২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

সোনালী কাবিন এক মহাকাব্যিক ইশতিহার

-

গ্রামের কাদামাটি মেখে বড় হওয়া কবি আল মাহমুদ। শহরে এসে ঐতিহাসিক কবিতা শিল্পের এক মহান মিনার হলেন। কালে কালে সমাদৃত হচ্ছে ও হবে। তার কবিতা একটি মহৎ শিল্প যা তার পাঠককুলে গভীর উপলব্ধি জাগ্রত করে। কবি কখনো ক্ল্যাসিক, কখনো সুচিন্তিত শব্দ আবিষ্কারক ও কখনো সাহিত্যিক ঐশ্বর্যের চিন্তার চমকপ্রদ বিস্তৃত ভাবনার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। অন্য দিকে, প্রকৃতিকে ঘিরে ক্ষণস্থায়িত্বের মধ্যে যে অমরত্ব খুঁজে পাওয়া যায় তা সুচারুরূপে কল্পনাশক্তিকে মানবজাতির জন্য সৌন্দর্য অবলোকনের দ্বার উন্মোচন করেছেন। প্রেম ও নদীকে তার কবিতায় শান্ত ধারায় প্রবাহিত করে রোমাঞ্চকর অনুভূতি ও ভালোলাগার বহিঃপ্রকাশগুলো সনেট ও ছন্দের মেলবন্ধনে দারুণ চিত্রকল্পে পাঠকের জন্য শক্তিশালী আত্মিক খোরাক জুগিয়েছেন। কবি আল মাহমুদ সব সমালোচনা ডিঙিয়ে পাঠক, কাব্য ও বাংলা সাহিত্য এই তিনটি সমাচারের ত্রিভুজ আঙ্গিকে ভেঙে প্রতিদ্বন্দ্বীর শীর্ষে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন। সমালোচক নিজেই তার কাব্যিক সত্তাকে আলাদা বৈশিষ্ট্যের মানদণ্ডে গুণগ্রাহী হিসেবে মনোরঞ্জন উপভোগ করেছেন তলে তলে। কবি সুফিয়া কামাল, রোকনুজ্জামান ও কবি শামসুর রাহমানসহ আরো অনেকেই তার প্রকাশিত সোনালী কাবিনের দারুণ প্রশংসা করেছেন। এ কাব্যগ্রন্থের প্রতিটি কবিতা তার অভিনব ভাষা ও ভঙ্গিমার চমকগুলো লেখনিতে জমকালো কাব্যকীর্তি অলৌকিক প্রেরণার ফসল হলো ‘সোনালী কাবিন’। এটি তাকে কালের শ্রেষ্ঠ মহাকাব্যের মর্যাদা দিয়েছে। কবির গুণে অনেক অপরিসীম দাহ ও ঈর্ষা করে কপট বিনয় ও চতুর উৎপ্রেক্ষায় বারবার উদ্বিগ্ন হলেও চূড়ান্ত সুখকর অনুভূতি লাভ করেছেন অসংখ্যবার। কবি আল মাহমুদের কবিতা মানেই সমাজ বিবর্তনের হাতিয়ার। সুন্দরের সখ্য গড়ে তুলে সাবলীল প্রতিধ্বনিতে বয়ান করেছেন অসুর ও অসুন্দরের বিপক্ষে।
কবি আল মাহমুদ ভাবের কবি। তার গভীরতর ভাবনা ও তীক্ষèতা বর্ণনা করার সাহস যিনি করবেন তিনি নিজেই চমকে উঠবেন এবং দারুণ এক আধ্যাত্মিক জাদুর ঘোরে লেখার স্রোত অন্য দিকে ধাবিত হবে। একটি মানব ভ্রƒণ যখন সদ্য জন্মের পর পৃথিবীর বাতাস গায়ে মেখে ওঁয়া ওঁয়া শব্দে কেঁদে ওঠে পিতাকে হাত পা গুটিয়ে দেয় তখন অসহায়ত্বের ভারে নুয়ে পড়ে পুরনো মাটিতে। জাতিস্বর কবিতা পাঠ করলে বুঝা যাবে কতটুকু মহার্ঘ্য চিত্রকল্পতে নারীগর্ভে মানবজন্মের এক্স ও ওয়াই-এর সঞ্চারণ-ক্রিয়াকে বিচিত্র মননশীলতা দেখিয়েছেন।
‘আমি যতবার আসি, মনে হয় একই মাতৃগর্ভে থেকে পুনওঃ/রক্তে আবর্তিত হয়ে ফিরে আসি পুরোনো মাটিতে/ওঁয়া ওঁয়া শব্দে দুঃখময় আত্মার বিলাপ/জড়সড় করে দেয় কোন দীন পিতাকে।’
আল মাহমুদের কবিতা আলাদা বৈচিত্র্যের। তার কবিতার জাত বিচিত্রগামী ও বিস্তৃত মেধা- মগজের খেলায় সৌরভ ছড়িয়েছেন। কবির কবিতাগুলো পর্যালোচনা করলে বুঝা যায় যে গ্রামীণ জীবনবান্ধব নদীর তীর ঘেঁষা প্রকৃতির মানসপটে একেঁছেন প্রকৃতিকে। তার কাব্যগ্রন্থ ‘সোনালী কাবিন’ প্রকৃতি কবিতাটিতে মানুষ নিয়ে আলাদা একটি শোক ও আফসোস প্রকাশ করেন। তার চোখের সামনে বিস্ময়কর অগ্রগতি দেখেও মানুষ যে অন্যের দয়াপরবশ হয়ে জীবন আঁধারে পরিণত করেছে তাই নিয়ে কবির আক্ষেপ- কতদূর এগোলো মানুষ! কিন্তু আমি ঘোরলাগা বর্ষণের মাঝে আজও উবু হয়ে আছি। এখানে চমৎকার দার্শনিকতার পরিচয় দিয়েছেন। একজন কবি কতটা বিজন সুরে আধ্যাত্মিক বন্দনা গাইলে এমন তার নেপথ্যে স্রষ্টাকে দেখেন অন্তরের অন্ধ শক্তিতে। তিনি আধ্যাত্মিক চেতনার কবি, তার বাণী অবশ্যই স্বতন্ত্র। অন্তরভেদী অবলোকন কবিতাটি তার দলিল। যেমন- কাল মৃত্যু হাত বাড়িয়েছিলো আমার ঘরে/জানলার ফাঁক দিয়ে সেই দীর্ঘ হাত অন্ধের অনুভব শক্তির মতো বিছানার ওপর একটু একটু এগোলো।
