১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

রোগীর চিকিৎসা ও সেবার ফজিলত

-

ইসলাম পরিপূর্ণ দ্বীন বা জীবনব্যবস্থা হিসেবে জীবনের প্রত্যেক পরিস্থিতি সম্পর্কে যথাযথ দিকনির্দেশনা দিয়েছে। আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদত করার জন্য। শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ না থাকলে ইবাদতে আত্মস্থ হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। যে কারণে ইসলামে শারীরিক ও মানসিকভাবে মুমিনরা যাতে সুস্থ থাকে সে ব্যাপারে তাগিদ দেয়া হয়েছে। রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘দুর্বল মুমিনের তুলনায় সবল মুমিন বেশি কল্যাণকর ও আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়। তবে উভয়ের মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে।’ (মুসলিম) আর আধুনিক যুগে আরাম-আয়েশ ও রোগমুক্তির উপায়-উপকরণের প্রাচুর্য সত্ত্বেও আমরা রোগব্যাধিকে হার মানাতে পারছি না। নতুন রোগ আসছে আর বেড়ে চলেছে অস্থিরতা।

একজন মুসলমান হিসেবে আমরা যদি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান আল-কুরআনের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআনে বলেছেন- ‘আমি কুরআনে এমন বস্তু নাজিল করেছি, যা মুমিনদের জন্য নিরাময় ও রহমত।’ (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত-৮২)

তাহলে প্রশ্ন হলো আমরা কি রহমত-বরকত অন্বেষণ করছি! হয়তো প্রশ্ন জাগতে পারে, যারা আল-কুরআনের পথে চলছে, তারা কি অসুস্থ হবে না? আমরা সুস্থ থাকার জন্য কত কিছুই না করি! যারা কখনো অসুস্থ হন না তারা হয়তো অবাক হবেন, কেননা রাসূল সা: বলেছেন, ‘জাহান্নামি লোক দেখার যাদের ইচ্ছা থাকে, তাদের বলো, যার কোনো দিন রোগ হয়নি তাকে যেন দেখে।’

অর্থাৎ অসুস্থতাও আমাদের জন্য বিশাল এক নিয়ামত। এখন যদি বলি অসুস্থতা-সুস্থতা দু’টিই আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে তাহলে আমরা অযথা ওষুধ খাচ্ছি কেন? ওষুধের কি কোনো ক্ষমতা নেই! হজরত মুসা আ: একবার পীড়িত হয়েছিলেন।
ইসরাইল বংশীয় অভিজ্ঞ লোকেরা বলেছিল, ‘অমুক দ্রব্য এ রোগের ওষুধ, আপনি তা ব্যবহার করেন’ তিনি বলেছিলেন, ‘আমি ওষুধ সেবন করব না, স্বয়ং আল্লাহ আমাকে আরোগ্য করবেন।’ তার রোগ ক্রমেই বৃদ্ধি পেতে লাগল।

তিনি কিছুতেই ওষুধ সেবনে সম্মত হলেন না, পীড়াও দূর হলোনা। ইতোমধ্যে ‘ওহি’ নাজিল হলো- ‘হে মুসা! আমি নিজের গৌরবের শপথ করে বলছি, তুমি যতদিন ওষুধ সেবন না করবে, আমি ততদিন কিছুতেই তোমাকে আরোগ্য করব না। এরপর তিনি ওষুধ সেবন করে স্বাস্থ্য পুনঃপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। হাদিসে আছে, হজরত মুসা আ: আল্লাহর কাছে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘হে আল্লাহ! রোগ কী কারণে আর আরোগ্যই বা কি কারণে ঘটে?’ উত্তর এসেছিল-‘উভয়ই আমার আদেশে ঘটে’। তিনি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, ‘চিকিৎসক তবে কোন কাজের জন্য হয়েছে? উত্তর এলো-‘কতগুলো লোক চিকিৎসা কার্যে, ওষুধের উপলক্ষে জীবিকা পাবে এবং আমার বান্দাদের প্রফুল্ল রাখবে এ উদ্দেশে তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে।’ অর্থাৎ মানুষের উচিত, যিনি ওষুধ সৃষ্টি করেছেন তার প্রতি যেন ভরসা করে, ওষুধের ওপর যেন কিছুমাত্র ভরসা না করে, কেননা বহু লোক ওষুধ সেবন করেও মারা যাচ্ছে। (সৌভাগ্যের পরশমনি, ইমাম গাজ্জালি রহ.)

