বালান আখের রসের গাদ ফেলা হতো তার ভেতর। গাদ মাখানো চিকন আখ আগুনে ছেঁক দিয়ে মাটিতে জোরে আঘাত করা হতো এবং বিকট শব্দে আওয়াজ হতো। জাল দেয়ার পর গুড় তৈরি হতো এবং গুড় ভাঁড়ে ভরার পাল্লা চলত এবং পরবর্তীতে বাজারজাত করা হতো। কাঁচা আখ খাওয়ার ও রেওয়াজ ছিল। আখের গাদা থেকে একটি আখ চুরি করে বাগান দিয়ে পালানোর পথে পা হেঁসু দিয়ে কাটা আইরছড়ি গাছের গোড়ায় এমনভাবে ফুটে গেল যেন রক্তের ফিংকি বেরোতে লাগল। আর এই স্মৃতিচিহ্ন আজো মুছে যায়নি। আখ মাড়াইয়ের মৌসুমে আমরা বিল থেকে শোলা সংগ্রহ করে শুকিয়ে রাতে আগুন ধরিয়ে ঘোড়া ছুট দিতাম এবং কলরব বলে চিৎকার দিয়ে উঠতাম। এই মিষ্টিমধুর আওয়াজ আজো মনে পড়ে।
আমি বলিয়ানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। বাসা থেকে দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। পায়ে হেঁটে যেতে হয় স্কুলে। স্কুলটি টিনের ছাউনি পাকা ওয়াল, বেঞ্চগুলো সাধারণ। পঞ্চম শ্রেণীর জন্য একটি হাই বেঞ্চ ছিল। স্কুল ছাউনিতে কেরোসিনের কাঠ ব্যবহার করা ছিল; যার কারণে কোনোভাবে ঘুণে ধরে নষ্ট হয়ে যায়নি। টিন ছিল উন্নত যা কোনো দিন জং ধরেনি। তবে একটি বিষয় এখানে উল্লেখ্য, টিনগুলো প্রায়ই ঝড়ে উড়ে যেত। আবার সংস্কার করা হতো। আবার উড়ে যেত। এভাবে আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়াশোনা চলত। হেড স্যার আবদুর রাজ্জাক ছিলেন অমায়িক, সেকেন্ড স্যার আকরাম আলীর গেবু কিল এবং থার্ড স্যার আমীর আলী কড়াল আমাদের শাসনের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করত। আমরা সকালে প্রথমে স্কুলে উপস্থিত হয়ে জাতীয় সঙ্গীত গাইতাম এবং স্কুলে ছুটি হলে চিৎকার দিয়ে আনন্দে করে ঘরে ফিরতাম। সোনাবাড়ীয়া সম্মিলিত মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছিল আমার হাইস্কুল। বাসা থেকে তিন কিলোমিটার দূরে পায়ে হেঁটে যেতে হয়। আমরা বাগান, বিল, খাল, ধানক্ষেত পাটক্ষেত পাড়ি দিয়ে যেতাম স্কুলে। ক্লাস সিক্সে আয়তুল কুরসি পড়ানো হতো। আমার শতকষ্টে মুখস্থ না হওয়ায় মৌলভী স্যারের বেতের বাড়ির কথা আজো চিলিক মেরে ওঠে। আমার মুখস্থ হয়নি কিন্তু আমার ছোট ভাই অহিদ এবং ছোট বোন বিউটির আমার পড়া শুনে মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল। ক্লাসে সেভেনে থাকতে আমি স্কাউটসে যোগদান করেছিলাম। আমার মেঝ চাচা আবদুুর রহিম মাস্টার ছিলেন স্কাউটসের শিক্ষক। তিনি প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছিলেন। চাচার সাথে আমি সপ্তম শ্রেণীতে থাকা অবস্থায় চতুর্থ বাংলাদেশ ন্যাশনাল স্কাউটস জাম্বুরি ‘৮৯ মৌচাক গাজীপুরে সফলতার সাথে অংশগ্রহণ করেছিলেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ছিলেন তখন দেশের প্রেসিডেন্ট। আমরা মহাসমাবেশে অংশগ্রহণ করে এরশাদকে স্যালুট দিয়েছিলাম। আমি প্রথম সারির দিকেই ছিলাম। তাঁবু যাপন ছিল সজার। সকালে ভোরে আসত তাঁবু পরিদর্শন করতে। আমাদের তাঁবুর কাঠামো এবং বাঁশের মাচা ছিল অসাধারণ। শীতে আড়ষ্ট হয়ে যেত শরীর। রান্নাবাড়া নিজেই করতে হতো। বাঁশ আর দড়ির কাজ জানতে হতো। কম্পাসের সাহায্যে পথ পাড়ি দিয়েছিলেন। এ দিকে যেয়ো না, ওদিকে যাও। এত কদম যাও প্রভৃতি। আমরা সফলতার সাথে পথ পাড়ি দিয়ে তাঁবুতে ফিরে ছিলাম। পরবর্তীতে একটি দৃশ্য আটটি খণ্ড করা। এই আট খণ্ডের মধ্যে আমার ও একটি খণ্ড ছিল। আমার খণ্ড ছিল ৪ নং। এই চার আছে বলে সারা তাঁবু পাড়ি দিয়েছিলাম রাত ২টা পর্যন্ত। কিছুতেই মিলান সম্ভব হলো না। পরের দিন সকালে মিলাতে পেরে আনন্দে গেয়ে উঠেছিলাম ক্যাম্প ফায়ার, ক্যাম্প ফায়ার, আজ আমাদের ক্যাম্প ফায়ার প্রভৃতি। স্টিকার পেয়ে মেডেল পাওয়ার মজাই আলাদা। মৌচাকে রাক্ষুসে পুকুর ছিল। সে দিকে যাওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ ছিল। আমরা প্রতিদিন পিটি প্যারেড করতায়। ঐরশরহম, ংরিসসরহম, ধনংবরষরহম, পুপষরহম, পধহড়বরহম, পধসঢ়রহম, করার মজাই আলাদা। অবশেষে বিদায় হয়ে বাড়িতে ফিরে এসেছিলাম আনন্দের সাথে। সে স্মৃতি আজো মনের পর্দায় ভেসে ওঠে। দশম শ্রেণীতে ছাত্র যখন ছিলাম টেস্ট পরীক্ষায় হিসাবরক্ষণ ভালো হয়নি। ইসলাম স্যার ক্লাসে এসে বললেন, একটি ছেলেকে টেনেটুনে পাস না করিয়ে দিলে বাড়ি থেকে তাকে বহিষ্কার করা হতো। পরবর্তীতে এসএসসি পরীক্ষায় লেটার মার্ক পেয়ে হিসাববিজ্ঞানে থানা ফার্স্ট হয়েছিলাম। নূরুল আমিন স্যার ম্যাথ ভালো পড়াতেন। জব্বার স্যারের ইংরেজিতে দক্ষতা ছিল ভালো। তাদের কাছ থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছিলাম।
কলেজজীবনে আমি কলারোয়া সরকারি কলেজের ছাত্র ছিলাম। আমি বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেটে যোগদান করেছিলাম। প্রতিদিন সকাল ভোরে প্যারেড, পিটি হতো। সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ এম এ লতিফ স্যার আমাদের ক্যাপ্টেন ছিলেন। তিনি ছিলেন ঝাঁঝালো লোক। আমরা পিটি শেষে প্রতিদিন কমলা, ক্রিমরোল ও কেক খেতাম। বিএনসিসি থেকে আমরা কক্সবাজার ভ্রমণে গিয়েছিলাম সমুদ্রসৈকত দেখার জন্য। পৃথিবীর সর্ববৃৃহৎ সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার। মিয়ানমার সুন্দরীদের কাছ থেকে লুঙ্গি, ক্যাপ কেনার পর প্রবেশ করেছিলাম শামুক ও ঝিনুকের দোকানে। কিন্তু একটি শামুক পছন্দ হয়ে গেল, দাম চাইল ৬৫০ টাকা। আমি ৫০০ টাকা দিতে রাজি ছিলাম। কিন্তু তারা বলল, গভীর সমুদ্রের শামুকটি আনতে ৫০০ টাকার শুধু তেল খরচ হয়েছে। আমি বিমর্ষ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। পরবর্তীতে এক স্কার্ট পরা মার্কিন সুন্দরী এসে ডলার দিয়ে আমার সামনে থেকে কিনে নিয়ে গেল। আমি আফসোস করে বলেছিলাম, হাইরে আমার কপাল; শামুকটি আমার কপালে নেই। সমুদ্রের গর্জন কখনো শুনিনি। গর্জন শুনে মনে হলো জলোচ্ছ্বাস শুরু হয়ে গেছে। পরবর্তীতে দেখলাম এই গর্জন আবহমান কাল থেকে চলতেই আছে। সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে লড়াই করে গোসল করা এবং ছবি তোলার আনন্দ আলাদা। পরবর্তীতে পাহাড়িয়া পথ ধরে কাপ্তাই লেকে গোসল করলাম। স্বচ্ছ পাথর ফাটা পানি সাঁতার কাটলে হাত-পা দেখা যায়। আমরা গোসল শেষে পোশাক পরে টেকনাফের উদ্দেশে রওনা হই। পথে দেখলাম ঝরনা এবং নাফ নদীবিধৌত টেকনাফ। টেকনাফে গিয়ে বার্মিজ মার্কেটে প্রবেশ করলাম। সেখানে কত সস্তা জিনিস। দুই জোড়া জুতা এবং লুঙ্গি কিনলাম। লুঙ্গি ৫৫ টাকা আর দুই জোড়া জুতা ৪৫+৪৫=৯০ টাকা। রাতে আমরা কক্সবাজার সরকারি কলেজে অবস্থান করছিলাম। পরের দিন বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়ে গেলাম। স্মৃতি পথে পাহাড়িয়া পথ আর সমুদ্রে গর্জন আজো ভেসে আসে।
আমাদের গ্রাম ধান, পাট, আখ, ছোলা, গম, তিল, সরিষার চাষ হতো। শীতকালে গম চাষের জন্য বীজ ফেলা হতো জমিতে। ধীরে ধীরে গমের চারা বড় হতো। গম যাতে পাখিতে না খেতে পারে তার জন্য পাহারা দেয়ার প্রয়োজন। আমি বাল্যকালে গমক্ষেত পাহারা দিতাম। সূর্য যখন পশ্চিম আকাশে ঢুলে পড়ত তখন পাখিদের উৎপাত বেশি হতো। আবার সন্ধ্যার সময় পাখিরা যার সেই পাখিরা তর দিয়ে পাখায় ভর দিয়ে বাসায় ফিরত। গম ক্ষেত পাহারা দেয়ার সময় ডিল ছুড়ে পাখি তাড়াতাম। যখন পাখি থাকত না তখন খেজুরের পাতার ছাউনি আর ডিল ও পাটকাঠি দিয়ে প্রাসাদ তৈরি করতাম। বাতাসে অনেক সময় প্রাসাদ ভেঙে যেত। পরিশেষে যখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসত তখন খেজুরের প্রাসাদ ভেঙেচুরে বাসার উদ্দেশে রওনা হতাম। বাসায় ফিরে ফ্রেশ হওয়ার পর রাতে পড়ার টেবিলে বসতাম। কখনো মনে মনে কখনো জোরে জোরে পড়তাম। তখন হারিকেনের আলোই ছিল একমাত্র সম্বল। রাতে খাবার খাওয়ার ডাক পড়ত। আমরা রান্নাঘরে কাঠের পিঁড়িতে বসে প্লেটে ভাত খেতাম। আলো ছিল দেলকোর ওপর টেমি। আর এই টেমির আবছা আলোই ছিল রান্নাঘরের সম্বল। মেঝ আপা আঞ্জুয়ারা বেবির বিয়ে হয়ে ছিল জেলা শহরে। আমরা প্রায় বেড়াতে যেতাম আপার বাসায়। আপার বাসায় বাড়িওয়ালার এক সুন্দরী মেয়ে ছিল। সে যেমন ছিল মেধাবী তেমন ছিল সুন্দরী। লাখো কবির কাব্যরচনা শেষ হবে কিন্তু তার রূপের বর্ণনা শেষে হবে না। প্রথম দৃষ্টিতেই ভালো লেগে গেল, কিন্তু কথা বলার আর সুযোগ হলো না। অত্যন্ত কঠোর পরিবেশে সে বেড়ে উঠেছে। একদিন রাতে ঢাকা আসার আগে আপার বাসার পাশে ঢাকাগামী কোচের জন্য অপেক্ষা করলাম। সে অন্ধকারে চুপি চুপি এসে বলল, রাতে যাচ্ছেন কেন দিনের বেলায় যাওয়া ভালো ছিল না। আমার প্রাণ আনন্দে ভরে উঠেছিল। পরবর্তীতে তার বিয়ে হয়েছিল এক বিজ্ঞানীর সাথে। সে জাপানে চলে গিয়েছিল। এখন কোথায় আছে কেমন আছে জানি না। তার নাম ছিল মুন্নি।
আমাদের সাতক্ষীরা জেলার বহুড়া গ্রামটা এক দিকে বিল অন্য দিকে খাল দ্বারা পরিবেষ্টিত। গ্রামের মানুষ সহজ সরল। এখানে শত্রুতার স্থলে আত্মীয়তা বেশি। গ্রামে শবেবরাত এলে সবার বাড়িতে হালুয়া রুটি গড়ার পাল্লা পড়ে যেত। গরিব শ্রেণীর লোকেরা গামলা, বাসন, নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালুয়া রুটি সংগ্রহ করত। বাড়ি বাড়ি নামাজ এবং দোয়া দরুদ পড়া রেওয়াজে পরিণত হয়। আমার নানা আছরাতুল্লাহ গাজী এবং বু (নানী) জোহরা খাতুন ছিলেন পরহেজগার। বু (নানী) কণ্ঠ প্রায়ই দুপুরে কুরআন মাজিদের তিলাওয়াত শুনতাম। তিনি ছিলেন ইউনিয়নের প্রথম মহিলা হাজী। তারা আর আমাদের মাঝে নেই। আমরা তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। শৈশবে ঈদ ছিল আনন্দের। নতুন নতুন জামাকাপড় ও পাঞ্জাবি পরার স্বপ্নে জীবন ভরে যায়। নতুন পাঞ্জাবিটা মাথার কাছে রাখতাম যাতে কেউ চুরি করে নিতে না পারে। ঈদগাহে যাওয়ার পালা চলে। ঈদগাহে বয়ান করেন লুৎফার মাস্টার। নামাজ শেষে মুনাজাত করেন বাবর আলী হুজুর। পরবর্তীতে কোলাকুলি করে ঈদগাহ থেকে বিদায় নিতে হয় পরিচিত ব্যক্তি অপরিচিত উপক্রম হয় পদের সাথে।
বর্ষাকালে খালে বিলে পানি থইথই করে। আমরা পুলের মাথার ওপর থেকে খালের পানিতে লাফ দিয়ে গোসল করতাম এবং ছিপ দিয়ে মাছ ধরতাম। বাঁশঝাড় থেকে বাঁশ কেটে ছিপ তৈরি করতাম। সুতা, ফাতনা, শিশা, বড়শি কিনে আনতাম বাজার থেকে। কলাগাছের ভেলায় চড়ে বিল পাড়ি দিতাম। বান্দালে মাছ পড়ত, দোড়, পাতা হতো বিলের স্রোতে। বান, পুঁটি, ঝুরোমাছ, ব্যাতলা, চ্যাঙ মাছ প্রায় প্রতিদিন বালতিতে করে আনা হতো বাড়িতে। শৈশবের কাদামাটিতে হারিয়ে যাওয়া কিছু রতœ আজ আমি হাজির করতে চেয়েছিলাম। পল্লীর মাটি, জল, ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড় এবং গাছগাছালি পাখপাখালি দ্বারা ঘেরা আমাদের গ্রাম। এই গ্রাম যেমন ঐতিহ্যময় তেমনি গ্রামবাসী গর্বিত। আমরা সকালে উঠে জাতি দিয়ে আইরছড়ির গাছ কেটে দাঁত মাজতাম আর সকালে পান্তা খেতাম শুকনো ঝাল পোড়া আর পেঁয়াজ ও তরকারি দিয়ে। মাঝে মধ্যে আখের গুড়, খেজুরের গুড় নারকেল কুরা দিয়ে খেতাম ভাত। শৈশব সবার কাছে মধুর। কিন্তু আমার শৈশব আরো দশজনের কাছে মধুর হোক, পল্লীর লোকজন শান্তিতে থাকুক এবং যারা নিহত হয়েছেন তারা জান্নাতবাসী হোক এই কামনায় আজকের মতো লেখাটি শেষ করছি। হ


আরো সংবাদ



premium cement
সাভারে বুধবার ১২ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে গাজা ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ফরিদপুর-খুলনা মহাসড়কে জনতার অবরোধ ভাঙতে টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি বাংলাদেশ-কাতারের মধ্যে ১০টি সহযোগিতা নথি সই ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি’ মিলান ডার্বি জিতে শিরোপা পুনরুদ্ধার ইন্টারের কুমিল্লা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী যুবক আহত অপহরণের ২৬ ঘণ্টা পর সাংবাদিকের বড় ভাই উদ্ধার মালয়েশিয়ায় ২ হেলিকপ্টারের সংঘর্ষে ১০ নৌ-সদস্য নিহত প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে কাতারের আমির বাগাতিপাড়ায় আগুনে পুড়লো ৭ কৃষক পরিবারের বসতঘরসহ গরু-ছাগল

সকল