‘সোনালী কাবিন’ কবিতাটির প্রধান উপকরণ হলো প্রেম ও মানবিক সত্তা। প্রেম ও মানুষ এই দুজনকে নান্দনিকতার সম্পর্কের এক সুতোয় বেঁধেছেন। এটি হচ্ছে তার উজ্জ্বলতম সিঁড়ি। কবিতা সৃষ্টি ইতিহাসের নর ও নারীর অঙ্গাঙ্গি মিশেলে বৈপ্লবিক সনেট বন্ধন। যেমন -
‘সোনার দিনার নেই, দেনমোহর চেয়ো না হরিণী
যদিও নাও, দিতে পারি কাবিনবিহীন হাত দু’টি ’
এই খানে সুখকর ক্ল্যাসিকাল রূপের বর্ণনা পাওয়া যায়। তামার রঙের মতো শরীরের সাথে তুলনা করে দারুণ এক স্বর্গীয় প্রেমের শিল্পবোধ ও সৃষ্টিশীলতাকে উচ্চতর স্থানে নিয়ে গেছেন। আরো কিছু সনেট বাক্যÑ
‘শস্যের সপক্ষে থেকে যতটুকু অনুরাগ পারি/তারো বেশি ঢেলে দেবো আন্তরিক রতির দরদ।’ আবার বলেছেনÑ ‘ভালোবাসা দাও যদি আমি দেব আমার চম্বুন।’ আরো ‘বৃষ্টির দোহাই বিবি, তিলবর্ণ ধানের দোহাই, দোহাই মাছ-মাংস দুগ্ধবতী হালাল পশুর।’- প্রভৃতি এই রকম দৃঢ়তার প্রত্যয়ে প্রেম ও মানুষকে এক সখ্য সৃষ্টির বৈশিষ্ট্য রূপায়ণ করেছেন। তার এসব মোহনীয় উচ্চারণে অনুষঙ্গগুলো নিখুঁত অনুভূতি প্রকাশ। ‘সোনালী কাবিন’ প্রচণ্ড স্বাতন্ত্র্য নিজেকে অন্যের ঊর্ধ্বে সোপর্দ করেছে এক আশ্বাসবাণী সরলরেখায়। এ কবিতায় সনেটের মৃদুস্বরে আবাহনে পাওয়া যায় প্রেমের শীতলতা। এর ছন্দোবিন্যাস, গঠন ও বিষয়বস্তু কালের সাক্ষী এবং সে সময়ে কবিতার কণ্টক পথ দূর করে নতুনত্ব দিয়ে নিজেকে নানা রকম প্রতিপক্ষ দিক অদল-বদল করে পাঠকের কাছে প্রমাণ করেছেন তিনিই কবিতার মাধ্যমে নতুন সৃষ্টি ও নতুন প্রত্যাশার জালের এক মহাকাব্যিক প্রণেতা। সাহিত্য সমাজের কিছু অর্ধচেতন জেগে জেগে ঘুমকাতুরে মানুষগুলো মাঝে মাঝে তাকে মজা লুটেপুটে ব্যঙ্গ ঘা মারেন। কবি আল মাহমুদ সবসময়ই শক্তিশালী চেতনাবোধের কারণে সতেজ কল্পনাশক্তিকে শান্ত রেখে সুদূরভবিষ্যতের দিকে এগিয়েছেন আপন দৃঢ়তায়। অভিজাত গোষ্ঠীর নীচু মনোভাব ও শঠতার সাথে সামষ্টিক তাল-মিলকরণে ‘সোনালী কাবিন’ দিয়ে বাংলা সাহিত্যে ভবিষ্যতের জন্য রুয়েছেন সোনালি প্রত্যয়। এ প্রত্যয় কালে কালে চর্চা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করতে পড়তে হবে এবং পড়বেই। কারণ এটি কালের বিচারে সাহিত্যের মহাকাব্যিক ইশতিহার।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement
প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের শেষ ধাপের পরীক্ষা শুক্রবার লম্বা ঈদের ছুটিতে কতজন ঢাকা ছাড়তে চান, কতজন পারবেন? সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করলেন ভুটানের রাজা জাতীয় দলে যোগ দিয়েছেন সাকিব, বললেন কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই কারওয়ান বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয় এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি আহসান উল্লাহ ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি আনোয়ারায় বর্তমান স্বামীর হাতে সাবেক স্বামী খুন, গ্রেফতার ৩ ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত বদরের শিক্ষায় ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : সেলিম উদ্দিন

সকল