আল্লাহ তায়ালা যে বান্দার মঙ্গলের জন্য রোগ দেন এ কথাটিই আমরা মানতে নারাজ; বরং একটু অসুস্থ হলেই আমরা দ্রুত চিকিৎসা শুরু করে দেই। মহানবী সা: ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি অসুস্থ অবস্থায় ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার সাথে একটি রাত অতিবাহিত করবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে সদ্যজাত শিশুর মতো নিষ্পাপ করে দেবেন।’

সুতরাং রোগমুক্তির জন্য ব্যস্ত হয়ে যাওয়া ঠিক নয়। রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছে কোনো এক সাহাবি তার ভাইয়ের অসুখের বিবরণ দিলে তিনি তাকে মধু পান করানোর পরামর্শ দেন। দ্বিতীয় দিনও এসে আবার সাহাবি বললেন, অসুখ আগের মতো বহাল রয়েছে। তিনি আবারো একই পরামর্শ দিলেন। তৃতীয় দিনও যখন সংবাদ এলো যে, অসুখের কোনো পার্থক্য হয়নি, তখন তিনি বললেন, ‘আল্লাহর উক্তি নিঃসন্দেহে সত্য, ওষুধের কোনো দোষ নেই। রোগীর বিশেষ মেজাজের কারণে ওষুধ দ্রুত কাজ করেনি।’ এরপর রোগীকে আবার মধু পান করানো হয় এবং সে সুস্থ হয়ে ওঠে। (তাফসির মা’আরেফুল কুরআন, পৃষ্ঠা-৭৪৭)

বান্দার মেজাজ বা ধারণার ওপর আল্লাহ তায়ালার ফয়সালা নির্ভর করে থাকে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআনে বলেছেন- ‘মৌমাছির পেট থেকে রঙবেরঙের পানীয় নির্গত হয়, তাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার। নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে।’ (সূরা আন-নাহল, আয়াত-৬৯)। আল্লাহ তায়ালা যে জীবন বিধান দিয়েছেন তাই মানুষের সমগ্র জীবনের সর্বদিকের ওষুধ। রোগনিরাময়ের জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত চিকিৎসক, রোগ নির্ণয়, সঠিক ওষুধ এবং সঠিক সেবনবিধি। এ চারটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে রোগের চিকিৎসা। আল্লাহ তায়ালা রোগ সৃষ্টি করেছেন, তার জন্য ওষুধও সৃষ্টি করেছেন। (বুখারি) সবশেষে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: থেকে বর্ণিত- মহানবী সা: ইরশাদ করেন, ‘তোমরা দু’টি শেফাদানকারী বস্তুকে নিজেদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় করে নাও, একটি মধু (আহার্যের মধ্যে) এবং অপরটি আল কুরআন (কিতাবগুলোর মধ্যে)।’ (মিশকাত শরিফ) আর রোগীর সেবা করা জান্নাতে ফল আহরণের শামিল। যারা চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত, তারা বিশুদ্ধ নিয়তে রোগীর সেবা করে এই ফজিলত অর্জন করতে পারেন। হজরত সাওবান রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘কোনো মুসলমান তার কোনো (রুগ্ণ) মুসলিম ভাইকে দেখতে গেলে সে (যতক্ষণ সেখানে থাকে ততক্ষণ) যেন জান্নাতের ফল আহরণ করতে থাকে।’ (তিরমিজি-৯৬৭)

ডাক্তার/নার্সরা প্রতিদিনই অসংখ্য রোগী দেখতে তাদের কাছে যেতে হয়, যদি তারা এই হাদিসের ওপর আমল করার নিয়তে রোগীকে দেখেন এবং সময় নিয়ে দেখেন তাহলে তারাও এই ফজিলত পাবেন ইনশাআল্লাহ।
মাঝে মধ্যে দেশে কোনো রোগের প্রকোপ দেখা দিলে চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিতদের ছুটি বাতিল হয়ে যায়, তাদের উচিত তখন বিরক্ত না হয়ে এই হাদিসের ফজিলত স্মরণ করা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আন্তরিকতাসহ রোগীদের সেবা করা।

লেখক : কলাম লেখক ও গবেষক


আরো সংবাদ



premium cement
আর কোনো শহীদের লাশ উত্তোলন করতে দেয়া হবে না : সারজিস আলম রোববার থেকে ঢাকা-গাজীপুর রুটে চলবে বিআরটিসির এসি বাস সার্ভিস জামায়াত-শিবিরের ৭ নেতাকর্মীর খুনিদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ বিজয় দিবসে জেলা-উপজেলায় বিজয়মেলা হবে শীতে কাঁপছে চুয়াডাঙ্গা দোয়ারাবাজার সীমান্তে বিজিবির অভিযানে অর্ধকোটি টাকার চোরাই পণ্য জব্দ চার স্তরের নিরাপত্তা থাকবে জাতীয় স্মৃতিসৌধে : ডিআইজি ঢাকা রেঞ্জ বিজয় দিবসে ঢাকা মহানগর ছাড়া সারাদেশে বিএনপির র‌্যালি ‘বন্দীদের তালিকা দিতে অস্বীকৃতি হামাসের’ ঢাকায় ৬ দিনব্যাপী নগর কৃষি মেলা শুরু জর্জিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী সাবেক ফুটবলার মিখেইল কাভেলাশভিলি

সকল