১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

কবরের জীবন

-

মৃত্যু এক অনিবার্য সত্য। এর থেকে কেউ বাঁচতে পারবে না। ইসলামী বিধান মতে, মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন করা হয়। মৃত্যুর পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত সময়টুকু মানুষ কবরে অবস্থান করবে। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় এই সময়কালকে আলমে বারজাখ বা অন্তর্বর্তীকালীন সময় বলা হয়। বারজাখ জীবনকে সাধারণত কবরের জীবন বলা হয়।

কবরের জীবনের প্রথম ধাপ হলো ফেরেশতাদের জিজ্ঞাসাবাদ। হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: বলেন, ‘যখন মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখা হয়, তখন কালো বর্ণের এবং নীল চোখবিশিষ্ট দু’জন ফেরেশতা তার কাছে আসেন এবং তাকে উঠিয়ে বসান। তাদের মধ্যে একজনকে মুনকার এবং অন্যজনকে নাকির বলা হয়।’ (সুনানে তিরমিজি-১০৭১) শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী ‘কবরে সওয়াল জওয়াব’ নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন, কবরে প্রত্যেক মানুষকে আরবিতে তিনটি প্রশ্ন করা হবে। তা হলো- ‘মান রাব্বুকা? ওয়া মা দ্বীনুকা? ও মান নবিয়ুকা?’ অর্থাৎ তোমার রব কে? তোমার দ্বীন বা ধর্ম কী? তোমার নবী কে? প্রশ্নের শেষাংশটি বিভিন্ন বর্ণনায় বিভিন্নভাবে রয়েছে। যেমন ‘ওয়া মান হাজর রাজুল?’ প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর প্রতি ইঙ্গিত করে বলা হবে, ‘এই ব্যক্তি কে? যাকে তোমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল।’ এসব প্রশ্নের উত্তরে মুমিন বান্দা বলবে, ‘আমার রব আল্লাহ, আমার ধর্ম ইসলাম, আমার নবী হজরত মুহাম্মদ সা:’ অথবা ‘তিনি হলেন আমাদের মধ্যে প্রেরিত হজরত মুহাম্মদ সা:।’

তারপর জিজ্ঞেস করা হবে, তুমি কিভাবে জানো? মুমিন বান্দা বলবে, ‘আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি, এর ওপর ঈমান এনেছি এবং তা বিশ্বাস করেছি।’ অতঃপর আসমান থেকে একজন ঘোষক ঘোষণা করবেন, ‘আমার বান্দা সত্য বলেছে। সুতরাং তার জন্য জান্নাতের একটি বিছানা বিছিয়ে দাও এবং তাকে জান্নাতের পোশাক পরিয়ে দাও। এ ছাড়া তার জন্য কবর থেকে জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দাও।’ ফলে তার দিকে জান্নাতের কোমল হাওয়া ও সুগন্ধি আসতে থাকবে। এরপর তার কবরকে তার দৃষ্টির সীমা পর্যন্ত প্রশস্ত করে দেয়া হয় এবং সেখানে আলোর ব্যবস্থা করা হয়। অর্থাৎ মুমিন ব্যক্তির জন্য কবরও জান্নাত।

আর যারা পাপী, গুনাহগার ও অবিশ্বাসী- তারা প্রশ্নের উত্তরে বলবে, ‘হা! লা আদরি।’ ‘হায়! আমি কিছুই জানি না।’ তখন আসমান থেকে এক ঘোষণাকারী ঘোষণা করেন, ‘সে মিথ্যা বলেছে। সুতরাং তার জন্য জাহান্নামের বিছানা বিছিয়ে দাও এবং তাকে জাহান্নামের পোশাক পরিয়ে দাও। আর তার জন্য জাহান্নামের দিকে একটি দরজা খুলে দাও।’ তখন তার জন্য জাহান্নামের দিকে একটি দরজা খুলে দেয়া হয়। এ সময় তার দিকে জাহান্নামের আগুনের উত্তপ্ত ও লু হাওয়া আসতে থাকে। এ ছাড়া তার কবরকে এত সঙ্কীর্ণ করে দেয়া হয়, যাতে তার এক দিকের পাঁজরের হাড় অপর দিকের পাঁজরের হাড়ের মধ্যে ঢুকে যায়। অতঃপর তার জন্য একজন অন্ধ ও বধির ফেরেশতাকে নিযুক্ত করা হয়, যার হাতে একটি লোহার হাতুড়ি থাকে।

