২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

চোখ থাকিতে অন্ধ

এ এ এম জাকারিয়া মিলন
-

বলাবাহুল্য, সাহিত্য প্রকরণের বিভাগ করা চলে না, তবুও স্থল প্রকারভেদে আমরা বলে থাকি আত্মগত বা মন্ময় সাহিত্য, জীবননির্ভর সাহিত্য, সামাজিক সত্যমূলক সাহিত্য, নিসর্গচেতনামূলক সাহিত্য অথবা সাহিত্য ও শিল্পসংক্রান্ত রচনা। সাহিত্য প্রকরণের মধ্যে অন্যতম হলো হৃদয়গত উপাদান। হৃদয়গত উপাদান বেশি মাত্রায় পাওয়া যায় সামাজিক সত্যমূলক সাহিত্যে। বহির্জগৎ এবং অন্যান্য মানুষ সম্বন্ধে লেখকের বোধ ও অভিজ্ঞতা প্রকাশিত হয়, ফলে পাঠকরা এ ধরনের সাহিত্য পঠনে উৎসাহ বোধ করেন। এ কথা অনিবার্য সত্য যে, সাহিত্যের মুখ্য উপাদান হলো মানবজীবন। কেননা সাহিত্যে মানুষের জীবনই বিভিন্নভাবে ফুটে ওঠে এবং ব্যাখ্যাত হয়। ফলে সাহিত্যকে জীবনদর্পণ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়; আর ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতা সাহিত্যে বিন্যস্ত না হলে তাকে মহৎ সাহিত্য বলা যায় না। এমন একটি মহৎ সাহিত্যের সৃষ্টি করেছেন এ এ এম জাকারিয়া মিলন। তিনি গ্রন্থটির নামকরণ করেছেন ‘চোখ থাকিতে অন্ধ’। এই গ্রন্থটিতে তার ব্যক্তিগত জীবন এবং অভিজ্ঞতা ব্যাখ্যাত ও প্রতিফলিত হয়েছে, যা হৃদয়কে নিরবচ্ছিন্নভাবে অনুরণন করে। সংসার ও সমাজজীবনে অহরহ যেসব সংবেদনশীল ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়, যা মনে আলোড়ন সৃষ্টি করে ও বিবেককে ধাক্কা দিয়ে যেটির নিরেট বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে ‘চোখ থাকিতে অন্ধ’ গ্রন্থটিতে। এই গ্রন্থে একুশটি প্রবন্ধ সূচিভুক্ত হয়েছে। প্রথম প্রবন্ধের নামানুসারে বইটির নামকরণ করা হয়েছে ‘চোখ থাকিতে অন্ধ’। এই প্রবন্ধটি পড়লেই বোঝা যায় যে, নামকরণের সার্থকতা সফল-সার্থক হয়েছে। তিনি বলেন, ‘চোখ থাকিতে অন্ধ’ এই প্রবাদটি আমাদের মনকে ধাক্কা দেয়Ñ প্রশ্নের জন্ম দেয়। কেননা দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন মানুষ আবার কিভাবে অন্ধ হয়? জাকারিয়া মিলন স্বউত্তরে বলেন, চোখ থাকিতে অন্ধ বলতে সঠিক বিষয় অনুধাবনে ব্যর্থতা-দেখেও না দেখার ভান করাÑ জেগে থেকে ঘুমানো-কারো প্রতি অতি বিশ^াস (অন্ধবিশ^াস)-অহেতুক সন্দেহপ্রবণতা এবং অন্যের প্ররোচনায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ। এ বিষয়ে পাঠকের জন্য তার ব্যাখ্যা অত্যন্ত পরিষ্কার ও ঝরনার পানির মতো স্বচ্ছ। তিনি বলেন, কখনো কখনো মানুষ ভালো-মন্দ বিচারের জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। চোখ থাকার পরও মানুষ সঠিক জিনিসটা চিনতে পারেন না। সাদা ও কালোকে আলাদা করতে অনেক মানুষ ভুল করেন। অনেক সময় মানুষ বুঝতে পারলেও মুখ ফুটে বলতে পারেন না, দেখেও না দেখার ভান করেন। সব বুঝে-শুনে চোখ বন্ধ করে অন্ধ সেজে বসে থাকেন। চোখ থাকিতে অন্ধ এই শব্দগুচ্ছ মহাবাণীর মতো সামাজের সর্বত্রে উচ্চারিত এবং মহাবাণী হিসেবে সমাদৃত। ব্যক্তি, সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও সমাজে এ বিষয়টির গুরুত্ব শঙ্খশব্দের মতো শ্রুতিমধুর। নতুনভাবে নতুন আঙ্গিকে জাকারিয়া মিলন প্রবন্ধটির মাধ্যমে আবারো পাঠকদের সচেতন করার চেষ্টা করলেন, ‘অন্ধের যেমন দিন-রাতের প্রভেদ বোঝার ক্ষমতা নেই, অনুরূপভাবে আমরাও নিজের কিংবা চামচা-চাটুকারদের মধ্যে খারাপ কিছু দেখতে পাই না। এতটাই অন্ধত্বে ভুগি যে, দিনকে রাত আর রাতকে দিন বানিয়ে আমাদের ধাঁধায় ফেলে ঘুরপাক খাওয়ালেও আমাদের দৃষ্টিশক্তি কাজ করে না।’
এ এ এম জাকারিয়া মিলন এই প্রবন্ধটির মাধ্যমে সামাজিক সচেতনাবোধ সৃষ্টি করার নিরন্তন প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন। এ কথা সত্য যে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে একজনের জীবনের অভিজ্ঞতা অন্যজন থেকে ভিন্ন হতে পারে। সব অভিজ্ঞতার গল্প হৃদয়ছোঁয়া নাও হতে পারে। এমন কিছু অভিজ্ঞতার গল্প আছে যা হৃদয়কে নাড়া দেয় ও হৃদয়কে অজানা অনুভূতিতে পুলকিত করে।
ভবিষ্যতে অভিজ্ঞতার ওই সব গল্প জীবনসাহিত্য হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে। জীবনীসাহিত্য কালজয়ীও হতে পারে, আবার ওইসব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে জীবনকে সুন্দর করাও সম্ভব। কেননা জীবনীসাহিত্যের বিষয়াবলি হলো নিঃসন্দেহে জ্ঞানকোষ। ব্যর্থতা শুধু পরাজয় নয় এবং ব্যর্থতার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সুফলতা অর্জন করা সম্ভব। তবে মনে রাখা প্রয়োজন যে, ব্যক্তিবিশেষের জীবনকাহিনী তত্ত্ব-তথ্যভিত্তিক হওয়া উচিত। মনে রাখা জরুরি যে, ভবিষ্যতে জীবনীসাহিত্য ইতিহাসে দলিল-দস্তাবেজ হিসেবে সংরক্ষিত হয়। জাকারিয়া মিলনের ‘চোখ থাকিতে অন্ধ’ বইটি ভবিষ্যতের একটি জীবন্ত দলিল। এই গ্রন্থে সন্নিবেশিত একুশটি প্রবন্ধই জীবনের বাস্তব গল্প। গল্পের ছলে তিনি অভিজ্ঞতাগুলোকে এই গ্রন্থে থরে থরে সাজিয়েছেন। গল্পগুলো প্রবন্ধ হিসেবে পড়লে প্রতীয়মান হয় যে, কতটুকুন লিখবেন, কতটুকুন লিখবেন না, কোন ঘটনাকে বড় করে দেখবেন, কাকে ছোট করবেন, কোন ঘটনা পাঠককে কতটুকুন আনন্দ দেবেÑ ওই সব চিন্তাভাবনা করেই জাকারিয়া মিলন তার প্রবন্ধের বই ‘চোখ থাকিতে অন্ধ’ রচনা করেন। একুশটি প্রবন্ধ নিয়ে রচিত এই গ্রন্থটি একটি সার্থক জীবনীসহিত্য বলে বিবেচনা করা যেতে পারে। কেননা এই গ্রন্থের প্রতিটি প্রবন্ধই হচ্ছে অভিজ্ঞতার সঞ্চয়িনী। প্রবন্ধ হচ্ছে এক ধরনের গদ্যরচনা, যা কোনো বিষয়বস্তুকে বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে কিংবা কোনো বিতর্কিত বিষয়ে পাঠককে একটি সিদ্ধান্ত উপনীত হতে সাহায্য করে। এ এ এম জাকারিয়া মিলন রচিত ‘চোখ থাকিতে অন্ধ’ গ্রন্থটিতে জীবন কি মরীচিকা, মারণব্যাধি, ধর্মপালন, ধর্ষণ, বাঁশের চেয়ে কঞ্চি মোটা, লোভ, টাকা তুমি কার, চেনা-অচেনা, রকমারি মন ও যতদোষ নন্দঘোষ প্রভৃতি প্রবন্ধের মাধ্যমে পাঠকরা জীবন বিনির্মাণে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারবেন বলে আমার আত্মবিশ^াস। ‘চোখ থাকিতে অন্ধ’ বইটি ২০২০ সালের অমর একুশে বইমেলায় ‘অন্বেষা প্রকাশন’ থেকে প্রকাশিত হয়েছে। হ


আরো সংবাদ



premium cement
নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি আহসান উল্লাহ ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি আনোয়ারায় বর্তমান স্বামীর হাতে সাবেক স্বামী খুন, গ্রেফতার ৩ ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত বদরের শিক্ষায় ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : সেলিম উদ্দিন ইসলামের বিজয়ই বদরের মূল চেতনা : ছাত্রশিবির পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষের মৃত্যু : বিশ্বব্যাংক নোয়াখালীতে ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত ‘আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ল’ ইয়ার্স কাউন্সিল কাজ করে যাচ্ছে’ পুকুরে পাওয়া গেল ১০০ ইলিশ অবন্তিকার আত্মহত্যা : জবির সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের জামিন আবারো নামঞ্জুর

সকল