বাংলা সাহিত্যে বঙ্গবন্ধু
- মো: আবদুল বাতেন
- ১৩ মার্চ ২০২০, ০০:০০
কোনো জাতি কত উন্নত তা ওই জাতির শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি পরিচয় বহন করে। আর বোঝা যায় সে জাতির জাতীয় নেতা দেখে। সমসাময়িক বিশ্বে রাজনৈতিক ব্যক্তি মহাত্মা গান্ধী, নেলসন ম্যান্ডেলা, ইয়াসির আরাফাতসহ যারা ছিলেন তাদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু ছিলেন অন্যতম। একজন ব্যক্তিকে নিয়ে একটা সাহিত্য জগৎ হতে পারে, তা বিরল। শত সহস্র গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, নিবন্ধ কোনো একজন ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে হয়েছে তার দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে খুব কম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ঘিরে রচিত রচনা বাংলা সাহিত্য সম্ভারকে করেছে আরো সমৃদ্ধশালী। স্বাধীনতার পূর্বাপর বাংলা সাহিত্য এমন কোনো সাহিত্যিক জন্মগ্রহণ করেনি যে, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে দু’কলম লিখেননি। শুধু বাংলা সাহিত্যে নয়, চীনা, জাপানি, ইতালি, জার্মানি, সুইডেনি বিভিন্ন ভাষায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লিখিত হয়েছে বই।
বঙ্গবন্ধু শুধু একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি ছিলেন না, তার মধ্যে মানবিক, সৃজনশীল অনেক যোগ্যতার সমষ্টি ছিল যা তাকে করেছে ইতিহাসে অনন্য। তার লিখিত গ্রন্থ, বক্তৃতা, কথামালায় ফুটে উঠেছে একজন সাহিত্যিকের চরিত্র। তার লিখিত ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’ দু’টি বইয়ের পরতে পরতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে উচ্চমার্গের সাহিত্যিক ছায়া। কবিরা নাকি ভবিষ্যৎ অনুমান করতে পারে, তার প্রমাণ পাওয়া যায়, ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ প্রবন্ধে। পাকিস্তানিদের পরাজয় সুনিশ্চিত তা তিনি জেলে বসে বুঝতে পেরেছিলেন। তাই তিনি লিখেছেনÑ
‘মানুষের যখন পতন আসে,
তখন পদে পদে ভুল হতে থাকে’।
১৯৭১ সালে আমেরিকার বিখ্যাত ম্যাগাজিন ঘবংি ডববশ বঙ্গবন্ধুকে ঃযব ঢ়ড়বঃ ড়ভ ঢ়ড়ষরঃরপং অর্থাৎ, রাজনৈতিক কবি ঘোষণা করেছে। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ যা এখন বিশ্ব স্মৃতি আন্তর্জাতিক নিবন্ধে স্থান পেয়েছে। ২০১৭ সালে ৩০ অক্টোবর ইউনেস্কো এই ভাষণকে ডকুমেন্টারি হেরিটেজ (বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য) শ্রেষ্ঠ ভাষণের তালিকাভুক্ত করেছে। যে ভাষণগুলো পুরো দুনিয়া পরিবর্তন করে দিয়েছিল। ৭ মার্চ ভাষণ তার মধ্যে একটি। এটি শুধু ১৮ মিনিটের একটি ভাষণ ছিল না, এটি ছিল একটি আবৃত্তিযোগ্য শ্রেষ্ঠ কবিতা। যার প্রতিটি শব্দচয়ন মানব দেহে আন্দোলিত করে শিহরণ জাগায়।
আধুনিক বিশ্বে কোনো রাষ্ট্রনায়কের নামে এত সাহিত্য কোথাও রচিত হয়নি। ১৯৭১ সালে কবি অন্নদাশংকর রায় লিখেছেনÑ
‘যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরি মেঘনা বহমান, ততদিন রবে তোমার কীর্তি শেখ মুজিবুর রহমান’। কবি নির্মলেন্দু গুণের অনেক রচনা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে। ‘আমি আজকে কারো রক্ত চাইতে আসিনি’ কবিতায় লিখেছেনÑ
‘একটি গোলাপ ফুল গতকাল আমাকে বলেছে, আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি’।
তার আরেক ঐতিহাসিক ‘স্বাধীনতা শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো’ কবিতায় তিনি বঙ্গবন্ধুকে রবীন্দ্রনাথের সাথে তুলনা করেছেন। ড. মুহাম্মদ এনামুল হক সর্বপ্রথম বঙ্গবন্ধুকে সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি অভিধা দিয়েছেন। কবি মহাদেব সাহা লিখেছেনÑ ‘শেখ মুজিব আমার নতুন কবিতা’। কবি আল মাহমুদ লিখেছেনÑ
“তিনি যখন বললেন ‘ভাইসব’/গাছেরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে গেল/কবিরা বুলেট আর কলমের পার্থক্য ভুলে দাঁড়িয়ে গেল এক লাইনে”/ কবি আল মাহমুদের বিখ্যাত উপন্যাস কাবিলের বোন-এ আছে বঙ্গবন্ধু।
বাংলা সাহিত্যে, গল্পে, কবিতায়, উপন্যাসে বঙ্গবন্ধু নিয়েছেন নীরব বিজয়ের স্থান। সাহিত্যের সেরা গল্পের মধ্যে কবি আবুল ফজলেরÑ ‘মৃতের আত্মহত্যা’, ‘নিহত মুখ’। সৈয়দ শামছুল হকেরÑ ‘নিয়ামতকে নিয়ে গল্প নয়’। এমদাদুল হক মিলনেরÑ ‘রাজার চিঠি’, ‘মানুষ কাঁদছে’। হুমায়ূন আজাদেরÑ ‘যাদুকরের মৃত্যু’। এসব বিখ্যাত গল্প বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা। এ ছাড়া ‘দেয়াল’, ‘দুধের গেলাসে নীল মাছি’, ‘জনক-জননীর গল্প’, ‘ভয় নেই’, ‘রাজ দণ্ড’, ‘শেষ দেখা’ ইত্যাদি গল্প, কবিতা শেখ মুজিবকে নিয়ে লেখা।
বঙ্গবন্ধুর সাথে সাহিত্য এবং কবি ও সাহিত্যিকদের গভীর সম্পর্ক ছিল। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলা একাডেমির প্রথম বাংলা সাহিত্য সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে দুর্নীতির শাখা-প্রশাখা বিস্তার করেছে, তা লিখনীর মাধ্যমে মুখোশ খুলে দিতে হবে’। শেখ মুজিব তার কথায়, লিখনীতে, ভাষণে, রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের অনেক কবিতার কথা উদহারণ দিতেন। কবি শরৎচন্দ্রের ‘আধারের রূপ’ প্রবন্ধটির কথা এসেছে কারাগারের রোজনামচায়। শহিদুল্লাহ কায়সারেরÑ ‘সংশপ্তক’ উপন্যাসের কথা এসেছে বঙ্গবন্ধুর লিখনীতে। সেখানে তিনি শহিদুল্লাহ কায়সারকে বন্ধু বলে সম্বোধন করেছেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা হয়েছিল শিল্পী আব্বাসউদ্দিন, তুর্কি কবি নাজিম হিকমাত, রুশ লেখক অ্যাসিভের সাথে। বাংলা চলচিত্রে, নাটকে, গানে, ডাকটিকিট, ম্যুরাল, ভাস্কর্যে, শিল্পীর ক্যানভাসে বঙ্গবন্ধু চির অম্লান।
পরিশেষে বলতে হয়, বঙ্গবন্ধু হলো একটা বহতা নদীর মতো, যত যাবে তার সৌন্দর্য তত বিকশিত হতে থাকবে সাহিত্যে। হ
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা