১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

মুসলিম আমাদের পরিচয়

-


আমরা মুসলিম, মুসলিম আমাদের পরিচয়। মুসলিম ব্যতীত অন্য কোনো নামে আমরা পরিচিতি লাভ করতে পারি না। আমরা মুসলিম উম্মাহর অন্তর্ভুক্ত। মহান আল্লাহই আমাদের মুসলিম নাম দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘আল্লাহর পথে জিহাদ করো যেমন জিহাদ করলে তার হক আদায় হয়। তিনি নিজের কাজের জন্য তোমাদের বাছাই করে নিয়েছেন এবং দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের ওপর কোনো সঙ্কীর্ণতা আরোপ করেননি। তোমাদের পিতা ইবরাহিমের মিল্লাতের ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাও। আল্লাহ আগেও তোমাদের নাম রেখেছিলেন ‘মুসলিম’ এবং এর (কুরআন) মধ্যেও (তোমাদের নাম এটিই) যাতে রাসূল তোমাদের সাক্ষী হন এবং তোমরা সাক্ষী হও লোকদের ওপর। কাজেই সালাত কায়েম করো, জাকাত দাও এবং আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যাও। তিনিই তোমাদের অভিভাবক, বড়ই ভালো অভিভাবক তিনি, বড়ই ভালো সাহায্যকারী তিনি।” (সূরা হজ-৭৮) আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন- ‘সেই ব্যক্তির কথার চেয়ে উত্তম কথা আর কার হতে পারে, যে আল্লাহর দিকে ডাকল, সৎ কাজ করল এবং ঘোষণা করল আমি মুসলমান।’ (সূরা হামিম আস সাজদা-৩৩)

প্রথম আয়াতটিতে ‘তোমাদের’ সম্বোধনটি শুধু এ আয়াতটি নাজিল হওয়ার সময় যেসব লোক ঈমান এনেছিল অথবা তারপর ঈমানদারদের দলভুক্ত হয়েছিল তাদের উদ্দেশ করা হয়নি; বরং মানব ইতিহাসের সূচনা থেকেই যারা তাওহিদ, আখিরাত, রিসালাত ও আসমানি কিতাবের প্রতি বিশ^াস স্থাপনকারী দলভুক্ত থেকেছে তাদের সবাইকে এখানে সম্বোধন করা হয়েছে। এখানে মূল বক্তব্য হচ্ছে- এ সত্য মিল্লাতের অনুসারীদের কোনো দিন নুহি, ইয়াকুবি, ইবরাহিমি, মুসাবি, সুলাইমানি প্রভৃতি বলা হয়নি; বরং তাদের নাম ‘মুসলিম’ (আল্লাহর ফরমানের অনুগত) ছিল এবং আজও তারা ‘মুহাম্মদি’ নয় বরং মুসলিম। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন-(হে মুসলমানরা!) তোমরা বলো, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি, যে হিদায়াত আমাদের প্রতি নাজিল হয়েছে তার প্রতি এবং যা ইবরাহিম, ইসমাইল, ইসহাক, ইয়াকুব ও ইয়াকুবের সন্তানদের তাদের রবের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছিল তার প্রতি। তাদের কারো মধ্যে আমরা পার্থক্য করি না। আমরা সবাই আল্লাহর অনুগত মুসলিম।’ (সূরা বাকারা-১৩৬)
মুসলিম কাকে বলে। যে ব্যক্তি আল্লাহর অনুগত হয়, আল্লাহকে নিজের মালিক, রব ও মাবুদ হিসেবে মেনে নেয়, নিজেকে পুরোপুরি আল্লাহর হাতে সোপর্দ করে দেয় এবং দুনিয়ায় আল্লাহপ্রদত্ত জীবনবিধান অনুযায়ী জীবনযাপন করে সে-ই ‘মুসলিম’। এ বিশ^াস ও কর্মপদ্ধতির নাম ‘ইসলাম’ মানবজাতির সৃষ্টিলগ্ন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে ও বিভিন্ন জাতির মধ্যে যেসব নবী এসেছেন এটিই ছিল তাঁদের সবার দ্বীন ও জীবনবিধান। ফলে তাঁরা সবাই মুসলিম হিসেবে পরিচয় বহন করতেন। মহান আল্লাহ তায়ালা ইবরাহিম আ: থেকে বিভিন্ন পরীক্ষা নিলেন, অবশেষে বললেন, যখন তার রব তাকে বলল ‘মুসলিম হয়ে যাও’। তখনই সে বলে উঠল, আমি বিশ^-জাহানের প্রভুর ‘মুসলিম’ হয়ে গেলাম। ওই একই পথে চলার জন্য সে উপদেশ দিয়েছিল ইয়াকুব ও তাঁর সন্তানদের। তিনি বলেছিলেন, আমার সন্তানেরা! আল্লাহ তোমাদের জন্য এই দ্বীনটিই পছন্দ করেছেন। কাজেই আমৃত্যু তোমরা মুসলিম থেকো। (সূরা বাকারা : ১৩১-১৩২)
শুরুতে উল্লিখিত সূরা হজের ৭৮ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘এবং দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের ওপর কোনো সঙ্কীর্ণতা আরোপ করেননি।’ অর্থাৎ পূর্ববর্তী উম্মতদের ফকিহ ও পাদ্রিরা তাদের ওপর যেসব অপ্রয়োজনীয় ও অযথা নীতি-নিয়ম চাপিয়ে দিয়েছিল সেগুলো থেকে তোমাদের মুক্ত করে দিয়েছেন।

সত্যিকারের তরিকা তো একটিই সেটি হলো, সুন্নাতে রাসূলুল্লাহ সা: এবং তাদের পরিচিতিও একটি, সেটি হলো- তারা মুসলিম। যেই পথ-পদ্ধতি ও পরিচয় দিয়েই আল্লাহ তাঁকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। রাসূল সা: আল্লাহর নির্দেশিত পথ ও পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করে গেছেন সেটিই একমাত্র পথ। সাহাবাতুর রাসূল সা:, তাবেয়িন, তাবে তাবেয়িন ও আয়েম্মায়ে মুজতাহিদিন কি নিজস্ব কোনো তরিকা-পথ পদ্ধতি বা আলাদা কোনো সুন্নাহ তৈরি করে গেছেন? তাহলে আমরা কেন এই বাইপাস বা শাখা পথ তৈরি করব এবং ভিন্ন নামে পরিচিতি লাভ করব? কে অনুমতি দিলো? আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘এ ইসলাম ছাড়া যে ব্যক্তি অন্য কোনো পদ্ধতি অবলম্বন করতে চায় তার সে পদ্ধতি কখনোই গ্রহণ করা হবে না এবং আখিরাতে সে হবে ব্যর্থ, আশাহত ও বঞ্চিত।’ (সূরা আলে ইমরান-৮৫)
স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সা:-কেও এই পরিবর্তনের অনুমতি দেয়া হয়নি। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘হে নবী তোমার রবের কিতাবের মধ্য থেকে যা কিছু তোমার ওপর অহি করা হয়েছে তা (হুবহু) শুনিয়ে দাও। তাঁর বক্তব্য পরিবর্তন করার অধিকার কারো নেই। তাঁকে ছাড়া তুমি কোনো আশ্রয়স্থল পাবে না।’ (সূরা কাহাফ-২৭) অর্থাৎ যদি কেউ কারো স্বার্থে তাঁর মধ্যে পরিবর্তন করে, তাহলে আল্লাহ তায়ালার আশ্রয় থেকে সে বেরিয়ে যাবে। আর আল্লাহকে ছাড়া কোনো আশ্রয়স্থল পাবে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘(হে মুহাম্মদ!) বলো, আমার রব নিশ্চিতভাবেই আমাকে সোজা পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। একদম সঠিক নির্ভুল দ্বীন, যার মধ্যে কোনো বক্রতা নেই, ইবরাহিমের পদ্ধতি, যাকে সে একাগ্রচিত্তে একমুখী হয়ে গ্রহণ করেছিল এবং সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। বলো, আমার সালাত, আমার ইবাদতের সব অনুষ্ঠান, আমার জীবন ও মৃত্যু সব কিছু আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের জন্য, যাঁর কোনো শরিক নেই। এরই নির্দেশ আমাকে দেয়া হয়েছে এবং সবার আগে আমিই মুসলিম।’ (সূরা আনআম : ১৬১-১৬৩)
ইবরাহিম আ:-এর মতো সগৌরবে বলে উঠে আমি বিশ^-জাহানের মালিক ও রবের আনুগত্যশীল মুসলিম। আমি মুসলিম উম্মাহর একজন সদস্য। আল্লাহর নির্দেশ হচ্ছে- ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা যথাযথভাবে আল্লাহকে ভয় করো। মুসলিম থাকা অবস্থায় ছাড়া যেন তোমাদের মৃত্যু না হয়।’ (সূরা আলে ইমরান-১০২) অর্থাৎ আমৃত্যু তোমরা মুসলিম থাকবে। আল্লাহর আনুগত্য ও বিশ^স্ত থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে।
লেখক : প্রবন্ধকার

 

 


আরো সংবাদ



premium cement