২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
করোনাকালে

‘মন রে চল নিজের নিকেতনে’

-

দ্রুত আমরা করোনাকালের চলমান ওয়েভের পিক পয়েন্টের দিকে ধাবিত হচ্ছি , সংক্রমণ, আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা ঘোষিত অঘোষিত মিলিয়ে বেড়েই চলেছে। করোনার আক্রমণের লক্ষ্য বা প্রধান প্রতিপক্ষ সমাজ ও পরিবার বিচ্ছিন্ন একেকজন মানুষ, সেই একেকজন মানুষের মন-মানসিকতায়, আত্মবিশ্বাস ও শক্তিতে, আত্মশুদ্ধিতে কেমন পরিবর্তন সূচিত হয়েছে বা হচ্ছে সেটাই এখন ভাববার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সহজে সংক্রমণের ভয় ঢুকিয়ে, প্রতিরোধ ও প্রতিষেধকের ধোঁয়াসে পরিস্থিতিতে মানুষ সামাজিক দূরত্বে থাকার নামে পরিবার ও আপনজনেরাও তাকে সহানুভূতি জানাতে ভয় পাচ্ছে, এমনকি স্থানীয় লকডাউনের নামে প্রচণ্ড অমানবিক আচরণের শিকার হচ্ছে এই মানুষই। আক্রান্ত বলে কথিত পরিবারের শিশুসহ ছয়জনকে ঘরে আটকাতে ছয়টি তালা ঝুলিয়েছে প্রতিবেশীরা এ ছবি সামাজিক মিডিয়ায় এসেছে। পরিবেশ প্রতিবেশে অভূতপূর্ব অনেক কিছুই ঘটছে যা প্রচারে নিত্য বেদনা ও বিস্ময়ের উদ্রেক করে। করোনা আক্রমণের গতি প্রকৃতি পরিবর্তনের মাত্রা এবং এর এখতিয়ার এত ব্যাপক হতে চলেছে যে এর সাথে তাল মিলিয়ে চলা যেমন কষ্টকর তেমনি নিকট অতীতকেও স্মরণে আনার ফুরসত কমে যাচ্ছে। পরিস্থিতির পরিবর্তনে সবার মনে এ প্রশ্ন প্রায়ই জাগছে যে, ‘এর শেষ কোথায়?’
বয়স বাড়লে অভিজ্ঞতা বাড়ে এবং সে অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে অনেক ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন সহজতর হয়, কম সময় ও শ্রমে বেশি কাজ করার ফলাফলও পাওয়া যায়। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে ধৈর্য, কর্ম উদ্যম, শক্তি ও সাহসেও ভাটা পড়ে। শ্রান্তি আসে ক্লান্তি বাড়ে। অবসাদের আত্মীয়রা এসে দেহে ও মনে বাসা বাঁধে, দৃষ্টি, শ্রবণ ও স্মৃতিশক্তি কমে যায়- নানা রোগবালাই শরীরকে কর্ম-অক্ষম করে তোলে। ফলে অভিজ্ঞতার দ্বারা একদিকে যে বাড়তি লাভ হয় এসব অনিবার্য অতিথির আগমনে ক্ষতি বাড়তেই থাকে। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ভয় এবং আক্রান্ত হলে অনাহূত অবহেলার আশঙ্কা বেড়ে চলেছে বয়স্ক ব্যক্তি মানুষের মনে। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ভয় এবং আক্রান্ত হলে অনাহূত অবহেলার আশঙ্কা বেড়ে চলেছে ব্যক্তি মানুষের মনে। অর্থনীতির সেই অনিবার্য শর্ত- ‘আর সব যদি ঠিক থাকে’ অর্থাৎ পরিবেশ, অন্ন বস্ত্র বাসস্থানের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা, অন্যের সাহায্য-সহযোগিতা এবং নিজের মনোবল বুদ্ধি বিবেক ও চিন্তাশক্তির ন্যূনতম সজাগ পরিস্থিতি ঠিকঠাক থাকলেই যেকোনো বয়সের মানুষের পক্ষে করোনা মোকাবিলা কঠিন হওয়ার কথা নয় । আর সব তো ঠিক নেই, থাকছে না । ফলে এখন করোনা শুধু না অন্য যেকোনো ছোট বড় মাঝারি রোগ শোককেও ভয় পাচ্ছে মানুষ। সে এ ভয়ও পাচ্ছে সে আক্রান্ত কিংবা তার মৃত্যু হলে তার পরিবার-পরিজনকে ‘এক ঘরে’ করতে লকডাউনে পাঠানো হবে, তার স্বাভাবিক জানাজা হবে না, সমাহিত হওয়ার ক্ষেত্রেও এক ধরনের অনীহা অবজ্ঞা, এমনকি হাংগামাও হতে পারে। এ সমস্যা যেন ব্যক্তি জনের, তার অন্যান্য আপনজন, পরিবার, প্রতিবেশী ও সমাজ এমনকি দেশ কর্তৃপক্ষও এখানে কেমন যেন অসহায়, উদাসীন ও প্রতিকারবিহীন।
এসব বাস্তব বিষয় বিবেচনায় এনেই স্বামী বিবেকানন্দের ভাষায় ব্যক্তি মানুষকে- ‘মনরে! মনরে চল নিজের নিকেতনে’র ভাবনায় নিজে নিজে হতে হবে সচেতন, সাবধান। নিজে শরীরের দেহের যতœ, মনকে ভালো খাবার, পরিবেশকে বান্ধব করে তোলার পদক্ষেপ নিজেকেই নিতে হবে। কর্তৃপক্ষ যেমন বলেই দিয়েছেন, ‘চিকিৎসক ও চিকিৎসার আশায় বসে না থেকে নিজেই দায়িত্বশীল হন নিজের প্রতি।’ ব্যক্তি নাগরিককে এখন বড় করুণ দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে ফিরে যেতেই হচ্ছে, তাকেই তার শক্তি ও সাহস এবং শান্তির প্রেরণা খুঁজতে হবে। তাকে অনুভবের আয়নায় বৃষ্টির রিমঝিম শব্দে, শ্রাবণের জোয়ারে নদীর পথ চলায়, পাখির কুজনে, কুহেলী কুয়াশায় ঢাকা শীতের ভোর, শরতের নির্মেঘ আকাশ, কৃষ্ণচূড়া, বাগান বিলাস আর আজালিয়ার সৌন্দর্যে ভাবালুতায় মুখ লুকাতে হবে, শ্বাস প্রশ্বাস নিতে হবে। পশু, পাখালির নিত্যদিনের সাঙ্গিতীক জীবনযাত্রা কান পেতে শুনতে তাদের সাথে সকলের সাথে একাত্ম হতে হবে। এরা সবাই বিধাতার, বিধাতাও এদের সবারই। মনের সব জড়তা, কুপমণ্ডুকতা, দীনতা, হীনতা ঝেড়ে মুছে ফেলে নিজেকে নির্ভার করে তুলতে হবে। হিংসা, দ্বেষ, ঈর্ষা, রাগ, ক্ষোভ, ভয়, আশঙ্কা, সংকোচ, শঙ্কা, সংক্ষুব্ধতা সবই ত্যাগ করতে পারলে নিত্যনতুন উদ্যমে গৌরব প্রত্যাশায় উদ্বেল হয়ে উঠবে মন। নিজেকে নির্ভার করে তুলতে হবে। হিংসা, দ্বেষ, ঈর্ষা, রাগ, ক্ষোভ, ভয়, আশঙ্কা, সংকোচ, শঙ্কা, সংক্ষুব্ধতা সবই ত্যাগ করতে পারলে নিত্যনতুন উদ্যমে গৌরব প্রত্যাশায় উদ্বেল হয়ে উঠবে মন ।
করোনা প্রতিরোধে অন্যতম অবলম্বন হতে পারে নিজের মনের জোর ও মানসিক শক্তির। শত সহস্র উপায় হাতড়িয়ে কিন্তু টেকসই একমাত্র পথ ও পন্থা পাওয়া গেছে ‘ঘরের বাহির না হওয়া এবং ঘন ঘন সাবান দিয়ে দুই হাত ধোয়া’। এর আধ্যাত্মিক ও আর্থসামাজিক তাৎপর্য ব্যাপক। বিশ্বনবী সা:-এর সুস্পষ্ট উপদেশ ছিল ‘যে শহরে মহামারী সে শহর থেকে কেউ বাইরে যাবে না এবং বাইরের কেউ সে শহরে আসবে না।’ চীনের উহানে উদ্ভূত করোনা মহামারী আজ সারা বিশ্বে মানুষের যাতায়াতেই ছড়িয়েছে। আমাদের বাংলাদেশেই রাজধানী ও আশপাশের হটস্পটের মানুষেরা গ্রামে ছুটি কাটানোর সুযোগ পেয়ে, ঈদ শপিং এ উদ্বুদ্ধ হতে পেরে এবং ঈদ উদযাপনের নামে যাওয়া আসা, আসা যাওয়ার মাধ্যমে আজ গোটা দেশই এখন হটস্পট হতে চলেছে। একদিকে ঘরের বাইরে না যাওয়ার আহ্বান, অন্য দিকে প্রচণ্ড স্ববিরোধী ব্যবস্থাপনায় সবই বুমেরাং হয়ে দেখা দিচ্ছে। ভুক্তভোগী হচ্ছে একেকজন মানুষ। করোনাকালের প্রতিটি দিন নতুন নতুন আশঙ্কা ও ভয়ের, দুঃসংবাদের অবয়বে হাজির হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে উদ্বেগ উৎকণ্ঠারহিত, দুশ্চিন্তাহীন জীবনযাপনে নিষ্ঠা আত্মপ্রত্যয়ী হতে হবে, থাকতে হবে আশাবাদী।
আশাবাদী হওয়া এবং থাকার ব্যাপারে ইবাদত উপাসনায় যার যার সৃষ্টিকর্তার প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণে এবং কর্মে নিবেদিত নিষ্ঠার মানসিকতায় জাগ্রত রাখা বা থাকার প্রসঙ্গটি গুরুত্বপূর্ণ । এই আশাবাদের ক্ষেত্রে সৃষ্টিকর্তার সাথে যার যার সম্পর্কের বিষয়টি সূক্ষ্মভাবে পর্যালোচনা হতে পারে। সৃষ্টিকর্তা মহিয়ান, গরিয়ান, সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, পরম দয়ালু ও দাতা (রাহমানুর রাহিম)। আল্লার সার্বভৌমত্ব একক এবং অদ্বিতীয়। এক বিস্ময়কর প্রক্রিয়ায় আমার জন্ম, শৈশব, কৈশোর, যৌবনকাল পেরিয়ে বর্তমান পর্যায়ে আমি উপনীত। কত অসম্ভব ভাব কল্পনার বাস্তবতায় আমি আজ। কত পশ্চাদপর অবস্থা থেকে আমি আজ এখানে। আমি যা হয়েছি তা অন্যেরা একই সমতলে থেকেও হতে পারেননি। আবার আমিও অন্যের মতো অনেক পর্যায়ে যেতে পারিনি। আমি যা তাইই হয়েছি, এ সবেরই নিয়ন্তা তিনিই। এসেছিলাম একা, তারই বিধান মতো, আমার নিয়তি মতো আমি শেষ হয়ে যাবো, চলে যাবো একা একা। এখন প্রশ্ন হলো আল্লার সৃষ্টি আমিÑ আমার নিয়ন্তার প্রতি আমার আত্মসমর্পণ (মুসলিমুন), নির্ভরশীলতা (তাওয়াক্কাল), কৃতজ্ঞতা প্রকাশের স্বরূপ কী?
করোনাকালে দেশে দেশে ধর্ম ও মতবাদে এ স্বরূপ সন্ধান ও আত্মস্থকরণের তাগিদ অনুভূত হয়েছে হচ্ছে তীব্রভাবে। এই সে দিন ইতালির এক হাসপাতালে করোনাযুদ্ধে জয়ী ৯৩ বছর বয়সী রোগীকে রিলিজের দিন ভেন্টিলেশনে অক্সিজেন ব্যবহার বাবদ ৫০০০ ইউরোর একটা বিল ধরিয়ে দেয়া হয়। বৃদ্ধ কেঁদে দিলেন, চিকিৎসকরা বললেন কাঁদছেন কেন, এটা মাত্র এক দিনের অক্সিজেনের বিল, অসুবিধা থাকলে এটি আপনাকে পরিশোধ করতে হবে না। বৃদ্ধ বললেন আমি পুরো বিল পরিশোধ করতে পারব, কিন্তু আমার চিন্তা এবং ভয় সারা জীবন প্রকৃতি থেকে কত অক্সিজেন অবলীলায় পেয়েছি, এ জন্য কোনো দিন কাউকে কিছ্ইু পে করিনি, করতে হয়নি, বিধাতার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশও করিনি।’
আল্লাহ আমাদের রব (প্রভু), হাবিব (বন্ধু) তিনি আমাদেরকে ভুল শুদ্ধ উভয় পরিবেশ পরিস্থিতিতেও পালন করেন - রক্ষা করেন। আমরা আমাদের কর্মক্ষেত্রে, সংসারে জাগতিক নিয়মে আমাদের নিয়ন্ত্রককে ভয় পাই। মান্য গণ্য করি, তার হুকুম তামিলে তৎপর থাকি, তাকে খুশি করতে সমীহ করতে সচেষ্ট থাকি। কদাচিৎ তার অবাধ্য হই, তিনি মাইন্ড করতে পারেন এই চিন্তায় বা বোধ বিশ্বাসে চিন্তাভাবনায় সব সময় সতর্ক থাকি। সেখানে আমাদের সৃষ্টিকর্তার প্রতি, সকল নিয়ন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণ কর্তার প্রতি , তার হুকুম আহকাম পালনের প্রতি, তাকে সম্মান সমীহ করার ক্ষেত্রে তাকে ভক্তি ও ভয় করার ক্ষেত্রে এত অমনোযোগী এত অবজ্ঞা অবহেলা কেন? কেন আমরা তারই আরেক সৃষ্টিকেই আমাদের উদ্ধারকারী ভাবি? কেন তার কাছে বিপদে উদ্ধার চেয়ে, উদ্ধার পেয়ে, পরে ‘আমাদের বিচক্ষণতার জন্য আমরাই উদ্ধার পেয়েছি’ জাতীয় অহঙ্কার ও গর্বে আমরা স্রষ্টাকে ভুলে যাই, কেন তিনি সামনে নেই বলে? তিনি সরাসরি আমাকে তিরস্কার করছেন না বলে? তার প্রতি আমার অগাধ আস্থা, তার একত্বের মহত্বের স্বীকৃতিতে কেন কৃপণতা ,ব্যত্যয়? তিনি ভুল ধরছেন না ভুল ধরার জন্য, তিরস্কার করার জন্য সশরীরে সামনে নেই বলে? তিনি অবশ্যই সর্বত্র বিরাজমান। তিনি নিজে এসে নিজে কিছু করেন না , তারই সৃষ্টিকে দিয়ে করান। আমরা তাঁর সৃষ্ট মানুষ, তাঁর খলিফা (সূরা বাকারা আয়াত ৩০) বা প্রতিনিধি, আমরা তাঁর রহমতে হেকমতেই নিজের ও অন্যের ভালো মন্দ সব কিছু করি। আমরা শুধু তাঁরই ইবাদত করি। (সূরা ফাতিহা, আয়াত ৪) এমনকি ‘তার সদয় অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে সুপারিশ করার সাধ্য কারো নেই। (সূরা বাকারা, আয়াত ২৫৫) সুতরাং কোনো কিছু সম্পাদনের ক্ষেত্রে তাঁর পরিবর্তে অন্য কিছু বা কাউকে কৃতিত্ব নেয়া বা দেয়ার ক্ষেত্রে ‘শুধু তাঁরই ইবাদত করার’ ধারণার সাথে সাংঘর্ষিক। আল্লাহকে ভয় , তাঁর ইবাদতে, তাঁর রহমত লাভের প্রত্যাশা প্রার্থনায়, আল্লার সার্বভৌমত্বের যেকোনো অস্বীকৃতি, অকৃতজ্ঞতা প্রকাশে ব্যাপক সাংঘর্ষিক আবহের সৃষ্টি হয়। ইন্নামাল আমালু বিন্নিয়াত , চিন্তা থেকে কাজের উৎপত্তি। কোনো কাজের চিন্তায় যদি বিধাতা ব্যতিত অন্য বিধায়ক এবং তাঁর নির্দেশনা বা সন্তুষ্টির পরিবর্তে অন্য কোনো উদ্দেশ্য বা অভিপ্রায় পরিব্যাপ্ত হয় তাহলে ঐ কাজ সিদ্ধ হওয়ার পরিবর্তে শুধু অসিদ্ধই হবে না , এটি হবে সৃষ্টিকর্তার প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ। ‘সুন্দরবন আমাদের বাঁচিয়েছে’ না বলে ‘আল্লাহর রহমতে সুন্দরবন আমাদের বাঁচিয়েছে’ বা ‘বিধাতার কৃপায় সুন্দরবনের সহায়তায় আমরা উদ্ধার পেয়েছি’ বলাই কর্তব্য। আল্লাহ অন্তর্যামি তিনি সবই জানেন, তিনি সূক্ষ্মদর্শী, আমি মনে আল্লার সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে কি ধারণা বা ইচ্ছা পোষণ করছি সেটিও তিনি জানেন। তার অগোচর কিছুই নয়। সুতরাং আল্লাহ সচেতনতা ও তার উপর নির্ভরশীলতার ( তাওয়াক্কাল) ধারণাটাই প্রধান। ” তোমরা যে পশু কোরবানি কর তার চামড়া, রক্ত , গোশত কিছুই আল্লাহর দরবারে পৌঁছায় না, যা পৌঁছায় তা তোমাদের আল্লাহ সচেতনতা বা তাকওয়া” । ( সুরা হজ, আয়াত ৩৭) । কাউকে আল্লাহর শরিক করলে আল্লাহর কোনো ক্ষতি বৃদ্ধি হয় না , কিন্তু বড় ক্ষতিগ্রস্ত হই আমরা, কেননা আমাদের সব দায়িত্ব পালন, ইবাদত বন্দেগি ও ভালো মন্দ অর্জনে তার প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ পেলে ঐ সকল অর্জন, কর্মসম্পাদন সবই আত্ম অহংকারে পর্যবসিত হবে, এর ইমপ্যাক্ট শয়তানের ভুল ডিরেকশনে চলে যাবে । আল্লাহর ফেরেশতা ইবলিশ-এর বিরুদ্ধে এটিই ছিল অন্যতম অভিযোগ । প্রকৃত প্রস্তাবে আল্লাহর সম্রণ , স্বীকৃতি ও শোকরানা ( কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ) করা কর্তব্য আমাদের নিজেদের স্বার্থে । ’ আসলে যে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে , সে তার নিজের কল্যাণেই করে।’ ( সূরা নমল, আয়াত ৪০)
করোনাকালে নিজের কর্মকাণ্ডের বোধ বিশ্বাসের সালতামামি হতে পারে। নামাজের মধ্যে আল্লাহর সন্দর্শন সাক্ষাৎ (মিরাজ) হয়ে থাকে এটা জানি কিন্তু তার সাথে সাক্ষাতের প্রটোকল কি প্রকৃত অর্থে মানি? তাহলে নামাজে অমনোযোগিতা আসে কিভাবে? কেন নামাজে যা পড়ছি তার প্রতি মনোযোগ থাকছে না। সব দেখেশুনে মনে হয় যেন অভিনয় করে চলেছি। কুরআনে আল্লাহ বলছেন, ’তোমরা একই অপকর্ম বার বার করো অথচ তোমরা কেতাব পড়, অর্থাৎ জেনে শুনেও তোমরা প্রতিশ্র“তি ভঙ্গ করো। শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো।’ আল্লাহর শিখিয়ে দেয়া মুনাজাতে এটাও বলছি, ’হে আল্লাহ যদি আমি বা আমরা ভুল করি তুমি আমাদের ভুলের জন্য পাকড়াও করোনাÑ আমাদের ওপর এমন বোঝা চাপাইওনা যেমন বোঝা অতীতের ভাইদের ওপর চাপিয়েছিলÑ আমি যা বহন করতে পারি এমন বোঝা আমার ওপর দাও’ [ সূরা বাকারা , শেষ আয়াত] ।এ মুনাজাত করছি কিন্তু বার বার তো একই ভুল করে চলেছিÑ একই অবাধ্যতা চলছে। তাহলে ঐ মুনাজাত কী? ওটা কি তাহলে মনের থেকে বলছি না? আমরা এখনো মনের মধ্যে অন্যের অনিষ্ট কামনা করছি কি না, এখনো মানবতাকে অপমান-অবমাননা , কারো কারো দাবি ও অধিকার হরণের মানসিকতায় আছি কি না , প্রবঞ্চনা প্রতারণার পথ খুঁজে ফিরছি কি না, এ সবই নিজেকে নিজের মধ্যে আত্মজিজ্ঞাসায় আত্মানুসন্ধানে ব্যাপৃত হলেই মিলবে প্রভু নিরঞ্জনের ক্ষমা , ভালোবাসা , প্রেমদর্শন ও বিপদ থেকে উদ্ধার ।
আমাদের উপলব্ধির উপলব্ধিতে আসুক Ñ
মহামারী করোনা এসেছে যেন যুগ যুগ ধরে মানবতার অবমাননা , বৈষম্য, লোভ, লালসা, মিথ্যাবাদিতা ও অহমিকার যে পাপাচার বিশ্বকে গ্রাস করছিল তার সমুদয় দূর করতে গোটা বিশ্বময় একটা প্রবল ঝাঁকুনি দিতেই, আসুন আমরা আত্মশুদ্ধি ও অনুশোচনার শিক্ষা নিইÑ
আসুন আমরা শুধু দু’হাতকে নয় , আমাদের বিবেককে বার বার ধৌত করি।


আরো সংবাদ



premium cement