যদি এই হাতুড়ি দ্বারা কোনো পাহাড়কে আঘাত করা হয়, তাহলে পাহাড়ও ধুলায় পরিণত হয়ে যাবে। আর সেই ফেরেশতা এই হাতুড়ি দিয়ে তাকে প্রচণ্ড জোরে আঘাত করতে থাকে। আর সে আঘাতের চোটে সে এত বিকট শব্দে চিৎকার করে, যা মানুষ ও জিন ব্যতীত পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত সব সৃষ্টিজীবই শুনতে পায়। আঘাতের ফলে সে মাটির সাথে মিশে যায়। তারপর আবার তার দেহে আত্মা ফিরিয়ে দেয়া হয়। এভাবে তার শাস্তি চলতে থাকে। মূলত পাপী ব্যক্তি কবরেই জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে। মহানবী সা: বলেছেন, ‘কবর হলো জান্নাতের বাগানগুলো থেকে একটি বাগান কিংবা জাহান্নামের গর্তগুলো থেকে একটি গর্ত।’ (সুনানে তিরমিজি-২৪৬০)

কবরের শাস্তি গভীরভাবে ভাববার বিষয়। কবরের শাস্তি থেকে পরিত্রাণ চাওয়ার জন্য রাসূল সা: আদেশ করেছেন। কথাটি তিনি বারবার বলে মানুষকে কঠোরভাবে হুঁশিয়ার করেছেন। উসমান রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘কবর হচ্ছে আখিরাতের সর্বপ্রথম মঞ্জিল। যদি কেউ এ মঞ্জিল থেকে মুক্তি পেয়ে যায়, তাহলে তার পরবর্তী মঞ্জিলগুলো অপেক্ষাকৃত সহজ হয়ে যাবে। আর যদি কবরে মুক্তি লাভ করতে না পারে, তাহলে পরবর্তী মঞ্জিলগুলো আরো কঠিন ও জটিল হয়ে যাবে।’ রাসূল সা: আরো বলেছেন, ‘আমি এমন কোনো ভয়াবহ স্থান দেখিনি, যা কবরের চেয়ে ভয়াবহ হতে পারে।’ (সুনানে তিরমিজি-২৩০৮, ইবনে মাজাহ-৪২৬৭, মিশকাত-১৩২)

তাই কবরের ভয়াবহ শাস্তির কথা স্মরণ করে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করা এবং কবরের শাস্তি থেকে তাঁর কাছে পরিত্রাণ চাওয়া আমাদের জন্য একান্ত জরুরি। দান-সদকা মানুষের উত্তম বিনিয়োগ। হজরত উকবা ইবনে আমের রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই দান-সাদকা দানকারীকে কবরের উত্তাপ থেকে রক্ষা করবে। আর মুমিন ব্যক্তি কিয়ামত দিবসে আল্লাহর আরশের ছায়ায় অবস্থান করবে।’ (তাবারানি-৭৮৮, সুনানে বায়হাকি-৩৩৪৭) বিভিন্ন দোয়ার মাধ্যমেও জাহান্নাম ও কবরের আজাব থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। রাসূল সা: তাঁর উম্মতকে জাহান্নাম ও কবরের আজাব থেকে পানাহ চাওয়ার জন্য বিভিন্ন দোয়া শিখিয়েছেন, যা বিভিন্ন হাদিসে বর্ণিত রয়েছে। যেমন রাসূল সা: বলেছেন, ‘তোমরা যখন কেউ সালাতে তাশাহুদ পড় তখন চারটি জিনিস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এই দোয়া পাঠ করবে- ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবিল জাহান্নাম, ওয়া মিন আজাবিল কবরি, ওয়া মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামা-তি, ওয়া মিন শাররি ফিতনাতিল মাসিহিদ দাজ্জাল।’ অর্থাৎ- ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জাহান্নাম ও কবরের আজাব থেকে আশ্রয় চাই। আর জীবনকালীন ও মৃত্যুর পরের ফেতনা থেকে এবং মাসিহ দাজ্জালের ফেতনার ক্ষতি থেকে আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ (মুসলিম-১২১১)

লেখক : সম্পাদক, মাসিক সারস, পূর্ব রূপসা, খুলনা

 

 

 


আরো সংবাদ



premium cement
অবসরে গেলেন আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ জিয়াউল করিম জাতিসঙ্ঘের আরো জোরদার সহযোগিতার আহ্বান ঢাকার আওয়ামী লীগ একটি পাপিষ্ঠ দলের নাম : মাসুদ সাঈদী বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলা : কুলাউড়ায় আ’লীগ নেতা আজাদ গ্রেফতার খুনকে অপমৃত্যু হিসেবে রেকর্ড করলেই ওসি দায়ী : ডিএমপি কমিশনার সিরিয়াকে বশে রাখতে দামেস্কের কাছে নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করতে চায় ইসরাইল ভারতের সাথে বিদ্যুৎ নিয়ে চুক্তিগুলো বাতিল সহজ নয় : রিজওয়ানা হাসান গৌরনদীতে মাদককারবারির কারাদণ্ড ভারতের আগরতলা অভিমুখে লংমার্চ, ভৈরবে বিএনপির পথসভা ওমানে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে প্রবাসীর মৃত্যু অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণের চেষ্টা করছে রাজনৈতিক দলগুলো : নাহিদ ইসলাম

সকল