কুরআন তিলাওয়াতের উপকারিতা
- মাওলানা সাইফুল ইসলাম সালেহী
- ২৭ জুন ২০২৪, ০০:০৫, আপডেট: ২৭ জুন ২০২৪, ০৬:০১
- সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ তারা যারা কুরআন শিখে ও শিক্ষা দেয়। হজরত আবু তালিব রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সেই ব্যক্তি যে কুরআন শিক্ষা করে এবং শিক্ষা দেয়। তিরমিজি-২৯০৯
কুরআন হচ্ছে আল্লাহর আলো, কুরআন হচ্ছে নূর। কুরআন হচ্ছে মুজেজা। আর সেই নূর আমাদের হৃদয়কে শান্তি দেয়। কুরআন শরিফ তিলাওয়াত করলে মুমিনের হৃদয়ে প্রশান্তি সৃষ্টি হয়। কুরআন তিলাওয়াত করলে অনেক উপকারিতা রয়েছে। কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়া যায়।
আল্লাহ বলেন- ‘যারা আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে, সালাত কায়েম করে, আমি তাদেরকে যে রিজিক দিয়েছি তা গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারাই আশা করতে পারে তাদের এমন ব্যবসায়ের যার ক্ষয় নেই। এ জন্য যে, আল্লাহ তাদের কর্মের পূর্ণ প্রতিফল দেবেন এবং নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে আরো বেশি দেবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল, গুণগ্রাহী’ (সূরা ফাতির, আয়াত : ২৯-৩০) যারা আল্লাহর কুরআন পাঠ করে তাদেরকে পরকালে প্রতিদান দেয়া হবে। যারা আল্লাহর কিতাব অধ্যয়নে রত থাকে, ঈমানের সাথে তা পাঠ করে, ভালো আমল ছেড়ে দেয় না, সালাত কায়েম করে, জাকাত দেয়, গোপনে ও প্রকাশ্যে দানখয়রাত করে, আল্লাহর বান্দাদের সাথে ভালো ব্যবহার করে, তারা অবশ্য পরকালে প্রতিদান পাবে। মুমিন বান্দারা কর্মের প্রতিদানের জন্য যে আশা করবে, আল্লাহ তাদেরকে আরো বেশি প্রতিদান দেবেন যা তাদের কল্পনায়ও থাকবে না। আল্লাহ বড় ক্ষমাশীল ও দয়ময়। কুরআন তিলাওয়াত করা ও আল্লাহর পথে ভালো ভালো কাজ করা- এগুলো হচ্ছে লাভজনক ব্যবসায়, এই ব্যবসায় দুনিয়ার ব্যবসায় থেকে বহুগুণে উত্তম।
এই ব্যবসার কোনো ক্ষতি নেই। শুধু লাভ আর লাভ। এই ব্যবসায় আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারে। নবী, সাহাবি ও মুমিন বান্দারা শুধু এই ব্যবসার সন্ধানে ছিলেন। তারা এই ব্যবসার মাধ্যমে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হয়েছেন। আল্লাহ বলেন- ‘হে মুমিনগণ! আমি কি তোমাদের এমন এক বাণিজ্যের সন্ধান দেবো যা তোমাদের রক্ষা করবে যন্ত্রদায়ক শাস্তি থেকে’ (সূরা আস সাফ, আয়াত-১০)?
কুরআন তিলাওয়াতকারীর দৃষ্টান্ত মিষ্টি কমলার মতো। হজরত আবু মূসা আশআরি রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘কুরআন তিলাওয়াতকারী মুমিনের দৃষ্টান্ত মিষ্টি কমলার ন্যায়, যার ঘ্রাণও উত্তম স্বাদও উত্তম। যে মুমিন কুরআন তিলাওয়াত করে না, তার দৃষ্টান্ত খেজুরের ন্যায়, যার কোনো ঘ্রাণ নেই তবে এর স্বাদ আছে। আর যে মুনাফিক কুরআন তিলাওয়াত করে তার দৃষ্টান্ত রায়হান ফুলের ন্যায় যার ঘ্রাণ আছে তবে স্বাদ তিক্ত। আর যে মুনাফিক কুরআন পাঠ করে না তার দৃষ্টান্ত হলো মাকাল ফলের মতো, যার সুঘ্রাণও নেই, স্বাদও তিক্ত’ (বুখারি-৫৪২৭)।
কুরআন যারা তিলাওয়াত করে তারা আল্লাহর পরিবারের লোক। আনাস ইবনে মালেক রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘কতক লোক আল্লাহর পরিবার-পরিজন।’ সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন ইয়া রাসূলুল্লাহ! তারা কারা? তিনি বললেন, ‘কুরআন তিলাওয়াতকারীরাই আল্লাহর পরিবার-পরিজন এবং তার বিশেষ বান্দা’ (ইবনে মাজাহ-২১৫)।
প্রতি হরফে ১০ নেকি লাভ
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পাঠ করবে সে একটি নেকি লাভ করবে। আর প্রতিটি নেকিকেই ১০ গুণ বৃদ্ধি করে দেয়া হয়। আমি বলি না যে, আলিফ লাম মিম মিলে একটি হরফ; বরং আলিফ একটি হরফ লাম একটি হরফ এবং মিম আরেকটি হরফ’ (তিরমিজি-২৯১০)।
সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ তারা যারা কুরআন শিখে ও শিক্ষা দেয়। হজরত আবু তালিব রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সেই ব্যক্তি যে কুরআন শিক্ষা করে এবং শিক্ষা দেয় (তিরমিজি-২৯০৯)।
যারা কুরআন তিলাওয়াত করে আল্লাহ তাদের মর্যাদা বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেবেন। আমির ইবনে ওয়াসিলা আবু তোফায়েল রা: থেকে বর্ণিত- হজরত নাফে ইবন আবদুল হারিস রা: উসমান নামক স্থানে হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব রা:-এর সাথে মিলিত হন। ওমর রা: তাকে মক্কার গভর্নর নিয়োগ করেছিলেন। তখন ওমর রা: বললেন, গ্রামবাসী বেদুঈনদের জন্য তুমি কাকে স্থলাভিষিক্ত করেছ (খলিফা বানিয়েছ)? তিনি বলেন, আমি তাদের উপর ইবনে আবজা রা:-কে খলিফা বানিয়েছি। ওমর রা: বললেন, ইবনে আবজা কে? তিনি বললেন, সে আমাদের একজন আজাদকৃত গোলাম। ওমর রা: বললেন, তুমি লোকদের উপর গোলামকে খলিফা বানিয়েছ? তিনি বললেন, সে তো মহান আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াতকারী, ইলমে ফারায়েজ সম্পর্কে অভিজ্ঞ আলেম এবং কাজী। ওমর রা: বললেন, তুমি কি জানো না যে, তোমাদের নবী সা: বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ এ কিতাবের মাধ্যমে কতক গোত্রকে উচ্চ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করবেন আর কতককে এর দ্বারা অবনমিত করবেন’ (ইবনে মাজাহ-২১৮)?
মৃত্যুর পরও কুরআন তিলাওয়াতকারীর লাশের মর্যাদা বহুগুণে বেশি। হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, নবী সা: উহুদের শহীদদের দু’জনকে একই কাপড়ে একত্র করতেন। এরপর জিজ্ঞেস করতেন, তাদের উভয়ের মধ্যে কে কুরআন সম্পর্কে অধিক জানত? দু’জনের মধ্যে একজনের দিকে ইশারা করা হলে তাকে কবরে আগে রাখতেন এবং বলতেন, আমি কিয়ামতের দিন এদের ব্যাপারে সাক্ষী হবো। তিনি রক্তমাখা অবস্থায় তাদের দাফন করার নির্দেশ দিলেন, তাদের গোসল দেয়া হয়নি এবং তাদের (জানাজার) নামাজও আদায় করা হয়নি (বুখারি-১৩৪৩)।
কিয়ামতের দিনে কুরআন তিলাওয়াতকারীর অনেক সম্মান
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেছেন, ‘কিয়ামতের দিন কুরআন তিলাওয়াতকারীকে বলা হবে, তুমি তা তিলাওয়াত করতে থাকো এবং উপরে চড়তে (উঠতে) থাকো। তুমি তাকে ধীরে সুস্থে তিলাওয়াত করতে থাকো, যেরূপ তুমি দুনিয়াতে পাঠ করতে। কেননা, তোমার সর্বশেষ বসবাসের স্থান (জান্নাত) ঐটিই, যেখানে তোমার কুরআনের আয়াত শেষ হবে’ (আবু দাউদ-১৪৬৪)।
কুরআন তিলাওয়াতকারীদেরকে সুপারিশ করবে। হজরত জুবায়েদ রহ: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: বলেন, কুরআন এমন সুপারিশকারী যার সুপারিশ (তিলাওয়াতকারীর পক্ষে) কবুল করা হবে। এমন বিতর্ককারী যার বিতর্ক (তিলাওয়াতকারীর পক্ষে) গ্রহণ করা হবে। অতএব যে কুরআনকে সামনে রাখবে (তিলাওয়াত করবে ও তদনুযায়ী আমল করবে) কুরআন তাকে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাবে। আর যে পেছনে রাখবে (তিলাওয়াত করবে না ও তদানুযায়ী আমল করবে না) কুরআন তাকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাবে (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস-১২৪)।
লেখক : আলেম, গবেষক
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা